#গল্পঃ দুষ্টু মেয়ের মিষ্টি সংসার
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo (শুভ)
#পর্বঃ ২…
√- আমিঃ ঝামেলা হক বা না হক, বিয়ে তো হবে না…
~ বলে কলেজের ব্যাগ রেখে রিতুদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। মা পিছনে পিছনে আসছে ও আমায় দাঁড়াতে বলছে। আমি কোনো কথা না শোনে রিতুদের বাসার উদ্দেশ্য জোরে জোরে হাঁটতে লাগলাম। আমাদের বাড়ি থেকে রিতুদের বাড়ি হাঁটা পড়ে ৮-১০ মিনিট লাগে। দ্রুত হাটার কারনে ৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম।
গিয়ে দেখি কাকি সহ আরো কয়েকজন রান্না ঘরে রান্নার আয়োজন শুরু করছে। বাড়িতে অনেক লোকজনের ভীড়। কাকা একটা চেয়ার নিয়ে বাড়ির উঠানের সাইডে একা বসে আছে। আমি সরাসরি কাকার কাছে গেলাম ~
আমিঃ কাকা, রিতুর বিয়ে তাহলে দিয়েই দিচ্ছেন?
কাকাঃ কি আর করবো রে বাপ, তোর কাকিতো বুঝলো না। আর তারা যেই ভাবে হাত ধরে বলতে লাগলো, আর মানা করতে পারলাম না।
আমিঃ তারা তো হাতে পায়ে ধরবেই স্বাভাবিক। কারন, রিতুর মত মেয়ের যোগ্য নাকি ওই ছেলে বলুন? সেই জন্য তো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে নিতে চাচ্ছে।
কাকাঃ সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি। তোর কাকি তো বুঝলো না।
আমিঃ তাহলে কাকা আপনিই মানা করে দেন তাদের।
কাকাঃ আমি আর এখন কি করবো বল। সব আয়োজন তো হয়ে গিয়েছে। তারা কাজিও আনতে গিয়েছে। রাতে বিয়ে পড়ানো হবে। ছেলের বাড়ির মেহমান সব চলে এসেছে। তুই যদি কিছু করতে পারিস তাহলে কর। তোর কাকির সাথে আমি আর ঝামেলা করতে চাই না। অনেক বুঝিয়েছি তোর কাকিকে, সে যদি না বুঝে তাহলে কি আর করবো।
~ আমি কাকার সাথে কথা শেষ করে সরাসরি রিতুদের ঘরের মধ্যে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি ছেলের বাড়ির সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। রিতুর রুমে গিয়ে দেখি রিতু নেই।
আবার আমি বাইরে চলে এলাম। আমার মা কে দেখলাম কাকার সাথে কথা বলছে। আবার কাকার কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলাম রিতু কোথায়, কাকা বললো রিতু আর ওর বান্ধবীরা পুকুরে গিয়েছে গোসল করতে। আমিও সরাসরি পুকুরের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
গিয়ে দেখি রিতু সহ সব ওর সব বান্ধবীরা গোসল শেষ করে দাড়িয়ে গোল মিটিং করছে। আমায় দেখেই ওর সব বান্ধবী এক সাথে ডাকতে লাগলো, শুভ ভাই এদিকে আসেন, এই দিকে আসেন বলে। আমি কাছে গিয়ে বললাম কি হয়েছে, তারা বললো রিতু আপনাকে কিছু বলতে চাই। রিতুর দিকে তাকিয়ে দেখি কেমন যেনো চিন্তিত লাগছে রিতুকে ~
আমিঃ কি হয়েছে রিতু?
রিতুঃ ভাই তুই জানিস আজ আমার বিয়ে?
আমিঃ জানি তো। খুব আনন্দ লাগছে তাই না?… (রাগ হয়ে)
রিতুঃ তুই রাগিস কেনো ভাই?
আমিঃ রাগবো না, তাহলে কি করবো। তোর ভালোর জন্য বলছিলাম বিয়ে না করতে, আর তুই তো বুঝলি না। যা এখন গিয়ে আনন্দের সাথে বিয়ে কর…
রিতুঃ তুই কিন্তু এভাবে বলতে পারিস না, আমার খুব কান্না আসছে…
আমিঃ নেকামো করবি না তো। এমনিতে মেজাজ গরম, তারপর তোর নেকামো একদম অসহ্য লাগছে।
রিতুঃ আমি নেকামো করছি না সত্যি।
আমিঃ তাহলে কান্না কি এমনিতেই আসছে…(রাগ হয়ে)
রিতুঃ ভাই আমি বিয়ে করবো না। তুই যেই ভাবে পারিস বিয়ে আটকিয়ে দে..
আমিঃ মানে কি?
রিতুঃ আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করবো না। কিভাবে যেনো ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আমার তো দেখলেই ভয় হয় খুব…
আমিঃ তাহলে সেই দিন যে বললি ছেলেকে তোর পছন্দ হয়েছে?
রিতুঃ আমিতো সেই দিন ভালো করে তাকাই নাই। ওনারা জানতে চাইছে পছন্দ হয়েছে নাকি, তাই মুখের উপর তো আর মানা করা যায় না , তাই বলছি পছন্দ হয়েছে।
আমিঃ যখন তুই বলছিস পছন্দ হয়েছে, এখন তোর ব্যাপার তুই কি করবি। এর মধ্যে আমি নাই।
রিতুঃ ভাই আমার ভাই, এমন করে বলিস না। কিছু একটা করে আমারে এই বিপদের মধ্যে থেকে বাঁচা।
~ এমনিতেও তো আমি চাই রিতুর বিয়ে ভেঙ্গে যাক। এখন দেখি রিতুও সেটায় চাই। তাহলে তো আমার জন্য একটু সুবিধা হলো। মনে মনে একটু সাহসও পেলাম। রিতুর এই বিয়েতে মত নাই শুনে মনে মনে খুব খুশি লাগছে ~
আমিঃ আচ্ছা তুই যখন বলছিস তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারি আরকি। কিন্তু শর্ত আছে একটা…
রিতুঃ কি শর্ত বল, আমি রাজি…
আমিঃ ভেবে বলছিস তো? আমি যা বলবো সব কিন্তু মানতে হবে…
রিতুঃ তুই শুধু ওই ছেলের সাথে বিয়ে আটকা, আমি তোর সব কথা মানবো।
আমিঃ আমি যা যা বলবো, সব কথায় সবার সামনে “হুম” বলবি…
রিতুঃ মানে কি,এমন কি বলবি ?
আমিঃ তুই ছোট মানুষ, ছোট মানুষের মত থাক। সব কথায় হুম বলবি কিনা বল? নাহলে কিন্তু আমি পারবো না বিয়ে আটকাতে…
রিতুঃ রাগিস কেনো ভাই? আমি রাজি, রাজি, রাজি। শুধু আমায় বিপদ থেকে বাঁচা…
আমিঃ আচ্ছা চল তাহলে বাসার মধ্যে।
~ তারপর আমি, রিতু আর ওর বান্ধবীরা সবাই পুকুর পাড় থেকে চলে এলাম। এসে দেখি খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসে আছে ছেলের পক্ষের সবাই। একটা সুযোগ খুঁজছি কিভাবে কথাটা ওঠাবো।
আমি, কাকা ও মা বসে আছি উঠানে চেয়ার নিয়ে। এমন সময় রিতুর মা মানে কাকি আসলো ~
কাকিঃ কি শুভ এসেছিস, আজ তো রিতুর বিয়ে শুনেছিস নাকি?
আমিঃ শুনলাম তো কাকি। কিন্তু এই ভাবে হঠাৎ করে বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে নাকি?
কাকিঃ আমিও তো সেটায় ভাবছি। হঠাৎ করে বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে নাকি। বড় মেয়েটাও আসতে পারলো না। এই ভাবে মেয়ের বিয়ে দিলে আত্মীয় স্বজনরা পরে কি যে বলবে! সেটায় এখন চিন্তার বিষয়।
আমিঃ তাহলে দিচ্ছেন কেনো?
কাকিঃ আরে বলিস না, ছেলের মা তো পাগল হয়ে গিয়েছে আজই মেয়ে নিয়ে যাবে বউ করে। আমি এতো মানা করছি, তারা বুঝার কোনো নামই নেই।
আমিঃ মেয়ে আপনার, তাহলে তাদের কথায় চলতে হবে কেনো?
কাকিঃ এমন ভালো সম্মন্ধ কি আর আসবে নাকি পরে বল? সেই জন্য জোরও খাটাতে পারছি না।
আমিঃ আমিতো শুনলাম ছেলে তেমন ভালো না। বেশির ভাগই রাতে বাড়ি ফিরে না, আজেবাজে জিনিস খায়…
কাকিঃ সেই জন্য তো ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে তারা । আমার বিশ্বাস রিতু গিয়ে ছেলেকে ভালো করে ফেলবে।
আমিঃ আর যদি তার উল্টো হয়? ধরুন ছেলে আরো রিতুর উপর অত্যাচার শুরু করলো তখন কি হবে? একবারো কি ভেবে দেখছেন এতে রিতুর সারাজীবন কান্না করতে হবে।
~ কাকি গভীর চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো। মাও কাকিকে বুঝাতে লাগলো ~
কাকাঃ দেখো রিতুর মা, তোমায় এর আগেও বলছি এখনো বলি, কি দরকার আছে বলো এই ছোট মেয়েটাকে এমন বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে। তুমি যেমন ভাবছো, তার যদি উল্টো টা হয় তখন কি পারবে এই মেয়ের জীবনে সুখ এনে দিতে?
মাঃ ঠিকই তো ভাবি, রিতু তো এখনো অনেক ছোট। কি দরকার আছে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার। আরো কয়েকবছর গেলেও তো সমস্যা নেই।
~ কাকি কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবলো ~
কাকিঃ এখন আমি কি করবো বলো! এই ছেলের পরিবার যেই ভাবে বিয়ের পিছনে গেলেছে, মানাও করতে পারছি না। আমারও তাদের এমন বারাবাড়ি ভাবসাব ভালো লাগছে না…
কাকাঃ কি আবার করবে? তাদের সরাসরি গিয়ে বলো মেয়ের বিয়ে আজ আমরা দিবো না। ছোট বোনের বিয়ে আর বড় বোন আসার সময়ই তারা দিবে না, এমন মানুষের সাথে আমাদের আত্মীয় করতে হবে না। আর তাদের এতো তাড়াতাড়ি কিসের, এর মধ্যে কোনো কিছু গোপন করছে নাকি তারা আবার…
কাকিঃ এখন যদি মেয়ের বিয়ে বন্ধ করে দেই, তাহলে তো রিতুর নামে বদনাম ছড়িয়ে যাবে। এটা তো বাস্তব, তখন আমরা বিয়ে ভাঙ্গছি কেউ বিশ্বাস করবে না। গ্রামের মহিলারা আরো বলবে মেয়ের সমস্যা থাকায় বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। এর পর আর ভালো কোনো বিয়ের কথা আসবে বলো..? (কাকার দিকে তাকিয়ে)
আমিঃ কাকি আমি একটা কথা বলি..?
কাকিঃ কি কথা বল..?
আমিঃ আমি রিতুকে বিয়ে করতে চাই…
কাকিঃ কি বলিস?… (হেসে দিয়ে)
আমিঃ সত্যি বলছি, আমি রিতুকে ভালোবাসি।
~ কাকা আর কাকি হা করে তাকিয়ে আছে, আর মা রেগে মুখ লাল করে ফেলছে ~
মাঃ তুই পাগল হয়েছিস নাকি শুভ? রিতু তোর বোন হই। আর তুই এমন কথা বলছিস…(রেগে)
আমিঃ বোন হই তো কি হয়েছে। চাসতো বোন হই। আর চাসতো বোনকে তো বিয়ে করা গুনাহ না।
~ এগুলো বলছি, আর ভয়ে তো হাত-পা কাঁপছে। কাকা কাকি তো যেমন তেমন, বাবা যদি জানে রিতুর বিয়ে ভাঙ্গতে চেষ্টা করছি বা এগুলো বলছি আমার যে কি হবে এটা ভেবেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ~
মাঃ এই কথা গুলো রিতু শুনলে কি ভাববে তোকে বল তুই। তোকে না ও ভাইয়ের চোখে দেখে..
আমিঃ রিতু আবার কি ভাববে, রিতুও আমায় ভালোবাসে।
~ সবাই যেনো এই কথা শোনে অবাক হয়ে গেলো। মাও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ~
কাকিঃ কি বলছিস এগুলো শুভ? আমিতো ভাবছি তুই সয়তানি করছিস..(ধমক দিয়ে)
আমিঃ সয়তানি না। আমি ঠিকই বলছি। রিতুকে আমি ভালোবাসি। আর রিতুও আমায় ভালোবাসে।
কাকিঃ এই সময় এগুলো বলা তোর ঠিক বল শুভ। আজ রিতুর বিয়ে।
আমিঃ ওর বিয়ে আমি হতে দিবো না। আমি ওকে বিয়ে করবো।
~ মা তো রেগে চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ~
মাঃ শুভ অনেক হয়েছে। এই বার চুপ থাকবি। এতোদিন বলছিস এই পাত্র ভালো না, তাই বিয়েতে তোর মত নেই। আজ সরাসরি তুই বিয়ে করতে যাচ্ছিস।
আমিঃ আমিতো এখনি আমার সাথে বিয়ে দিতে বলি নাই। আরো কয়েকবছর পরে দেও। কিন্তু রিতুকে আমি চোখের আড়াল করতে পারবো না। আমি সেই ছোট বেলা থেকে ওকে দেখছি, আর ও হঠাৎ চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাবে এটা সহ্য করতে পারবো না।
~ বলার সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলাম। সত্যি কথা গুলো আমি বাড়িয়ে বলছি, কিন্তু চোখের পানি নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে এসেছে। কেনো হঠাৎ চোখের পানি বের হলো কিছু বুঝতে পারলাম না ~
মাঃ দাঁড়া আমি তোর বাবাকে ফোন দিচ্ছি..(রেগে)
~ আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। মা ফোন করলো বাবাকে। কাকা-কাকি ও বাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর বাবা এলেন। আমার তো বাবাকে দেখেই হাত-পা কাঁপছে ~
বাবাঃ কি হয়েছে শুভর মা..? ফোন করে আনলে…
মাঃ এই দেখো তোমার ছেলে কি পাগলামি শুরু করছে।
বাবাঃ কি করছে শুভ..?
মাঃ রিতুর বিয়ে হতে দিবে না। এই নিয়ে কান্না কাটি শুরু করছে।
বাবাঃ এতে কান্না কাটি করার কি আছে? মেয়ে বড় হলে তো বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যেতেই হবে। এতে কষ্ট পাওয়ার তেমন কিছু নাই…
মাঃ তোমার ছেলে কষ্ট পাচ্ছে নাকি। সে জেদ ধরে বসে আছে সেই রিতুকে বিয়ে করবে…
~ বাবা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করলো ~
বাবাঃ এর মানে কি শুভ?..(ধমক দিয়ে)
~ আমার কোনো কথা বলার সাহস নেই। আমি মাথা নিচু করে আছি।
বড় কাকা বাবাকে বললো আমায় যেনো ধমক না দেয়। বুঝিয়ে বলতে বললো ~
বাবাঃ এই পাগল ছেলের কথা বাদ দেন ভাবি। আপনারা বিয়ের আয়োজন করেন।
কাকাঃ দাড়া শোন, ব্যাপারটা আগে বুঝতে দে…(বাবার দিকে তাকিয়ে)
বাবাঃ আবার কি ব্যাপার?
~ এর মধ্যে কাকি এগিয়ে এসে বাবার সামনে দাঁড়ালো ~
কাকিঃ এই ছেলে পক্ষ তো আজই বিয়ের কথা বলছে, এগুলো তো আমার একদম ভালো লাগছে না। আমি মানা করার পরেও তারা কাজি আনতে লোক পাঠিয়েছে। আমার বড় মেয়েটার আসারও সময় দিচ্ছে না। ছোট বোনের বিয়ে, আর বড় বোন থাকবে না এটা কেমন হয় বলো…(বাবার দিকে তাকিয়ে)
বাবাঃ শুনলাম ছেলেও তেমন ভালো না। তাহলে দরকার ছিলো কি এর মধ্যে যাওয়ার…?
কাকাঃ রিতুর মাকে বারন করার পরেও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমিও আর কিছু বলি নাই রাগ হয়ে। এখন তো বুঝতে পারছে, না বুঝে বড় সিদ্ধান্ত নিলে কি হয়…
~ কাকি মাথা নিচু করে আছে ~
বাবাঃ তাহলে এখন কি করবেন ভাবি?
কাকিঃ কি করা যায় বলো তো। মেয়েকে এই ভাবে বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। মনের মধ্যে কেমন যেনো খারাপ ভাবনা আসছে।
বাবাঃ তাহলে তাদের মানা করে দেন…
কাকিঃ কিভাবে মানা করবো এখন? তারা তো এটা ওটা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে। পরে নাহলে বিয়ে আর করাবে না এখানে ছেলেকে তাই বলে।
বাবাঃ না করালে করাবে। দেশে কি ছেলের অভাব পড়ছে নাকি।
কাকিঃ তুমি কিছু একটা বলে তাদের মানা করে দেও। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না আমি।
বাবাঃ আচ্ছা দেখছি…
~ তারপর বাবা আরো কয়েকজন মুরব্বি ডেকে এনে ছেলের পরিবারকে বুঝাতে লাগলো। তারা কি আর সহজে মানে, অনেক চেষ্টা করে তাদের বুঝালো মেয়ে আরো দুই বছর পর বিয়ে দিবে, যদি তারা তখন বউ করে রিতুকে, তাহলে তখনি বিয়ে হবে।
তারা একটু রাগ দেখাতে লাগলো। বলবো রিতুকে তাদের বাড়ির বউ আর করবে না। এমন আরো কিছু কথা শুনিয়ে চলে গেলো তারা সবাই।
তারা চলে যাওয়ার পর তো কাকা-কাকি অনেক খুশি হলো। মনে হচ্ছে তাদের মাথা থেকে টেনশনের বস্তা নেমে গেলো।
রাতে আমাদের তাদের বাসায় খেতে বললো। আমার ছোট ভাই বোনও চলে আসলো রিতুদের বাসায়। রিতু অনেক খুশি হয়েছে। আমায় এসে অনেক বার ধন্যবাদও দিলো। হয়তো রিতুর বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছি আমি। এতো আনন্দ লাগছে আমার।
সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করছি, আর কাকি খাবার বেড়ে দিচ্ছে। এমন সময় রিতুর বাবা মানে আমার কাকা বললো ~
কাকাঃ আচ্ছা, এই বিয়ের ঝামেলা তো শেষ হলো। কিন্তু শুভ আর রিতুর বিষয়ে তো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো না।
মাঃ কি সিদ্ধান্ত ভাই?..(কাকার দিকে তাকিয়ে)
কাকাঃ এই তো যেই কারনে বিয়ে ভেঙ্গে গেলো সেই বিষয়টি। ওরা নাকি একে অপরকে পছন্দ করে।
~ রিতু খাবারের প্লেট নিয়ে ভিতরের রুমে চলে গেলো এই কথা শোনে। সব ঝামেলা তো শেষ হয়ে গিয়েছে, তাহলে আবার এই কথা কাকা যে কেনো তুললো বুঝতে পারছি না। তাহলে কাকা কি চাই নাকি রিতুকে আমার সাথে বিয়ে দিতে ~
বাবাঃ ভাই, শুভর কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি এখনো। আর কাজকর্ম করে না, এই ছেলে বউকে খাওয়াবে কি!
কাকাঃ এখন কাজকর্ম না করে, পরে করবে তো একদিন।
বাবাঃ এই যুগে কাজকর্ম পাওয়া যত কষ্ট, আর শুভ যতদিনে ভালো কাজ পাবে, ততদিনে রিতুর ভালো একটা জায়গায় হয়তো বিয়েও হয়ে যাবে।
কাকাঃ আরে চুপ থাক। রিতুর অন্য জায়গায় বিয়ে হলে বুঝি ওরা সারাজীবন সুখে থাকবে নাকি.?
~ বাবা চুপ করে আছে। আমিও চুপ করে আছি। কাকা রিতুকে ডাক দিলো আসতে। কিছুক্ষণ পর রিতু এসে তার বাবার মানে কাকার পাশে বসলো। কাকা রিতুর দিকে তাকিয়ে বললো ~
কাকাঃ আচ্ছা রিতুমা, শুভ যেগুলো বলছে সেগুলো কি সব সত্যি…
~ আমার তো কপাল ঘামতে শুরু করছে। এখন যদি রিতু ভুলেও বলে সব মিথ্যা, তাহলে বাবা যে আমায় কি করবে আল্লাহ জানে। রিতু চুপ করে আছে, কোনো উত্তর না দিয়ে ~
কাকাঃ কি মা বলো, শুভ যেগুলো বলছে সেগুলো কি সব সত্যি?
~ রিতু এখনো চুপ করে আছে। আমার তো টেনশনে অবস্থা খারাপ ~
কাকিঃ ওই রিতু, তোর বাবা যেটা জিগ্যেস করছে সেটার উত্তর দিতে কতক্ষণ লাগে?.. (রেগে)
রিতুঃ হুম শুভ ভাই সব ঠিক বলছে।
কাকিঃ কি ঠিক বলছে?
রিতুঃ তোমাদের কাছে যেগুলো বলছে।
কাকিঃ যে তুই ওকে ভালোবাসিস?
রিতুঃ হুমম বাসি।
কাকাঃ তাহলে তো ঝামেলা রইলো না। সামনে ভালো দিন দেখে ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়াই ভালো হবে…(হাসি দিয়ে)
~ রিতু উঠে অন্য রুমে চলে গেলো। আমার খুব লজ্জা লাগছে, আবার বিয়ের কথা শোনে আনন্দও লাগছে ~
বাবাঃ এই টুকু ছেলের বিয়ে দেওয়া যায় নাকি? তাও আবার কাজকর্ম করে না।
কাকাঃ কি শুভ, পারবি না বউকে খাওয়াতে নিজের আয়ের টাকায়..?..(হেসে)
~ আমি মাথা নিচু করে হুমম বললাম ~
বাবাঃ শুধু হুমম বললে হয় নাকি। হুম বলা আর কর্ম করা অনেক তফাত।
কাকাঃ কি শুভ বল তুই পারবি..
আমিঃ হ্যা আমি পারবো। পড়াশোনার পাশাপাশি জব করবো।
~ লজ্জা শরম রেখে বলে দিলাম ~
বাবাঃ জব তো পাওয়ার মুখের কথা, বললেই পেয়ে গেলো। কত বছর লাগবে তার ঠিক নেই। আর ততদিন মেয়ে বিয়ে না দিয়ে ঘরে রেখে দেওয়া যায় নাকি ভাই? (কাকার দিকে তাকিয়ে)
~ এই হলো দোষ। কোনো ছেলেকে নিজ ইচ্ছায় সহজে কোনো বাবা বিয়ে দিতেই চাই না। তাদের কাছে ছেলে সব সময় শুধু ছোটই। নাহলে এক কথা বলবে, বউকে খাওয়াবি কি। একটা বউ আর কত খায় বুঝি না ~
কাকাঃ কত বছর লাগবে আবার। শুভ তো বললো পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করবে।
বাবাঃ এমন যদি শুভ কিছু একটা জব করে, তাহলে সাত দিনের মধ্যে ওদের বিয়ে দিবো…
কাকাঃ তাহলে কথা কিন্তু কথাই। আমার বিশ্বাস আছে শুভ বুদ্ধি করে ঠিক কিছু একটা করবে।
বাবাঃ আপনার কথায় আমি রাখলাম। কিন্তু শর্ত, সাত দিন সময় দিলাম, আগামী শুক্রবার দিন পর্যন্ত শুভ যদি ভালো ব্যবসা বা জব করে, যদি আমার মনে হয় সংসার চালাতে পারবে, তাহলে পরের সাত দিনের মধ্যে ওদের বিয়ে দিবো আমি নিজের দায়িত্বে। আর না পারলে এই সব ভুত মাথা থেকে নামিয়ে পড়াশোনায় মন দিতে হবে ওকে। আর কখনো রিতুর বিয়ে আটকাতে চেষ্টা যেনো না করে বলে দিলাম…
~ কাকা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,কি শুভ পারবি তো কিছু একটা করে দেখিয়ে দিতে। আমি মাথা নিচু করে বললাম, হ্যা পারবো। একটা জিনিস মাথায় আসছে না, কাকা অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছে আমায় নিয়ে। আমি যতটুকু আগ্রহ, তার চেয়ে কাকা আগ্রহ বেশি রিতুর সাথে যেনো আমার বিয়ে হয়।
কাকাদের বাসা থেকে রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই আমাদের বাড়ি চলে আসলাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মা রান্নাঘর থেকে ডাক দিলেন। আমি যাওয়ার পর রান্না ঘরেই আমায় রুটি, ভাজি নাস্তা দিলেন। বেশির ভাগ আমার নাস্তা ঘরে দেন মা, আজ রান্নাঘরে দেওয়ার কারনে বুঝতে পারলাম মা কিছু বলবে ~
আমিঃ কিছু বলবে মা.?
মাঃ তাই কি ভাবলি কি করবি?
আমিঃ কোন বিষয়ে?
মাঃ ওই তো গতকাল তোর বাবা বললো কিছু একটা কর্ম করতে, তাহলে রিতুকে তোর সাথে এনে দিবে।
আমিঃ আমিতো এখন পড়াশোনা করি, আমি আর এখন কি কর্ম করবো বলো। এই গ্রামে সেই কৃষি কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ আছে বলো তুমি। তাও কয়েকমাস পর পর কাজ হয়।
মাঃ তাহলে এখন কি হবে.?
আমিঃ কি আর হবে। কাকিকে বলে দিবো অন্য কোথাও রিতুর বিয়ে দিয়ে দিতে ভালো প্রস্তাব এলে বিয়ের।
~ সাথে সাথে মায়ের মন খারাপ হয়ে গেলো ~
আমিঃ কি হলো মন খারাপ করলে যে?
মাঃ আমিতো আরো গতকাল ভেবে নিয়েছি তোর সাথে রিতুকে আনবো। আমার খুব ভালো লাগে রিতুকে। আরো রিতুকে বাড়ির বউ বউ ভাবতে শুরু করছি। আর এখন দেখি তোর কোনো ইচ্ছায় নেই বিয়ের ব্যাপারে…
আমিঃ কিছু করার নেই মা। আমার অনেক বন্ধু এখনো বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমি হঠাৎ করে কি করবো বলো। আর বাবাতো যেমন মানুষ, সে যেটা বলছে, সেটায় করতে হবে।
মাঃ একবার চেষ্টা তো করে দেখতে পারতি কিছু একটা করার।
আমিঃ আচ্ছা মা চেষ্টা করবো।
মাঃ হুম তাই যেনো হয়। রিতুকে আমার বাড়িই বউ করা চাই যেই ভাবে হক…(হাসি দিয়ে)
~ আমিও হেসে দিলাম মায়ের হাসি দেখে। আসলে মায়ের হাসির তুলনা হয় না কিছু।
নাস্তা করে কলেজে চলে গেলাম। কি করা যায় এখন ভাবতে লাগলাম। সব পরিচিত বড় ভাইদের বললাম একটা জবের ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু কারো থেকে তেমন কোনো সাহায্য পেলাম না। বেশির ভাগ বড় ভাইয়েরা তারাও জব খুজতেছিলো। বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলাম, কিন্তু কোনো উপকার হলো না। পড়াশোনার পাশাপাশি এমন কোনো জবই পেলাম না যেটা করে বাবার সামনে বলতে পারবো আমি জব করি…
এই ভাবে ঘুরাঘুরি করে আরো ৬ দিন চলে গেলো। মা প্রতিদিন আমার কাছে শুনতে চাইতো কোনো জব পেলাম কিনা। কিন্তু সব সময় আমার একি উত্তর, না। ৬ দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে বাবা ডাক দিলো ~
বাবাঃ কোনো কাজকর্ম পেলি নাকি যেটা করে সংসার চালাতে পারবি?
আমিঃ না বাবা। এখন তো মাঠের কাজের কোনো সিজন না যে করবো।
বাবাঃ তাহলে বুঝ বাবা, আমি কি তোকে এমনি এগুলো বলছি নাকি বল। আজ যদি আমরা না থাকি, তাহলে বউকে নিয়ে চলবি কিভাবে বল। তাই আগে মন দিয়ে পড়াশোনা কর, ভালো একটা জব কর। তারপর সুন্দর দেখে মেয়ে বিয়ে করে নিস। রিতুর বিয়ে হয়ে গেলে কি আর মেয়ে নেই বল যে মন খারাপ করতে হবে..?
~ আমি মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছি। আর মনে মনে ভাবছি, মা যে বললো রিতুকে বউ করে আনতে, আর বাবাতো এখন উল্টো বলছে। এখন কাকে আমি খুশি করবো, মা নাকি বাবাকে ~
বাবাঃ মন খারাপ করলি কেনো শুভ?
আমিঃ এমনি বাবা।
বাবাঃ বুঝতে পারছি।আচ্ছা তোর জব করতে হবে না। আর যেহেতু একদিন আছে সাত দিনের, তাই এমন কিছু একটা কর, যেটা দেখে আমার মনে হয় আমরা না থাকলেও তুই কিছু একটা করে ঠিক চালিয়ে নিতে পারবি তোর সংসার।
আমিঃ আচ্ছা বাবা।
বাবাঃ কি পারবি তো..?
আমিঃ ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো।
~ আমি আমার ঘরে চলে গেলাম। আমাদের বাড়ি দুই ঘর। একটা বড় ঘর, একটা ছোট ঘর। ছোট ঘরে আমি আর আমার ছোট ভাই থাকি।
কিছুক্ষণ পর মা এসে জানতে চাইলো বাবা কি বলছে, তারপর আমি সব বললাম ~
মাঃ তাহলে এখন কি করবি?
আমিঃ তোমার কাছে কি কিছু টাকা হবে, যদি দেও তাহলে দেখি কিছু একটা করা যায় কিনা…
মাঃ আমার কাছে তোর নানা বাড়ির পেঁয়াজ বিক্রির টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা আছে মাত্র।
আমিঃ আচ্ছা সেটাই দেও। দেখি আগামী কাল কিছু একটা করার চেষ্টা করবো…
~ তারপর মা ওই ৭ হাজার টাকা এনে আমায় দিলেন। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরে উঠে নাস্তা করে ওই টাকা নিয়ে মায়ের থেকে দোয়া নিয়ে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় গিয়ে দেখি রিতু দাড়িয়ে আছে ~
রিতুঃ ওই শুভ ভাই…
আমিঃ কি বল…
রিতুঃ তুই কোনো কাজ পেয়েছিস…
আমিঃ না।
রিতুঃ তাই আমায় বিয়ে করবি না তুই.?
আমিঃ না করবো না।
~ রিতুর চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো ~
রিতুঃ আমি জানতাম তোর কোনো যুক্তা নেই…
আমিঃ কি বললি তুই?
রিতুঃ চুপ থাক তো তুই। কতদিন হয়ে গেলো একটা কাজও পেলো না, আবার এসেছে রাগ দেখাতে।
~ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিচ্ছে ~
আমিঃ এমনি মেজাজ গরম, তারপর উল্টো পাল্টা কিছু বললে এবার কিন্তু মাইর লাগাবো তোকে..
রিতুঃ সব সময় শুধু মাইর দিবো, মাইর দিবো, কই কখনো মারলি না তো…
আমিঃ আগে দেই নাই, কিন্তু এখন দিবো দাঁড়া…
~ এই বলে পাশের বাঁশঝাড় থেকে কুনচি ভাঙ্গতে গিয়েছি, আর রিতু দিলো এক দৌড়।
মায়েরও পছন্দ হয়েছে এই পাগলী মেয়েকে, কি দেখে যে মায়ের এই পাগলী পছন্দ হলো বুঝতে পারছি না। শুধুমাত্র মায়ের পছন্দের কারনে কিছু একটা করতেই হবে আজ… এই ভেবে রাস্তা ধরে সামনের দিকে হাটা……………………. (..#চলবে..)