দুষ্টু_মেয়ের_মিষ্টি_সংসার পর্ব-০৪ | বাংলা ভালোবাসার গল্প

0
2943

#গল্পঃ_দুষ্টু_মেয়ের_মিষ্টি_সংসার_
#লেখকঃ_Md_Aslam_Hossain_Shovo_(শুভ)
#পর্বঃ ৪…

√-রিতুঃ আবার হারামজাদা বলে আমি রিতু…(রেগে)

আমিঃ আমি এই ভুত পেত্নী বিশ্বাস করি না…

রিতুঃ তাহলে প্রমাণ দেখবি তুই?

আমিঃ হুমম দেখবো।

রিতুঃ তাহলে দেখ..

~ বলেই রিতু একটা ঝাপটা দিয়ে আমার বুকের উপর উঠে বসে আমার মুখে কামড় দিয়ে ধরলো।
আমি দিলাম কোমরে জোরে একটা চিমটি। রিতু লাফ দিয়ে আমার বুকের উপর থেকে নেমে সরাসরি খাট থেকে নেমে দাঁড়ালো ~

রিতুঃ ওই সয়তান, তুমি আমায় এতো জোরে চিমটি কাটলে কেনো?

আমিঃ হা হা, এক চিমটি খেয়ে তুই থেকে তুমিতে চলে গেলো।

রিতুঃ সয়তান ছেলে কত জোরে চিমটি দিয়েছে। আমার এখন জ্বালাপোড়া করছে ওখানে… (চোখে পানি চলে এসেছে)

আমিঃ তুমিও তো কত জোরে আমায় কামড় দিয়েছো। এতো জোরে কামড় না দিলে আমি চিমটি কাটতাম নাকি।

~ রিতুর কান্না করছে। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, আর রিতু হাত দিয়ে মুছছে ~

আমিঃ এই রিতু এই টুকুতে কান্না করতে হয় নাকি? কান্না বন্ধ করো।

রিতুঃ আমি খুব ব্যাথা পায়ছি..(চোখ পানি)

~ দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলো ~

আমিঃ আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে সরি।

রিতুঃ আচ্ছা মাফ করে দিলাম। আর কখনো আমায় চিমটি কাটলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।

আমিঃ আচ্ছা তাই হবে। কিন্তু এই পেত্নী সেজে পাকনা পাকনা কথা বলার কারন কি?

রিতুঃ বলবো না।

আমিঃ বললে কি হবে শুনি..?

রিতুঃ কেনো বলবো হুম?

আমিঃ কারন আমি তোমার স্বামীর।

রিতুঃ কচুর…

আমিঃ ওই পাজি মেয়ে, কথায় কথায় এতো কচু কচু করো কেনো?

রিতুঃ ভালো লাগে তাই…

আমিঃ হুমম বুঝলাম। এবার বলো এই পেত্নী মালেকা হওয়ার বুদ্ধি মাথায় আসলো কেনো?

~ রিতু দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে ~

আমিঃ কি হলো বলো?

রিতুঃ যেনো তুমি আমার কাছে না আসতে পারো।

আমিঃ মানে কি? কাছে গেলে কি হতো?

রিতুঃ আমার খুব ভয় করে। সেই জন্য তুমি যেনো আমার কাছে আসতে ভয় পাও তাই পেত্নীর অভিনয় করছি।

আমিঃ স্বামী স্ত্রী এক সাথে থাকবে এতে ভয়ের কি আছে..

রিতুঃ এতো কিছু আমি বলতে পারবো না। আমার খুব ভয় হয় এটায় শুধু জেনে রাখো।

আমিঃ এটা তো আমায় বললেই হতো, তাহলে কাছে যেতাম না।

রিতুঃ আমি শুনেছি ও টিভিতে দেখেছি স্বামীরা খুব খারাপ হয়। তারা বউয়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করে।

আমিঃ টিভিতে তো কত কিছু দেখায়, তাই বলে সব সত্যি নাকি।

রিতুঃ হয় তো সত্যি। আমার বান্ধবীরা সব বলছে।

আমিঃ ওই পাকনা বুড়ি, তোমরা বুঝি এই নিয়ে আলোচনা করতে?

রিতুঃ তোমায় বলবো কেনো?

আমিঃ পাকনা বুড়ি একটা। তাই হঠাৎ করে তুই থেকে তুমি বললে যে?

~ রিতু এক পা দুই পা করে এগিয়ে এসে আমার বুকে জোরে একটা চিমটি কাটলো ~

আমিঃ উফফ, কি হলো চিমটি কাটলে যে?

রিতুঃ আমায় কেউ কিছু দিলে আমি সেটা ফেরত দিয়ে দেই। তুমি যেমন আমায় তুমি বলছিলে, তাই তোমাকেও তুমি বলে ফেরত দিয়ে দিয়েছি। আবার চিমটি দিয়েছিলে, তাই চিমটি কেটে ফেরত দিয়ে দিলাম ব্যাথা।

আমিঃ তোমার মাথায় তার ছ্যাড়া কয়টা আছে?

রিতুঃ তোমায় বলবো কেনো..(হাসি দিয়ে)

আমিঃ আচ্ছা তাহলে এখন যদি আমি জরিয়ে ধরি, তাহলে কি হবে?

রিতুঃ ভাই তুমি কিন্তু ভুলেও এই কাজ করবে না।

আমিঃ আমি কি তোমার ভাই এখনো?

রিতুঃ হুম তুমি আমার ভাই। তোমার দিকে তাকালেই কেমন যেনো ভাই ভাই লাগে। প্লিজ ভাই আমার সাথে কোনো দুষ্টুমি করার চেষ্টা করবে না কিন্তু, নাহলে মনে খুব কষ্ট পাবো।

~ রিতু দেখি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে ~

আমিঃ আর যদি জোর করে জরিয়ে ধরি..(হাসি দিয়ে)

রিতুঃ আমি চিৎকার দিবো…

আমিঃ দেও তাহলে চিৎকার, এখন তো তাই করবো হা হা…

~ রিতু চোখ বুঝে দিলো “ওমা গো” বলে জোরে চিৎকার ~

আমিঃ ওই চুপ রে, ইজ্জত খাবি নাকি?

~ রিতু চুপ হয়ে গেলো ~

~ পাশের রুম থেকে লিজা ভাবি ডাকতে রইলো, শুভ শুভ বলে ~

আমিঃ হ্যা, ভাবি বলুন…

লিজা ভাবিঃ আবার কি হলো, রিতু চিৎকার করে কেনো? কোনো সমস্যা…

আমিঃ রিতুর ঘারে পেত্নী ভর করছে তো তাই। কি যে ঝামেলায় পড়ছি এই পাগলী মেয়ে নিয়ে।

~ রিতু কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ~

লিজা ভাবিঃ বুঝতে পারছি তোমাদের দিয়ে আর বিড়াল মারা হবে না। এর চেয়ে তোমরা ঘুমিয়ে পড়ো আর আমাদেরও একটু শান্তিতে ঘুমাতে দেও।

আমিঃ আচ্ছা ভাবি আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি। এই পাগলী রিতুকে খাটে এসে ঘুমাতে বলুন।

লিজা ভাবিঃ রিতু বোন আমার, যাও চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।

রিতুঃ আচ্ছা ভাবি…

~ টিনের ঘর থাকায় এক রুমের কথা অন্য রুমে শোনা যায়, তাই এভাবে দুই রুমে থেকেও কথা বলা যায়। আমি কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়লাম। রিতু গিয়ে টেবিলের উপর থেকে গ্লাসের দুধ খেয়ে শাড়ি ঠিক করতে করতে এসে আমার থেকে একটু দূরে সরে শুয়ে পড়লো।

আমি গ্লাসের দুধের কথা ভুলে গেলেও পাগলী দেখি মনে করে রাখছে, মনে মনে ভাবছি আর হাসছি। হয়তো গরুর দুধ খেতে অনেক পছন্দ করে। এখনো শাড়িটাও ঠিক মত কন্ট্রোল করতে পারে না, খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। পেট কোমর সব দেখা যাচ্ছে, আমি শুধু দেখছি আর মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছি। বলতে গেলে আবার যদি পাগলী চেতে যায়, তাই চুপ থাকায় ভালো।

তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম –

সকালে ঘুমের মধ্যে কেমন কেমন যেনো মনে হচ্ছে পায়ের তালুতে কেউ সুরসুরি দিচ্ছে। চোখ খুলে দেখি রিতু আমার পায়ে সুরসুরি দিচ্ছে ~

আমিঃ ওই পিচ্চি, সকাল বেলা বুঝি আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করছিস?

রিতুঃ ওই আমি পিচ্চি নাকি?

আমিঃ তাহলে নিজেকে বড় ভাবিস নাকি?

রিতুঃ আমায় আবার তুই তুই করে বলছো তুমি?

আমিঃ এই ভাবে ঘুম নষ্ট করে দিলে তাহলে কি বলবো তোকে.?

রিতুঃ কাকিমা তো বললো তোমায় ডাকতে।

আমিঃ তোর কাকিমা কে?

রিতুঃ কে আবার তোমার মা।

আমিঃ ওই পিচ্চি, আমার মা আবার তোর কাকি আছে নাকি এখনো? শাশুড়ী হয় শাশুড়ী। আম্মা বলবি এখন থেকে।

রিতুঃ আমার তো লজ্জা লাগে ভাই…

আমিঃ এখন আবার আমায় ভাই বললি। শাশুড়ীকে আম্মা বলতে লজ্জা লাগে, স্বামীর সাথে ঘুমাতে ভয় লাগে, তাহলে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো তোর?

রিতুঃ তুমিতো আমায় জোর করে করলে।

আমিঃ আবার সেই মিথ্যা অপবাদ.(রেগে)

রিতুঃ ঢং দেখে বাঁচি না। যাও উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও। নাস্তা নিয়ে আসছি…

আমিঃ আসো না পিচ্চি আমার বুকে, একটু জরিয়ে ধরি… (হাসি দিয়ে)

রিতুঃ লুচ্চা বদমাইশ পোলা। লজ্জাও লাগে না এগুলো বলতে।

আমিঃ ওই তুই আমার বউ। তোকে বলবো না তো অন্য মেয়েদের গিয়ে বলবো নাকি?

রিতুঃ হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।

আমিঃ আমার কত পোড়া কপাল রে রিতু…

রিতুঃ তোমার আবার কি হলো?

আমিঃ সারাজীবন গল্পে, নাটকে, মুভিতে দেখে আসলাম নতুন বউ স্বামীর ঘুম ভাঙ্গায় ভেজা চুলের পানিতে। আর আমার কি পাগলী বউ, তেমন তো কিছু করলো না, উল্টো পায়ে সুরসুরি দিয়ে আমার ঘুমটা নষ্ট করে দিলো।

রিতুঃ আমি কেনো ভোর বেলা গোসল করবো? আমরা তেমন কিছু করছি নাকি রাতে…

~ এই বলেই রিতু জিহ্বাতে কামড় দিলো। লজ্জায় মুখ গোলাপি হয়ে গিয়েছে ~

আমিঃ পিচ্চি মেয়ে সব বুঝে, কিন্তু এমন ভাব নিয়ে থাকে যে কিছু বুঝে না… (হাসি দিয়ে)

রিতুঃ কচু বুঝি…

~ বলে রিতু লাজুক হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর লিজা ভাবি নাস্তা নিয়ে আসলো আমার জন্য ~

আমিঃ আপনি নাস্তা নিয়ে আসলেন যে ভাবি?

লিজা ভাবিঃ তোমার বউকে বললাম তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসতে, সে তো লজ্জায় মুখ গোলাপি রঙের করে রাখছে। এমন কি বলছো গো বউকে যে লজ্জায় মুখ গোলাপি করে রাখছে?

আমিঃ ওই পাগলীর কথা বাদ দেন ভাবি। ওর মাথায় তার ছ্যাড়া আছে তো, তাই কখন কি করতে হয় বুঝে না।

লিজা ভাবিঃ হুম বুঝি বুঝি। কিছু না বললে বুঝি এতো লজ্জা পাচ্ছে? (হাসি দিয়ে)

আমিঃ তেমন কিছু না ভাবি। আচ্ছা আপনি নাস্তা করছেন?

লিজা ভাবিঃ ওমা গো, দেবর দেখি ভাবি নাস্তা করছে নাকি তার খবরও নিচ্ছে।

আমিঃ মেয়েদের কাজ হলো সব সময় খুঁচা দিয়ে কথা বলা তাই না?

লিজা ভাবিঃ হা হা, হুম তাই। আচ্ছা গতকাল পরে আর কি কি করলে?

আমিঃ পরে ঘুমিয়ে গেলাম আপনার কথা মতো।

লিজা ভাবিঃ কেনো বিড়াল মারো নাই?

আমিঃ হা হা, কি যে বলেন আপনি…

লিজা ভাবিঃ আরে বলো গো দেবরজী..?

আমিঃ না ভাবি তেমন কিছু না। রিতুতো আমার কাছে থাকতেও ভয় পায়।

লিজা ভাবিঃ তাই নাকি?

আমিঃ হুমম ভাবি।

~ ভাবি আমার সামনে সব নাস্তা সাজিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসলো ~

লিজা ভাবিঃ শোনো, আমি যা বলি তাই করো।

আমিঃ কি করবো?

লিজা ভাবিঃ আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তোমরা কি সত্যি বিয়ের আগে থেকে প্রেম করতে?

আমিঃ না তো। এগুলো তো সব মিথ্যা বলছি পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে।

লিজা ভাবিঃ তাহলে তো ভালোই।

আমিঃ ভালো কেনো?

লিজা ভাবিঃ ভালো এই জন্য যে তোমরা এখন প্রেম করতে পারবে।

আমিঃ মানে? একটু বুঝিয়ে বলুন..

লিজা ভাবিঃ দেখো তুমিও প্রেম করো নাই, রিতুও আগে কখনো প্রেম করো নাই, তাহলে এখন তোমরা প্রেম করো আগে জমিয়ে বুঝলে। মানে রিতু যতদিন না চাইবে ততদিন ওকে কোনো ব্যাপারে জোর করে কিছু করবে না। ততদিন নাহয় দুই জন দুষ্টু মিষ্টি প্রেম চালিয়ে যাও। দেখবে কত মজা লাগবে বউয়ের সাথে প্রেম করতে বুঝলে..? (হাসি দিয়ে)

আমিঃ আপনার কথায় রাখবো তাহলে (হেসে)

লিজা ভাবিঃ হুম সেটায় করো। তোমার ভাই তো আমায় ১ মাস সময় দিয়েছিলো বুঝলে। ততদিন আমরা জমিয়ে প্রেম করছি।

আমিঃ ভাই তো আপনাকে একমাস সময় দিয়েছে, কিন্তু আমি পারবো না এতোদিন সময় দিতে রিতুকে।

লিজা ভাবিঃ পাগল একটা। যত ফ্রী হতে পারবে, তত প্রেম জমবে বুঝলে।

আমিঃ আচ্ছা দেখি কিভাবে কি করা যায়।

লিজা ভাবিঃ হি হি, আচ্ছা দেখো তাহলে। আর শোনো আগামী কাল সকালে তোমার ভাই বলছে তোমাকে ও রিতুকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় যাবো। তোমাদের দাওয়াত থাকলো কিন্তু বুঝলে। আগামী কাল সকালে যাবো, তারপর দেখবে তোমার পাগলী বউকে কিভাবে রাগাতে হয়….(হাসি দিয়ে)

আমিঃ ওই পাগলীকে আবার কিভাবে রাগাবেন?

লিজা ভাবিঃ সেটা পরেই দেখতে পারবে। এখন নাস্তা করে নেও তো তাড়াতাড়ি…

~ আমি নাস্তা করে নিলাম লিজা ভাবির সাথে গল্প করতে করতে।
কত স্বপ্ন ছিলো বিয়ের পর ৭ দিন দরজা খুলবো না, শুধু বউ আর আমি সব সময় রোমান্স করবো, গল্প করবো।

কিন্তু কপাল এতটা খারাপ যে সেই সকাল থেকে নাস্তা করে বসে বসে দুপুর হয়ে গেলো রিতুর কোনো খোঁজ নেই। একবারো আমার রুমে আসার নামও নেই। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে শেষে গোসল করতে বের হয়ে গেলাম।

বড় ঘরে গিয়ে দেখি রিতু ম্যাডাম গোসল করে, সেজেগুজে খাটের উপর শুয়ে টিভি দেখছে। মেজাজ খুব গরম হয়ে গেলো, নতুন বউ থাকবে আমার কাছাকাছি, আর ওনি এখানে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে ~

আমিঃ ওই তুই এখানে কেনো?

রিতুঃ তাহলে কোথায় থাকবো?

আমিঃ কোথায় থাকবি মানে, এটা কি তোর ঘর?

রিতুঃ তাহলে কার ঘর এটা? এই বাড়ির বউ আমি। তাহলে তো এই ঘর আমারই হলো।

আমিঃ সেটা না হয় হলো। কিন্তু আমাদের রুম আছে না, ওখানে গিয়ে টিভি দেখ…

রিতুঃ তুমি সব সময় ঝাড়ি দিয়ে কথা বলো কেনো? আবার এখন তুই তুই করে কথা বলছো। আমি তো এখন আর তোমাকে তুই বলি না।

আমিঃ ওরে নেকামো রে। তাহলে কি বলবো?

রিতুঃ সব সময় আমায় তুমি তুমি করে বলবে কেমন…(হাসি দিয়ে)

আমিঃ আচ্ছা বলবো, কিন্তু সব সময় তাহলে আমার কাছে কাছে থাকতে হবে…

রিতুঃ আমি পাশাপাশি থাকি, আর সুযোগ পেলে জরিয়ে ধরো তাই না..

আমিঃ কেনো গো সুন্দরী, ধরলে কি হয় শুনি?

রিতুঃ ওলে বাবালে, কত ঢং… (ভেংচি কেটে)

~ হঠাৎ চোখ গেলো খাটের উপর পাশে লিজা ভাবি উপর। দেখি সে বসে বসে মিটমিট করে হাসছে। আমি কি লজ্জায় পড়ছি হঠাৎ, বলে বুঝানো মুসকিল । একটা হাসি দিয়ে ভাবির দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গোসল করতে চলে গেলাম।

গোসল শেষ করে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকাল হয়ে গিয়েছে। যখন ঘুম ভাঙ্গছে তখন দেখি রিতু খাটের উপর আমার পাশে বসে ক্রিম নিচ্ছে মুখে ~

আমিঃ সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে ম্যাডামের?

রিতুঃ আমি বুঝি তোমার ম্যাডাম?

আমিঃ ম্যাডাম হলে দোষ কি? যত পাকনা বুড়ির মত পাকনা পাকনা কথা বলেন, ম্যাডাম না বলে উপায় আছে?

রিতুঃ হি হি ভালো তো বুড়ো দাদু। একটু পাকনা না হলে দুনিয়াতে টেকা খুব কষ্ট।

আমিঃ তাই যাচ্ছেন কোথায় বললেন না তো?

রিতুঃ কোথায় আবার স্কুল মাঠে খেলতে।

আমিঃ তোর কি মাথায় কিছু আছে, নাকি পুরোটাই গোবর?

রিতুঃ কি?…(রেগে)

আমিঃ বাড়ির বউ কখনো মাঠে গিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে খেলা করে নাকি? মানুষ দেখলে কি বলবে?

রিতুঃ আমার তো খেলাধুলা না করলে ভালো লাগে না।

আমিঃ কেনো আমি আছি না, আমার সাথে খেলবি..

রিতুঃ তোমার সাথে আর কি খেলবো?

আমিঃ লুডু বা ক্যারাম খেলবি।

রিতুঃ তাহলে আমি লুডু নিয়ে আসি।

আমিঃ এখন না। লিজা ভাবি বেড়াতে এসেছে তো, তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে একটু।

রিতুঃ আমায় নিয়ে যাবে প্লিজ..

~ আমি মনে মনে বলি, তোমায় তো আগে নিবো, তারপর তো অন্য সবাই ~

আমিঃ আচ্ছা যাওয়ার যখন ইচ্ছা, তাহলে তৈরি হয়ে নে। নিয়ে যাবো..

~ রিতু খুশি হয়ে তৈরি হতে শুরু করলো। আমি ফ্রেশ হয়ে লিজা ভাবিকে তৈরি হতে বললাম। কিছুক্ষণ পর রিতু আর লিজা ভাবি তৈরি হয়ে রাস্তায় এলো। রিতু গোলাপি রঙের একটা থ্রি পিজ পড়ছে, আর লিজা ভাবি হলুদ রঙের একটা থ্রি পিজ পড়ছে। দুই জনকেই খুব সুন্দর লাগছে ~

আমিঃ তাই কোথায় যাবেন ভাবি?

লিজা ভাবিঃ তুমি যেখানে যাবে সেখানেই যাবো।

রিতুঃ ওই ভাই, আমায় একটা জিনিস খাওয়াবে?

আমিঃ কি জিনিস?

রিতুঃ ফুচকা আর চটপটি..

আমিঃ তাহলে তো সেই দুই কিঃমিঃ এখন হেটে বাজারে যেতে হবে।

রিতুঃ তোমার পায়ে বুঝি জোর কম?

আমিঃ আরে পেত্নী, আপনাদের কষ্ট হবে বলে বললাম। মেয়ে মানুষ এতো হাটলে পরে আবার বলবেন না তো পায়ে ব্যাথা হচ্ছে?

রিতুঃ আমাদের কিছু হবে না, তাই না ভাবি?

লিজা ভাবিঃ হুম..

আমিঃ আচ্ছা তাহলে চলো…

~ মাত্র বসন্ত ঋতু শুরু হয়েছে। এখনো শীত শীত একটা ভাব রয়েছে। আমি, ভাবি আর রিতু রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি। মাঠের বাতাস এসে ভাবি আর রিতুর চুল গুলো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন লাগছে। মনে হচ্ছে আমার দুই পাশে দুই পরী, আর মাঝে আমি একটা সাধারন জ্বীন। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই রিতুর এক স্কুলের বান্ধবীর সাথে দেখা। রিতুকে দেখে রিতুর বান্ধবী ডাক দিলো ~

বান্ধবীঃ ওই রিতু কেমন আছিস?

রিতুঃ ভালো, তুই?

বান্ধবীঃ হুম ভালো। তাই কোথায় যাচ্ছিস?

রিতুঃ এই তো ভাইয়ের সাথে একটু ঘুরতে।

~ এই বলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে। কত বড় পাজি মেয়ে, আমায় স্বামী হিসাবে পরিচয় না করিয়ে দিয়ে বললো ভাই ~

বান্ধবীঃ ওনি কি তোর ভাই হয়?

রিতুঃ হুম। আমার কাকার ছেলে..(হেসে)

~ লিজা ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝালো রিতু কি বলছে তা দেখতে ~

বান্ধবীঃ তাহলে তো খুব ভালো।

রিতুঃ প্রেম করবি নাকি আমার ভাইয়ের সাথে? (হাসি দিয়ে)

~ আমিতো রিতুর কথা শোনে অবাক। রিতু হেসে গলে পড়ে যাচ্ছে। ভাবিও হা করে তাকিয়ে আছে ~

রিতুঃ আরে বল বল, আমার ভাই কিন্তু এখনো সিঙ্গেল আছে…

~ রিতুর বান্ধবী রিতুর কানের কাছে মুখ এগিয়ে বললো, “সত্যি কি তোর ভাই সিঙ্গেল” ~

রিতুঃ আরে হ্যা, পিওর সিঙ্গেল আমার ভাই। আর সিঙ্গেল থাকবেই না কেনো বল, কোনো মেয়ে তো আমার ভাইকে পাত্তায় দেই না, হি হি…

~ রিতু কি আমার প্রশংসা করলো নাকি দুর্নাম করলো কিছু বুঝতে পারলাম না। মনে মনে বলি, শুধু একবার সুযোগ আসুক পিচ্চি তারপর তোমায় বুঝাবো কেমন মজা।

রিতুর বান্ধবী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। আর রিতুকে ইশারা করে বুঝালো প্রেম করিয়ে দিতে। রিতু তো আমার দিকে তাকিয়ে হি হি করে হেসেই যাচ্ছে ~

আমিঃ ওই পিচ্চি, তোমার বান্ধবীকে তুমি বললে না কেনো আমি তোমার স্বামী?

রিতুঃ আমার ইচ্ছা হয় নাই, তাই বলি নাই। আমার মুখে আমার ইচ্ছা যেটা হবে, আমি সেটায় বলবো..(ভেংচি কেটে)

আমিঃ সুযোগ কিন্তু আমারও আসবে বলে দিলাম।

রিতুঃ আচ্ছা দেখা যাবে।

~ বেশ কিছুদূর এগিয়ে যেতেই আমার মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি এলো। ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম ~

আমিঃ এই সুন্দরী ভাবি, তোমার হাতটা দেও.. একটু ধরি…

~ ভাবি আমার কথা শোনে লজ্জা পাচ্ছে ~

আমিঃ দেও না কেনো ভাবি তোমার হাত? লজ্জা পেতে হবে না। আমি তো তোমার স্বামীর মতই…

~ ভাবির দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝালাম রিতুকে রাগাতে এমন করছি। সব বুঝতে পেরে ভাবি মুচকি হাসি দিয়ে সরাসরি আমার হাত ধরা তো দূরের কথা, আমার ডান হাত জরিয়ে ধরে আমার কাঁধে মাথা রাখলো। যেনো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। রিতুর দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে রিতু কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রাগে লাল হয়ে মুখ ফুলিয়ে টমেটো করে ফেলছে ~

আমিঃ ভাবি তোমার জন্য আমার খুব আফসোস হয় গো…

লিজা ভাবিঃ কেনো গো দেবরজী?

আমিঃ এই যে তুমি পরীর মত সুন্দরী। কিন্তু তোমার বরটা একদম তোমার যোগ্য না জানো। আমার ভাই বলে তো আমি আর মিথ্যা প্রশংসা করবো না, আসলে তুমি যত সুন্দরী মেয়ে, তোমার সাথে একটা নায়কের মত ছেলেই বর মানাতো।

লিজা ভাবিঃ এখন আর বলে কি লাভ বলো!

আমিঃ সেটা তো ঠিক বলছো। আমি যদি তোমার বড় হতাম তাহলে সত্যি তোমার বিয়ের আগে আমি তোমায় পটিয়ে নিয়ে বিয়ে করে নিতাম.. (হাসি দিয়ে)

~ রিতুতো রেগে মুখ লাল করে রয়েছে। আমি আর ভাবি রিতুর দিকে মাঝে মাঝে তাকিয়ে ওর মুখ দেখে হাসি দিচ্ছি। ভাবি আমার কানে কানে বললো, তোমার বউ খুব রেগে গিয়েছে।

আমাদের হাসি দেখে যেনো তার রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। পথে আর আমার সাথে রিতু কথা বললো না। বাজারে নিয়ে দুইজনকে চটপটি ও ফুচকা খাওয়ালাম। ভাবি হাসি মুখে খেলেও, রিতু মুখ গম্ভীর করে খেলো। তারপর আরেকটু ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে এলাম।

রাতে আমি শুয়ে আছি। রিতু পাশে টেবিলের উপর বসে খাতার কাগজ কুচিকুচি করে কাটছে ~

আমিঃ কি হলো, ওই কাগজ টুকরো টুকরো করে কাটছো কেনো?

~ রিতু চুপ করে ওর মত কাগজ কাটতেই রয়েছে ~

আমিঃ কি হলো বলো?

রিতুঃ আমি শুনেছি কাগজ কুঁচি করে কাটলে নাকি দেনাদার অনেক বেড়ে যায়…(রেগে বললো)

আমিঃ দেনাদার অনেক বেড়ে গেলে তো আরো ক্ষতি তাই না?

রিতুঃ কচুর ক্ষতি। তোমায় তখন পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে, ভালো হবে।

আমিঃ এই তুমি বউ নাকি শক্র?

রিতুঃ শক্র… (চোখ গরম করে)

~ বুঝতে পারলাম বিকালের রাগ এখনো কমে নাই রিতুর। ভাবি ঠিকই বলছে, বউয়ের সাথে প্রেম করার মজাই অন্য রকম। রাগিয়ে যে এতো মজা আগে জানতাম না ~

আমিঃ আমার পিচ্চি বউ রিতুকে কিন্তু রাগলে একদম একটা বাচ্চা পরীর মত সুন্দর লাগে…

~ রিতু আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে গিয়েও হাসি কন্ট্রোল করে নিলো ~

রিতুঃ হয়েছে আর আলু দিতে হবে না…

আমিঃ আলু কেনো দিবো, সুন্দরী হলে বুঝি তাকে সুন্দরী বলবো না?

রিতুঃ এই তুমি যেই ভাবে বলছো, আমি কিন্তু এতোও সুন্দরী না…(লজ্জা পেয়ে)

~ বউ পটানো যে এতো সহজ আগে জানতাম না। শুধু রূপের প্রশংসা করো, তাহলেই কাজ শেষ ~

আমিঃ কে বললো এই কথা? তুমি তো যেনো একটা আস্ত পরী…

রিতুঃ যা দুষ্টু আমার বুঝি লজ্জা লাগে না এমন বললে..

~ এই বলে লজ্জা মুখে রিতু আমার পাশে এসে বসে আমার বুকে একটা খামচি দিলো।
সব বউয়েরা খুশি হলে শুনছি আদর করে, আর রিতু এসে আমায় খামচি দিলো তাও বুকে । ব্যাথা তো একটু পেয়েছি, তাও প্রকাশ করলাম না ~

আমিঃ তাই আগামী কাল সকালে কিন্তু মামা বাড়ি যেতে হবে আমাদের দুইজনকে। দাওয়াত আছে…

রিতুঃ আমিও যাবো না। তোমাকেও যেতে দিবো না।

আমিঃ কেনো?

রিতুঃ তোমার লিজা ভাবির ভাবসাব বেশি সুবিধার না। তোমার দিকে কিভাবে যেনো তাকায়। তুমি অবুঝ একটা ছেলে, পরে তোমার সাথে কিছু করে ফেললে।

আমিঃ আমার সাথে আবার কি করবে?

রিতুঃ আরে বুঝো না কেনো, কালো জাদু…

আমিঃ হা হা, তুমি না যাও যেও না। আমি যাবোই…

রিতুঃ এতো যাওয়ার শখ কেনো তোমার শুনি?

আমিঃ ওখানে তো আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।

রিতুঃ মানে কি? তোমার কি আবার গার্লফ্রেন্ডও আছে নাকি?

আমিঃ আছে তো। গেলেই দেখতে পারবে…

~ রিতু আবার রাগতে শুরু করলো ~

রিতুঃ তাহলে যে………………… (..#চলবে..)

বিঃদ্রঃ তাহলে কি সত্যি শুভর গার্লফ্রেন্ডও আছে! জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে