দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১৫
Writer-Afnan Lara
.
রিম কথা বলতে বলতে অনেকটা দূর চলে এসেছে
স্পর্শ এগিয়ে এসে ওর হাত থেকে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো তারপর ফোনের স্ক্রিনে চেয়ে দেখলো কোনো লাইনই নেই,হুদাই ফোন ধরে রেখেছিল রিম
.
আমাকে জেলাস ফিল করাতে চেয়েছিলা?
কিন্তু আমি জেলাস হই বা না হই তাতে তোমার কি যায় আসে?আমার দিকে এত মনযোগ কেন দিচ্ছো জানতে পারি?
.
ভুল বুঝলেন,আমি এমনটা করতে চেয়েছিলাম যাতে করে আপনি দূরে সরে যান,আপনার মা ও চায় না আপনি আমার দিকে এগোন,তাহলে কেন?
.
তোমার দিকে এগোবো সেটা সম্পূর্ন আমার ডিসিশান,এখানে না তোমার মত নিয়েছি!না আমার মায়ের মত নিব!
আমার লাইফ আমার ইচ্ছা,সো নেক্সট টাইম আমাকে এমন একটা সিচুয়েশন দেখাবা না,তাহলে ফোনটা যাবে তোমার সাথে এক বালতি বকাও খাবা
.
রিম মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো তামিমের কাছে,,ততক্ষণে আঁখি আর রিহাব ও বেরিয়ে এসেছে
.
আচ্ছা ইফতি ভাই,আজ আসি আমরা,,সব ভেবেচিন্তে আংটি বদলের দিনখন ঠিক করে বলিয়েন আমাদের,,
.
আচ্ছা ভাই
.
সব কথা শেষে সবাই এক এক করে চলে গেলো
রোকসানা বেগম মুখটা বাংলার পাঁচ করে বসে বসে আপেল খেয়ে যাচ্ছেন,রিমদের স্পর্শ আর ওর বাবা মিলে বিদায় দিয়ে আসতেই উনি ব্রু কুঁচকে বললেন”কিসের আপেল আনছে এগুলা?মনে হয় বালি মুখে দিচ্ছি,এরকম আপেল আমার একটুও পছন্দ নাহ!!”
.
আর কিছু??
.
তুমি বিয়েটা তাহলে দিয়েই ছাড়বা?
.
একশো এক পার্চেন্ট সিউর যে বিয়েটা হচ্ছে!
.
স্পর্শ নিজের রুমে ফেরত চলে এসেছে,আজ রিমকে নিজের হাতে চুড়ি পরিয়ে দিয়েছে সে,কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে তার
.
রিম তার রুমে এসে চুড়িগুলো খুলে ফেললো তারপর আবার চুড়ির আলনাতে চুড়িগুলো রাখতে গিয়ে দেখলো স্পর্শ জানালার গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে,যেন এতক্ষণ সে রিমের অপেক্ষাই করছিল,যদিও এখন যে রিম চেয়ে আছে এদিকে তা সে জানে না
রিম পর্দাটা ভালোভাবে টেনে দিয়ে আবার সোফার রুমে চলে এসেছে,মা আর বাবা মিলে রিহাবের বিয়ে নিয়ে কথা বলছেন
.
বাব্বাহ!! দেখছো কি বড়লোক ওরা??
.
হুম দেখলাম তো সবকিছুই ঠিকঠাক শুধু আঁখির মা মনে হয় রাজি নন
.
হুম ঠিক বলেছো,যাগ গে,,উনার মতকে হয়তবা আঁখির বাবা প্রাধান্য দেন না,আর উনি তো আমাদের এমনিতেও পছন্দ করেন না
.
রিম বুঝলো তার আর ওখানে থেকে কাজ নেই,তাই সে আবার নিজের রুমে ফেরত চলে আসলো,বিছানায় রাখা গোছানো কম্বলটা এলোমেলো করে সে ভিতরে ঢুকে শুয়ে পড়লো এবার
বাহিরে প্রচুর শীত,পৌষ মাস শুরু,শীত হওয়ারই কথা
সমস্যা হলো পা ঠাণ্ডা হতে হতে সূর্য উঠে যাবে আবার
ও হ্যাঁ ভালো কথা মনে পড়েছে,আজ তো আমি ঐ লোকটাকে ফলো করবো,, সে প্রতিরাতে কই যায়??
যদি দেখি আমার জন্য বসে থাকে তো আর জীবনেও রাত ১২টায় বারান্দায় যাব না আমি
.
রিম কম্বলের ভেতর থেকে আবার বেরিয়ে পড়লো,ঘড়িতে রাত সাড়ে নয়টা বাজে,এতক্ষণ আমরা ঐ বাড়িতে ছিলাম!!??
রিম টেবিল থেকে বই একটা নিয়ে বসলো সময়টা কাটানোর খাতিরে,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই,,মনযোগ দিয়ে রিম কিছুক্ষন পড়লো
তারপর আবার বইটা রেখে রুমের বাহিরে গিয়ে সব দেখে আসলো,আজ আর মনে হয় না কেউ ডিনার করবে কারণ আঁখি আপুদের বাসায় প্রচুর খাওয়া দাওয়া হয়েছে
মা বাবা নিজের রুমে,রিহাব ভাইয়া তার রুমে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে,আর তামিম মা বাবার মাঝখানে গাপটি মেরে শুয়ে আছে,মরার মত ঘুমাচ্ছে সে এখন
রিম এদিক ওদিক হাঁটলো কিছুক্ষণ তারপর চুল আঁচড়ালো,সব করতে করতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে
.
এবার মিশন শুরু
রিম ওড়না মাথায় দিয়ে পা টিপে টিপে মেইন দরজা খুললো তারপর বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে চুপিচুপি বাসা থেকে বের হলো,গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো স্পর্শর জন্য,বেশ অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর রিম স্পর্শর দেখা পেলো অবশেষে
স্পর্শ সেই আগের মতন হাতে কয়েল আর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে হেলেদুলে আসতেছে
রিম লুকিয়ে পড়লো,স্পর্শ চলে যেতেই রিম ওর পিছু নিলো
ল্যাম্পপোস্টটার কাছে আসতেই স্পর্শ ভ্যানটায় উঠে বসার জন্য ভ্যানটা নাড়তে চাড়তে লাগলো
রিম পাশেই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে যাচ্ছে,স্পর্শ ভ্যানে বসে সিগারেট একটা ধরিয়ে ধোঁয়া বের করে হাসলো কিছুটা জোরেই
রিম আরেকটু লুকিয়ে ভাবলো ওকে দেখলো না তো আবার!
স্পর্শ সিগারেটে একটা টান দিয়ে সেটা হাতে রেখে দূরে রিমের বারান্দার দিকে তাকালো তারপর খালি গলায় গান ধরলো সে
(প্রথম দুলাইন গাইলো না কারণ এখন বৃষ্টি হচ্ছে না!)
♥
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোন কথা শুধু হয়েছে অনুভূতি ।।
অল্প আঁধার দিচ্ছে ঘিরে
আবছা আলো নিচ্ছে ছুঁয়ে
অল্প করে হোকনা শুরু
ভালোবাসা এখনো ভীরু
হয়নি বলা কোন কথা শুধু হয়েছে অনুভূতি ।।।।।
.
রিম মুগ্ধ হয়ে স্পর্শর গানটা শুনছে,কোনো বাদ্যযন্ত্র নেই,কোনো কিছুই নেই শুধু আছে আবেগ
স্পর্শ গানটার মাঝে আবেগকে এত করে ঢকুয়েছে যে এখন মনেই হচ্ছে না গানটা খালি গলায় গাওয়া হচ্ছে
.
ডাকছে সময় পিছু
বলবে কি মন কিছু
নিবিড় এই ভালবাসা
জড়ালো কিছু আশা ।।
হয়নি বলা কোন কথা শুধু হয়েছে অনুভূতি।।।।।।
.
গানটা শেষ করে স্পর্শ ভ্যান থেকে নেমে দাঁড়ালো হঠাৎ
রিম হালকা নড়েচড়ে একটু পিছিয়ে গেলো,মনে একটা ভয় জেগে উঠলো তার
স্পর্শ হাতের সিগারেটটা নিচে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে ফেললো তারপর ফুল শার্টের হাতাটা একটু ফোল্ড করে মুচকি হেসে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে এগিয়ে গেলো,তার হাঁটার গতি তাদের বাড়ির দিকে বলে রিম নরমালি দাঁড়িয়ে আছে
কিন্তু স্পর্শ হঠাৎ তার পথের দিশা পালটে ঠিক সেদিকটায় চললো যেদিকটায় রিম দাঁড়িয়ে আছে
এটা দেখে রিমের তো কলিজা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে
স্পর্শ বিদ্যুৎের গতিতে রিমের সামনে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চাপ দিয়ে ধরলো
রিম তার দুহাত মুখের উপর রেখে চুপ করে আছে
.
স্পর্শ বামে- ডানে তাকালো একবার,লোক বলতে কোনো ছিঁটেফোঁটাও নেই,স্পর্শ আবারও তাকালো রিমের দিকে
রিম মুখ থেকে হাত সরায়নি এখনও
.
তুমি এখানে কি করো?
.
রিম চুপ করে আছে
.
আমাকে ফলো করতে এত রাতে একা বেরিয়ে পড়লে?
.
রিম মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো”সরুন,সবসময় আমার এত কাছেই এসে আপনাকে কথা বলতে হবে?সরুন তা নাহলে কোনো প্রশ্নের জবাব দেবো না”
.
স্পর্শ দেয়াল থেকে হাত সরিয়ে একটু পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো”হুম বলো এবার,এত রাতে এখানে কি করতে এসেছিলা?আর আমার তো মনে হচ্ছে অন্ধকারে লুকিয়ে আমাকেই দেখতেছিলে”
.
রিম পিছোতে পিছোতে দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো তারপর বললো”কাঁচকলা বলবো আপনাকে”
কথা শেষ করে রিম এক দৌড় দিলো
কিন্তু স্পর্শের সাথে পারলো না,স্পর্শ ওকে তৎক্ষানৎ ধরে ফেলেছে,দৌড়েও পারেনি সে, একদম ওর বাসার কাছ পর্যন্ত আসার আগেই ধরে ফেলেছে স্পর্শ ওকে
.
হাত ছাড়ুন নাহলে চেঁচাবো
.
চেঁচাবা??
.
স্পর্শ হাসলো তারপর রিমের দুহাতকে ওর একহাত দিয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে রিমের মুখ চেপে ধরে ভ্যানটার কাছে নিয়ে এনে রিমকে ভ্যানে উঠিয়ে বসালো তারপর নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”পালানোর কি দরকার ছিল?”
.
আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ভয় করে তাই চলে যাচ্ছিলাম,পালাচ্ছিলাম না
.
আচ্ছা তাই?আমার সাথে তো তাও পারলে না
.
আমি তো প্রতিযোগিতা দিচ্ছিলাম না
আটকালেন কেন সেটা বলেন,আমাকে বাসায় ফিরে যেতে হবে
.
আগে বলো এত রাতে কোন সাহসে বাসা থেকে বেরিয়েছো তুমি?
.
আপনাকে বলতে বাধ্য না
.
বাধ্য না?তাহলে আজ আর তোমার বাড়ি ফিরা হবে না মনে হয়
.
রিম ঢোক গিলে নড়েচড়ে বসে বললো”আপনি প্রতি রাতে এসময়ে বাসা থেকে বের হন বলে আমি দেখতে এসেছিলাম”
.
আমি কোথাই যাই না যাই তাতে তোমার কি,এতদিন তো তোমার কিছু যায় আসতো না
.
এক্সকিউজ মি,এখনও কিছু যায় আসে না,আমি এসময়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই তাই ভাবলাম হয়ত তাই আপনি আমাকে এসময়ে লুকিয়ে দেখতে আসেন,ব্যাপারটা সিউর হওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম
.
ওহ আচ্ছা তাই?তুমি এসময়ে বারান্দায় বের হও?
.
রিম ব্রু কুঁচকে ভ্যান থেকে নামতে গিয়ে সোজা স্পর্শর গায়ে গিয়ে পড়লো কারণ ভ্যানটা কোনোমতে ড্রেনের উপর রাখা ছিলো,নড়বড়ে ছিলো,রিম তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে একদম স্পর্শর গায়ের উপর পড়েছে
স্পর্শ রিমকে ধরে ফেলে ওর কানে ফিসফিসিয়ে বললো”বাসায় ফিরে যাও”
.
রিম ওড়না ঠিক করে দূরে সরে দাঁড়িয়ে বললো”আর কখনও এসময়ে আমি বারান্দায় আসবো না”
.
আমার দেওয়া টাইমে আসলেই হবে,আর নয়ত রাতে চা খাও বা না খাও আমার কি??
.
রিম থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো”আমি এসময়ে চা খাই আপনি জানলেন কি করে?
.
স্পর্শ মাথার চুলগুলো চুলকিয়ে কয়েলটা নেভালো মাটিতে ঘষে ঘষে তারপর সিগারেটের প্যাকেট পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটা ধরলো চুপচাপ
.
রিম ওর পাশে আসতে আসতে বললো”কি হলো উত্তর দিন”
.
স্পর্শ থেমে গিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে রিমের দিকে তাকালো,রিমের সবুজ ওড়নাটা ভেদ করে কয়েকটা অবাধ্য চুল সামনে চলে এসেছে তার
রিমের মাথা নাড়ানোর সাথে সাথে সেগুলো বারবার নড়ছে
স্পর্শ হাত দিয়ে চুলগুলো রিমের কানে গুজে দিতে দিতে বললো”কারণটা জানতে তোমার আরও তিনটা বছর লাগবে রিম,সেদিন বুঝে কাজ হবে না কোনো!চেয়েও সেদিন আমরা এক হতে পারবো না রিম”
.
কথা শেষ করে স্পর্শ হাঁটা ধরলো আবার,রিমঝিম রোবটের মতন সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে স্পর্শের চলে যাওয়া দেখছে,স্পর্শের হাতের সিলভার ঘড়িটা ল্যাম্পপোস্টটার আলোয় চিকচিক করছে,স্পর্শর কালো শার্টটা যেন মুখ ফুটে বলছে রিম এসে জড়িয়ে ধরো আমাকে
.
রিম নিজের মাথায় নিজে একটা বাড়ি দিয়ে বললো”রিম কি ভাবিস এসব!রাত করে জ্বিন ধরেছে তোকে???”
.
স্পর্শ তার বাসায় ঢুকার সময় বললো”যাও!!”
.
এত বড় একটা ধমক শুনে রিম এক দৌড়ে তার বাসায় ফেরত চলে গেলো
বাপরে বাপ,একবার মিষ্টি কথা বলে তো একবার তেতো কথা বলে,ধমক ছাড়া আর কিছুই জানে না নাকি?
রিম নিজের রুমে এসে ভাবলো আজ কিনা কি হয়ে যেতো,আমাকে কেমনে অন্ধকারের মাঝেও দেখে ফেললো লোকটা??আমি তো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম,একটুও তো নড়িনি আর হাতে চুড়িও ছিল না যে তার শব্দে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে যাবে
কে জানে!লোকটা আমাকে এত ভালো মতন চেনে যেমনটা আমি নিজেকেও চিনি না
.
স্পর্শ গালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে,এতদিন বারোটার সময় রিমকে দেখে রাতে ঘুম ভালো হতো আর এখন সেটাও গেলো কপাল থেকে
রিম এরকম চালাকি করবে তা তো জানতাম না,এত রাত করে কিনা আমাকে ফলো করতে বাসা থেকে নেমে আসলো,এই মেয়েটা!!আবার লক্ষ রাখতে হবে রাত বারোটা চেঞ্জ করে কোন টাইমে তিনি চা নিয়ে বের হবেন তখন তাকে দেখতে যাবো,এর জন্য আমাকে একটা রাত নির্ঘুম কাটাতে হবে
.
রিম কোন সময়ে বারান্দায় বসে চা খাবে তা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো,পরেরদিন ভোরে আবারও বারান্দায় এসে দাঁড়ালো সে
স্পর্শ দাঁত কেলিয়ে রিমকে দেখে যাচ্ছে,রিমের এ প্রথম নিজেকে স্পর্শর সামনে অপরাধী মনে হচ্ছে
কাল লুকিয়ে দেখতে গিয়েও ধরা খাইলাম,দৌড়েও লাস্ট হলাম!
চলবে♥
দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১৬
Writer-Afnan Lara
.
কি ম্যাডাম??আবার দৌড়াবেন নাকি??
.
রিম মুখ বাঁকিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো,স্পর্শ হাসতে হাসতে গিয়ে টংটার সামনে থাকা বেঞ্চে বসেছে
প্রতিদিনকার মতন দূর থেকে রিপন দৌড়ে আসতেছে এদিকে
স্পর্শর মুখে আজ হাসি ফোটেনি,রিপনের মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে, এবং সে কিছুটা ভয় পেয়েই প্রাণপণে দৌড়ে এদিকেই আসছে,স্পর্শ উঠে দাঁড়ালো,রিপন স্পর্শর কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো”জাকির চাচার দলবল হামলা করছিল”
.
কেন?
.
স্পর্শ রিপনকে বেঞ্চে বসিয়ে পকেট থেকে রুমাল নিয়ে রিপনের মাথায় চেপে ধরে বললো”তুই কি করছিলি ওদের??”
.
কিছু করি নাই,তবে আশিক ভাইয়ের লগে মনে হয় ওদের মনমালিন্য,আমাকে আশিক ভাইয়ের ঠিকানা জানতেই পাকড়াও করেছিলো,আমি বলি নাই বলে এই হাল করলো,এখন মনে হয় তোমার কাছে আসবে
.
স্পর্শ স্বাভাবিক ভাবে রিপনের হাত ধরে বাইকে উঠালো,তার এখন একটাই কাজ আর সেটা হলো রিপনের মাথায় ব্যান্ডেজ করানো,আর আশিককে তারা পাবে না কারণ সে কদিনের জন্য তার দাদার বাড়িতে গেছে যেটা কিনা ইন্ডিয়ায়
.
স্পর্শ রিপনকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে,এদিকে মা বারবার ফোন করছে জানাার জন্য যে এত সকাল সকাল স্পর্শ গেলো কই
রিপনের মাথায় ব্যান্ডেজ করানো শেষে স্পর্শ রিপনকে ওর বাড়িতে দিয়ে আসতে গেলো
♣
রিম বিকালবেলায় আবার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে,কিন্তু স্পর্শ কোথাও নেই,তিনটা বছরে এ প্রথমে এসময়ে স্পর্শ এখানে নেই
ব্যাপারটা স্ট্রেঞ্জ লাগলো রিমের,সে প্রায়ই আধঘন্টার মতন দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে কিন্তু স্পর্শকে আসতে না দেখে সে চলে গেলো তার রুমে
.
তারপর নিজের রুমের জানালার পর্দাটা সরিয়ে একটা ম্যাগাজিন বই নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো সে
স্পর্শ রিমের বারান্দার দিকে তাকাতে তাকাতে তার বাসার দিকে চলে গেলো,রিম নিশ্চয় বারান্দা থেকে ফিরে চলে গেছে আজ
.
রিম ম্যাগাজিনের পাতা উল্টিয়ে স্পর্শর রুমের দিকে তাকালো একবার,তখনই দেখলো স্পর্শ দরজা লাগাচ্ছে,রিম সাথে সাথে একটু এগিয়ে এসে পর্দার কিনারে দাঁড়িয়ে পড়লো
স্পর্শ বিছানায় বসে গায়ের শার্টটা খুলতেছে,রিমঝিমের রুমের জানালার পর্দা সবসময় টানানো থাকে বলে স্পর্শর মাথায় নেই একদম যে এখন সেই জানালার কাছেই রিম দাঁড়িয়ে আছে এবং ওকে দেখছে
.
স্পর্শ গায়ের শার্টটা খুলে চোখ বন্ধ করে থাকলো কিছুক্ষণ,সারা শরীরে ব্যাথা,কিছুক্ষন আগেই মাইরপিট করে এসেছে সে,তাও কার জন্য?আশিকের জন্য,আশিকের একমাত্র শত্রু হলো জাকির চাচার দলবল এবং মেইনলি জাকির চাচা
আশিক কয়েক বছর আগে ওদেরই দলের সদস্য ছিলো,কিন্তু রিসেন্টলি সে দলটা ছেড়ে দেয় যার কারণে জাকির চাচার দলের কার্যাবলিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় তিনি আশিকের পিছনে লেগেছেন
স্পর্শ আজ আশিকের শত্রুকে টাইট দিতে গিয়ে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনার দলিল দস্তাবেজ করে এসেছে
মেরেও এসেছে মার খেয়েও এসেছে
গায়ে যে পাতলা সাদা গেঞ্জিটা আছে সেটাও খুললো সে,একটু ছড়ে গেছে সব জায়গায়,যার কারণে বিন্দু বিন্দু রক্ত বের হচ্ছে সেই জায়গা গুলো থেকে
রিম মুখে হাত দিয়ে সরে দাঁড়ালো,তার হাত পা কাঁপছে স্পর্শর এমন হাল দেখে
এমন কি করে হলো তাই বুঝতেছে না সে
রিম ঢোক গিলে বিছানায় দপ করে বসে পড়েছে
স্পর্শ পিঠে হাত দিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ফেললো,এত ব্যাথা মনে হচ্ছে সুঁই ফোটাচ্ছে কেউ
.
রিম জানালার পর্দা আস্তে আস্তে করে পুরোটা টেনে দিলো তারপর বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে স্পর্শর বারান্দার দিকে একবার তাকিয়ে বললো”এই!!! ”
.
স্পর্শ চমকে রিমের জানালার দিকে তাকালো সর্বপ্রথম, জানালার পর্দা টানানো দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সে জলদি করে শার্টটা পরে বারান্দার দিকে গেলো,রিম তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে
.
তুমি??জীবনে প্রথমবার আমাকে ডাকলে এভাবে,আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না
তা কি মনে করে?এক বেলা দেখা হয়নাই বলে টেনসন হচ্ছিলো??
.
“আপনার সাথে কথা বলায় বেকার!”
.
রিম চলে গেলো আর এক মূহুর্ত ও থাকলো না
.
যাক বাবা,একটু মশকরা ও করা যাবে না?
♣
স্পর্শ ভাবলো আজ সারা রাত না ঘুমিয়ে ওয়েট করে দেখবে রিম কখন চা খেতে বের হয়,কিন্তু সারা শরীরের যন্ত্রনায় তার অস্বস্তি লাগছে,ব্যাথার ঔষুধ মায়ের রুমে,এমনকি মলমও,,,নিতে গেলে মা হাজারটা প্রশ্ন করবে,আর এখন এসময়ে বাসা থেকেও বের হতে মন চাচ্ছে না তার
তাই সবসময়কার মতো হাতে ঘুমের ওষুধ নিয়ে বসে আছে সে,ঘুমের ঔষুধ খেলে ঘুম এসে যাবে আর ব্যাথা ও অনুভব হবে না তার
স্পর্শ এক গ্লাস পানি দিয়ে ঔষুধটা খেয়ে উদম হয়ে কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো
রিম ছটফট করছে বিছানায় বসে ম্যাগাজিনের বইটা হাতে নিয়ে,স্পর্শ একটু মলম ও লাগালো না,কিসের যেন ঔষুধ নিয়ে খেলো,কিন্তু এমন জঘন্য ক্ষত তে তো মলম লাগাতে হয়
রিমের কিছু ভাল্লাগছে না,এই লোকটার জন্য এত দরদ কেন হচ্ছে সেটাই বুঝতেছে না সে
.
স্পর্শ গভর ঘুমে
মা কয়েকবার ডিনার করার জন্য ডেকেছেন তাও ওর সাড়া না পেয়ে আর ডিস্টার্ব করেননি
রিম হাতে একটা মলম নিয়ে তার রুমের দরজা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
লোকটার প্রতি এত দরদ আমার আগে জানতাম না,শান্তিতে ঘুমাতেও পারছি না এই দরদের জেরে!
.
রিম ওড়নাটা কোনো রকম গায়ে পেঁচিয়ে তার বারান্দায় আসলো,একটা বড় সড়ো ঝাঁপ দিলে স্পর্শর বারান্দায় গিয়ে পড়বো,তবে বেশি শব্দ হবে না তো??
কে জানে,আল্লাহ মালুম
.
রিম মলমটা কোমড়ে গুজে তার বারান্দা টপকে লাফ দিয়ে স্পর্শর বারান্দায় দুম করে পড়লো একেবারে!
চারিদিক নিস্তব্ধ,কারও কোনো সাড়া নেই,কারণ তখন রাত একটা বাজে
রিম পা ধরে কিছুক্ষণ বসে ছিলো,এত দূর থেকে লাফ দিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে সে
তারপর উঠে দাঁড়িয়ে স্পর্শর রুমে ঢুকলো সে
স্পর্শর প্রতি তার এই দরদ এটা সে স্পর্শকে জানতে দেবে না কিছুতেই
আর স্পর্শ তো মনে হয় গভীর ঘুমে,জেগে গেলে লুকিয়ে পড়তাম
যাই চুপচাপ কাজ সেরে ফেলি,আমাকে আবার পালাতে হবে
রিম স্পর্শর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো ফ্লোরে, তারপর স্পর্শর পিঠে একটু একটু করে মলম লাগানো শুরু করলো
.
স্পর্শ একটু নড়ে এদিক ফিরে শুলো,রিম ভয় পেয়ে চোখ বড় করে রোবটের মতন বসে থাকলো চুপচাপ তারপর নিশ্বাস ফেলে আবারও মলম লাগানো শুরু করলো সে
স্পর্শর মুখটা খুব কাছ থেকে দেখতেছে আজ রিম
ল্যাম্পশ্যাডের হালকা আলোয় স্পর্শর মুখটা রঙিন হয়ে আছে
সুন্দর!তবে একটু রাগী আর বেপরোয়া লোকটা,এই আর কি
.
রিম উঠে দাঁড়িয়ে স্পর্শর গায়ে কম্বলটা আবারও টেনে দিয়ে চললো,,এবার ভয় করছে,আসার সময় লাফটা দিতে ভয় কম লেগেছিলো কিন্তু এখন দেখি বেশি ভয় করছে,আল্লাহ মাফ করিও
এই দুই বিল্ডিংয়ের ফাঁক দিয়ে না আমি পড়ে যাই,রিম উলটে পাল্টে কোনোমতে তার বারান্দায় আসলো তবে ঘুরেফিরে আবারও সেই পায়ে ব্যাথা পেলো,যার কারণে পা ধরে সে মুখে হাত দিয়ে বসে আছে
এই অসভ্য লোকটার ভালো করতে গিয়ে কিনা এত কষ্ট করতে হলো আমাকে, পা শেষ আমার!হাঁটতেও পারবো কিনা সিউর না আমি
.
পরেরদিন ঠিক ভোর সাড়ে চারটার সময় স্পর্শর ঘুম ভেঙ্গে গেলো
শোয়া থেকে উঠে গায়ের থেকে কম্বল সরিয়ে পা নিচে ঝুলিয়ে বসলো সে
সারা গায়ের থেকে মলমের গন্ধ আসছে,আর ব্যাথাও কম লাগছে কেন?
.
স্পর্শ গায়ে হাত বুলিয়ে হালকা চিপচিপা মলম ও পেলো,তারপর সাথে সাথে সে দরজার দিকে তাকালো,কাল রাতে যে অফ করেছিল এখনও তো অফই আছে তাহলে?মলম আসলো কই থেকে?
.
স্পর্শ বিছানা থেকে নেমে ভাবতে থাকলো মলম লাগালো কে,দরজা তো আটকানো,আর সে তো মলম লাগায়নি কাল রাতে,,শুধু ঘুমের ওষুধ খেয়েই ঘুমিয়েছিলো
স্পর্শ ভাবতে ভাবতে বারান্দায় আসলো,এসে দেখলো বারান্দার একটা ফুলের টব এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে স্পর্শ সেটা ঠিক করে রাখতে গিয়ে দেখলো একটা কানের দুল তার পাশে পড়ে আছে
দুলটা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ করতেই স্পর্শর চোখ কপালে উঠে গেছে
আরে এটা তো রিমের কানের দুল,আমার বারান্দায় কেন??কিভাবে??টবটাও এমন করে পড়ে আছে,আবার আমার গায়ে মলম!
তার মানে কি রিম কাল রাতে আমার রুমে এসেছিল?
মাই গড!!
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো
রিম এরকমটা করতে পারে??এটা আমি বিশ্বাস করি না
.
স্পর্শ জলদি করে তার রুমে এসে সব জায়গায় খুঁজলো তাও কিছু পেলো না
ইস মেয়েটা যদি একবার জানাতো পুরো রুম সাজিয়ে রাখতাম তার জন্য
আমার রিম আমার এত কেয়ার করে!!আমি এই খুশি কি করে সেলিব্রেট করবো!
♣
রিম চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠেছে ভোর পাঁচটার দিকে,তারপর কোনোরকম ঘুমের ঘোরে মুখ ধুয়ে এসে ওড়না মাথায় পেঁচিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো
কিন্তু নিচে স্পর্শ নেই,ওহহহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম উনার শরীর খারাপ,হয়ত এখনও ঘুম থেকে উঠেনি!
.
রিম চলে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরতেই নিজের বারান্দায় স্পর্শকে দেখে এক চিৎকার করলো
স্পর্শ ওর মুখ ধরে বললো”ভয়ের কিছু নেই,আমি আমি”
.
রিম একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো”কোন সাহসে আপনি আমার বারান্দায় আসলেন,আপনাকে এত সাহস দেয় কে?”
.
স্পর্শ মুচকি হেসে একটু এগিয়ে এসে বললো”তাহলে তোমাকে কে সাহস দিলো কাল রাতে আমার বারান্দায় যাওয়ার??শুধু তাই নয়,আবার আমার রুমে যাওয়ার?”
.
রিম তোতলাতে তোতলাতে বললো”মিথ্যা বলেন কেন?”
.
মিথ্যা??
.
স্পর্শ রিমের কানের পিছনে হাত নিয়ে ওকে কাছে টেনে এনে আরেক হাতে তার বাকি কানের দুলটা ঝুলিয়ে দেখিয়ে বললো”তাহলে তোমার এই কান খালি কেন?আর তোমার এই কানের বাকি দুলটা আমার বারান্দায় গেলো কি করে সেটাই বুঝলাম না রিম!!সহজ করে বলো”
.
রিম কানের দুলটা ছোঁ মেরে নিয়ে একটু দূরে সরে বললো”ঐ আসলে তামিম দুলটা ভুলে ওদিকে ছুঁড়ে মেরেছে
আমি আপনার বারান্দায় যাবো কি করে,এটা কি পসিবল নাকি,আর আমার দরকার ও পড়ে নাই
.
পসিবল তে অবশ্যই,যেমন আমি এখন আমার বারান্দা থেকে তোমার বারান্দায় আসলাম তেমনি তুমিও পারছো
.
মিথ্যা কথা বাদ দিয়ে চলে যান এখান থেকে,আপনার পাঁচ মিনিট সময় শেষ
.
স্পর্শ রিমের হাতজোড়া ধরে টান দিয়ে বললো”থ্যাংকস এতটা কেয়ার করার জন্য”
.
রিম চুপ করে থাকলো,স্পর্শ তার বারান্দায় চলে গেছে আবার,রিম জলদি করে কানের দুলটা পরতে পরতে রুমের ভেতর চলে গেলো আবার
.
স্পর্শ মুচকি হেসে ডাইনিংয়ে এসে বসলো,আঁখি সকালের নাস্তা বানাচ্ছে,মা স্পর্শর পাশে বসে বললেন”কিরে?এমন হাসির কি কারণ??আমার ছেলেকে এ প্রথম এমন হাসতে দেখলাম,কলিজাটা জুড়িয়ে গেলো রে,যাই হোক কাল রাতে ডিনার করতে আসিসনি কেন তুই?
.
খিধা ছিল না
.
এখন পেট পুরে খাবি,এবার বল এরকম হাসতেছিস কেন?
.
না এমনি কিছু না,বাবা কোথায়?
.
তোর বাবা ঘুমাচ্ছে,আজ দেরি করে অফিস যাবে
.
আচ্ছা
♣
কিরে রিম এমন পা কাঁপিয়ে হাঁটতেছিস কেন?কি হয়েছে তোর পায়ে?
চলবে♥
দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১৭
Writer-Afnan Lara
.
না আসলে পড়ে গেছিলাম তো তাই পায়ে একটু ব্যাথা লাগছে,সমস্যা নাই ঠিক হয়ে যাবে
♣
কলিংবেল বেজে উঠলো হঠাৎ,তামিম বাথরুম থেকে বেরিয়ে প্যান্ট এক হাতে ধরে চললো দরজা খুলতে,বাসার দরজা খোলার দায়িত্ব সবসময় তার
রিমঝিম টিভি চালিয়ে সোফায় পা তুলে বসে দেখতে থাকলো
তামিম দরজা খুলতেই দেখলো স্পর্শ পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,হাতে একটা কিসের যেন ডালা সাজানো
.
মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে মেইন দরজার দিকে উঁকি দিয়ে দেখে বললেন”কে এসেছে রে তামিম?”
.
স্পর্শ ভাইয়া!
.
কথাটা শুনে রিম হকচকিয়ে ঠিকঠাক হয়ে বসে পড়েছে ততক্ষণে
মা হাত মুছে এগিয়ে এসে বললেন”বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?ভেতরে আসো”
.
স্পর্শ ডালাটা হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকে রিমের দিকে তাকালো একবার,রিম সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে
স্পর্শ সোফয় বসে বললো”এই ডালাটা রিহাবের জন্য পাঠিয়েছে মা আর বাবা,এঙ্গেজমেন্টে পরবে যে সেই শেরওয়ানিটা,সাথে একটা ব্রুজ ও আছে”
.
এসবের কি দরকার ছিলো,আমরা তো আঁখির জন্য সহ শাড়ী পাঠাতাম আবার তোমরা কিনতে গেলে কেন?
.
আসলে আমাদের নিয়ম হলো মেয়েরা দিবে যদি মেয়েদের আর্থিক অবস্থা ভালো হয় তবে,আর বাবা তো এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না,তাই দিয়ে দিলেন
.
আচ্ছা বসো আমি চা নাস্তা আনছি
.
তামিম ও তার মায়ের পিছু পিছু চলে গেলো
রিম পালাতে যেতেই স্পর্শ ওর ওড়নার শেষ অংশ ধরে ফেললো,,রিমের তো ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে সাথে সাথে
.
এই!!তুমি বানাও না চা,তোমার হাতের চা খাব
.
রিম ব্রু কু্ঁচকে বললো”সেই ভাগ্য আপনার নাই,কোনোদিন হবেও না”
.
এই রিম চা বানিয়ে দে,আমি তরকারি রান্না করতেছি
.
স্পর্শ দাঁত কেলিয়ে বললো”দেখলা তো!সয়ং তোমার আম্মু বললো বানাতে,এবার তুমি কি করবে??”
.
রিম আর কি করবে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে
চুপচাপ চা বানিয়ে স্পর্শর সামনে এসে হাজির সে
সাথে তামিম ও আছে,তামিমের হাতে বিসকিটের বাটি
রিম স্পর্শর হাতে চায়ের কাপ দিয়ে চলে গেছে
স্পর্শ চায়ে চুমুক দিয়ে মুচকি হাসলো,রিমের মতনই মিষ্টি চা,আর চায়ের স্বাদটাও অন্যরকম, এত ভালো একটা ফ্লেভার যে স্পর্শ চোখ বন্ধ করে ফেললো আবেগে
.
তামিম স্পর্শর পাশে বসে বিসকিট একটা মুখে দিয়ে ফিসফিস পরে বললো”রিম আপুর চায়ের স্পেশালিটি কি জানো?”
.
কি?
.
এলাচ তিনটে দেয় সবসময়,আমি দেখছি হুহ,কাউকে বলবা না কিন্তু
.
আইচ্ছা কাউকে কমু না
♣
রিম নিজের রুমে এসে বসে আছে,যতক্ষন না স্পর্শ যাবে ততক্ষণ সে রুম থেকে বের হবে না
.
তামিমের আম্মু রান্না নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত,তামিম দুপুরের আগেই ভাত খায় বলে মা ওকে ডাকলেন রান্নাঘরে এসে উনার হাতে খেয়ে যাওয়ার জন্য,তার আর বাহিরে বেরিয়ে এসে ওকে খাওয়ানোর সময় নেই,রিমঝিমের যেন কি হলো, রুম থেকে বের হচ্ছেই না
.
রিম গালে হাত দিয়ে নিজের চুড়ি গুলো দেখছে,বোরিং লাগলেই সে নিজের চুড়ি গুলো দেখে বসে বসে,এখনও তাই করছে
হঠাৎ দরজা লাগানোর আওয়াজ পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো সে
স্পর্শ ওর রুমের দরজা লাগাচ্ছে ভিতরে ঢুকে
রিমঝিমের মনে হলো কেউ ওকে খুন করতে আসছে
এক লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে সে রুমের এক কোণায় চলে গিয়ে বললো”আআআপপনি দরজা লাগাচ্ছেন কেন!”
.
বলবো যদি তুমি এখন মা বলে চিৎকার না করো তবে
.
রিম একটা নিশ্বাস ফেলে বললো”বলুন”
.
স্পর্শ এগিয়ে আসতে আসতে পিছনে লুকিয়ে রাখা একটা প্যাকেট সামনে এনে ধরলো
রিম প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে আছে
.
স্পর্শ কাছে এসে প্যাকেটটা রিমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভিতর থেকে ওড়না একটা বের করলো নিজে নিজেই
ওড়নাটার নিচ প্রান্তে রঙ বেরঙের পমপম আটকানো,ওড়নার রঙ ঘাড়ো গোলাপি,তবে পমপমগুলো ভিন্ন রমের
স্পর্শ ওড়নাটা মেলে রিমঝিমের মাথায় পরিয়ে দিয়ে বললো”জানো সবসময় তোমাকে ওড়না গিফট করি কেন?”
.
রিম নির্বাক হয়ে মাথা উঁচু করে স্পর্শের দিকে চেয়ে আছে
স্পর্শ ওড়নাটা ঠিক করতে করতে বললো”কারণ তোমাকে ঘোমটা দেওয়া অবস্থায় অনেক সুন্দর লাগে,যে সুন্দরের ব্যাখা আমি দিতে পারবো না,তবে অনুভব করতে পারি
যতবার তোমার মাথায় ঘোমটা দেখি ঠিক ততবারই মনে আমার ভালোলাগা সৃষ্টি হয়,মন চায় পাঁচ মিনিট নয় সারাজীবন ধরে তোমাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেখতে থাকি তোমার ঐ মুখ যেটা ঘোমটার ভেতর লুকানো
আমার ভাবতেই অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে যে যদি তুমি কখনও আমার স্ত্রী হও সেদিন বিয়ের রাতে লাল টুকটুকে নেটের ঘোমটা টায় তোমাকে কতই না সুন্দর লাগবে,পরনে থাকবে লাল একটি বেনারসি,দু হাতে থাকবে ২ডজন লাল চুড়ি,কপালে তোমার ঐ চিকন ব্রুর মাঝকানটায় থাকবে একটি লাল টিপ,টিপটায় আবার স্টোন আটকানো থাকবে,কানে থাকবে সোনার কানের দুল,গলায় হালকা পাতলা সোনার একটা নেকলেস
পায়ে লাল আলতা,সোনার একটি পায়েল,মোটকথা সেদিন তুমি লালে লাল সাজবা,আর আমিও
আদৌ সে দিন আসবে কিনা জানি না তবে তোমাকে সেই বেশে দেখার খুব শখ আমার
.
রিম গায়ের থেকে ওড়নাটা সরিয়ে বললো”হ্যাঁ,যেদিন আমার বিয়ে হবে আরেকটা ছেলের সাথে সেদিন নাহয় দেখে নিয়েন,বারান্দায় পাঁচ মিনিটের জন্য দাঁড়াবো না হয়”
.
স্পর্শ রিমের গায়ে ওড়নাটা আবারও জড়িয়ে ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”তুমি আমার হবে না তো কারোর হবে না, আমি কুমার থাকব তো তুমিও চির কুমারি থাকবা,কেউ তোমাকে বিয়ে করতে আসলে সে কবুল বলার আগেই উধাও হয়ে যাবে,স্পর্শ ইশতিয়াক তোমাকে কথা দিচ্ছে
.
রিম কপাল কুঁচকে বললো”তবে আপনিও হবেন না”
.
আমি হবো কিনা সেটা জোর দিয়ে বলতে পারি না,কারণ তুমি তো তুমি,তোমার বাবা আর ঐ ভাই রাজি হলেও তুমি রাজি হবে না আর তাই আমি আমাদের বিয়ের স্বপ্ন দেখি না,সো এখন আমার ওড়নাটা পরে থাকো,ভাল্লাগছে অনেক
.
স্পর্শ মুচকি হেসে রিমের হাত ছেড়ে দিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে চলে গেলো দরজা খুলে
রিম থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়
এই লোকটা আমাকে কথা শুনিয়ে চলে যাওয়ার পর আমার আর কিছু বলার থাকে না কেন?মনে হয় শরীর অবশ হয়ে যায় এরকম কিছু
.
রিম ওড়নাটা খুলে রেখে দিলো,,স্পর্শ রিমদের বাসা থেকে বের হতেই কল আসলো রিমনের,রিমন হলো রিমঝিমদের ক্লাসের স্টুডেন্ট,সে রিমঝিম কি করে না করে সেসবের খবর দেয় স্পর্শকে,তো এখন সে খবর দিতে ফোন করেছে যে তাদের ব্যাচ পিকনিকে যাবে নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কে,তো রিমঝিম ও নাকি নাম দিয়েছে তাতে
স্পর্শ মুচকি হেসে বললো”সেই ভার্সিটির এক্স স্টুডেন্টরা যেতে পারবে তো?”
.
হ্যাঁ ভাইয়া পারবে,তুমি ও জয়েন হইও
.
অবশ্যই,কেনো নয়!
.
স্পর্শ এক গাল হাসি দিয়ে তার বাসায় চলে গেলো,ওদিকে রিম মহাখুশি সে একদিনের জন্য স্পর্শর থেকে দূরে থাকবে,সব কিছু থেকে দূরে সে একটু শান্তিতে ঘুরতে যাবে
সে তো আর জানে না স্পর্শ বুকিং দিয়ে রেখেছে আগে থেকে
.
এই সপ্তাহের শেষে মানে শুক্রবারে হতে চলেছে রিহাব আর আঁখির এঙ্গেজমেন্ট
সব কিছু বন্দবস্তের কাজ করছে আঁখিরা,,রিহাবেরা জাস্ট আংটি এরেঞ্জ করবে
আসাদুজ্জামান চান যেন তার মেয়েকে তিনি এমন ভাবে বিয়ে দেন যেন এই মহল্লার প্রতিটা মানুষ বলে আঁখির মতন ধুমধাম করে বিয়ে আর কারও হয়নি
.
রিম দুপুরের ভাত খেয়ে নিজের রুমে এসে স্পর্শের দেওয়া ওড়নাটা ওলটপালট করে দেখতে দেখতে ওর মনে পড়লো কাল রাতে স্পর্শর এমন অবস্থার কথা,আচ্ছা উনাকে তো জিজ্ঞেস করার ছিল যে উনার এমন হাল হলো কি করে
.
রিম জলদি করে জানালার পর্দা সরাতে গিয়ে ওর মনে পড়লো এখন যদি জিজ্ঞেস করি তাহলে বলবে আমি জানি কেমনে উনার শরীরে ক্ষত
ধুর!!!থাক জানতে হবে না আমার এতো,উনি যে বখটে নিশ্চয় কারোর সাথে মাইরপিট করে এসেছে,আবার কোন মেয়ের চক্করে পড়েছে কে জানে
আমার কি?আমাকে বন্দি জীবন থেকে মুক্তি দিলেই হলো
আর কিছু চাই না আমি
♣
স্পর্শ সিগারেট একটা ধরিয়ে চায়ের দোকানটার সামনে বসে আছে,রিপন ওর পাশে বসে আছে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে,সে একবার একদিকে তাকাচ্ছে আবার মাঝে মাঝে স্পর্শর দিকেও তাকাচ্ছে,তার কিছুক্ষণ পর সে মুখ খুললো কথা বলার জন্য যা এতক্ষণ ধরে তার পেটে ঘুরছিল
.
আচ্ছা স্পর্শ ভাই আপনি জাকির চাচার দলবলরে মারতে গেলেন কেন?শুধু শুধু এখন তারা আপনার ও শত্রু হয়ে গেলো
.
আমার প্রানের বন্ধুকে মারার জন্য উঠে পড়ে লাগছে তারা তাদের আমি এত সহজে ছেড়ে দেবো?
.
কিন্তু লাভ তো হলো না,জাকির চাচা সেই ঘুরেফিরে আবার প্রতিশোধ নিতে আসবে,তখন?
.
পরেরটা পরে,আমি কখনও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবি না,দেখলি না রিমকে আমার করে পাব কিনা সেটা পর্যন্ত ভাবি না আমি আর জাকির আর তার দলবল কি তার কাছে!
.
কথাটা বলে স্পর্শ আঁতকে উঠলো,রিপন চোখ বড় বড় করে চেয়ে বললো”আমি যেটা ভাবছি আপনিও সেটা ভাবছেন না তো স্পর্শ ভাই?”
.
স্পর্শ হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো
জাকির চাচা নিশ্চয় যখন জানবে সে রিমকে পাগলের মত ভালোবাসে তখন রিমের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে
.
দেখছেন ভাই,আশিকের জন্য আপনি নিজের বিপদ তো আনলেনই সাথে করে রিম ভাবীর ও বিপদ আনলেন,মাইয়া মানুষ যদি কোনো বিপদ হয়ে যায়?
.
না!!!!!রিমের কিছু হবে না,আমি থাকতে কেউ ওর গায়ে একটু আঁচ ও দিতে পারবে না,আমি সবসময় ওর সাথে ছায়ার মতন থাকবো
.
স্পর্শ রিমের বারান্দা দিকে তাকিয়ে এবার সামনে রাস্তাটার মোড়ের দিকে ফিরতেই দেখলো রিম একটা মেয়ের সাথে হাসতে হাসতে দূর থেকে আসছে,দুপুর তিনটা বাজে তখন,এসময়ে ও কোথা থেকে আসছে??
স্পর্শ হনহনিয়ে সেদিকে ছুটলো
রিমের সাথে থাকা ঐ বাসার অনু এক ছুটে পালালো,স্পর্শকে সে প্রচুর ভয় পায়
রিম অনুর চলে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলো না,এই মেয়েটা কখনও বলে কয়ে যায় না,কিন্তু পরেই স্পর্শকে দেখে সে নিজেও দাঁড়িয়ে পড়লো শেষমেষ
স্পর্শ কাছে এসে বললো”কই গিয়েছিলে?”
.
আপনাকে বলতে হবে?
.
হ্যাঁ বলতে হবে
.
না বলবো না,পথ ছাড়ুন আমার
.
স্পর্শ রেগে গিয়ে এক ধমক দিয়ে বললো”সোজা উত্তর দিতে পারো না তুমি?”
.
না পারি না,ধমক দিচ্ছেন কেন??আমি আপনার ধমকে ভয় পাই?
.
স্পর্শ রিমের হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে টানতে টানতে একটা বাসার কোণায় নিয়ে আসলো
.
এটা কি আবার,আশেপাশের মানুষ কি বলবে,আপনি এমন করছেন কেন?
.
শুনো রিমঝিম!এখন থেকে কোথাও গেলে আমাকে জানিয়ে তারপর যাবা,ওকে?
.
আমাকে বন্দি রাখতে রাখতে এখন এই টুকু স্বাধীনতাও কেড়ে নিবেন আমার??
.
হ্যাঁ নেবো
.
খুব জোরে কষিয়ে চড় দিতে ইচ্ছে করছে বাট দিব না,আপনার স্বভাবের সাথে আমি খুব ভালো মতন পরিচিত,না জানি কি না করে ফেলেন তাই আর চড়টা মারলাম না কিন্তু তাই বলে এই নয় যে আপনি আমাকে চড় দিতে বাধ্য করবেন,ডেইলি একটা না একটা ড্রামা ক্রিয়েট করে
.
চড় দাও এখন,কাউন্ট করবো না বাট!!আমার কথা তোমাকে রাখতেই হবে
.
রিম দাঁতে দাঁত চেপে চড় মেরে দিয়ে বললো”আপনি খুব খারাপ”
.
স্পর্শ মুচকি হেসে রিমের পাশ দিয়ে হাত নিয়ে ওয়ালে রেখে বললো”আর মাত্র ৭টা বাকি”
.
রিম চোখ কপালে তুলে বললো”আপনি না বললেন কাউন্ট করবেন না”
.
স্পর্শ দুষ্টু করে একটা হাসি দিলো তারপর নিজের চাপা দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো”স্পর্শের স্বভাবের সাথে নাকি তুমি খুব ভালো ভাবে পরিচিত??তাহলে কি করে বিশ্বাস করলা আমার কথা?”
.
রিম রেগে স্পর্শর বুকে কিল ঘুষি যত পারলো মারলো তারপর হাঁপিয়ে গিয়ে বললো”সরুন,আমি বাসায় যাব”
চলবে♥