দূর আলাপন পর্ব-২৬+২৭

0
391

দূর আলাপন ~ ২৬

_________________________
একা ঘরে সোফায় বসে আছেন শিউলি। ক্লেশিত দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মুখ। রাতের খাবার খাওয়া হয়নি। অনেক সেধেছিল আফরিন। শিউলি খেতে পারেন নি। ছেলেটা রুদ্রমূর্তি নিয়ে বেরিয়ে গেল। এসে না জানি কি বলে সেই চিন্তাতে সবকিছু বিস্বাদ লাগছে। সোফার উল্টো পাশের সিঙ্গেল খাটে বিছানা পাতা। বেডশিট এলোমেলো, বালিশ গুলো এদিক ওদিক ছড়ানো। নিনাদটা বড় অগোছালো। মূলত ওর বেডরুমটা পাশের ঘরে, তবু ফেরার পর থেকে ও এখানে থাকছে। থাকছে কারণ ছোট্ট এই ফ্ল্যাট বাড়িতে আফরিন আর শিউলির থাকার জন্য দ্বিতীয় কোনো ঘর নেই। নিনাদের বউ এলে ওই ঘরটা ছেড়ে দিতে হবে। শিউলি আফরিনের একসাথে এখানে এসে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। বউটা ভালো না পড়লে হয়তো শিউলিদের আসাটাই বন্ধ হয়ে যাবে চিরতরে। তা বলে কি ছেলের বিয়ে দেবেন না? চিরকাল ছেলের মতো আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন যাকে, বিয়ে দিয়েই তো তার ওপর সমস্ত দায়িত্বের ইতি টানতে হবে। তারপর যদি নসিবে বউ, নাতি নাতনিকে কাছ থেকে দেখার, থাকার সৌভাগ্য জোটে তবে তা হবে…

দরজার নব ঘুরল। শিউলি মুখ তুলে দেখলেন ক্লান্ত উদভ্রান্ত নিনাদ ফিরে এসেছে। জুতো খুলে রেখে নিনাদ এগিয়ে এলো। নিঃশব্দে এসে বসল শিউলির পায়ের কাছে। নিনাদ ফিরেছে টের পেয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আফরিন৷ শিউলি ওকে একবার দেখে মুখ ফিরিয়ে ভালো করে তাকালেন নিনাদের দিকে। নিনাদকে এমন দেখাচ্ছে কেন? খুব ক্লান্ত, চিন্তাগ্রস্ত। ও কি কিছু বলতে চায়? এমন কিছু যা শুনলে শিউলি কষ্ট পাবেন। সেজন্যই এসে সোজা পায়ের কাছে বসলো? এ তো ওর পুরনো স্বভাব, কোনো আবদার নিয়ে আগে পায়ের কাছে বসবে।

‘ফুআম্মা…’

‘কি?’

নিনাদ নিচু স্বরে থেমে থেমে বলে,’আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।’

ধড়ফড়িয়ে ওঠে শিউলির ভেতরটা। কি বলছে নিনাদ? কিসের ভুলের কথা বলছে? শিউলি বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছেন শুনে তখন ছেলের মুখটা ওভাবে শুকিয়ে গেছিল যে, তবে কি গোড়াতেই তিনি কোনো গণ্ডগোল করলেন? নিনাদের কি অন্য কোথাও মন দেয়া নেয়া আছে…?
এতদিনের এসব অদ্ভুত আচরণ, পাগলামো তো তেমন কিছুই নির্দেশ করে। ভাইপোর কথার উত্তরে শিউলি আর জিজ্ঞেস করতে পারলেন না, ভুলটা কি।

নিনাদ ইতস্তত করে একসময় নিজেই বলল,’এখানে বিয়েটা আমি করতে পারবো না। কারণ… আ আমি আসলে অন্য আরেকজনকে কথা দিয়েছি…..’

শিউলি খুব বেশি চমকালেন না, কিছু বললেন না। স্থানু হয়ে নিজের জায়গায় বসে রইলেন। যেন এমনি কিছু হবার ছিল। নিনাদের কিছু একটা হয়েছিল বলেই ভয় পেয়ে দ্রুত বিয়ে ঠিক করেছিলেন। সেই কিছু একটা যে কি তা কখনো জানা হয়নি৷ আজ বোঝা গেল…
নিজের ওপরে গাঢ় আত্মবিশ্বাসে আজ হাসিই পেল শিউলির। তিনি ভেবেছিলেন মনের মতো একটা মেয়ের সঙ্গে কিঞ্চিৎ জোরাজুরি করে বিয়েটা দিয়ে দিতে পারলে ছেলের সমস্ত পাগলামি কোথায় ভেসে যাবে..
কিন্তু ও যে আর বাচ্চা ছেলে নয়, যার হাত থেকে
একটা খেলনা কেড়ে নিয়ে অন্যটা ধরিয়ে দিলে সে প্রতিবাদ করতে পারবে না, এটা কেন শিউলির নিরেট মাথায় আসেনি?

‘ফুআম্মা, তুমি কিছু বলছো না কেন? আমি ভুল করেছি। তুমি আমায় বকো। যা খুশি বলো। কিন্তু আমার দিকটাও একটু বুঝতে চেষ্টা করো। আমি জানতাম না তুমি সত্যিই বিয়ে নিয়ে এত সিরিয়াসলি ভাবছো। তাহলে আগেই বলতাম। আমিও নিরুপায়। ওদের কথা দিয়ে এসেছি।’

কিছুতেই আর চমকাচ্ছিলেন না শিউলি। নিনাদ কথা দিয়ে এসেছে। হয়তো এইমাত্রই…
আর সেই কথার দাম ওর কাছে এত বেশি! অথচ… শিউলি এই শেষ বয়সে এসে নিজে বারবার গেছেন মেয়ের বাড়ি, ওর বাবা ভাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, ওদের মেয়েকে ভালো রাখবেন কথা দিয়েছেন। শিউলির সেসব কথার যেন কোনো দাম নেই!
হঠাৎ একটা চিন্তা অলক্ষ্যে চলে আসে মাথায়। শিউলি নিনাদ দুজনেই এখন নিজেদের দেয়া কথার মান রাখা নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু ওই মেয়েটা যাকে এক সপ্তাহ পর বিয়ের সাজে সাজানোর, নতুন জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল তার কেমন লাগবে? শিউলির ভিটে বাড়ির একেবারে পাশের গ্রামে বাড়ি ওদের। কথাটা শীগ্র ছড়িয়ে পড়বে। লোকে জানবে শিউলি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে হঠাৎ কি এক কারণে পিছিয়ে এসেছেন। মেয়েটার বাবা ভাই হয়তো নানান হাঙ্গামা করবে, পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়বে শিউলির কীর্তির কথা।
এসব কি নিনাদ ভেবেছে? ভাববে কখনো?

অনেকক্ষণ গুম হয়ে নানা আশঙ্কার কথা ভাবলেন শিউলি। পায়ের কাছে বসে নিনাদ অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। শিউলি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলেন। পর কি কখনো আপন হয়? নিজের মা হলে নিনাদ কি আরেকটু সচেতন হতো না এই কঠিন কথাগুলো বলার আগে? কিজানি হয়তো হতো… হয়তো হতো না। প্রেম তো অন্ধ হয়। সেই অন্ধত্বের পর্দা চোখে বাধলে তখন মা ফুফু সবই সমান। কাউকে কিচ্ছু বলতে বাধে না।

শিউলি ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করেন, ‘এখন কি চাস বল?’

নিনাদ একটু চমকে ওঠে। শিউলির দুর্বোধ্য মুখের পানে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝবার চেষ্টা করে। ‘কি চাই? আমি… আমি আসলে জানি না ফুআম্মা আমার কি করা উচিত।’

থেমে বলে,’ তুমি হয়তো ভাবছো একটা মেয়ের প্রেমে পাগল হয়ে আমি অসভ্যের মতো এই স্বার্থপর কথা গুলো বলতে পারছি। আসলে ঠিক তা না। প্রেম, মোহ এসব কিছু নয়।
জানি না কি করে তোমায় বোঝাব। তবে এটা একটা বড় দায়িত্ব। একজন মানুষের সবচেয়ে বাজে সময়ে তার সঙ্গী হওয়ার, তার সমস্ত খারাপ পরিস্থিতিতে তাকে আগলে রাখার ল ড়া ই। জীবনের এইসব জটিল দিক কখনো আমি মোকাবিলা করতে চাইনি ফুআম্মা। দায়িত্ব এড়াতে চাইলে তোমার কথা মেনে নেয়াই উচিত হবে। গ্রামের সাদাসিধে একটা মেয়েকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে দিন যাপন করবো। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের কলুষ জর্জরিত মনটাও হিপোক্রেট হতে অস্বীকার করে। সেজন্যই বোধহয় চেষ্টা করেও এই বেলা আমি নিশ্চিত জীবন বেছে নিতে পারছি না। নিখাত সুখ শান্তির আবাহন উপেক্ষা করে যেচে কিছু তিক্ত সময়কে নিজের জীবনে টেনে আনছি। হয়তো এতে আমার কোনো ভালো হবে না। চিরকাল তোমার আর ওই মেয়ের নিরব কান্না অভিশাপ হয়ে আমাকে তাড়া করে বেড়াবে কিন্তু মুদ্রার ওপিঠে অন্য একটা চিত্রও আছে। সেখানে কিছু মানুষ নিশ্চিত হবে, মনে শান্তি নিয়ে মরতে পারবে। আর… আমি ভালো না থাকলেও জানবো আমার ভালোবাসার মানুষ দূরে কোথাও নয়, আমার পাশেই আছে। ‘

বিমূঢ় হয়ে চেয়ে আছেন শিউলি। চোখের কোণে জল, ভেতর টা অতুগ্র কোলাহলে মত্ত হাতির মতো দিকবিদিক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এত আঘাত, যন্ত্রণার মাঝেও একটা জিনিস বিশেষ ভাবে শিউলির মন কেড়ে নিল। নিনাদ খুব সুন্দর কথা বলতে শিখেছে। এসব যদি আদতেই ওর মনের কথা হয় তবে নিঃসন্দেহে বলতে হয় নিনাদের ভেতর টা খুব শুদ্ধ। পৃথিবীর দূষিত আলো হাওয়া এখনো ওই একফালি স্থান গ্রাস করে নেয়নি।
শিউলি স্বীকার করতে বাধ্য হলেন, অদেখা অজানা মেয়েটার জন্য তার মনেও খানিকটা করুণা এসে জমা হয়েছে। কিন্তু আদতে কি হয়েছে ওই মেয়ের? নিনাদ ওকে ভালোবাসে অথচ কেন বলছে একসাথে থাকলেও ওদের সুখী হবার ব্যপার টা আপেক্ষিক? অর্থাৎ ভালোবাসার মানুষকে চিরদিনের জন্য পেলেও সুখটা যেন অনিশ্চিত। নিনাদের এসব দুরূহ কথার অর্থ কি?

‘মেয়েটা কে? কি হয়েছে ওর?’

‘মানুষের জীবনে কত বিপর্যয় আসে। ছোট, বড়…. সহনীয়, অসহনীয়… তেমনি কিছু একটা ধরে নাও।’

নিনাদ কি তবে কারণটাও বলবে না? এত দূরের মানুষ হয়ে গেছেন শিউলি? যাক, শিউলি আর কোনোদিন জিজ্ঞেস করবেন না। কিন্তু এবার কিছু তো করতে হবে? কি করবেন? সব ছেড়ে ছুড়ে কালকের বাসেই বাড়ি ফিরে যাবেন? এত সহজ? নিজের সন্তানের মতো আদর যত্নে বড় করেছেন যাকে, সে ভুল করলেই তাকে ছেড়ে যাওয়া যায়? কোনো মা পারে?

মায়েদের ধর্মই যে অন্ধ ভালোবাসা৷ ভুল সন্তান করুক, ভোগান্তি অন্যজন পোহাক তবু তো সব স্নেহ এসে ওই সন্তানের জন্যই জড়ো হয়। সামনে কি কি দুর্বিষহ সময় তার জন্য অপেক্ষা করছে সেসব ভুলে শিউলি বুকে পাথর বাধলেন। মায়ের স্থান নিয়েছেন, এখন ছেলের ইচ্ছে পূরণ করে তার প্রায়শ্চিত্তও তো করতে হবে।

প্রস্তরের গলায় জিজ্ঞেস করলেন,’মেয়েটা কে সেটা কি বলা যাবে? নাম ধাম পরিচয়… আর এখন কি করবি ঠিক করলি?’

প্রথম প্রশ্নটা আবারো এড়ালো নিনাদ। ‘কি করবো জানি না।’

‘কি আর করবি বিয়ে ছাড়া? বিয়ে কর। আর মেয়ের পরিচয় তুই এখনো বললি না।’

নিনাদের চোখেমুখে অস্বস্তির গাঢ় আস্তরণ পড়ে। অস্থির ভাবে দু একবার দৃষ্টি এদিক সেদিক ফিরিয়ে নিচু স্বরে বলে, ‘তুমি ওকে চেনো। ওর নাম… তিতিক্ষা’

দরজার ওপাশে একটা তুমুল আওয়াজ ওঠে। হতবিহ্বল শিউলি মুখ তুলে তাকান। শব্দ শুনে পেছন ফেরে নিনাদ৷ দেখে আফরিন দরজার কপাট ঘেঁষে বসে পড়েছে। পাশে ছিটকে পড়ে আছে ওর ফোন। আফরিনের চোখে প্রবল অবিশ্বাস একই সাথে তীব্র উচ্ছ্বাসের জোয়ার। পড়ে গিয়ে ও পায়ে সামান্য ব্যথা পেয়েছে। সেই কথা ভুলে আফরিন ঔৎসুক্যে চেচিয়ে বলে ওঠে, ‘নিনাদ ভাই সত্যি! সত্যি তিতিক্ষা আপুরে বিয়া করবেন আপনি!’

__________

সারারাত সজাগ রইলেন শিউলি। শুয়ে থেকে ভাবছেন কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ব্যপার টা। এখনো তার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। আর কেউ নয়, শেষে কিনা তিতিক্ষা! আজ মনে হচ্ছে সবচেয়ে বড় বোকামিটা তিনিই করেছেন। হাতের কাছে এত ভালো মেয়ে রেখে বারবার নিনাদের জন্য এদিক সেদিক মেয়ে খুঁজে বেরিয়েছেন। শিউলি গ্রামীণ মানুষ। বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের সম্পর্ক কোনো খাতেই তার দৃষ্টিতে ভালো নয়। নিনাদের হয়তো প্রেম ঘটিত ব্যাপার স্যাপার কিছু আছে ভেবে দ্রুত তোড়জোড় করেছিলেন বিয়ের জন্য।

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমত। বোঝা যাচ্ছে নিনাদ প্রেম অন্তত করেনি। এই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে মেয়েটির পরিচয় জেনে। রূপে গুণে সবেতেই তিতিক্ষা অন্যন্য। ওর সঙ্গে বিয়েতে তিনি নারাজি হতে পারেন এমন ধারণা নিনাদের কেন হলো কে জানে!
তিনি বোধহয় এখনো নিনাদের তত আপন হতে পারেন নি। সামান্য এই ভুল বুঝাবুঝির জন্য ওই নিরীহ গ্রামের মেয়েটিকে কি কষ্টই না দিতে হবে। তাছাড়া.. আস্তে আস্তে কিছু ছবি পরিষ্কার হলো শিউলির মনে। সেদিন তিহার সঙ্গে বিয়ে নিয়ে কথা বলার জন্য যখন গেছিলেন ওদের বাড়ি, তিতিক্ষাকে সেদিন ঠিক স্বাভাবিক মনে হয়নি। আর নিনাদই বা কি বলছিল, কিসব বিপর্যয়, জটিল সময়ের কথা…
যে ভয় খানিক আগে দূর হয়ে গেছিল আবার সে ভয় ক্রমে শিউলির মনে বিস্তার লাভ করছে। নিনাদ নিশ্চয়ই তার কাছ থেকে তিতিক্ষার সম্মন্ধে গোপন করছে একটা কিছু। হয়তো এমন কিছু যা শুনলে তিনি তিতিক্ষার মতো মেয়েকেও নিনাদের বউ হিসেবে মেনে নেবেন না।
চলবে…..

দূর আলাপন ~ ২৭

____________________________
গুড়িগুড়ি বৃষ্টির বোলে আকাশ ঘোলাটে। বাইরে কুয়াশার মতো ভোর। ছাদে একা পায়চারি করছে তিতিক্ষা। মনের আবহ স্থবির। না সুখের আবেশ, না বেদনার নিঃসীম ঘনঘোর। এসব কে ছাপিয়ে মনটা শ্রাবণ দিনের মেঘের মতো ভার হয়ে আছে। বৃষ্টির সুক্ষ্ম ছোট ছোট ফোঁটায় গায়ে হয় শিরশিরে ভাব, সেই সাথে প্রবল একটানা বাতাস। তিতিক্ষার ইচ্ছে হয় নিকাব খুলে মুখ বাড়িয়ে দেয় বৃষ্টিতে৷ শেষতক সে অবশ্য অবগুণ্ঠন সরায় না। পাশের কোন ছাদ থেকে কে কখন দেখে ফেলে তার কি ঠিক আছে!

লোহার সিড়িরে থপথপ আওয়াজ হচ্ছে। কিঞ্চিৎ অবাক হয় তিতিক্ষা। বুবু অত ভোরে ছোটনকে ফেলে উঠে এসেছে? তিহা আসছে বুঝতে পেরে অন্যমনস্ক ভাবে সে খানিকটা হেটে বাড়ির পেছনের পতিত ভূমির ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। একসময় ছাদে ভারী পায়ের শব্দ ওঠে, পলকের জন্য পেছন ফিরে তিতিক্ষা থমকায়। তিহা নয় এসেছেন মারুফ।
‘বাবা… তুমি এই বৃষ্টিতে ছাদে কেন এলে?’ তিতিক্ষা ব্যস্ত হয়ে মারুফের পাশে দাঁড়ায়।

‘তোকে খুঁজতে খুঁজতে চলে এলাম রে মা। এত ভোরে ছাদে কি করিস?’

‘কিছু না। হাটছিলাম…’ বলতে বলতে নিভে আসে তিতিক্ষার স্বর।

‘ফজরের পর আর ঘুমাস নি?’

‘না…’ তিতিক্ষা থেমে বলে, ‘চা খাবে বাবা? নিচে চলো। চা করে দিচ্ছি।’

‘খাবো। তবে এখানেও মন্দ লাগছে না। আর একটুক্ষণ থাকি।’ বলতে বলতে ছাদের একাধারে পাতা কাঠের বেঞ্চিতে গিয়ে মারুফ বসে পড়লেন।

‘তিতি মা এদিকে আয়।’

শিথিল পদাঙ্কে তিতিক্ষা বাবার পাশে এসে দাঁড়ালো।

‘বোস এখানে।’

মৃদু অস্বস্তি তাড়া করে বেড়াচ্ছে তিতিক্ষা কে। কেন যেন মনে হচ্ছে বাবা হুট করে চলে আসেন নি। এসেছেন আগাম কিছু পরিকল্পনা নিয়ে। বাবা কি গতকালের ব্যাপারে কিছু বলবেন? কোন ব্যাপার? বিকেলের নাকি রাতের? এসব নিয়ে কথা বলতে যে ওর ভালো লাগে না কেউ কি তা বোঝে? আর কতকাল এসব অস্বস্তিজনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ওকে?

মনের মধ্যে দূরাভিশঙ্কার ঘুর্ণি নিয়ে সে বাবার পাশে গিয়ে বসে।

‘মা তোকে একটা গল্প শোনাব আজ৷ সত্যিকার গল্প। মন দিয়ে শুনবি কেমন?’
মারুফ গল্প শুরু করলেন,
‘তুইতো জানিস বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান ছিলাম আমি। আমার নিজের ভাইয়ের পাশাপাশি এক সৎ ভাই ছিলেন সেলিম নামে। উনি অবশ্য মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। সেলিম ভাই ছিলেন ভীষণ সাহসী। মানুষ হিশেবেও অসাধারণ। একাত্তরের যু দ্ধে তিনি একটা পা হারান। যু দ্ধের পর বাড়ি ফেরেন একেবারে অচল হয়ে। তার নামের সাথে যোগ হয় পঙ্গু শব্দটি। ঘরে রেখে গেছিলেন গর্ভবতী স্ত্রীর আর ছোট দুই বোনকে। সেলিম ভাইয়ের মা মারা গেছেন কৈশোরে। তারপর বাবা বিয়ে করেন আমার মা কে। অবশ্য বাবাও বেশিদিন বাঁচেন নি৷ আমরা তিন ভাইবোন জন্মানোর কিছুদিন পর মারা যান। তারপর যু দ্ধ শুরু হলো, আমরাও মামার বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। বাবার ওখানে সেলিম ভাই তখন থাকতেন দুই বোন আর স্ত্রী কে নিয়ে। বোন দুটি তখন সবে মাত্র বালিকা আর তিনি নিজে যু দ্ধ শেষে অথর্ব হয়ে ফিরেছেন। আয় রোজগারের পথ নেই এদিকে ঘরে চার চারটে মুখ খাবারের জন্য হা করে আছে।

আমরা তখন খুব ছোট। মায়ের সাথে মামার ওখানে স্থায়ী ভাবে থাকি। বাপের ভিটেয় ফিরে আসার চিন্তাও ক্রমশ মুছে যাচ্ছে মন থেকে। তবে পাশাপাশি গ্রাম বলে ওবাড়ির সব খবরই আমাদের কানে আসে। একদিন শুনলাম অভাব সইতে না পেরে আমার ভাইয়ের পোয়াতি স্ত্রী মানুষের বাড়ি কাজ শুরু করেছেন। গ্রামে অন্যের বাড়িতে কাজ মানে তো শুধু ঘর মোছা, বাসন মাজা নয়। ধান ভানতে হয়, বিশাল ডেকচিতে করে ধান সেদ্ধ বসাতে হয়। সব তিনি করলেন পরিবারের মুখ চেয়ে। সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করে দিনশেষে অল্প চাল, পয়সা কড়ি যা পেতেন তাই দিয়ে আহার যুগিয়ে ধরতেন পঙ্গু স্বামী আর ওই দুটি বালিকার সামনে। ভাবির বাপের বাড়ির লোকজন কতবার এল তাকে নিতে। বলল বাচ্চাটা হয়ে গেলে ফের বড় ঘরে বিয়ে দেবে। ভাবি শুনলেন না। পঙ্গু স্বামী নিয়েই কাটিয়ে দিলেন গোটা জীবন।

একটু বড় বেলায় এসে আমরা ওবাড়ি যাওয়া শুরু করেছিলাম। রাত দিন এক করে ভাবির অক্লান্ত খাটুনি আমরা দেখেছি। অথচ সেজন্য কোনদিন আমার ভাইকে হীনমন্যতা বোধ করতে দেখে নি। তাকে দেখে কখনো মনে হয়নি এই জগত সংসারে অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি বড় বেশি অসহায়, সর্বক্ষণ কারো না কারো করুণার প্রার্থী। সেলিম ভাইয়ের আল্লাহর ওপর ছিল অগাধ আস্হা। আমরা দুই ভাই গেলেই প্রতিবার তিনি হেসে আমাদের স্বাগত জানাতেন। নিজের অসহায়ত্ব, দুঃখ নিয়ে কখনো কোনো কথা বলতেন না। তার সদাপ্রসন্ন মুখ, সবার সঙ্গে আন্তরিক ব্যাবহার দেখে মাঝে মাঝে মনে হত যা হয়েছে আর যা হচ্ছে তাতে যেন তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত নন বরং বেশ খুশি।

প্রথম প্রথম আমি খুব অবাক হতাম। পঙ্গু একটা মানুষ, স্ত্রীর কামাইয়ে দিন গুজরান করে। সে কি করে এত হাসিখুশি থাকতে পারে! আর একজন স্ত্রী-ই বা কি করে মুখ বুজে মেনে নেয় সবটা?

সেই প্রশ্নের উত্তর আমি পেলাম কিছু বছর পর। তোর মা কে বিয়ে করে।
জানিস তিতি, তোর মায়ের ছিল মধুর মতো গায়ের রঙ। কালো অথচ কি নির্মল। আর আমাকে সবাইকে চিনতো গোটা পরিবারের সবচেয়ে সুদর্শন ছেলে হিসেবে। যেদিন আমি রেহনুমাকে বিয়ে করে ঘরে আনলাম, বুঝলাম ওকে দেখামাত্র বিয়ে বাড়ির সব রোশনাই হঠাৎ স্তিমিত হয়ে গেছে। তাকে দেখে ফুঁড়িয়ে গেছে সব হাসি, আলো…
আমার ছোট বোন মেরি। যে কিনা দেখতে ছিল ইরানি গোলাপের মত সুন্দর। ওকে দেখলাম বউ দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল ঘরে। ওর সাথে সাথে বাকি ভাই বোনেরা। আমি পাশে তাকালাম। তোর মা নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। ও বুঝতে পেরেছে সবটা, অথচ ওর চোখেমুখে কোথাও হীনমন্যতার ছাপ নেই। এই যে সেদিন তাকে দেখে সবার মুখের আলো নিভে গেছিল সেজন্য কোন আফসোস ছিল না রেহনুমার। আমাদের সংসার জীবনের পুরোটা সময় ও এমনই ছিল। কারো কথা, দৃষ্টিভঙ্গি, আড়ালের বিদ্রুপ নিয়ে রেহমুনার কোনো মাথা ব্যথা ছিল না।

যখন তোদের দু বোনকে নিয়ে আমরা চারজন একসাথে বেড়াতে যেতাম। লোকে ভাবত তোর মা বুঝি আমার দুর্সম্পর্কের কোন আত্মীয়া। আমার স্ত্রী এবং তোদের মা হিশেবে কেউ স্বীকৃতি দিতেই চাইতো না রেহনুমাকে। তোর মা শুধু হাসত। উচ্ছল গলায় বলতো, ‘মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য বুঝি এত গুরুত্বপূর্ণ! এই গায়ের রঙ তো আমি বানাইনি। আল্লাহ সয়ং আমার জন্য নির্ধারণ করেছেন। তিঁনি যতটুকু নির্ধারণ করেছেন হাজার চেষ্টা করেও তার যাররা পরিমাণ বেশি তো আমি পাবো না। কাজেই আমি আমার রবের সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকি।’

তোর মায়ের ছিল আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা আর নিজের অবস্থানের প্রতি দৃঢ়তা।
জানিস, রেহনুমা কোথায় পেয়েছিল এই দৃঢ়তা, যেমনটা ছিল আমার সেই ভাইয়ের?
এই দৃঢ়তা হল ভালোবাসার অদৃশ্য শিকল। যে বন্ধনের জোড়ে পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে গিয়েও রেহনুমা ঠিক জানতো সে আমার যোগ্য। ঠিক যেমন সেলিম ভাই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেও কখনো ছোট করে দেখেননি নিজেকে। কারণ তিনি জানতেন তাদের ভালোবাসার জোরের কাছে এইসব অতি তুচ্ছ।
‘শোন মা, অযুহাত সেখানেই বড়, ভালোবাসা যেখানে বিলাসিতা।’
কথা শেষ করে খানিকক্ষণ নিরব থেকে মারুফ বললেন, ‘কিছু বুঝলি?’

বুঝেছে, সত্যিই বুঝেছে তিতিক্ষা। বাবা নিশ্চয়ই কাল রাতে বুবুকে দেয়া তার প্রতুত্তর শুনেছিলেন। বিকেলে ওরকম একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যপার ঘটে যাবার পরও সে রাতে যখন তিহা আবার নিনাদের বার্তা বয়ে নিয়ে এলো, তখন সত্যি সমস্ত ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছিল তিতিক্ষার। সুপ্ত আক্রোশটা হটাৎ তীব্র অমর্ষণের রূপ নিয়ে আছড়ে পড়েছিল সম্মুখের মানুষ টির ওপর৷ এত কিছুর পরও বুবুর নতুন কারো নাম মুখে আসে? মানুষটা আবার অন্য কেউ না নিনাদ।
সারাজীবন যে ছেলেটা ওকে মানুষের সামনে বিব্রত করে বিকৃত আনন্দ পেয়েছে এবার তিন কবুল বলে ওরই গলগ্রহ হতে হবে? তিতিক্ষা যে নিনাদকে স্বেচ্ছায় নয় বরং নিজের অনিশ্চিত জীবনটার একটা নিশ্চিত গন্তব্য পাবার জন্য বিয়ে করছে এই সত্য কি ও কখনো জানবে না? সত্যের পর্দা সরে গেলে সম্পর্ক টা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে? আর তাছাড়া… নিনাদ কেন ওর মতো অসম্পূর্ণাকে বিয়ে করবে। নিনাদের ভালো ভালো ডিগ্রি আছে, ভালো অবস্থানে যাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা আছে।

এক শ্রেণির রাঘব বোয়াল আছেন যাদের টাকার ওপর বসবাস। যেহেতু অর্থের অভাব নেই, তাই এই শ্রেণির মানুষেরা শেষতক নিজেদের ছেলেমেয়ের জন্য রূপে গুণে অন্যন্য, মেধাবী অথচ উচ্চবিত্ত নয় এমন জীবনসঙ্গী খোঁজেন। নিনাদকে তো তারা যে কেউ লুফে নিতে পারে! এত যোগ্যতা নিয়ে নিনাদ ওর পাণিপ্রার্থী হতে চাইছে কেন? অপমান করার সুযোগ টা যেন সারাজীবন পায় সেজন্য? আর বুবু, সমস্ত জেনে-বুঝে বুবু কি করে পারল নিনাদের কথাটা ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাতে? নাকি ওরা সবাই দল পাকিয়ে তিতিক্ষার জঞ্জালে মোড়া ক্ষয়িষ্ণু জীবন টা নিয়ে মজা কুড়োতে চাইছে?

ক্রোধে বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হয়ে এসব কথা চেচিয়ে বলেছিল তিহাকে। বাবা শুনেছেন। তারপর শেষ অস্ত্র হিসেবে তিতিক্ষার সবচেয়ে বড় দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছেন। তিক্ততার ঘোরটপে বাঁধা বর্তমান জীবনের সাথে মিলিয়েছেন তার মায়ের বেদনাবিধুর অতীতকে। আয়েশা রেহনুমা। তিতিক্ষার জন্মদায়িনী। যে মানুষটার কোনো স্মৃতি মনে না রেখেও তিতিক্ষা চিরকাল তাকে উজার করে ভালোবেসেছে। সলাতের প্রতিটি দুআয় যে মানুষটার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ প্রত্যাশা করে এসেছে।

‘তুমি কি করবে তিতি?’ বাবার স্বর গম্ভীর হয়ে এলো। নির্ণিমেষ বোধহীনের ন্যায় সম্মুখের পানে চেয়ে রইল তিতিক্ষা। সামনে কিছুদূর হাটলেই ছাদের শেষ, নিচে শুরু হয়েছে বিস্তৃত পতিত ভূমি। কচুরিপানার তলে বৃষ্টির জল যেখানটায় থৈথৈ করছে, ঘনঘোর কুয়াশার মতো গুড়িগুড়ি বর্ষণে আবছায়া যার চারিদিক। তিতিক্ষা জানে ওদের ছাদের ঠিক নিচ বরাবর এই জল কাদা নেই। বরং একটা শান বাঁধানো মজবুত দেয়াল আছে। যার ওপরটা লোহার কাঁটা গিয়ে ঘেরা। তিতিক্ষার হঠাৎ একটা দুর্জ্ঞেয় ইচ্ছে হলো। বুকের ভেতর বুদবুদ ফোটাতে থাকল এমন তীব্র দ্বেষ ভাব যা ব্যাখ্যার ভাষা ওর ঠিক জানা নেই। সেই অপ্রশম্য অনুভূতির বশে তিতিক্ষার একবার মনে হলো ঠিক এই মুহুর্তে ছাদের ওই প্রান্তটা থেকে লাফিয়ে পড়লে কেমন হয়? আর কোনো জ্বালা যন্ত্রণা থাকবে না, অপমানের ক্লেশিত আবেশে মত্ত হবে না দুচোখ, আর কখনো মুখোমুখি হতে হবে না বাবা বোনের দুর্বোধ্য প্রশ্নগুলোর সামনে…
খুব না দুচিন্তা ছিল বাবার, ছোট মেয়েটিকে নিয়ে? তার চোখের সামনে সমস্ত চিন্তার অবসান ঘটুক। কয়েকটা দিন হয়তো বাবা খুব কাঁদবে। সারাক্ষণ তিতি মা বলে একা একা ডাকবে। কিন্তু তারপর… শোকটা একটু জিইয়ে এলে অরবে বাবা কি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে না? কম দুঃখ তো দেয়নি ও বাবাকে। মানুষ শেষ জীবনে আরাম চায়, বাবার ভেতর বাহিরের সব আরাম ঘুচে গেছে ওর জন্য।

তিতিক্ষা কি করে? কি করলে এখন সবদিক শান্ত হয়? সবাই শুধু ওর রাগটা দেখে, বাহ্যিক পাগলামো দেখে। মনে মনে ও যে কতশত বার মরে গেছে কেউ তো রাখেনি খোঁজ। সবাই বলে অতীত ভুলে যেতে, আবার নতুন করে সবটা শুরু করতে। কিন্তু ওই ব্যাপার টা যে শুধু অতীত নয়, তিতিক্ষার জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় মোড়। জীবনের স্থবির ঘটনাপ্রবাহে হঠাৎ বয়ে যাওয়া একটা সর্বগ্রাসী সুনামি। চাইলেই কি ভুলে যাওয়া যায়? ভুলতে পারলে তিতিক্ষা বুঝি ভুলতো না?

‘তিতি!’

ঘোর ভাঙে তিতিক্ষার। চকিতে একবার বাবার পানে তাকায়। আবার মুখ ফেরায়। ওই পলকের দৃষ্টিতে মারুফের নজরে আসে মেয়ের মুখে একটা গভীর দুর্বহ ধোঁয়াশা। যেন কত হাজার বছর ধরে পৃথিবীর আলো বাতাস শুষে নিতে নিতে মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ও একদৃষ্টে চেয়ে আছে ছাদের শেষ প্রান্তে। চাহনিটা মৃদু অস্বস্তি দেয় মারুফ কে। ঠিক তরুণী মেয়ের চাহনি ওঠা না। জীবনের প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণা নিয়ে বৃদ্ধারা যেভাবে মৃত্যুকে আশু কামনা করে, ঠিক সেভাবে কিছু একটার প্রত্যাশায় প্রাচীন ঢঙে চেয়ে আছে তিতিক্ষা।

দীর্ঘক্ষণ মারুফ কিছু বলতে পারলেন না। বয়স বাড়লে ছোট হয়ে আসে মানুষের চিন্তার পরিসর। তাই যেন বাকিসব ছাপিয়ে মারুফ আবারও মেয়েকে শুধান, ‘তিতি… কি ঠিক…’

সবটা শেষ করতে দিল না তিতিক্ষা। ভাবাবেগ শূন্য গলায় বলল, ‘তুমি যা বলবে তাই। আজ বললে আজই।’ বলে ও চাইল মারুফের হতবাক মুখের পানে।
‘এবার তুমি খুশি?’

‘খুশি রে মা। অবশ্যই খুশি। তুই খুশি হোসনি?’

‘আমি!’ তিতিক্ষা অদ্ভুত ভাবে একটু হাসে। ‘আমার মন সুখ দুঃখের অনেক ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। এখন থেকে তোমাদের সুখই আমার সুখ। তোমাদের কষ্ট আমার কষ্ট। তোমরা যা বলবে তাই আমি শুনবো। আর কখনো তোমাদের কোনো সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট পাবে না আমায়।’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে