দুই পৃথিবী পর্ব-০৪

0
666

#_দুই_পৃথিবী_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৪_

দর্শন অফিসে কাজ করছে। এমন সময় তার বস ডেকে পাঠালে দর্শন তার বসের কেবিনে যায়। দর্শনের বস মি. রেজওয়ান বলে ওঠে,
–” দর্শন! তুমি আমার অফিসের সব থেকে বেস্ট একজন কর্মক্ষম মানুষ।”

–” Thanks sir!”

–” আমি নতুন একটা ডিল করতে যাচ্ছি। আর আমি চাই এই মিটিংটা তুমি এটেন্ড করো।”

–” স্যার! আমি তো এই ডিল সম্পর্কে কিছুই জানি না। মিটিং কবে?”

–” ওনারা চলেই এসেছে প্রায়। হঠাৎ করেই মিটিং টা এটেন্ড করা হয়েছে।”

–” আজ? বাট আমি তো এই ডিল সম্পর্কে কিছুই জানি না।”

–” আই থিংক তোমার কোনো প্রবলেম হবে না। লিমন সব জানে,, ও তোমাকে হেল্প করবে। এইটা অনেক বড় একটা ডিল। আমি চাই না,, কোনো সমস্যা হোক।”

–” স্যার! আমি আমার বেস্ট দিয়ে ট্রাই করবো।”

–” আই নো মাই বয়। আমি জানি তুমি পারবে।”

দর্শন মি.রেজওয়ানের কেবিন থেকে বেরিয়ে,, লিমনের সাথে কথা বলতে বলতে মিটিং রুমে চলে যায়। লিমন দর্শনকে কিছু ফাইল দেয়। দর্শন ফাইল গুলো ভালো ভাবে দেখার আগেই জানানো হয়,, ডিল সাইন করা কোম্পানির লোক চলে এসেছে।

ওরা ভেতরে আসতেই দর্শন হাসি মুখে দাড়ায়,, কিন্তু সামনের মানুষটাকে দেখে মুখের হাসি মিলিয়ে যায় দর্শনের। রিহান! তার মানে এইটা চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সাথে ডিল সাইন করা হয়েছে। রিহান দর্শনের দিকে হাসি মুখে এগিয়ে আসলে পাশের থেকে লিমন বলে ওঠে,
–” স্যার! আজকের প্রেজেন্টেশন মি. দর্শন চৌধুরী করবেন।”

রিহান দর্শনের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” হাই!”

দর্শন কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে রিহানের সাথে হাত মিলিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যালো! স্যার!”

রিহানের কেন জানি দর্শনের স্যার বলাটা ভালো লাগে না। চায়ও না সে। রিহান আর কিছু বলার আগেই দর্শন হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রজেক্টরের কাছে যেয়ে ফাইল গুলো মনোযোগের সাথে দেখতে থাকে।

দর্শন প্রজেক্টরের মাধ্যমে সব কিছু প্রেজেন্ট করছে। রিহান খুব মনোযোগ দিয়ে দর্শনকে দেখছে। খুব ভালো লাগছে তার,, নিজের ভাইয়ার সাথে কাজ করতে তার অনেক ভালো লাগছে।

প্রেজেন্টেশন শেষ। রিহান এগিয়ে আসে দর্শনের কাছে। দর্শন এক পলক রিহানের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকায়। রিহান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” নাইস প্রেজেন্টেশন। ডিল ফাইনাল করতে চাই।”

দর্শন লিমনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” লিমন! সাইনটা করিয়ে নিও।”

কথাটা বলে দর্শন বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রিহান তাকিয়ে থাকে দর্শনের যাওয়ার দিকে।


বাসায় ফিরছে দর্শন। ভাবছে আজকে অফিসের কথা। রিহান আপাততো তার বস। ভাবনাটা মাথায় আসতেই এক প্রকার বিরক্ত লাগছে তার। দর্শন গাড়ি চালাচ্ছে আর মিটিং টাইমের কথা গুলো ভাবছে।

হঠাৎ গাড়ি থামায় দর্শন। দর্শনের দৃষ্টি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা রিহান আর সাথের মেয়েটির দিকে। ঠিক মেয়েটির দিকে না,, রিহান হাস্যেকজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দর্শন।

দর্শন নিজের গাড়িটা সাইড করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা রিহানকে কিছু একটা বলে সামনে এগিয়ে যেতেই পায়ে হোচট খায়,, আর রিহান অনেকটা পাগলের মতো হয়ে মেয়েটার কাছে এগিয়ে যায়। পাগলের মতো মেয়েটাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে রিহান,, আর মেয়েটা নেতিবাচক ভাবে মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে,, মেয়েটি হালকা আঘাত পেলে রিহান কতোটা উদগ্রীব হয়ে পড়ে।

মেয়েটিকে অবশ্যই রিহান অনেক ভালোবাসে। নাহলে,, হালকা আঘাতে এমোন বিচলিত হওয়ার কথা না। দর্শন আর না দাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।


#_৩_দিন_পর_

দর্শন মায়া চৌধুরীর রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! আসবো?”

মায়া চৌধুরী কাপড় ভাজ করে রাখছিলেন। দর্শনের কথা শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যান তিনি। কারন,, দর্শন সাধারণত রুম থেকে বেরই হয় না। তার রুমের সামনে কতো দিন পর এসে দর্শন দাড়ালো তিনি নিজেও বলতে পারবেন না। মায়া চৌধুরী আনন্দিত হয়ে বলে ওঠে,
–” আই বাবা!”

দর্শন ভেতরে আসতেই,, মায়া চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে সোফায় বসে। মায়া চৌধুরীর খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে। দর্শন মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! তুমি তো সব সময় আমাকে বিয়ের কথা বলো,, আমি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত।”

মায়া চৌধুরী খুশিতে আপ্লূত হয়ে বলে ওঠে,
–” সত্যি?”

–” হুম! কিন্তু,, আমি আমার পছন্দ মতো মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।”

–” তোর পছন্দ? তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?”

–” আসলে,, মাম্মাম! আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসি! অনেক ভালোবাসি! আর আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই।”

–” সত্যি? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”

–” সত্যি! মাম্মাম! তুমি এখন বলো,, ঐ মেয়েকে আমার কাছে এনে দিবে।”

মায়া চৌধুরী খুশি হয়ে বলে ওঠে,
–” অবশ্যই এনে দিবো। আমার ছেলে পছন্দ করেছে,, আর আমি এনে দিবো না,, এইটা কি হয়? নাম কি মেয়ের?”

দর্শন হালকা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” জারিফা!”


#_রাত_৮_টা_৪৫_মিনিট_

মায়া চৌধুরী রিহানের রুমে এসে দেখে রিহান বিছানায় হেলান দিয়ে ফোন চালাচ্ছে। রিহান মায়া চৌধুরীকে দেখে উঠে বসে। তারপর বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! তুমি আমার রুমে,, আমাকে ডাকতে আমি যেতাম।”

মায়া চৌধুরী এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে,
–” একটা খুশির খবর আছে। তোকে না বলা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই চলে এলাম।”

রিহান খেয়াল করে মায়া চৌধুরীর মুখ উপচে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এতো খুশির কারন রিহান না জানলেও,, মায়া চৌধুরীকে এতো খুশি দেখে অনেক শান্তি লাগছে তার। রিহান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে মাম্মাম? তোমাকে এতো খুশি দেখাচ্ছে কেন?”

মায়া চৌধুরী আনন্দিত হয়ে বলে ওঠে,
–” দর্শন একটু আগে আমার রুমে এসেছিলো।”

কথাটা শুনে রিহান অনেক খুশি হয়। হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে বলে ওঠে,
–” সত্যি? এসে কি বললো?”

–” বলেছে,, ও বিয়ের জন্য রাজি। আর দর্শন একটা মেয়েকে ভালোবাসে,, তাকেই বিয়ে করতে চায়।”

কথাটা শুনে রিহান অনেক অবাক হয়ে যায়। ব্যাপারটা ওর কাছে অবাক হওয়ারই মতো। রিহান অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” কি বলছো মাম্মাম? ভাইয়া একজনকে ভালোবাসে?”

–” হ্যা! আমারও বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কিন্তু,, আমার খুব আনন্দ লাগছে।”

–” মেয়েটা কে?”

মায়া চৌধুরী একটু মনে করার চেষ্টা করে বলে ওঠে,
–” কি যেন নাম বললো? ধুর! ভুলে গেছি। কিভাবে ভুললাম বলতো?”

–” আচ্ছা! এতো প্রেশার নিতে হবে না। পরে জানলেও চলবে। মাম্মাম! শুনো,, তুমি তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা করো। ভাইয়া যখন বলেছে,, তাহলে আর দেরি করো না।”

–” তুই ঠিক বলেছিস। দেখি তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা করবো।”

রিহান আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোয়েল রিহানের রুমে আসে। কোয়েল এসে বলে ওঠে,
–” কি করছো মা ছেলে মিলে?”

রিহান হাসি মুখে বলে ওঠে,
–” একটা গুড নিউজ আছে।”

–” তাই! আচ্ছা! গুড নিউজ শুনবো। তার আগে একটা কথা,, আগামীকাল তুই ফ্রি আছিস?”

–” কেন?”

–” আমি বাসায় যাবো আগামীকাল,, গিয়ে দিয়ে আসতি একটু।”

রিহান কিছু বলার আগে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আগামীকাল বাসায় যাবি মানে? আগামীকাল কেন,, আগামী কয়েকদিন তোর কোথাও যাওয়া হবে না।”

–” কেন মামি? কোনো কিছু আছে?”

–” হুম!”

–” কি?”

মায়া চৌধুরী বলার আগে রিহান কোয়েলের হাত ধরে টেনে কাছে বসিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়ার বিয়ে!”

কথাটা শুনতেই ধুক করে উঠে কোয়েলের বুক। রিহানের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলে ওঠে,
–” দর্শন ভাইয়ার বিয়ে?”

রিহান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” হ্যা! ভাইয়া একটা মেয়েকে ভালোবাসে! একটু আগে মাম্মামের কাছে এসে ভাইয়া বলে গেছে।”

রিহানের প্রতিটা কথা কোয়েলের বুকের মাঝে যেন রক্ত ক্ষরণ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে রেখেছে কোয়েল। মায়া চৌধুরী কোয়েলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি খুব তাড়াতাড়িই দর্শনের বিয়ের কাজ সেরে ফেলবো। আর আমি চাই তুই ততোদিন এখানে থাক। কিরে থাকবি না?”

কোয়েল একটু জোর করে হেসে বলে ওঠে,
–” থাকবো মামি! আমি একটু রুমে যাচ্ছি,, কিছু কাজ আছে আমার।”

–” আচ্ছা যা।”

কোয়েল দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। মায়া চৌধুরী আর রিহান বসে দর্শনের বিয়ের পরিকল্পনা করতে থাকে।

………………এইদিকে কোয়েল দরজা আটকিয়ে বালিশ আকড়ে কান্না করতে থাকে। ভালোবাসার মানুষ নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে,, আবার তার বিয়ে নাকি তাকে দেখতে হবে। এর থেকে কষ্টকর আর কি হতে পারে?

কোয়েলের মনে হচ্ছে ওর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক অসহ্য যন্ত্রণা ওকে ঘিরে ধরেছে। অনেক কান্না করছে কোয়েল,, অনেক।


#_২_দিন_পর_
রিহান আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে এসেছে। দর্শন আজ অফিসে যায়নি। রিহান আসতেই মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” রিহান! যা বাবা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

–” ঠিক আছে! মাম্মাম!”

রিহান নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে জিহাদ চৌধুরী,, মায়া চৌধুরী সোফায় বসে আছে। মাত্র কোয়েল রেডি হয়ে নিচে এসেছে। কোয়েলের মুখটা একটু গোমড়া লাগছে,, অবশ্য এই দুইদিনই এমোন দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। রিহান জিজ্ঞেস করেছিলো,, কি হয়েছে,, কিন্তু কোয়েল শরীর টাহ ভালো যাচ্ছে না বলেছে।

কিছু সময় পর দর্শন নেমে আসলে ওরা সবাই এক গাড়িতে করেই রওনা দেয়। সবাই দর্শনের পছন্দ করা মেয়ে দেখতে যাচ্ছে। দর্শন ড্রাইভ করছে,, পাশের সিটে রিহান বসে আছে,, পেছনে ওরা তিনজন। কোয়েল বাদে বাকি সবার মাঝেই ভালো লাগা কাজ করছে। কেননা,, দর্শন এই প্রথম ওদের সবার সাথে একসাথে যাচ্ছে।

গাড়ি থেমে যেতেই সবাই নেমে যায় গাড়ি থেকে। রিহান এতো সময় ফোন চালাচ্ছিলো। গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটার দিকে তাকাতেই কিছুটা কেঁপে উঠে রিহান। এইটা তো জারিফার বাড়ি। এখানে কেন এসেছে ওরা? ভাইয়ার ভালোবাসার মেয়েটি কে? ভয় লাগছে রিহানের।

দর্শন রিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে,, রিহানের মুখ শুকিয়ে গেছে। দর্শন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বাড়িটির দিকে এগিয়ে যায়। সবাই বাড়িটির দিকে এগিয়ে যায়। রিহান ধুক ধুক করা বুক নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় বাড়িটির দিকে।

……………………সবাই জারিফাদের ড্রইংরুমে বসে আছে। সামনে অনেক রকম নাস্তা দেওয়া আছে। রিহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে,, কিন্তু জারিফা কে দেখতে পাচ্ছে না। দর্শনের চোখ রিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে,, অনেক চিন্তিত আর বিমর্ষ দেখা যাচ্ছে তাকে।

মিসেস. আহিয়া ( জারিফার আম্মু ) আর মায়া চৌধুরী কথা বলছেন। জারিফার বাবা নেই। কিছু সময় পর জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” মেয়েকে এখন নিয়ে আসলে ভালো হয়।”

মায়া চৌধুরীও বলে ওঠে,
–” হ্যা! আমরাও একটু দেখি। আমার তো আর তর সইছে না।”

মিসেস. আহিয়া বলে ওঠে,
–” জি! আমি এক্ষুনি আনাচ্ছি।”

মিসেস. আহিয়া একটি মেয়েকে বললো জারিফাকে নিয়ে আসার জন্য। রিহান এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কিছু সময় পর একটি মেয়েকে একটা চেয়ারে এনে বসানো হয়। রিহান এখনও তাকায়নি সেইদিকে। মিসেস.আহিয়া বলে ওঠে,
–” এইযে হলো আমার মেয়ে।”

মিসেস. আহিয়ার কথা শুনে রিহান আস্তে আস্তে সেইদিকে তাকাতেই একটা ধাক্কা খায়। এতো সময় ধরে তৈরি হওয়া ভয় টা তাহলে সত্যি হয়েই গেলো। জারিফাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে। কোয়েলের দৃষ্টি দর্শনের দিকে। আর দর্শনের দৃষ্টি করুন মুখ করে থাকা রিহানের দিকে। যেইটা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে সে।


#_১_দিন_পর_

একটি বেঞ্চের দুই প্রান্তে বসা জারিফা আর রিহান। কেউ কোনো কথা বলছে না। কিছু সময় পর জারিফা বলে ওঠে,
–” তুমি জানতে না,, তোমার ভাইয়ার পছন্দ করা মেয়েটি আমি?”

রিহান এক পলক জারিফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” না! জানতাম না।”

–” সেইদিন আমি তোমাকে কতো করে কল দিলাম কিন্তু,, তোমার ফোন বন্ধ আসছিলো।”

–” ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিলো।”

জারিফা ছলছল চোখ নিয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বাসায় এখনো বলছোনা কেন সত্যিটা?”

রিহান জারিফার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে ওঠে,
–” কি বলবো? ভাইয়া! তুই যে মেয়েটাকে ভালোবাসিস,, তাকে আসলে আমি ভালোবাসি। এইটা বলবো? নাকি মাম্মামকে গিয়ে বলবো,, তোমার বড় ছেলের ভালোবাসার মানুষটা আমারও ভালোবাসার মানুষ। এইটা? বলো,, কোনটা বলবো আমি?”

জারিফা কান্নারত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” তাহলে,, কি বলতে চাচ্ছো তুমি?”

–” জানি না।”

–” রিহান আমি তোমাকে ভালোবাসি!”

–” জারিফা! আমি বুঝতে পারছি না আমি কি করবো,, আমার মাথা কাজ করছে না।”

–” তোমার যা খুশি তুমি তাই করো,, কিন্তু তুমি জেনে রাখো,, আমি তোমাকেই ভালোবাসি!”

কথাটা বলে জারিফা কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে যায়। রিহান এক দৃষ্টিতে জারিফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। এ কোন পরিস্থিতির সামনে এসে দাড়ালো সে?

……………………রিহান রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। খুব বিরক্ত লাগছে সব কিছু। জীবনটা এক অসহনীয় জায়গায় গিয়ে পৌছেছে। এমোন সময় পাশের থেকে কেউ বলে ওঠে,
–” আরে রিহান! কি অবস্থা?”

কারো আওয়াজে রিহান পাশে তাকিয়ে দেখে আরাফ। রিহান নিজেকে একটু সামলিয়ে নিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আরাফ ভাইয়া! কেমন আছেন?”

–” আছি আলহামদুলিল্লাহ! তোমার কি খবর বলো।”

–” আলহামদুলিল্লাহ!”

–” দর্শন কোথায়? শুনলাম,, বিয়ে ঠিক হচ্ছে।”

কথাটা শুনতেই রিহানের বুকটা ধুক করে উঠে। তাও কোনোরকমে বলে ওঠে,
–” জি! ঠিক শুনেছেন।”

–” তা ভাবির ফটো আছে নাকি?”

–” জি আছে!”

–” একটু দেখাও তো।”

–” জি!”

রিহান নিজের ফোন গ্যালারি থেকে জারিফার একটা ফটো দেখাতেই আরাফ ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় রিহানের দিকে। তারপর বলে ওঠে,
–” এর সাথে বিয়ে ঠিক হচ্ছে?”

–” জি!”

–” কিন্তু,, যতদুর বুঝেছিলাম সেইদিন,, এতো তোমার প্রেমিকা!”

আরাফের কথায় চমকে উঠে রিহান। তারপর থমথমে গলায় বলে ওঠে,
–” মানে? সেইদিন মানে?”

আরাফ রিহানকে সেইদিন ওদের দুইজনকে একসাথে দেখার কথা সব কিছু বলে। রিহান চমকে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে। আরাফ বলে ওঠে,
–” কেমন হয়ে গেলো ব্যাপারটা?”

রিহান যেনো থম ধরে আছে। কিছু সময় নিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! আমার একটা কাজ মনে পড়ে গেছি। আমি একটু আসছি। ভালো থাকবেন।”

রিহান দ্রুত চলে যায় ওখান থেকে। আরাফ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রিহান তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুদুর গিয়ে আবার গাড়ি থামিয়ে দেয় রিহান। ওর চোখ পানিতে ভরে যাচ্ছে। রিহান মনে মনে বলে ওঠে,
–” এতো রাগ আমার উপর তোমার ভাইয়া! এতো রাগ? ছোট বেলা থেকে আমার পছন্দের সব কিছু নিয়ে গেছো,, আর এখন আমার ভালোবাসার মানুষকেও কেড়ে নিতে চাচ্ছো?”

রিহান হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে নিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে মনে মনে বলে ওঠে,
–” অনেক হয়েছে ভাইয়া! এইবার তোমাকে আমার মুখোমুখি হতে হবে। হতেই হবে।”

রিহান নিজেকে শক্ত করে,, গাড়ি স্টার্ট দেয়। উদ্দেশ্য নিজের বাড়ি,, দর্শনের মুখোমুখি হওয়া।

#_চলবে_ইনশাআল্লাহ_🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে