#গল্পঃ দুষ্টু মেয়ের মিষ্টি সংসার
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo (শুভ)
#পর্বঃ ১…
“জানিস শুভ, রিতুর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে”
খেতে বসে মায়ের মুখে এমন একটা কথা শুনে চমকে উঠলাম। রিতু তো এখনো ছোট, তাহলে ওর বিয়ে ঠিক হয় কিভাবে বুঝতে পারছি না ~
আমিঃ কি বলো মা, রিতুর বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে?
মাঃ হ্যা, ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজ দুপুরে ছেলে পক্ষের সঙ্গে কথা প্রায় পাকাপাকি হয়ে গিয়েছে।
আমিঃ একদিনের মধ্যে বিয়ে পাকাপাকি মানে?
মাঃ তাই তো হলো শুনলাম। ছেলের মা-বাবা নাকি এর আগেও একবার রিতুকে দেখে গিয়েছিল। তখনই নাকি রিতুকে তাদের পছন্দ হয়েছে। আজ ছেলের সাথে তার পুরো পরিবার এসে দেখে বিয়ে পাকাপাকি করে গিয়েছে।
আমিঃ কাকা-কাকি কি পাগল হলো নাকি এই বয়সে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে।
মাঃ রিতু তো লম্বা চওড়াতে মাশাল্লাহ অনেক বড় হয়েছে। আর গ্রামে তো এই বয়সে বিয়ে দেয়, তাহলে সমস্যা কোথায়।
আমিঃ তুমি গিয়ে কাকাকে বলবে রিতুর বিয়ে যেনো না দেন।
মাঃ আরে কি যে বলিস, রিতুকে তো আংটিও পড়িয়ে গিয়েছে। তোর কাকা-কাকি তো অনেক খুশি এমন ছেলে রিতুর জন্য পাওয়াতে।
~ আমি রাতের খাবার খাচ্ছি, আর মায়ের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলছি ~
আমিঃ ওহহ। ছেলের পরিবার কি অনেক ধনী নাকি?
মাঃ হুম তাই তো শুনলাম। শহরে বাড়ি, তারপর আবার নাকি শহরের মার্কেটে ২ টা কাপড়ের দোকান আছে।
আমিঃ ওহহ। ওই দোকান গুলো কি ছেলের ?
মাঃ দোকান হলো ছেলের বাপের। ছেলে কিছু করে না…
আমিঃ মানে বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলো…
মাঃ আমি সব বলছি, তুই আবার এগুলো কাউকে বলিস না কেমন। নাহলে খারাপ দেখায়…
আমিঃ আচ্ছা বলো…
মাঃ শুনলাম ছেলের বাপের ভালোই অনেক টাকা। সাথে আবার শুনলাম ছেলে নাকি তেমন সুবিধার না, শহরের বাজে ছেলেদের সাথে দিন রাত আড্ডা দেয়, ঠিক মত রাতে বাসায় ফিরে না, কি ছাই পাস মদ খায় নাকি শুনলাম। তাই তাদের ছেলেকে তারা বিয়ে দিচ্ছে যদি বিয়ের পর বউ পেয়ে ছেলে ভালো হয়ে যায় তাই…
আমিঃ কাকা-কাকি এগুলো জানে?
মাঃ হ্যা জানে তো। তোর কাকি তো আরো তাদের আশ্বাস দিয়েছে রিতু তাদের ছেলের বউ হলে রিতুই তাদের ছেলেকে ভালোর পথে নিয়ে আসবে।
আমিঃ এটা আবার কেমন কথা? যদি ছেলে বিয়ের পর ভালো না হয়ে আরো রিতুর উপর অত্যাচার করে…
মাঃ সেটাও তো কথা।
আমিঃ কাকা-কাকির কি হয়েছে বুঝলাম না। যেই ছেলের মা-বাবা ছেলেকে ভালোর পথে আনতে পারে নাই, আর এই টুকু মেয়ে গিয়ে ছেলেকে ভালো করে ফেলবে মনে হয় তোমার?
মাঃ তাদের মেয়ে আমি কি বলবো বল। তারা যদি মেয়েকে জেনে শোনে এমন ছেলের সাথে বিয়ে দেন, তাহলে আমার কিছু করার আছে বল!
আমিঃ ধরো রিতুর বিয়ে হলো, কিন্তু ছেলে বউ পেয়ে প্রথম প্রথম ভালোই চললো, কিছুদিন পর বিয়ের নেশা কেটে গেলে তো আর বউকে সহ্য করতে পারবে না। তখন কি হবে বলো? এই মেয়ে সারাজীবন কিভাবে ওখানে সংসার করে থাকবে বলো?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মাঃ সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি যে রিতুর জীবনে হয়তো তেমন কিছু হলে আরো কত কষ্ট নেমে আসবে। ওমন ছেলে যে রিতুর গায়ে হাত তুলবে না এর কোনো গ্যারান্টি আছে নাকি বল…
আমিঃ এটা তো স্বাভাবিক। যারা আজেবাজে নেশা করে, তাদের কাছে তো এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। পরে কি হবে জানো, সারাজীবন রিতুকে ওমন অত্যাচার সহ্য করতে হবে, নাহলে কিছুদিন পর ডিভোর্স নিয়ে চলে আসতে হবে…
মাঃ আল্লাহ জানে মেয়েটার কপালে কি আছে…
আমিঃ তুমি এক কাজ করবে, কাকিকে গিয়ে বলবে রিতুর বিয়ে ভেঙ্গে দিতে।
মাঃ আমি পারবো না।
আমিঃ কেনো পারবে না?
মাঃ তুই তোর কাকিকে চিনিস না? তারপর আমার সাথে উল্টো একটা ঝামেলা শুরু হবে।
আমিঃ তাই বলে তোমার সামনে একটা মেয়ে এই ভাবে বিপদের মধ্যে পড়বে, আর তুমি সেটা শুধু দেখবে নাকি?.. তোমার মেয়ে হলে তুমি পারতে!
মাঃ আমার মেয়ে হলে তো আমি এমন জায়গায় জেনে শোনে বিয়েই দিতাম না। উল্টো তোর কাকি তো আরো চাই এই জায়গায় আরো বিয়েটা তারাতাড়ি হয় যেনো। সে আরো তাদের কথা দিয়েছে রিতুর মত লক্ষী মেয়েই তাদের ছেলেকে একদম ভালো করে ফেলবে।
আমিঃ কাকি তো আর জানে না, খারাপ মানুষ কত প্রকার হয়, তাই বলছে। তুমি তাও কাকিকে বলবে কিন্তু…
মাঃ আমি তোর কাকিকে কিছু বলতে পারবো না। তোর কাকি আরো ভাববে তার মেয়ের জন্য এতো বড় বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে বলে আমি হিংসা করে মানা করে দিতে বলছি…
আমিঃ আর কাকা কি বললো?
মাঃ তোর কাকা মনে হয় তেমন রাজি না কথায় মনে হলো। একটু চিন্তার মধ্যে আছে মনে হলো…
আমিঃ তাহলে তুমি কাকাকে বলো রিতুর জেনো বিয়ে না দেন।
মাঃ আচ্ছা তেমন সুযোগ পেলে বলবো।
আমিঃ সুযোগ না। তুমি আগামী কালই কাকাকে বলবে ওকে?
মাঃ তুই দেখি সারাদিন রিতুর পিছনে লেগেই থাকিস, বকাবকি করিস, তাহলে এখন যে রিতুর জন্য এতো মায়া লাগছে তোর?
আমিঃ সেটা তুমি বুঝবে না, শত হলেও আমার ছোট বোনের মত তো। আর একটা মেয়ের সারাজীবনের কথা এটা, এমন ব্যাপার এড়িয়ে যাওয়া কি ঠিক বলো। তুমি বলবে কিনা বলো?
মাঃ আচ্ছা বলবো। এখন ভাত খাওয়া শেষ কর তো।
~ তারপর আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। রিতু হলো আমার বড় কাকার ছোট মেয়ে, মানে আমার চাসতো বোন। সবে মাত্র SSC পরিক্ষা দিয়েছে, এর মধ্যে জানতে পারলাম রিতুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাও বিয়ে ঠিক হয়েছে শহরের কোনো আড্ডাবাজ ছেলের সাথে, যে কিনা ঠিক মত বাসাও ফিরে না রাতে। আবার এটা ওটা নেশাও করে। এমন ছেলের সাথে রিতুর বিয়ে ঠিক করছে, ভাবতেও আবাক লাগে।
রিতু খুব চঞ্চল ধরনের মেয়ে। সব সময় লাফালাফি, দুষ্টুমি, হাসিহাসি, দৌড়াদৌড়ি করতে পছন্দ করে। গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা, চুল গুলো কোমর থেকেও অনেক নিচু, সাথে চোখ দুটো খুবই সুন্দর। যে কোনো ছেলের মা-বাবা তাদের ছেলের বউ করার জন্য রিতুকে দেখেই পছন্দ করে ফেলবে এমন চেহারা রিতুর।
আর আমি শুভ। পুরো নাম মোঃ আসলাম হোসেন শুভ। বাসার বড় ছেলে। আমার ছোট এক ভাই এক বোন আছে। আমাদের বাসা ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার সুন্দরপুর গ্রামে। আমি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রামে কিছু ছোট বাচ্চাদের টিউশনি করি। এতে আমার হাত খরচের সাথে সাথে মা-বাবার সংসারের সাহায্য করতে পারি।
রিতু আমার থেকে ৬ বছরের ছোট। ওর সাথে আমার টম এন্ড জেরির মত ঝগড়া লেগেই থাকে। রিতুর বড় বোন বিবাহিত, নাম তাকিয়া । রিতুর বড় ভাই না থাকায় কাকি বলছে রিতুকে সব সময় বড় ভাইয়ের মত দেখে শোনে রাখতে। কিন্তু রিতু আমার একদম কথা শোনে না। আমি যেটা করতে বলি, সে আরো তার উল্টোটা করে।
সারাদিন শুধু বান্ধবীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গল্প করা, বিকাল হলে স্কুল মাঠে গিয়ে বউছি, গোল্লাছুট খেলা হলো তার কাজ। কিন্তু আমার একদম পছন্দ না এগুলো। কারন, বিকাল হলে স্কুলের উপর সাইডের মাঠে আমার বন্ধু সহ অনেক ছেলেরা ক্রিকেট খেলতে আসে, আর সেই সব ছেলেরা ওই মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রিতু সুন্দরী হওয়াতে রিতুর দিকে একটু বেশি তাকিয়ে থাকে। কয়েকজন তো রিতুর পিছনে ঘুরতে শুরু করছে প্রেম করার জন্য। এগুলো দেখে আমার খুব রাগ লাগে, বন্ধু হওয়ার কারনে কিছু বলতেও পারি না।
সেই জন্য সব সময় রিতুকে বলি বাসার মধ্যে থাকতে। স্কুল মাঠে যেনো না যায়। আমার ইচ্ছে রিতু বাসার মধ্যে থাকবে, বান্ধবী সাথে বাসার মধ্যে গল্প করবে, আর মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। কিন্তু আমার একটা কথাও রিতু শোনে না, উল্টো ঝগড়া করে সব সময়।
সেই জন্য আমিও যেখানে রিতু দেখি, লাঠি নিয়ে এক দাবুড় দিয়ে বাসায় দিয়ে আসি। আমার উপর খুব রাগ এই জন্য রিতু।
রিতু যতই দুষ্টু হক, তাই বলে একটা নেশাখোরের সাথে রিতুর বিয়ে ঠিক হয়েছে শোনে খুব রাগ হচ্ছে। যতই ছেলের বাপের টাকা থাকুক, ছেলে যতই স্মার্ট হক, নেশাখোর তো নেশাখোরই হই। পরে যদি ওর জীবনে আরো কষ্ট নেমে আসে এই ভেবে খুব চিন্তা হচ্ছে আমার ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে কলেজে যাওয়ার আগে মা কে বলে গেলাম কাকিকে যেনো বলে রিতুর বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। মা বললো, সে কাকা-কাকি দুইজনকে বলবে।
কলেজ থেকে বাসায় আসার পর মা বললো, কাকা বিয়েতে রাজি না। কিন্তু কাকি তাদের কথা দিয়েছে, তাই বিয়ে ভাঙ্গা তেমন সহজ না এখন। মানে কাকির ইচ্ছা ওখানেই বিয়ে দিবে।
টিউশনি করিয়ে বিকালে যখন স্কুল মাঠে গেলাম, দেখি রিতু মাথার চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে গোল্লাছুট খেলছে। রিতু দৌড় দিচ্ছে, আর চুল গুলো আকাশে ভাসছে । আর পাশের মাঠ থেকে ছেলে গুলো রিতুর দিকে তাকিয়ে আছে। আমার তো দেখে রাগ উঠে গেলো।
আমি সরাসরি গিয়ে রিতুর হাত ধরলাম, যেনো দৌড় না দিতে পারে ~
আমিঃ ওই রিতু তোকে না মাঠে আসতে মানা করছি… (চোখ গরম করে)
রিতুঃ আমি আসলে তোর কি? আমি এসেছি আবার একশবার আসবো…
আমিঃ মুখে মুখে তর্ক করিস দেখছি, খুব সাহস হয়ে গিয়েছে দেখছি তোর।
রিতুঃ তুই এমন কেনো রে বল তো? সব সময় শুধু আমার পিছনে গেলে থাকা। খেলতে গেলেও খেলতে দিস না, ঘুরতে গেলেও ঘুরতে দিস না, সব সময় লাঠি দিয়ে দাবুর দিস…?
আমিঃ আমি যেটা করি, সেটা তোর ভালোই জন্য করি। এখন তুই বড় হয়েছিস, তাই এগুলো করা উচিত না। তোর উচিত বাসায় থাকা, আর পড়াশোনা করা মন দিয়ে।
রিতুঃ তোর কথায় আমায় চলতে হবে বুঝি?
আমিঃ ওই রিতু মাইর খেতে ইচ্ছা হয়েছে বুঝি। তুই আমায় আপনি আপনি করে না বলে, তুই তুই করে কথা বলছিস, আবার আমায় সম্মানও দিচ্ছিস না। আচ্ছা কাকির কাছে আমি সব বসছি তোর বেয়াদবী কথা…
রিতুঃ মায়ের কাছে বললে কি হবে শুনি?
আমিঃ তোকে পিটানি দিবে বুঝলি। কাকি না বলছে আমায় বড় ভাইয়ের মত সম্মান দিতে, সব সময় আপনি আপনি করে কথা বলতে।
রিতুঃ আইছে আমার বড় ভাই। বড় ভাই হলে সব সময় আমার আদর করতি। কিন্তু তুই কি করিস, সব সময় আমায় শুধু শাসন করিস। এটা আমি একদম পছন্দ করি না।
আমিঃ তোর পছন্দ দেখে আমি কি করবো। আমি যেটা বলবো তাই করবি তুই…
রিতুঃ হি হি, মানবো না।
আমিঃ মানতে তো তোকে হবেই। আর শোন, আমি এখন যেটা বলবো, তাই করবি…
রিতুঃ কি করবো..?
আমিঃ তোর যে বিয়ে ঠিক হয়েছে, সেই বিয়ে ভেঙ্গে দিবি তুই…
~ কিছুক্ষণ রিতু অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ~
রিতুঃ কেনো বিয়ে ভাঙ্গবো? আমি বিয়ে ভাঙ্গবো না, আমি আরো বিয়ে করবো।
আমিঃ তুই কি জানিস না ওই ছেলে বেশি ভালো না?
রিতুঃ ঘোড়ার ডিম ভালো না তোকে বলছে। অনেক ভালো ছেলেটা, আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়েছে, আমিও লজ্জা পায়ছি…
আমিঃ ওই তুই পাগল হলি নাকি? হাসি দিলেই কি সে ভালো হয়ে গেলো নাকি?
রিতুঃ তুই আমায় পাগল বললি? তোর সাথে আমার আর কথা নেই।
আমিঃ আচ্ছা তুই পাগল না। অনেক বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে। এখন তো বল তুই এই বিয়ে করবি না…
রিতুঃ সেটা বলা আর সম্ভব না রে ভাই।
আমিঃ তুই কেনো বুঝতে পারছিস না, আমি তোর ভালোর জন্য এমন বলছি। আচ্ছা কেনো সম্ভব না বল.?
রিতুঃ আমি কারো সাথে বেইমানি করতে পারবো না।
আমিঃ মানে..?
রিতুঃ ওই যে আন্টি আসছিলো, সে আমায় বলছিলো তার ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা…
আমিঃ তারপর কি বলছিস?
রিতুঃ আমি বলসি, হুম পছন্দ হয়েছে। তারপর জানিস ভাই, ওনি আমার হাতে এক হাজার টাকার নোট দিয়েছে। আমি যেহেতু টাকা নিয়েছি, তাই তাদের সাথে বেইমানি করতে পারবো না।
আমিঃ ওই তুই পাগল নাকি! এক হাজার টাকা দিয়েছে বলে তুই মানা করতে পারবি না।
রিতুঃ শোন ভাই, এখানে কত টাকা সেটা বড় কথা না। সে আমার মুখ দেখে টাকা দিয়েছে, আর আমি সেই টাকা নিয়ে তাদের সাথে বেইমানি করতে পারবো না। আর তারা আমার গুরুজন, তাদের মুখের উপরও আমি মানা করতে পারবো না।
আমিঃ তুই SSC পাশ করলি কিভাবে?
রিতুঃ কেনো পরিক্ষা দিয়ে।
আমিঃ কিভাবে তুই পাশ হলি বুঝতে পারছি না এই গোবর ভরা মাথা নিয়ে। নিজের ভালো না চিন্তা করে তাদের চিন্তা করছিস…
রিতুঃ দেখ ভাই, সবাই একটু আমায় পাগলী বলে, তাই বলে তোর সাহস হলো কিভাবে আমার পড়াশোনা নিয়ে কথা বলার?…(রেগে)
আমিঃ আচ্ছা আর বলবো না। এখন বল যেই ভাবে হক বিয়ে ভেঙ্গে দিবি…
রিতুঃ সত্যি বলতে আমি টাকা ফেরত দিতে পারবো না হি হি। আমি মেকআপ বক্স কিনবো…
আমিঃ আচ্ছা আমি তোকে টাকা দিচ্ছি, তাহলে তো পারবি মানা করতে।
রিতুঃ তোর থেকে আমি কেনো টাকা নিতে যাবো?
আমিঃ মনে করবি আমি তোকে বিয়ের জন্য দেখতে আসছি, আর তোর মুখ দেখে খুশি হয়ে টাকা দিলাম।
রিতুঃ তুই টাকা পাবি কোথায়?
আমিঃ কেনো টিউশনি করিয়ে টাকা পায়, সেই টাকা থেকে জমা করে রাখছি ১২০০ টাকা।
রিতুঃ তাহলে আর দেরী করিস না, তাড়াতাড়ি নিয়ে আস। আর হ্যা, পুরোটাই নিয়ে আসিস…
~ আমি মনে মনে চিন্তা করি, পাগলীকে একটু হলেও বিয়ে ভাঙ্গাতে রাজি করা পারছি। আর টাকা গুলো এখন জলে গেলেও, ওর যে ভালো হলো এটায় ভেবে খুশি লাগছে। এমনিতে যে ত্যাড়া মেয়ে, আমার কথা একদম শুনে না। আজ হঠাৎ শুনলো, হয়তো আমার ভাগ্য ভালো।
বাসায় এসে বিছানার নিচে থেকে ১২০০ টাকা নিয়ে আবার স্কুল মাঠে গেলাম। গিয়ে দেখি রিতু আবার নাচানাচি শুরু করছে ~
আমিঃ এই তোকে না বললাম এই খানে লাফালাফি করবি না..(রাগ হয়ে)
রিতুঃ ওই সব বাদ দে, আমার মুখ দেখ আর আমার হাতে টাকা দে..(হাসি দিয়ে)
~ আমি রিতুর হাতে টাকা দিলাম ~
আমিঃ হয়েছে, তোর মুখ আর কি দেখবো, তুই তো এমনিতেও একটা পেত্নী। এখনি গিয়ে কাকিকে বল তুই বিয়ে করবি না।
রিতুঃ ভালোই হলো রে ভাই। সামনে পহেলা বৈশাখে মেকআপ বক্সের সাথে সাথে একটা শাড়িও কিনে নেওয়া যাবে তোর টাকা দিয়ে।
আমিঃ আর তোর বিয়ে ভাঙ্গার ব্যাপারটা…
রিতুঃ আমি কি পাগল নাকি নিজের বিয়ে নিজে ভেঙ্গে দিবো। বিয়ে তো আমি করবোই…
~ এই বলে দিলো এক দৌড়। কি পাগলী মেয়ে এটা, আমার ১২০০ টাকা এক বারে খেয়ে নিলো। এমন দৌড় দিয়েছে আর ধরতেও পারলাম না। মনে মনে একটায় চিন্তা, রিতুর বিয়ে কিভাবে আটকানো যায়।
রাতে খাওয়া দাওয়া করার সময় মা শুধু আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিচ্ছে ~
আমিঃ তুমি হাসছো কেনো মা?
মাঃ তুই রিতুকে কি বলছিস?
আমিঃ ওহহ, বলছি বিয়ে যেনো ও না করে।
~ মা কাপড়ের আঁচলের গিট খুলে আমার হাতে মোচড়ানো করা টাকা দিলো ~
মাঃ তুই নাকি এই টাকা দিয়ে বলছিস তুই রিতুকে বিয়ে করবি, আর এই টাকা নিয়ে নতুন বউয়ের মুখ দেখলি…
আমিঃ একদম এগুলো আমি বলি নাই। দেখছো কত বড় মিথ্যুক মেয়ে রিতু। আমায় শুধু বলে ওকে টাকা দিয়েছে, তাই তাদের সাথে বেইমানি করবে না। ওর কথায় মনে হলো ওর মেকআপ বক্স কিনার খুব শখ। তাই আমি ইচ্ছা করে এই টাকা দিয়েছি যেনো বিয়েও ভেঙ্গে ফেলে আর মেকআপ বক্সও কিনে নেই। তাই বলে পাজি মেয়ে এসে তোমার কাছে এগুলো বলছে…
মাঃ রিতু এসে তো হেসে গলে পড়ে যায়। আমার হাতে টাকা দিয়ে বললো, “ছোট মা, তোমার ছেলে শুভ আমায় বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে। এই দেখো তোমার ছেলে এতো গুলো টাকা আমার হাতে দিয়ে বললো, আমি আমার নতুন বউয়ের মুখ দেখলাম আমার উপার্জনের টাকায়”…
আমিঃ দেখছো কত বড় পাজি মেয়ে…
মাঃ তারপর টাকা গুলো তোকে দিয়ে দিতে বললো।
আমিঃ যার ভালোর জন্য আমি টেনশনে আছি, আর সেই আমার নামে মিথ্যা বলে, পাজি মেয়ে…
মাঃ ভালোই তো বলছে। তুই যদি কোনো কাজকর্ম করতি, তাহলে রিতুকে তোর সাথেই এনে দিতাম।
আমিঃ তুমি যে কি বলো, ওই পাগলীর জন্য এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজে যাবো নাকি…
মাঃ তাতো বলি নাই। যদি কাজকর্ম করতি, তাহলে এনে দিতাম আরকি…
আমিঃ ওই পাগলী মেয়ে আমার পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব না। এমনিতেই ভালোই আছি।
~ মা শুধু আমার কথা শোনে হাসতে রইলো। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। মা তো ঠিকই বলছে, আজ যদি কোনো কাজকর্ম করতাম তাহলে তো রিতুকে আমি বিয়ে করে নিতাম, যেনো বাজে ছেলের বউ হতে হতো না।
তারপর পরবর্তী কয়েকদিন কাকাকে বুঝালাম, রিতুর তাকিয়া আপুকে ফোন করে বুঝালাম, কিন্তু কাকিকে বলার সাহস পেলাম না। কারন, বড় কাকি অনেক রাগী। আমি সবার সামনে কথা বলতে পারলেও কাকির সামনে কথা বলতে ভয় পায়। অবশ্য মাকে দিয়ে একবার কাকিকে বলিয়েছিলাম।
তার ১৫-১৬ দিন পর একদিন কলেজ থেকে বাড়ি আসার পর মা ডাক দিলো ~
মাঃ তুই তো কত চেষ্টা করেছিলি রিতুর বিয়ে আটকাতে, কিন্তু পারলি না।
আমিঃ মানে…
মাঃ ওই ছেলেপক্ষ আজ এসেছে সবাই। আজই রিতুকে বউ করে নিয়ে যাবে।
আমিঃ কাকা-কাকি কি বলছে?
মাঃ ভাই, ভাবি তো আজ বিয়ে দিতে রাজি ছিলো না। ছেলের পরিবার যেই ভাবে বুঝিয়েছে, পরে তারা রাজি হয়ে গিয়েছে। বিয়ের আয়োজনও শুরু হয়ে গিয়েছে। রাতে আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে…
~ এই কথা শোনে কেমন যেনো বুক ফেটে যাচ্ছে। সেই ছোট বেলা থেকে রিতুর সাথে কত দুষ্টুমি, সয়তানি করছি, কত রাগিয়েছি আর আজ সে চলে যাবে কত দূরে। হয়তো এখন থেকে সে পর হয়ে যাবে, দেখতেও পারবো না আর রিতুর সেই মিষ্টি হাসি। ভাবতেই আমার কষ্ট হচ্ছে ~
আমিঃ এতো বুঝানোর পরেও বিয়ে দিবে..?
মাঃ তাদের মেয়ে তারা বিয়ে দিবে, আমাদের আর কিছু করার আছে বল।
আমিঃ হ্যা আছে…
মাঃ মানে?
আমিঃ আমি এই বিয়ে হতে দিবো না…
মাঃ মানে কি কিভাবে?
আমিঃ দেখো তাহলে কিভাবে বিয়ে আটকাতে হয়..?
মাঃ এই খবরদার বলছি, তুই কিন্তু কোনো ঝামেলা করবি না।
আমিঃ ঝামেলা হক বা না হক, বিয়ে তো হবে না…
~ বলে কলেজের ব্যাগ রেখে রিতুদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। মা পিছনে পিছনে আসছে ও আমায় দাঁড়াতে বলছে। আমি কোনো কথা না শোনে রিতুদের বাসার উদ্দেশ্য জোরে জোরে……………………. (..#চলবে..)
বিঃদ্রঃ এটা ছিলো “#_দুষ্টু_মেয়ের_মিষ্টি_সংসার_” গল্পের সূচনা পর্ব। আশা করি পুরো গল্পটা পাগলামি, দুষ্টুমি ও রোমান্টিক কাহিনি নিয়ে লেখার।
— রিতুর বিয়ে কি হয়ে যাবে, নাকি আটকাতে পারবে শুভ! জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব…