দূর আলাপন ~ ৫
__________________________
আরো কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেল। শুক্রবার দুপুরে নিমন্ত্রণ। কথাটা খাপছাড়া হাওয়ায় মতো ভেসে বেড়াচ্ছে ঘরের বাতাসে। দু বোনের মধ্যে চাপা অস্বস্তি আর উৎকণ্ঠা। ছোট বোনটা যে গোঁয়ার ভীষণ। শেষে না যাওয়া নিয়ে কোনো ঘাড়ত্যাড়ামি শুরু করে। ভেবে মাঝে মাঝে উদ্বেল বোধ করে তিহা।
ওদিকে তিতিক্ষা বিপন্ন হয়ে ভাবে এই ঝামেলা কি করে ঘাড় থেকে নামাবে। সব ঠিক ছিল, স্পষ্ট মানা করেই দিত সে। কিন্তু বিপত্তি টা বাঁধালেন শিউলি ফুআম্মা।
সামাজিক যেকোনো আয়োজনে মিশবার ক্ষেত্রে তিতিক্ষা চিরকাল বেশ সাবধানী। যেখানে আছে বেপরোয়া মেলামেশা, বেহায়াপনার বাড়াবাড়ি, ছেলেদের হুল্লোড়, ঘন সমাবেশ… সেসব স্থান সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছে এতকাল। এই যুগে ছেলেমেয়ের অবাধ স্বাধীন মেলামেশাটা ব্যক্তিগত ভাবে অপছন্দ তিতিক্ষার। নিজের স্বস্তির জন্য এসব থেকে দূরে থাকে সে। মারুফ কিংবা তিহা কতবার বুঝিয়েছেন। মেয়েটাকে জোর করে ঠেলেছেন সমাজের বৈরী সংস্কৃতির দিকে। টলেনি তিতিক্ষা, এসব ওর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর এই একটা ব্যপারে তিতিক্ষার অটলতা দেখার মতন।
কিন্তু… কিন্তু… আজ যে এর সঙ্গে আরও একটা ব্যপার এসে জুড়েছে। প্রশ্নটা এখন বাৎসল্যের, এক সন্তানহীনা বৃদ্ধার সস্নেহ অনুরোধের। শিউলি ফুআম্মা নিজে ওকে যাবার কথা বলেছেন বিশেষ ভাবে। এড়ায় কি করে তিতিক্ষা?
তাছাড়া বুবু কথার আভাসে ওকে আস্থা দেবার একটা চেষ্টাও করেছে। বুবুর কথাটাকে ভরসা করলে দুশ্চিন্তার আর কিছুই তেমন থাকে না।
নিনাদের দিক থেকে ওর প্রতি সামান্য কিছু আছে। এই কথা বোধহয় আর অজানা নয় কারো। শুধুমাত্র এই একটা দোষের কারণে নিনাদ সম্পর্কিত সব ব্যপারে তিতিক্ষা কড়া হয় ভীষণ। দাওয়াতে না যেতে চাওয়ার সুপ্ত কারণ টাও তাই। উল্লেখ করা না হলেও তিহা তা জানে। এই ব্যপারে তিতিক্ষাকে নিশ্চয়তা দিল সে। মেহমান হয়ে গেলে নিনাদ কক্ষনো বাদরামো করবে না। হতেই পারে পাজির পাঝারা। ফিচেল বুদ্ধির রাজা। তবে অসভ্য কখনো নয়।
তিতিক্ষা দাওয়াতে যাবে, যে দাওয়াত দাতা সয়ং শিউলি ফুআম্মা, সেখানে উৎপীড়ন করবার মতো বোকামি ও কেনই বা করবে?
অনেক ভেবে দেখল তিতিক্ষা। যাওয়াই বোধহয় ঠিক। নাহয় অনেক গুলো মানুষের রোষানলে পড়বে সে। বাবা, বড় বোন আর হয়তো শিউলি ফুআম্মারও….
অতএব যাওয়া স্থির হলো। তাছাড়া নিনাদ এখানে এসে যত অমিতাচারই করে থাকুক, নিজের বাড়ি ডেকে অপমান নিশ্চয়ই তিতিক্ষা কে করবে না? এটুকু ভরসা তো সে করতে পারে!
_____________________
মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের কাছে একটি ছোট ফ্ল্যাটে নিনাদের আবাস। সেখানে সে একা থাকছে আজকাল। আগে আরও দুজন ছেলে ছিল।
বছর দুয়েক হল ওদের একজন চাকরি পেয়ে বাড়ি ছেড়েছে। অন্যজন বিয়ে করে আলাদা বাসায় উঠেছে। একজনের পক্ষে নিতান্ত বেশি, সমস্ত যেন বাড়াবাড়ি। তবু বাসাটা ছাড়ল না নিনাদ। দুটো ঘর, আধখানা ডাইনিং, একটা শান্ত ছোট বারান্দা আর রান্নাঘর। সবকিছু ভারি সুন্দর। হাতিলের সৌখিন গুটিকতক ফার্নিচার, বেতের সোফা আর অসংখ্য গাছ দিয়ে ঘেরা পুরো বাড়ি। কিন্তু ঘর সুন্দর হলে কি হবে, ঘরের কর্তা বেজায় এলোমেলো। এখানের জিনিস পড়ে আছে ওখানে-সেখানে। আসবাবপত্রের ওপর ধুলোর আস্তরণ। এবার শুধু ফুফুর ভয়ে আর তিহা, তিতিক্ষার কাছে মান-সম্মান বাচাতেই বহুদিন পর সেসব সাফসাফাইয়ের জোয়ার উঠেছে।
তিতিক্ষা আর নিজের ছানাটিকে নিয়ে তিহা যখন নিনাদের বাড়ি এসে পৌঁছাল সে সময় ভর দুপুর। বাইরে হালকা বৃষ্টি পড়ছে। ঢাকার ব্যাস্ত সড়ক আজ বেশ ফাঁকা, যারা আছে তাদেরও ফেরার তাড়া ভীষণ। অন্য দিনের মত ছুটির দিনটাকে দীর্ঘ জ্যামে বসে খোয়াতে চায় না কেউ।
তিতিক্ষা ভাগ্নেকে নিয়ে দাঁড়ালো বোনের পেছনে। ভেবেছিল হয়তো নিনাদই দরজা খুলতে আসবে। সেরকম অবশ্যি হলো না। ওদের খানিকটা চমকে দিল খোলা দরজার ওপাশে দাঁড়ানো একটা অচেনা মেয়ে। যার মুখভরা হাসিতে মুহুর্তে পূর্ণ হয়ে উঠল চারিদিক। হাসিতে, চঞ্চল চাহনিতে, ভ্রুর কুঞ্চনে ব্যস্তসমস্ত হয়ে গৃহে অভ্যর্থনা জানাল। এরপরই ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন শিউলি ফুআম্মা। তিহাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন। তিহাও তাই। অসংকোচে দু পা এগিয়ে শিউলি ফুআম্মাকে জড়িয়ে ধরল। মাকে হারিয়েছে আজ বহুবছর হল। এরপর শিউলি ফুআম্মা ছাড়া আর কাউকেই মায়ের কাছাকাছি মর্যাদা দিতে পারে নি। এই শ্রদ্ধা, ভালোবাসার সবটা শিউলি অর্জন করেছেন নিজের প্রানান্ত স্নেহ, মমতা আর ভালোমানুষি দ্বারা। এতদিন পর দেখা হওয়ায় সত্ত্বেও তাই যেন তিহা নিজেকে সামলাতে পারল না।
তিতিক্ষা কিঞ্চিৎ বিব্রত। শিউলি এবং তিহা উভয়ে নিজেদের অতীত স্মৃতিচারণ নিয়ে ব্যস্ত। ছোট্ট ছোটন আর তিতিক্ষা যে পাশে দাঁড়িয়ে, ওদের দিকে নজর দিচ্ছে না কেউ। পরিবেশ হালকা করতে মেয়েটিই এবার সচেষ্ট হলো। রিমঝিম মিষ্টি হেসে তিতিক্ষা ও তার ভাগ্নেকে ভেতরের ঘরে নিয়ে বসাল।
অল্প সময়ের মধ্যে ছোটনের সাথে খুব ভাব হয়ে গেল সবার। নিঃসংশয়ে গোটা বাড়ি জুড়ে হুটোপুটি করে বেড়াচ্ছে সে। নিনাদ গেছিল জুম্মার নামাযে। এলো খানিক পর।
রান্নাঘরে ততক্ষণে সরগরম আড্ডা। তিহা কাটছে সালাদ, ফুআম্ম পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে গল্প করছেন।
বরাবর একটু চুপচাপ তিতিক্ষা। নিভৃতেই ওর শান্তি। তাই ভেতরের ঘরে বসে রইল একা। এখানে একপাশের দেয়াল জুড়ে সয়ে সয়ে সাজানো বই। নেড়েচেড়ে দেখেছিল দু একটা। মেয়েটা তখন আবার এলো। একজন আস্ত মানুষের উপস্থিতি থাকতে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রাখা ভারি অন্যায়। তাই বইটা রেখে দেয় তিতিক্ষা। মেয়েটার পানে ঘুরে তাকায় আলাপ জমানোর নিমিত্তে।
‘দাঁড়িয়ে কেন বসুন।’
বিছানায় তার পাশে অল্প দূরত্ব রেখে মেয়েটা বসে।
হাসি হাসি মুখ। বলে,’এইখানে নিনাদ ভাই আসব না। আপনি মুখ খুলেন। আপনারে একটু দেহি। তহন তাড়াহুড়ায় ভালো কইরা দেখি নাই।’
কলিংবেল বাজার পর নিকাব পরে নিয়েছিল তিতিক্ষা। আস্বস্ত হয়ে নিকাব খুলল।
‘ও মা! আপনে তো মেলা সুন্দর! শহরের মাইয়া তবুও পর্দা করেন! সুন্দর দেইখাই বুঝি?’
ম্লান হেসে ফেলে তিতিক্ষা। ‘পর্দা করা তো প্রতিটি মুসলিম নারীর প্রতি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের আদেশ। আল্লাহর পৃথিবীতে, আল্লাহর দয়ায় বেঁচে থেকে তাঁর আদেশের বিরুদ্ধে যাবার দুঃসাহস আমার নেই। সেজন্য পর্দা করি।’
‘কি সুন্দর কথা কন আপনে! আমাদের গেরামে একটা কথা আছে, সুন্দর মাইনষের সবই সুন্দর।’
ওর ভুল ভাঙানোর জন্যই যেন তিতিক্ষা বলে,’সৌন্দর্যের মূল আধার হলো মানুষের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। যার দেখার চোখ সুন্দর তার কাছে পৃথিবীর অতি তুচ্ছ ছবিও সুন্দর।’
বলে তিতিক্ষা ভালো করে চোখ তুলে তাকায় মেয়েটির দিকে। নিখাত গ্রাম্য সরল চেহারা। অল্প বয়স, অন্তত তিতিক্ষার ছোট হবেই। পড়নে খয়েরি পাড়ের লাল কালো ফুল তোলা সুতির শাড়ি। কাঁধের একপাশে শান্ত ভাবে পড়ে আছে একটা পুরূ বেণী। আর মুখটা মায়াবী। সবমিলিয়ে ভারি সুন্দর।
‘আপনি ভীষণ মিষ্টি দেখতে।’ আনমনে বলে ফেলে তিতিক্ষা। সঙ্গে সঙ্গে শরীর দুলিয়ে হেসে ওঠে মেয়েটা।
‘কি যে কন! আমারে বাড়িতে সবাই ডাকে কালি। আমি নাকি আবার সুন্দর! হি হি….’
তিতিক্ষা ওর কথায় কিঞ্চিৎ বিস্মিত। কি অকপটে নিজেকে নিয়ে এমন একটা কথা বলে ফেলল মেয়েটা! নিপাট সারল্যে ভরপুর এক মেয়ে। মুখে যার সর্বদা হাসি লেগেই আছে। কি সুন্দর প্রাণবন্ত সে হাসি! কোনো খাদ নেই, কৃত্রিমতা নেই।
‘কি নাম আপনার?’ তিতিক্ষা মিহি স্বরে জানতে চায়।
‘আফরিন আমার নাম। গেরামে সবাই ডাকে আপ্পিনি। সুন্দর না? নিজের কথাকে বিদ্রুপ করে নিজেই হো হো করে হেসে উঠল আফরিন।
হাসল তিতিক্ষাও। বেশ মিশুক মেয়ে বটে।
‘কিন্তু আফরিন নামটাই বেশ সুন্দর।’
‘সুন্দর হইলে কি হইব কন? কেউ তো ডাকে না। খালি একজন… ‘
থেমে সে আবার বলে,’আপনের নাম কিন্তু আমি আগে থাইকা জানি। তবে বেজায় কঠিন নাম কিনা! কইতে কষ্ট লাগে।’
বলে শাড়ির আঁচলে আঙুল পেচাতে থাকে আফরিন।
তিতিক্ষার মন ততক্ষণে আফরিন নামক উজ্জ্বল আলোর দিকে পুরোপুরি হেলে পড়েছে। মনে হচ্ছে বহুদিন পর একটা খাঁটি মানুষের দেখা পেয়েছে। আফরিনের কথা, হাসি, চপলতা সবকিছু বেজায় ভালো লাগছে তিতিক্ষার। কি সুন্দর হেসে হেসে, মুখ চোখ ঘুরিয়ে, ভ্রু নাচিয়ে কথা বলে আফরিন। জড়তা নেই, দুর্বোধ্য বোঝাপড়া নেই। নিদারুণ অকপট। প্রাণ যেন ওর শরীর জুড়ে বিরাজমান।
অল্প সময়ের মধ্যে খুব ভাব হয়ে গেল ওদের। কিন্তু বেশিক্ষণ বসা হল না আফরিনের। খাবারের সময় হয়ে গেছে। শিউলি ফুআম্মা রান্নাঘর থেকে বিষম হাঁকডাক ছাড়ছেন।
খাবার পর শিউলি ফুআম্মা আর তিহার আলাপ ফের আরম্ভ হলো। এই কথা থেকে লাফিয়ে সেই কথা, এক গল্প থেকে অন্য গল্পে ক্রমশ মশগুল হলেন দুজনে। ঠিক যেন দূরের শহরে বিয়ে হওয়া মেয়ে আর তার নিঃসঙ্গ একাকিনী মায়ের প্রতিচ্ছবি। তিতিক্ষা আর আফরিনও বসল ওদের ঘিরে। ছোটন তখন বাইরের ঘরে নিনাদের সাথে হুলুস্থুল বাধিয়েছে। নিনাদ জিজ্ঞেস করে,’বাবা জীবনের হবু শ্বশুর বাড়ি পছন্দ হয়েছে তো?’
ভারিক্কি চালে মাথা নাড়ে ছোটন। আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের ধ্যানে। হবু শশুর মহাশয়ের সঙ্গে কথা বলে নষ্ট করার মতো সময় এখন ওর নেই। ছোটন আসবে বলে চিপস চকলেট আইসক্রিম মজুদ রেখেছিল নিনাদ। আপাতত সেসব সাবার করার মহৎ কাজে ব্যস্ত ছোটন।
বুবু আর এই বৃদ্ধার সংসারি আলাপে বারবার মনযোগ হারিয়ে ফেলছিল পাশে বসা দুই অসংসারী তরুণী। তিতিক্ষা সর্বদাই স্বল্পভাষী। সে গালে হাত রেখে একমনে কথা শুনছিল। কেন যেন ওদের কথায় ঘুম পাচ্ছিল। সহসা ওড়নায় টান পড়তে পেছন ফেরে। আফরিন ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে, ‘শুনতে ভাল্লাগতাসে?’
মনের কথাটাই বলল তিতিক্ষা, ‘না।’
‘তাহলে উইঠা আসেন। তারা আলাপ করুক। আমরা বারান্দায় যাই চলেন।’
সঙ্গে সঙ্গে উঠে আফরিনের পিছু পিছু বারান্দায় চলে এল তিতিক্ষা। এসে ভারি অবাক। খোলা বারান্দা জুড়ে উত্তরে হাওয়া, বাতাসের তালে টবে লাগানো গাছগুলোর হেলদোল আর দুটো ছোট্ট বাজরিকা পাখির খাঁচার ভেতর অনবরত কিচিরমিচির ডাক। সবকিছু মুগ্ধ করে দিল ওকে। তিতিক্ষা আবিষ্কার করল পুরো বাড়ির মধ্যে এই বারান্দাটা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। শুধু সুন্দর নয়, ভয়ানক সুন্দর!
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এই বাসা আর এই সুন্দর বারান্দা সব নিনাদের। এসব সাজাতে তো একটা স্বচ্ছ মনের দরকার। তিতিক্ষা যে নিনাদকে চেনে তার তো এমন হবার কথা নয়। কিন্তু সারাবাড়ির শোভা চিত্র কি তবে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে?
পাশেই বারান্দার রেলিঙে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে আফরিন। চোখের দৃষ্টি সামনে, বহুদূর। সূর্য মেঘের আড়ালে চলে গেছে অনেকক্ষণ। বৃষ্টির আগমনী সংকেত পুরো আকাশ জুড়ে। পশ্চিম থেকে ভেসে আসা কালো মেঘ, প্রবল শীতল বাতাসের ঝাপটা। এবার শুধু ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামার অপেক্ষা। তিতিক্ষা তাকিয়ে রইল। আফরিনকে সুন্দর দেখাচ্ছে। প্রকৃতির মত বিশুদ্ধ সুন্দর। ওর পড়নের শাড়ি, হাতের সাধারণ কাঁচের চুড়ি… সবেতে যেন ভালোমানুষির ছোঁয়া লেপ্টানো।
মেয়েটা ওরই বয়সি।
ওকে দেখেই কিনা কে জানে! আজ হঠাৎ শাড়ির প্রতি সামান্য একটা টান অনুভব করে তিতিক্ষা। শাড়ি পরে, কাঁচের রেশমি চুড়ি হাতে গলিয়ে এইরকম আটপৌরে বেশে থাকতে ইচ্ছে হয় অকস্মাৎ। তিতিক্ষা হালকা গলায় বলে, ‘শাড়িটা সুন্দর।’
কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে ফেলল আফরিন। শাড়িতে আঙুল পেচাতে পেচাতে লাজুক হেসে বলল,’শিউলি চাচিও তাই কইছে। ঢাকায় আসার পর নিনাদ ভাই এই শাড়ি টা আমারে কিইনা দিসে। চাচি বলে নিনাদ ভাই আমার জন্য যা কিনে তাই নাকি খুব সুন্দর মানায় আমারে…’
কথা শেষেও মুখ তুললো না আফরিন। অকারণে খানিকটা লজ্জায় আচ্ছন্ন হয়ে নিচে তাকিয়ে রইল। আর ওর মুখে স্থির তাকিয়ে রইল তিতিক্ষা। যেন খুঁজে ফিরল অজানা কিছু। কিছু রঙ… দুরন্ত অনুভব…
আকাশের রঙ ক্রমে হারিয়ে গেল। ভীড় করে এলো আগমনী সন্ধ্যার কালো পসরা। তেমনি একটা আবছায়া কালো রঙে ছেয়ে গেল তিতিক্ষার মুখ!
চলবে………
অদ্রিজা আশয়ারী