দুই পৃথিবী পর্ব-০৩

0
655

#_দুই_পৃথিবী_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৩_

–” আরে! ঐটা রিহান না? সাথে মেয়েটা কে?”

আরাফের ( দর্শনের বন্ধু ) এমোন কথা শুনে গাড়ির কাচ ভেদ করে আরাফের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায় দর্শন। হ্যা! রিহান,, একটা মেয়েকে নিয়ে হাসি মুখে গল্প করতে করতে ফুটপাত দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আরাফ আবার বলে ওঠে,
–” তোর ছোট ভাইয়ের প্রেমিকা সম্ভবত।”

দর্শন কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে রিহানের দিক। মেয়েটার সাথে রিহানকে খুব হ্যাপি দেখাচ্ছে। সহজেই বোঝা যাচ্ছে তাদের মাঝে সম্পর্ক কি। রিহানরা হাঁটতে হাঁটতে দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যায়। দর্শনকে চুপ করে থাকতে দেখে আরাফ বলে ওঠে,
–” কিরে? এমোন চুপ করে আছিস কেন?”

–” কিছু না!”

–” তোর ছোট ভাইও প্রেম করে। আর তুই কি করিস?”

দর্শন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে,
–” আহ! থামবি প্লিজ!”

–” ওকে। ঐদেখ জ্যাম ছুটে গেছে। গাড়ি স্টার্ট দে।”

–” হুম!”

দর্শন গাড়ি স্টার্ট দেয়। আরাফ নেমে গেলে দর্শন কিছু সময় চুপ করে গাড়িতেই বসে থাকে। তারপর গাড়ি স্টার্ট দেয়।


#_রাত_৮_টা_
রিহান ড্রইংরুমে সোফার উপর বসে মোবাইল চালাচ্ছে। জিহাদ চৌধুরী কিছু ফাইল দেখছে। মায়া চৌধুরী টিভি দেখছে। এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে আসতেই সবাই কিছুটা অবাক হয়। কেননা এইসময় কে আসবে?

মায়া চৌধুরী এগিয়ে যেতে গেলে রিহান বাঁধা দিয়ে সে নিজে দরজা খুলতে এগিয়ে যায়। দরজা খুলতেই সামনের মানুষটাকে দেখতেই রিহান অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” কোয়েল তুই?”

কোয়েল ( রিহানের ফুপাতো বোন ) হাসি মুখ নিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়েস! ব্রো! আমি।”

–” তুই এতো রাতে? বুঝলাম না।”

–” আগে ভেতরে কি যেতে দিবি নাকি?”

–” ওহ! হ্যা! আমি তো একদম ভুলে গেছি। আই,, ভেতরে আই।”

কোয়েল ভেতরে আসতেই মায়া চৌধুরী আর জিহাদ চৌধুরী কোয়েলের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। কিন্তু,, ওনারা অনেক খুশি হয়। কোয়েল দৌড়ে গিয়ে মায়া চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” মামি!”

মায়া চৌধুরীও কোয়েলকে আগলে নিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এতো রাতে?”

রিহানও এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে,
–” আমিও সেইটাই জিজ্ঞেস করছিলাম মাম্মাম! এই পেত্নী বল।”

কোয়েল হালকা আহ্লাদী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মামি! দেখো কি বলছে তোমার ছেলে। মামা! তুমি কিছু বলছো না কেন?”

জিহাদ চৌধুরী রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” রিহান! তুই আমার কিউট মাকে এইসব কি বলছিস?”

–” সরি বাবাই! যাই হোক,, এখন বল তো,, তুই এতো রাতে। মানে কি?”

কোয়েল একটু ভালোভাবে বসে বলে ওঠে,
–” আসলে,, আমার খুব আসতে ইচ্ছে করছিলো। সকালেই আসতাম,, কিন্তু,, হঠাৎ ভার্সিটিতে একটা কাজ পড়ে গেলো। কাজ শেষ করে আসতে আসতে বিকাল হয়ে গেলো। তারপর গোছগাছ করে আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো।”

রিহান একটু ভ্রু কুচকিয়ে বলে ওঠে,
–” তাহলে আগামীকাল আসতে পারতি,, বা ফোন করতে পারতি আমাকে। আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম।একা একা রাতে চলে এলি,, যদি কোনো সমস্যা হতো,, তখন?”

কোয়েল একটু বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
–” আরে একা এসেছি তো কি হয়েছে? আমি কি বাচ্চা নাকি?”

–” থাম! আমি এখন ফুপ্পিকে ফোন দিয়ে বলবো,, তোকে রাতে একা কেন আসতে দিলো?”

কোয়েল মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মামি!”

মায়া চৌধুরী রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” রিহান! ভালো হয়েছে ও এসেছে। তুই আর এই নিয়ে একটা কথাও বাড়াবি না।”

রিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোন বেজে উঠে। রিহান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে জারিফা ফোন দিছে। রিহান সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমরা সবাই কথা বলো,, আমার একটা কল এসেছে।”

কোয়েল দুষ্টুমি করে বলে ওঠে,
–” কে কল দিছে ভাইয়া? ভাবি নাকি?”

রিহান চোখ পাক্কাইয়া বলে ওঠে,
–” মাইর দিবো তোকে।”

কথাটা বলে রিহান উপরে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। জিহাদ চৌধুরী কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কোয়েল মামনি! যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

–” ঠিক আছে,, মামা!”

জিহাদ চৌধুরী উঠে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। মায়া চৌধুরী কোয়েলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,
–” যা,, মা! ফ্রেশ হয়ে আই। আমি ডিনার রেডি করি।”

–” মামি! দর্শন ভাইয়া কোথায়?”

মায়া চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে,
–” কোথায় আবার,, ওর রুমে। বের হয় না তো। বাসায় থাকলে সব সময় রুমেই থাকে। জানিসই তো সব,, তোকে আর নতুন করে কি বলবো? সবই তো তোর জানা।”

–” কিন্তু,, এইভাবে কি একটা মানুষের জীবন যায়? এইটা কেমন লাইফ ওনার?”

–” জানি না! কিছুই জানি না আমি। আমার ছেলেটা যে কবে একটু বুঝবে,, আল্লাহ জানে। যা তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”

মায়া চৌধুরী কিচেন রুমের দিকে চলে যায়। মায়া চৌধুরীর ছলছল চোখ কোয়েলের দৃষ্টি এড়ায় না। অনেক খারাপ লাগে কোয়েলের। কিন্তু কি আর করার? একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে রুমে চলে যায় কোয়েল।


দর্শন নিজের রুমে বসে ড্রইং করছে। এমোন সময় দরজার কাছে একটু সাউন্ড হতে তাকিয়ে দেখে কোয়েল এসেছে। দর্শন হালকা ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে আছে কোয়েলের দিকে। কোয়েল এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” কেমন আছো তুমি?”

দর্শন ভ্রু কুচকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” তুমি এখন এই বাসায়? কখন আসলে?”

–” কিছু সময় আগে।”

–” ওহ! তা আমার রুমে কেন এসেছো?”

–” কেন আসতে পারি না?”

দর্শন হাতের তুলিটা সামনের প্লেটে রেখে বলে ওঠে,
–” না পারো না!”

কোয়েল হালকা মন খারাপ করে বলে ওঠে,
–” কেন পারি না?”

দর্শন দাড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে ওঠে,
–” আমার রুমে কেউ হুটহাট করে চলে আসলে,, এইটা আমার ভালো লাগে না।”

–” আমি তো আর তোমার অচেনা না,, তাই না?”

দর্শন টাওয়ালটা টেবিলের উপর রেখে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অচেনা কেউ না এইটা যেমন ঠিক,, তুমি আমার কাছেরও কেউ না এইটাও তেমন ঠিক। আর আমার রুমে আসবে না। এইটা আমার পছন্দ না। তুমি এই বাড়ির অন্য সব মেম্বার’স দের রিলেটিভ,, তাদের ভালোবাসার মানুষ,, বাট তুমি আমার কেউ না। তাই তুমি আমার রুমে আসবে না।”

কথাগুলো কোয়েলের খারাপ লাগলেও কোয়েল হালকা ভাবেই বলে ওঠে,
–” কেন? আসলে কি এমোন ক্ষতি হবে শুনি?”

–” কি হবে এইটা জানি না। কিন্তু,, আসবে না শেষ।”

–” আর যদি আসি,, তাহলে কি করবা?”

–” দেখো,, আমার মেজাজ খারাপ করবা না! যাও আমার রুম থেকে।”

–” ইশশ! ভাব দেখো,, যেনো এই রুমে আসলে ওনার রুমে ফোসকা পড়ে যাবে।”

দর্শন ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে আছে কোয়েলের দিকে। কোয়েল একটা মুখ ভাংচি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর দর্শন এগিয়ে এসে নিজের রুমের দরজা আটকিয়ে দেয়।

………………….কোয়েল নিচে এসে দেখে মায়া চৌধুরী ডিনার রেডি করছে। কোয়েলকে দেখে মায়া চৌধুরী মিষ্টি করে হাসে,, কোয়েলও প্রতুত্তরে হাসি দেয়। কোয়েল এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” মামি!”

–” হুম!”

–” দর্শন ভাইয়া,, নিচে ডিনার করতে আসবে না?”

মায়া চৌধুরী হাতের কাজ থামিয়ে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নারে মা! ও আমাদের কারোর সাথেই খাবার খায় না। ডিনার ওর রুমে দিয়ে আসতে হয়,, দুপুরে অফিসে খাবার পাঠিয়ে দেই,, আর বাসায় থাকলে নিজের রুমে খায়,, আর সকালে ডাইনিং এ কাউকে দেখলে আর খায় না।”

–” সোজা কথায় একা একা খায়,, তাই তো?”

–” হুম!”

কোয়েল আর কিছু বলার সুযোগ পায় না,, রিহান আর জিহাদ চৌধুরী চলে আসে। সবাই খেতে বসলে,, রিহান মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! আমি গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসি,, যদি আসে।”

–” না! রোজ রোজ তোকে অপমানিত হওয়ার জন্য যাওয়ার কোনো দরকার নাই। আমি ওর খাবার নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিয়ে আসবো।”

রিহানের মুখ গোমড়া হয়ে যায়। সবাই চুপচাপ খাওয়া শুরু করে। কোয়েল খেয়াল করে,, রিহান খাওয়ার মাঝে উপরে দর্শনের দরজার দিকে তাকায়। কোয়েল মনে মনে বলে ওঠে,
–” তুমি এমোন ভাইকে অবহেলা করো দর্শন? মানুষের তো নিজের মায়ের পেটের ভাইও এমোন হয় না। সেখানে রিহান ভাইয়া,, কতো ভালোবাসে তোমাকে। আর তুমি বুঝলে না। কবে বুঝবে তুমি? এই বাড়ির প্রতিটা মানুষের ভালোবাসা কবে বুঝবে তুমি? কবে?”


সকাল হয়ে গেছে। চারিদিকে সূর্যের আলোতে ভরে গেছে। সোনলি রঙের আলোয় এক অদ্ভুত সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায়। নীল আকাশে সোনার পাতের মতো সূর্য। আকাশের অহংকার নাকি সে?

প্রকৃতি এতো রুপ নিলে কি হবে? মানুষ কি আর এই রুপ দেখে? তারা তো ব্যাস্ত,, প্রতিদিনের কর্মমূখর ব্যাস্ততা তাদের ভরে রেখেছে। তারা ব্যস্ত,, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তারা সর্বদায় ব্যাস্ত। তাই তো এমোন স্নিগ্ধ সকালেও শুরু হয় যায়,, মানুষের কোলাহল,, যানবাহনের শব্দ,, হকারের চিল্লাচিল্লি।

দর্শন নিজের রুমে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে অফিস যাওয়ার জন্য। এমোন সময় আয়না দিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে কোয়েল দাড়িয়ে আছে। হাতে কফি মগ। দর্শন ঘুরে দরজার দিকে কোয়েলের দিকে তাকায়। দর্শনকে এইভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে একটু কেমন যেন লেগে উঠে কোয়েলের।

দর্শন এখনো ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে আছে কোয়েলের দিকে। কোয়েল আস্তে আস্তে রুমের ভেতর এসে কফি মগটা টেবিলের উপর রেখে বলে ওঠে,
–” তোমার কফি।”

–” আমার কফি তুমি এনেছো কেন? তোমাকে বলেছি না,, আমার রুমে আসবে না।”

কোয়েল দর্শনের কাছে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কেন? আসবো না কেন? কি হবে আসলে?”

–” এতো কিছু বলতে পারবো না,, কিন্তু তুমি আসবে না শেষ। আর এই কফি আমি খাবো না,, নিয়ে যাও।”

–” কি? খাবে না মানে?”

–” খাবো না মানে খাবো না।”

কোয়েল রেগে বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে লাস্ট বার বলছি,, খাবে না? এইবার না বললে কিন্তু অনেক পস্তাবে তুমি।”

দর্শনও জিদ দেখিয়ে বলে ওঠে,
–” না! খাবো না।”

–” খাবেন না?”

–” না!”

কথাটা বলে দর্শন চলে যেতে নিবে তার আগেই কোয়েল কফি নিয়ে দর্শনের দিকে ছুড়ে মারে। কফিটা গরম হওয়ায় দর্শন জ্বালায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু,, কোয়েল ব্যাপার টাহ খেয়াল না করে রাগে চলে যায় রুম থেকে।

জ্বালাটা একটু কমলে দর্শন আস্তে আস্তে চোখ খুলে। সামনে তাকিয়ে দেখে কোয়েল নেই। চোখের কোনা দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে দর্শনের। কফিটা বেশি গরম না হলেও,, কিছুটা গরম ছিলো,, যার জন্য ভালোই গরম ভাপ লেগেছে দর্শনের। এমনিও দর্শন গরম সহ্য করতে পারে না।

…………………..কোয়েল রাগে বিড়বিড় করতে করতে নিচে নেমে এসেছে। মায়া চৌধুরী ডাইনিং টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখছে। কোয়েলকে এইভাবে নিচে নেমে আসতে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়। তারপর কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে?”

কোয়েল চুপ করে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া চৌধুরী কোয়েলের হাতের থেকে কফি মগটা নিয়ে দেখে খালি। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” বাব্বা! তোর কাছের থেকে কফি খেয়ে নিলো দর্শন? আর ওতো গরম সহ্য করতে পারে না। কফি খেতে টাইম লাগে ওর। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে শেষ করলো?”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে কোয়েল চমকে তাকায়। সে তো দর্শনের শরীরে গরম কফি ছুড়ে মেরেছে। এতো সময় রাগের জন্য খেয়ালই হয়নি কোয়েলের। মায়া চৌধুরী কিচেনের দিকে চলে যাচ্ছে। আর কোয়েল ভাবছে কি করলো ও এইটা? গরম কফিটা দর্শনের দিকে ছুড়ে মারলো। দর্শন!

কোয়েল আর কিছু না ভেবেই দৌড়ে উপরে দর্শনের দরজার সামনে দাড়ায়। দর্শন আয়নার সামনে থেকে ঘুরে তাকাতেই কোয়েলকে দেখতে পায়। দর্শনের চোখ রাগ আর যন্ত্রণায় লাল হয়ে আছে।

দর্শন এখন কোনো টিশার্ট পরা নেই। খুলে ফেলেছে। কোয়েলের দৃষ্টি দর্শনের বুকের দিকে। ফরসা বুকটা পুরো লাল হয়ে আছে। দৃশ্যটা দেখতেই কোয়েলের অনেক খারাপ লেগে উঠে। বুকের ভেতর এক অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকে কোয়েল। মুহুর্তেই কোয়েলের চোখ ছলছল করে উঠে।

দর্শন এখনো তাকিয়ে আছে কোয়েলের দিকে। কোয়েল কি করবে বুঝতে পারছে না। কিছু সময় পর কোয়েল আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে দর্শনের দিকে। ছলছল চোখে দর্শনের দিকে তাকিয়ে কোয়েল বলে ওঠে,
–” আই এ্যাম সরি!”

দর্শন দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
–” চলে যাও এখান থেকে।”

কোয়েল ছলছল চোখে বলে ওঠে,
–” আমি বুঝতে পারি নি। সত্যিই বুঝতে পারিনি। আমার ভুল হয়ে গেছে।”

দর্শন চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” চলে যেতে বললাম না এখান থেকে।”

কেঁপে উঠে কোয়েল। দর্শনকে দেখতে কোয়েলের কাছে অনেক ভয়ানক লাগছে। কোয়েল কিছু বলতে যাবে তার আগেই দর্শন কোয়েলের হাত ধরে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে ঠাস করে দরজা আটকিয়ে দেয়। কিছুটা কেঁপে উঠে কোয়েল।

কোয়েল দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। বিছানার পর শুয়ে বালিশ আকড়ে ধরে কান্না করতে থাকে।


রিহান নিজের অফিসে কাজ করছে। নিজের বাবার অফিসই সামলায় রিহান। দর্শনকে বলা হয়েছিলো,, অফিসের দায়িত্ব নিতে,, কিন্তু দর্শন রাজি হয়নি। নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে সে।

রিহান নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে,, এমোন সময় একজন স্টাফ এসে বলে তার বাবা তাকে ডাকছে। রিহান জিহাদ চৌধুরীর কেবিনের সামনে গিয়ে নক করতেই,, তাকে ভেতরে যেতে বলা হয়। রিহান কেবিনে গিয়ে চেয়ারে বসতেই জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” রিহান! আমরা একটা নতুন প্রজেক্ট হাতে নিবো।”

–” কাদের সাথে ডিল করছো।”

–” স্টার’স লিমিটেড!”

রিহান অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” বাবাই! ঐ কোম্পানিতে তো ভাইয়া জব করে।”

–” ঐ কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে কথা হয়েছে। আর ঐখানের ওনারের সাথে আমার কথা হয়েছে। দর্শন ওর বসের উপর তো কোনো কথা বলবে না,, তাই না?”

–” কিন্তু,, এতে ভাইয়া রেগে যাবে। শিওর!”

–” দেখা যাক কি হয়।”

–” কবে মিটিং?”

–” আগামীকাল।”

–” ওকে!”

রিহান বেরিয়ে যায় জিহাদ চৌধুরীর কেবিন থেকে। এমন সময় ফোন বেজে উঠতেই দেখে জারিফার কল দিছে। রিহান হালকা হেসে রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”

ফোনের ঐপাশ থেকে জারিফা বলে ওঠে,
–” কোথায়? অফিসে?”

–” হুম!”

–” আজ বিকালে দেখা করতে পারবে?”

–” ওকে!”

–” ঠিক আছে! আমি জায়গাটা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিবো।”

–” ঠিক আছে! বাই! লাভ ইউ!”

–” লাভ ইউ ঠু!”

ফোন কেটে দেয় রিহান। তারপর নিজের কেবিনে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়।


#_রাত_১০_টা_৪৫_মিনিট_

কোয়েল নিজের রুমে পায়চারি করছে। আজ দর্শন অফিস যায়নি,, রুম থেকে তো এমনিই বের হয় না। কেমন আছে মানুষটা কে জানে? কোয়েলের অনেক কষ্ট হচ্ছে। হবে নাই বা কেন? মানুষটা যে তার ভালোবাসার মানুষ।

সেই কোন ছোটবেলা থেকে ভালোবেসে এসেছে কোয়েল। কিন্তু,, কখনো বলা হয়ে উঠেনি। আর আজ,, তার জন্যই মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। কাউকে বলেও নি। নিজে নিজে কি করছে কে জানে। আর তো রুমে ঢুকার কোনো সুযোগও পেলো না কোয়েল।

কোনো ভাবেই শান্ত হতে পারছে না কোয়েল। অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। কান্নাও পাচ্ছে। কোয়েল কতবার যে দর্শনের রুমের সামনে গেছে বলার বাহিরে। কিন্তু,, দেখা মেলেনি বর্ষনের। কোয়েল ভেবে পাচ্ছে না কি করবে সে।

কোয়েল আবার নিজের রুম থেকে বেরিয়ে দর্শনের রুমের সামনে চলে যায়। সবাই যার যার রুমে চলে গিয়েছে। পুরো বাড়ি আবছা আলো আধারিতে ছেয়ে আছে। দর্শনের দরজার নিচ দিয়ে আলো বের হচ্ছে। মানে,, দর্শন এখনো জেগে আছে।

কোয়েল কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাও সব ভাবনা ফেলে দিয়ে কোয়েল নক করে দর্শনের দরজায়। দ্বিতীয়বার নক করতেই দর্শন দরজা খুলে। দর্শন ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় কোয়েলের দিকে। কোয়েল দর্শনকে এমোন ভাবে তাকাতে দেখে একটু থতমত খেয়ে যায়। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রাখে কোয়েল। দর্শন গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” তুমি আবার কোন সাহসে এসেছো এখানে?”

দর্শনের এমোন কথা বলার ভঙ্গিতে কোয়েলের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে,
–” তোমার কি অনেক পুড়ে গেছে?”

–” রাতদুপুরের নাটক করতে এসেছো?”

কোয়েল ছলছল চোখ নিয়ে বলে ওঠে,
–” এমোন করে বলছো কেন? আমি জানি আমার অন্যায় হয়েছে। সরি,, বলেছিতো।”

–” আমি তোমার সরির জন্য কি বসে আছি?”

–” আচ্ছা! কোনো মেডিসিন লাগিয়েছো?”

–” তোমাকে জানতে হবে না। গুড নাইট!”

কথাটা বলে দর্শন দরজা আটকাতে গেলে কোয়েল বাঁধা দিয়ে বলে ওঠে,
–” প্লিজ! এমোন করো না। আমি লাগিয়ে দেই মেডিসিন?”

–” কোনো দরকার নাই।”

দর্শন আবার দরজা আটকাতে গেলে কোয়েল বাঁধা দিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমার তো কোনো কিছুরই দরকার হয় না। এমোন কেন তুমি? প্লিজ! লাগিয়ে দেই আমি?”

–” বললাম তো দরকার নেই।”

কোয়েল জিদ্দি কন্ঠে বলে ওঠে,
–” দরকার আছে।”

কথাটা বলেই কোয়েল দর্শনের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়। দর্শন অবাক হয়ে যায় কোয়েলের কাজে। কোয়েল দর্শনের দিকে না তাকিয়ে মেডিসিন বক্স থেকে একটা মলম নিয়ে নেয়। দর্শন কোয়েলের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” এই মেয়ে তুমি শুনতে পারছো না,, আমি কি বলছি?”

কোয়েল দর্শনের কোনো কথা পাত্তা না দিয়ে দর্শনের পাশে বসে দর্শনের মুখের দিকে এক পলক তাকায়। দর্শন রাগ+ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কোয়েল দর্শনের তাকানোকে কোনো পাত্তা না দিয়ে দর্শনের শার্টের বাটন একটা খুলতেই,, দর্শন হাত ধরে আটকিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছো তুমি? পাগল হয়ে গেছো?”

–” বাঁধা দিও না।”

কোয়েল দর্শনের হাত সরিয়ে দিয়ে,, শার্টের বাটন গুলো খুলতেই চোখ পানিতে ভরে আসে কোয়েলের। দর্শনের বুকের অনেক অংশ জুড়ে লাল হয়ে আছে,, সাথে কিছু জায়গাও হালকা কুচকিয়ে আছে চামড়া।

দর্শন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কোয়েলের দিকে। কোয়েল আস্তেধীরে দর্শনকে মলমটা লাগিয়ে দিতে থাকে। দর্শন কোয়েলের দিক থেকে দৃষ্টি সরাচ্ছে না। কোয়েল মলম লাগিয়ে দর্শনের দিকে তাকাতেই দেখে,, দর্শন তার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে।

দর্শনকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা লজ্জা পায় কোয়েল। কোয়েলের লজ্জায় আচ্ছাদিত মুখ যেন দর্শনের কাছে একটু অদ্ভুত আকর্ষনীয় লেগে উঠে। কোয়েল হালকা ভাবে বলে ওঠে,
–” হয়ে গেছে!”

দর্শনের যেন ধ্যান ভাঙে। কোয়েলকে দেখতে দেখতে যেন দর্শনের ঘোর লেগে গেছিলো। কিছুটা অবাক হয়ে যায় দর্শন,, নিজের কাজে। তাড়াতাড়ি উঠে দুরে সরে যায় দর্শন। তারপর বলে ওঠে,
–” এইবার তাহলে তুমি যেতে পারো।”

কোয়েল কিছু না বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। দর্শন দরজা আটকিয়ে দিয়ে একটা আর্ট পেপার নিয়ে কিছু একটা আঁকতে থাকে।

#_রাত_২_টা_

দর্শন নিজের আকা ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে। সামনের বড় আর্ট পেপার। যেখানে দর্শন কোয়েলের স্কেচ এঁকেছে। কেন আকলো সে? বুঝতে পারছে না দর্শন। শুধু আকতে মন চেয়েছে,, তাই এঁকেছে।

#_চলবে_ইনশাআল্লাহ_🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে