—- সামনের নীল প্রজাপতিটা দেখেছো? (শুদ্ধ)
—- হুম! (অরদ্ধি)
—- সুন্দর নাহ্?
—- হুম!
—- মিথ্যে বলো কেনো?
—- কোনটা মিথ্যে?
—- প্রজাপতিটা তো হলুদ!
—- হুম!
—- তাহলে নীল বলায় সম্মতি দিলে কেনো?
—- বুঝবেনা তুমি।
—- হ্যাঁ,আমি তো কিছুই বুঝি না!
—- রেগে যাচ্ছো?
—- নাহ্,
আনন্দে চিৎকার করছি।
—- আচ্ছাহ্
—- ধ্যাত্, অসহ্য!
—- ওহ্!
—- থাকো তুমি,
আমি গেলাম।
—- আরেকটু বসো না রে।
—- বিরক্তিকর একটা তুমির পাশে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।
—- আচ্ছা শুদ্ধ,তবে এসো আজ!
—- বাই,
—- গুড বাই,টেক কেয়ার প্লীজ।
.
অরদ্ধি চুপচাপ বসে পথের দিকে চেয়ে আছে।
শুদ্ধ চলে গেছে এ পথ ধরে।
যেনো কতকালের তাড়া তার!
বেশ গতি নিয়ে হেঁটেছিলো।
একটিবারের জন্যেও পেছন ফিরে তাকায় নি,
হয়তো বা তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনি বা হয়নি।
পরিবর্তন!
তুমি বড়ই বৈচিত্র্যময় গো!
অবশ্য এখন আর এসবে অরদ্ধির মন খারাপ হয় নাহ্!
মহাকালের স্রোতে কি সবসময় কি সময় ভাসলে চলে?
মাঝে মাঝে এক আধটা মৃত অরদ্ধিদেরও ভাসতে হয়!
.
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
রাত পরীদের আনাগোনা বেড়ে যাবে পার্কে।
উঠতে হবে যে এবার,
বসে থাকলে চলবে না।
অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও উঠে দাড়ালো অরদ্ধি।
ইচ্ছের বিরুদ্ধে পা মিলাতে লাগলো গন্তব্যের পথে।
পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ!
কেউ একজন পেছন হতে শীস বাজালো।
হয়তো দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছে।
অরদ্ধি থমকে দাড়ালো।
পেছনের মানুষটা শীস বাজানো বন্ধ করে দিলো।
না তাকিয়েই অরদ্ধি বলে উঠলো,
“কিছু বলবেন?”
“না মানে,ইয়ে মানে রেট কতো?”- বলেই পেছনের লোকটা আমতা আমতা করতে লাগলো।
অরদ্ধি পেছন ফিরলো এবার।
বাচ্চা মতো একটা ছেলে!
মায়াবী নিষ্পাপ চেহারা!!
অথচ মাংসের খোঁজে এসেছে!!!
অরদ্ধি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটুকরো বিষন্ন হাসি দিলো,
তারপর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললো,
“ঘুনে খাওয়া নৌকা মনা,
বৈঠা বাইবি নাকি পানি সেচবি রে পাগলা?”
কথাটা বুঝে উঠতে পারলো না হয়তো ঠিক মতো ছেলেটা।
অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে ছেলেটা অরদ্ধির দিকে।
অরদ্ধি ছেলেটিকে ডাক দিলো,
ছেলেটি নড়ছে নাহ্।
অগত্যা অরদ্ধিকেই যেতে হলো।
ব্যাগ থেকে রেপিং পেপারে মোড়ানো গিফট বক্সটা ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দিলো।
যেটা শুদ্ধের জন্য এনেছিলো অরদ্ধি।
অরদ্ধি ছেলেটির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“কোনো এক অবেলায় যদি মনে পড়ে যায়,
তবে খুলে দেখিস।
হৃদয় কাঁটার গতির সাথে,
হাতের কাঁটা মিলিয়ে নিস!”
আলো হেসে অরদ্ধি পার্কের গেটের দিকে হাঁটা ধরলো।
ঠিক যেমন করে শুদ্ধ হেঁটে গিয়েছিলো।
অরদ্ধির খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,
ছেলেটি কি ঠিক তার মতো করেই চেয়ে আছে কিনা?
যেমনটি করে অরদ্ধি তাকিয়ে ছিলো শুদ্ধের হেঁটে চলে যাবার পথ পানে।
নাহ্,
থাক কি দরকার?
জীবনে চলতে গেলে চারদিকে তাকাতে নেই,
অহেতুক জায়গায় মায়া বেশী লেগে থাকে।
আর মায়ায় দৃষ্টি আটকালে তা আর ফেরেনা।
সে দৃষ্টিতেই হেরে গিয়ে নতুন করে মরে যেতে হয়।
ঠিক যেমনটি করে আরো তিন বৎসর আগে অরদ্ধি মরে গিয়েছিলো,
শুদ্ধ নামক কারো মায়ায় ডুবে।
কি দরকার?!
তার’চে ভালো গতিকে সঙ্গী করা!
অরদ্ধি হাঁটছে……….
হাঁটছে অরদ্ধি……….!
.
আজকাল রাতগুলো বেশ অন্ধকার মনে হচ্ছে তুলনামূলক ভাবে।
কেমন যেনো নেশা জমে যাচ্ছে রাতের মাৃয়ায়!
ব্যালকনিতে বসে রাতের আকাশে অগুনতি তারার মাঝে নিজেকে একজন ভাবতেই কেমন যেনো অজানা শিহরণ দিয়ে গেলো অরদ্ধির মনে।
মৃদু বাতাস,
হালকা একটা জংলী ফুলের গন্ধ!
দু একটা জোনাক পোকার উপস্থিতি!!
বেশ মায়াময় পরিবেশ।
অরদ্ধি ডুবে যাচ্ছে ক্রমশ মায়ার ঘোরে,
ফোনের শব্দে সে ঘোরটা আর বেশীদূর গড়াতে পারলো নাহ্।
ফোনের স্ক্রীনে না তাকিয়েই বুঝতে পেরেছে শুদ্ধের কল।
.
—- হ্যাঁ বলো (অরদ্ধি)
—- কি করো? (শুদ্ধ)
—- তারা গুনি।
—- আর তো কোনো কাজ নেই তোমার।
—- হয়তো।
—- আচ্ছা,তুমি কি টের পাচ্ছো?
—- কি?
—- তুমি যে দিন দিন সাইকো হয়ে যাচ্ছো?
—- হয়তো বা।
—- কনফিউশন উত্তর করো না।
—- আচ্ছাহ্।
—- একটা কথা বলো তো?
—- হুম,বলো।
—- এভাবে কি একটা রিলেশন টিকে থাকে?
—- কিভাবে?
—- এই যে ছাড়া ছাড়া একটা সম্পর্ক।
—- এতদিনে বুঝলে?
—- তুমি কি আগেই বুঝেছো?
—- হয়তো।
—- আবার?
উফ্,আচ্ছা তুমি চাওটা কি?
—- একটু মূল্যায়ন।
—- আমি কি সেটা করছি না?
—- নিজেকে করো এই প্রশ্ন টা।
—- তুমি কি আমাকে দোষারপ করছো?
—- এটাও নিজের কাছে প্রশ্ন করো।
—- অরদ্ধি!
—- বলো শুদ্ধ।
—- আমার মনে হয় একটা ব্রেক দরকার।
—- খুব দরকার?
—- হুম।
—- তো কি করবো আমি?
—- ছিন্ন করে দাও বাঁধন।
—- হা হা হা!
—- হাসো কেনো?
—- আদৌ কি কোনো বাঁধন ছিলো তোমার আমার?
—- কি মনে হয়?
—- এই তিনটা বৎসর কিভাবে কেটেছে তোমার আমার,
একটা বার ফিলো করেছো?
—- অতোসতো বুঝিনা,
আমার ব্রেক দরকার।
—- ওকে!
—- কি ওকে?
—- ব্রেক দিলাম।
—- ক্ষমা করো আমাকে।
—- তোমার তো দোষ নেই,
ক্ষমার কথা কেনো আসছে?
—- ভালো থেকো।
—- ট্রাই করবো।
—- শুভ রাত।
—- শুভ রজনী।
.
কলটা কেটে দিলো শুদ্ধ।
অরদ্ধি হাতের মুঠোয় ফোনটা ধরে আছে।
দুচোখের দৃষ্টি মেলে দিলো আকাশে।
নিকষ কালো আঁধার আর বিশাল শূন্যতা ছাড়া স্রষ্টা সেখানে কিছুই রাখেনি।
অতলে তলিয়ে গিয়েও যেখানে ঠাঁই খুঁজে পায় মানুষ,
সেখানে এতো আঁধার আর শূণ্যতা কেনো?
মাঝে মাঝে মনে হয়,
স্রষ্টা যতটা না রহস্যময় তার’চে বেশী রহস্যময় তার সৃষ্টি!
কি আমোঘ মায়া, মমতা,ভরসা, বিশ্বাস আর নির্ভরতায় তৈরী প্রতিটা সৃষ্টি।
অথচ……!
মায়া, মমতা, ভরসা,বিশ্বাস আর নির্ভরতাটুকু একসময় জলে ভাসা কচুরিপানার মতোই ভেসে যায়।
যেখানে না আছে মায়া,মমতা,ভরসা!
না আছে বিশ্বাস না আছে নির্ভরতা!
অবাক বিবর্তন ঘটে গেছে অজান্তেই হয়তো বা,
যে বিবর্তনে আবর্তন কাল ঠিক নিকষ কালো আঁধারের গহ্বরের মতোই!
বিবর্তিত সম্পর্কে আবর্তন কাল বলে কিছু নেই,
সবই মোহ আর মিছে স্বপ্ন।
অথচ প্রতিটা সম্পর্কের শুরুতে কতটা না কেয়ার!
অধিকারের বড়ই প্রাচুর্যতা সেখানে।
আসলে অধিকার নিঃশ্বাসের মতো,
একবার ছেড়ে গেলে আর ফিরে আসে না।
আসেই নাহ্,
আসতেও নেই হয়তো…!
.
“অরদ্ধি”- বলেই ডাইনিং হতে ডাক দিলো অরদ্ধির মা।
বারান্দা হতে উঠতে উঠতেই “আসছি মা”- বলে টলতে টলতে ডাইনিংয়ে যেতে লাগলো অরদ্ধি।
চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
অরদ্ধির মা অরদ্ধির দিকে তাকিয়ে আছে,
চিকচিক করছে অরদ্ধির মায়ের চোখ।
চোখের সামনে মেয়েটে কুঁকড়ে যাচ্ছে।
হাসিখুশি মেয়েটা রোগের চাপ আর নিতে পারছে না,
তবুও কি এক নিখুঁত অভিনয় করে যাচ্ছে মেয়েটা।
কাপড়ের আঁচলে চোখ মুছলো অরদ্ধির মা।
গলা খাঁকারি দিয়ে হালকা গলা ঝেড়ে নিলেন তিনি।
অরদ্ধির দিকে তাকিয়ে বললেন,–
.
—- শুদ্ধ কল করেছে? (অরদ্ধির মা)
—- হুম (অরদ্ধি)
—- কি বললো?
—- শেষ!
—- কি শেষ?
—- সম্পর্ক।
—- কি বলিস মা?
—- হ্যাঁ মা।
—- সে কি ওসব কিছু জানে?
—- নাহ্
—- জানানো উচিত।
—- না মা,সে অন্য মোহনা খুঁজে পেয়েছে।
—- তুই শিওর?
—- হুম।
—- কিন্ত তাকে জানানো উচিত,
পরে জানলে কষ্ট পাবে।
—- পাবে না মা,
নষ্ট মন যতটা না কম তুষ্ট হয়,
তার’চে কম কষ্ট পায়।
—- বাদ দে,
খেয়ে নে।
—- তুমি খাও,
আমি খাবো না মা।
—- হাঁ কর,খাইয়ে দেই।
—- যখন আমি থাকবো না,
তখন কি করবে মা?
—- এসব বলে না মা,
সব ঠিক হয়ে যাবে।
—- আমিও তো মেডিকেল স্টুডেন্ট মা।
—- তো?
—- মায়ের কাছে মামা বাড়ির গল্প কি শোভা পায়?
.
কথাটা বলেই অরদ্ধি চেয়ার থেকে উঠে পড়লো।
অরদ্ধির মা হাতে ভাত নিয়ে মেয়ের চলে যাওয়া দেখছে।
কি নির্বিকার কি অবলীলায় বলে দিতে পারলো মেয়েটা।
না আছে গলায় কোনো কাঁপন!
না প্রকাশ পাচ্ছে বুকের ভাঙ্গন!!
না দেখা যাচ্ছে স্বপ্নের দহন!!!
অথচ কি প্রবল ঢেউ না আছড়ে পড়ছে অরদ্ধির মায়ের বুকে।
চাপা কান্না আটকে দিচ্ছে কন্ঠস্বর,
চোখদ্বয় ক্রমশ ঝাপসা থেকে ঝাপসাতর হচ্ছে।
হাতের ভাতটুকু প্লেটে রেখে ঢুকরে উঠলেন অরদ্ধির মা।
উপরের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে কান্না শুরু করলেন তিনি।
যদিবা উপরওয়ালার একটু করুনা হয়!
কিন্ত উপরের ছাদ ভেদ করে কি উপরওয়ালার নিকট সে কান্না পৌঁছাবে?
আর অরদ্ধি?
বিছানায় শুয়ে খোলা জানালা দিয়ে তাকায়।
খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে সে।
কালো আকাশের গায়ে অসংখ্য নক্ষত্র,
ধ্রুবতারা কোনটি?
ধ্রুবতারা সন্ধ্যা আকাশে উঠে নাকি ভোরের আকাশে উঠে গো?
সে ধ্রুবতারা চেনেনা!
কেউ তাকে ধ্রুবতারা চিনিয়ে দেয়নি।
তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার মনে প্রশ্ন জাগে- সেই তারাটি কি এখনো আছে?
সে-ই যে তারাটি যা আরব,পারস্য,মেসোপটেমিয়ারর তিন পন্ডিতকে পথ দেখিয়ে এনেছিলো ঈশ্বর পুত্র যিশুর জন্মস্থানে?
তারাটি কি এখনো ভালোবাসার মানুষদের পথ দেখায়?
নাকি আকাশের অপার রহস্যে অনেক আগেই আত্মগোপন করেছে?
চিন্তাগুলো জট পাকিয়ে যায়।
তারাখচিত ঘোলাটে আকাশ শুদ্ধ আর ভালোবাসার শত ছিদ্রের চাদর হয়ে চোখের সামনে ভাসতে থাকে!
.
এরপর কেটে গেলো অনেক দিন।
প্রায় ছয় মাস……!
.
অরদ্ধির অসুখটা বেশ চেপে ধরেছে অরদ্ধিকে।
চোখের নিচে কালি,
গাল বসে গেছে।
কারো সাথেই তেমন কথা বলে না।
শুদ্ধের সাথে তো কথাই হয় না।
এ ছয় মাসে শুদ্ধ খোঁজ নেয় নি।
ফোনটাও বন্ধ,
সিম পরিবর্তন করেছে হয়তো।
অরদ্ধিও আর খোঁজ নেয়নি।
যে হারিয়ে যেতে চায়,
তাকে খোঁজার মানে হয় না।
হয়তো পাওয়া যাবে,
তবে সেই শুদ্ধকে পাওয়া যাবে না।
যার ভেতর অরদ্ধির একটুকরো অরদ্ধি লুকায়িত ছিলো।
অরদ্ধি এখন সবকিছু চারদেয়ালেই সীমাবদ্ধ করে নিয়েছে।
সারাক্ষণ ছলছল চোখে হসপিটালের চার দেয়ালে কি যেনো খুঁজে বেড়ায়!
কিন্ত খুঁজে পায় না।
একেবারের নির্জীব নির্বাক হয়ে সোনার মূর্তিটা লোহা হয়ে গেছে।
মরিচা ধরে গেছে যেনো একেবারে।
অরদ্ধির মা মেয়ের জন্য একেবারে শেষ হবার পর্যায়।
বেচারী দিন রাত হসপিটালে অরদ্ধির পাশে বসা।
.
আজ মনে হয় অরদ্ধির মনটা একটু ভালো।
বালিশে হেলান দিয়ে অরদ্ধি শরৎচন্দ্রের “দেনা পাওনা” উপন্যাসটা পড়তেছিলো।
কখন যে মা এসে তার পাশে বসে পড়েছে,
তা খেয়াল করেনি অরদ্ধি।
খেয়াল করতেই অরদ্ধি বইটা বন্ধ করে মায়ের দিকে তাকালো।
মা মনে হয় কিছু বলবে।
অরদ্ধি মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
অরদ্ধির মা গলা খাকারি দিয়ে নড়েচড়ে বসলো।
অরদ্ধি বলে উঠলো-
.
—- কিছু বলবে মা? (অরদ্ধি)
—- কি বলবো? (অরদ্ধির মা)
—- ওহ্
—- শুদ্ধ ফোন করেছিলো বিকেলে।
—- কিছু বলেছে?
—- হুম
—- কি বললো?
—- তোকে দেখা করতে বলেছে।
—- ওহ্,আচ্ছা।
—- আমি বলেছি পারবেনা,
সব বলে দিয়েছি আমি আজ।
—- কিহ্?
কেনো বলেছো?
—- সত্যিটা আর কতকাল লুকাবো?
—- কিন্ত মা শুদ্ধ চিন্তা করবে যে।
—- তা তো করবেই।
—- কি বলেছে শুদ্ধ সব শুনে?
—- তেমন কিছুই না,
কাল আসবে বলেছে।
—- ওহ্,
আচ্ছা মা,কাল নীল শাড়িটা পড়ি?
—- পড়িস
—- মোটা করে কাজল টানবো কাল চোখে।
কেমন হবে মা?
—- খুব ভালো লাগবে তোকে।
—- থিংকু মা,
এখন আমি একটু একা থাকবো।
—- ওকে
—- তুমি বাইরে থেকে একটা কালো লিপস্টিক নিয়ে এসো।
—- আচ্ছাহ্!
.
অরদ্ধির মা বাইরে চলে গেছে।
অরদ্ধি হসপিটালের বেডের উপর বসে আছে।
কাল শুদ্ধ আসবে!
ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে।
ইশ্,প্রথম দেখার কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে অরদ্ধির।
গাধার মতো বড় বড় চোখ করে কিভাবে তাকিয়েছিলো সেদিন শুদ্ধ তার দিকে।
অনেকক্ষণ তাকানোর পর অরদ্ধি যখন তাকে চিমটি কেটেছিলো,
তখন চমক ভেঙ্গেছিলো শুদ্ধের।
সেদিন অরদ্ধি কত কত কথা বলেছিলো,
আর গাধাটা খালি মাথা নাড়ছিলো।
হি হি হি……
সেদিন অরদ্ধি নীল শাড়ি পড়েছিলো,
আর হাতে অনেকগুলো কাচের চুড়ি।
আচ্ছা,মাকে চুড়ি গুলো নিয়ে আসতে বললে কেমন হবে?
নিয়ে আসতে বলতে হবে।
কাল সাঁজবে অরদ্ধি,
অনেকদিন সাঁজেনি সে।
কত কত কত দিন এই চোখ দেখেনি তাকে,
যে লুকিয়ে ছিলো সযতনে পাঁজরের খাঁজে।
কাল শুদ্ধ আসছে,
আসবে শুদ্ধ।
নতুন এক অনুকাব্যের সৃষ্টিতে!
মহাকাব্যের প্রয়ান হোক,
তবু ভালোবাসারা আবার একটু শিহরিত করুক ধরনীকে।
ভালোবাসার দেহে শিহরণের ভূমিকম্প রিখটার স্কেল মেপে আসেনা,
গভীরতা মেপে আসে।
অরদ্ধির ঘুম পাচ্ছে,
বেডে এলিয়ে দিলো শরীর।
একটু ঘুম!
একটু প্রশান্তি!!
আহ্………….!!!
.
শুদ্ধ মাথা নিচু করে বসে আছে অরদ্ধির সামনে।
ঠিক ক্লাসে পড়া না পারা ছেলেটার মতো করে।
অরদ্ধি শুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে,
ইশ্…….
কত শুকিয়ে গেছে বোকাটা!
একেবারেই মনে হয় কেয়ার করে নি নিজের।
অরদ্ধির বুকের ভেতর হাপরের উঠানামা শুরু হয়ে গেলো এরকম শুদ্ধ কে দেখে।
চোখের কোনায় হয়তো জল জমেছিলো,
আড়াল করে নিয়েছে সে জলকে অরদ্ধি।
লুকানোর এক অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে অরদ্ধির,
যা সবাই পারে না।
নিজেকে সংযত করে অরদ্ধি শুদ্ধের হাতে হাত রাখলো।
শুদ্ধের পুরো শরীরে তড়িৎ বয়ে গেলো যেনো!
চমকে উঠে অরদ্ধির দিকে তাকালো শুদ্ধ।
অরদ্ধি মুচকি হেসে শুদ্ধকে বললো-
.
—- এতদিন পর মনে পড়লো যে? (অরদ্ধি)
—- মনে তো সবসময় পড়ে।(শুদ্ধ)
—- যাক্,আমার সৌভাগ্য!
—- কেমন আছো অরদ্ধি?
—- প্রশ্নটা তো তোমাকে করার কথা আমার,
কেমন আছি আমি?
—- অরদ্ধি…….!
—- বলো
—- কেনো বললেনা আমাকে আগে এসব?
—- কি হতো বলে?
পারতে কি তুমি ইশিকার মোহ ছাড়তে?
—- মানে?
—- সেটা তুমিই ভালো জানো!
—- ইশিকা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।
—- কেনো?
—- তার বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি।
—- সো স্যাড মিস্টার শুদ্ধ!
—- আমি সরি অরদ্ধি।
—- সরি?
কিসের সরি?!
—- তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য।
—- আমার আবার কষ্ট!
—- ক্ষমা করে দাও আমাকে প্লীজ।
—- মৃতদের কাছে কারো কোনো পাপবোধ থাকেনা।
—- এভাবে বলো না রে,
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
—- শেষ কবে কথাটা বলেছো মনে পড়ে শুদ্ধ?
—- নাহ্!
—- কিন্ত এই একটা কথা শোনার আশায় ছাতক পাখির মতো বসে থাকতাম আমি।
—- আমি সরি রে অরদ্ধি।
—- কিসের সরি?
একটা সরির জন্য কি আমি তোমার চোখে আমার পৃথিবী দেখতাম?
—- (নিশ্চুপ)
—- চুপ করে আছো কেনো?
বলো?
এই সরির জন্যই কি তুমি হলুদ প্রজাপতি কে নীল বললেো অবলীলায় বিশ্বাস করতাম?
এই সরির জন্যই কি রাতের পর রাত আমি বালিশ ভেজাতাম?
এই সরির জন্যই কি বুকের ভেতর মৃত নদীর মতো শিথিলতা জমিয়ে রেখেছিলাম আমি?
এই সরির জন্য কি আজ ভালোবাসা কবরস্থানে আর স্বপ্নেরা শশ্মানে ঠাঁই পেয়েছিলো?
বলো শুদ্ধ, বলো……..
—- ভাষা নেই আমার!
—- এ দিনটির অপেক্ষা করেছিলাম আমি,
যেদিন তুমি হবে নির্বাক আর আমি সবাক।
—- অরদ্ধি……
—- বলো
—- শশ্মানে নীরবতা কত?
—- তুমি ছাড়া স্পন্দন যত!
—- আমার কি করা উচিত অরদ্ধি?
—- কিছুনা, চলে যাও তুমি।
—- ভালোবাসো?
—- অরদ্ধিরা ভালোবাসতে জানে,
ঘৃনা নয়।
—- তাহলে কেনো তাড়িয়ে দিছো?
—- আমার নষ্ট জীবনে নতুন করে তুমি তুষ্টতা পাবে না,
কষ্ট পাবার চেয়ে ভুলে থাকো আগের মতো করে।
—- তুমি কি চাও আমি আর না ফিরি?
—- হুম
—- আচ্ছা,
তোমার চাওয়াটাই থাকুক।
—- হুম,
আরেকটা কথা।
—- বলো
—- সময় পেলে মিলিয়ে দেখিও,
আঙুলের ফাঁকে আমি কই?
—- চুপ করো…..
—- হুম,তা তো করবোই দু একে।
তবে কি জানো?
আমার লাশের পাশের আহরবাতির ঘ্রান অনেকদিন তোমাকে ঘুমাতে দেবে না শুদ্ধ!
অনেকদিন………
—- এভাবে বলো না অরদ্ধি,
ঘৃনা হয় নিজের প্রতি!
—- হা হা হা…..
ঘৃনা!
—- হুম
—- আচ্ছা, আজ এসো তবে।
আমার খুব খারাপ লাগছে।
—- ডাক্তার ডাকি?
—- না,
ডাকতে হবে না।
—- হুম
—- শুদ্ধ….
—- বলো
—- নীল শাড়িতে আজ আমাকে কেমন লাগছে?
—- নীল পরীর মতো!
—- আমার মাথায় একটু হাত বুলাবে শুদ্ধ?
—- হুম,
বুলিয়ে দিচ্ছি।
তুমি শুয়ে পড়ো।
—- খুব কষ্ট হচ্ছিলো তুমি ছাড়া,
এখন আর নেই কোনো কষ্ট।
—- সব ঠিক হয়ে যাবে।
—- আমার সব চুল পড়ে গেছে শুদ্ধ,
কেমোথেরাপি সব চুল কেড়ে নিয়েছে।
—- পরচুলা কিনে দেবো আমি।
—- পর তো পরই রে,
আপনের মতো আপন না।
—- জানি
—- শুদ্ধ
—- আমার চোখে জল কেনো?
—- আমার জন্য।
—- কে তুমি শুদ্ধ?
—- আমি তোমার মধ্যরাতের,
ডুকরে কাদার কারন।
আমি তোমার সেই কথা,
যা কাউকে বলা বারন।
আমিই তোমার ভাগ্যরেখা,
আমিই সেটার গনক।
আমিই তোমার প্রতি ফোটা,
অশ্রু জলের জনক।
—- বাহ্,সুন্দর তো!
—- হুম
—- আমার খুব খারাপ লাগছে,
মাকে ডাক দাও তো।
—- ওকে,ডাকছি।
তুমি রেস্ট করো।
.
অরদ্ধির গাল বেয়ে অশ্রু গড়াতে লাগলো,
কতদিন কতদিন পর শুদ্ধকে দেখলো।
ইশানা মেয়েটা খুব কষ্ট দিয়েছে শুদ্ধটাকে।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সব।
হিজল-তমাল- কেলীকদম্বেরা আজ কোথায়?
ডাহুক-শ্যামা গুলো কি আজও দেখা যায়?
পরিবর্তন এতো দ্রুত কেনো হয়?
ভালোলাগা গুলো ক্ষণস্থায়ী,
ভালোবাসাগুলো এতো ঠুনকো কেনো?
অরদ্ধির চোখ উপচে জল গড়াতে লাগলো।
চোখের কাজল লেপ্টে গেছে জলে,
শুদ্ধ কাছে থাকলে হয়তো চোখের জলটা মুছে দিতো।
অরদ্ধি চোখ বন্ধ করলো,
মস্তিষ্কের সমস্ত জানালা খুলে
শুয়ে আছে অরদ্ধি,
কেউ আসছে না।
না রোদ,না পাখির গান… কেবল উত্তর পাহাড়ের হিম, ঠাণ্ডা হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে ব্যথিত চিবুক।
বিস্তৃতির বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে একা,কেউ আসছে না।
না স্বপ্ন,না ঘুম,কেউ আসছে না।
আঁধারপুরের বাস কতদূর
থেকে তুমি আসো???
.
.
অরদ্ধি মারা গেছে মাঝরাতে!
হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছিলো।
ডাক্তাররা অনেক ট্রাই করেছে,
কাজ হয়নি।
একটা সময় নীরব হয়ে গেছে অরদ্ধি।
ক্যান্সার নামক চোর অবশেষে চুরি করে নিয়ে গেলো অরদ্ধিকে।
মারা যাবার আগে শ্বাস কষ্ট নিয়েও বারবার বলছিলো শুদ্ধের কথা!
কি নিদারুন কষ্ট,
অথচ মুখে হাসি লেগেই ছিলো!
ও গো প্রেম,
প্রেম গো……
তুমি এতোটা মোহময় কেনো?
অরদ্ধির মা অরদ্ধির হাত চেপে ধরে ছিলো,
শুকনো হাতটা মৃদু কাঁপছিলো।
নীল কাচের চুড়িগুলো আলতো ঝনঝন করছিলো সে মৃদু কম্পনে।
একটা সময় অরদ্ধির মায়ের হাতে থাকা অরদ্ধির হাতে কাঁপন থেমে যায়।
পরাজিত হয় জীবন আর চিৎকার করে উঠে মায়া।
অরদ্ধির মা কাঁদছে,
করুন স্বরে ডেকে চলছে অরদ্ধিকে।
চাপাহাসি মুখ বড়রদারুন অভিমানী,
না তাকালো না সাড়া দিলো!
অভিমানে চুপটি করে পড়ে রইলো শুভ্র বেডে!
জাগতিক সব মোহ,মমতা ছেড়ে অজানা জগতে চলে গেলো অরদ্ধি!
কালকের নীল শাড়ি পড়া মেয়েটা আজ লাশ!
ইশ্……..
কি কঠিন সত্য!
.
অরদ্ধির লাশ দাফন করা শেষে শুদ্ধ চলে আসে বাসায়।
সাথে করে নিয়ে আসে অরদ্ধির হসপিটালে থাকার সময়কার ডায়েরীটা।
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে ডায়েরীটা পড়ছে আর চোখের জল মুছছে শুদ্ধ।
অরদ্ধির লিখাগুলো ছিলো এমন–
.
শেষবার তো আমি সেদিনই মরে গিয়েছিলাম,
যেদিন তোমাকে ঈশিকার সাথে রিক্সায় খুব অন্তরঙ্গভাবে দেখেছিলাম।
তোমাদের বসে থাকার ভঙ্গি আমাকে বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিলো,
তুমি আর আমি নামক দুটো মানুষের ভালোবাসা নামক প্লেট পরস্পর পরস্পরের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।
অতি শ্রীঘ্রই ভূকম্পন সৃষ্টি হবে।
না কোনো রিখটার স্কেল মাপতে পারবে তার তীব্রতা!
না কোনো অর্থনীতিবিদ মাপতে পারবে তার ক্ষতির সূচকতা!
না কোনো ডাক্তার মাপতে পারবে বিস্ফোরিত হৃদয়ের দগ্ধতা!
না কোনো ইঞ্জিনিয়ার মাপতে পারবে সুবিশাল এই ফাটলের স্থূলতা।
আর তুমি?
হাহ্…….বুঝতেই পারলেনা আমার নীরবতা!
আসলে কি জানো শুদ্ধ?
তুমি যদি আমার মৌনতার ভাষাই না বুঝলে,
তবে আমাকে বুঝবে কি করে?
.
এই তুমিই তো বলতে আমাকে,
যে আমি অসহ্য!
হুম,আমি মানছি আমি অসহ্য।
কিন্ত তোমার সব আঘাত নীরবে সহ্য করে গিয়েছি।
কেনো জানো?
যদি আমার সহ্য সীমাই না থাকতো,
তবে ভালোবাসার যোগ্যতাটুকুও থাকতো না।
তবে মাঝে মাঝে খুব চিৎকার করতে ইচ্ছে করতো।
গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে হতো,
“তুমি সুন্দর আমিও তো সুন্দর!
তুমি উচ্চবিত্ত আমিও তো উচ্চবিত্ত!
তুমি শিক্ষিত আমিও তো শিক্ষিত!
তাহলে তুমি চিৎকার করে বলতে পারলে ব্রেক আপ!
আর আমি কেনো চিৎকার করে কাঁদতেও পারিনি?
কেনো পারিনি একটু মন খুলে কাঁদতে আমি?!”
.
বিশ্বাস করো,
এখন আর তোমার কারনে মন খারাপ হয় না।
হবে কি করে?
মনটা তো তুমি চলে যাবার সাথে সাথে ভাগাড়ে ফেলে এসেছি।
সেখানে হয়তো মৃত পশুগুলোর সাথে আমার মনটাকে নিয়েও প্রতিরাতে শেয়াল কুকুরের বাগবিতণ্ডা হয়!
.
বিশ্বাস করো শুদ্ধ,
এখন আর তোমার কারনে চোখেও জল আসেনা।
আসবে কি করে বলো?
মৃত নদী দেখেছো কখনো?
প্রকৃতির তীব্র অহবেলায় শুকিয়ে ধু ধু বালুচর হয়ে গেছে।
বুকের ভেতর একপশলা সাদা কাঁশফুল নিয়ে সদ্য বিধবা বেশে পড়ে থাকে।
ঠিক আমিও রে,
তোমার চলে যাবার পর হতে একদলা সাদা সফেদ হাহাকার নিয়ে জীবন্মৃত হয়ে আছি।
যে হাহাকার চোখে জল আনেনা ঠিক,
তবে পরম যত্নে চোখের মায়াটা কেড়ে নিয়ে মৃত নদীর মতো শিথিল চোরা স্রোত বইয়ে দেয় হৃদয় মাঝে।
.
বিশ্বাস করো,
এখন আর তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করিনা।
আমার ধারালো অপেক্ষার অনুভূতিগুলো অসময়ের তীব্র নিদারুন নিষ্পেষণে একেবারেই ভোঁকা হয়ে গেছে।
আমি চাইলেই পারিনা আগের মতো অতোটা উৎফ্রুল্ল হয়ে তোমার অপেক্ষায় থাকতে।
আর কত শুদ্ধ?
নিজেকে জুড়তে জুড়তে ক্লান্ত বড় পরিশ্রান্ত আমি।
তোমার কি আমাকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ক্লান্তিও আসেনা রে?
.
আচ্ছা শুদ্ধ,জানো কি তুমি?
আমার না অনেক কষ্ট হচ্ছে রে।
বারবার চেঞ্চল্যাস হয়ে পড়ছি,
ব্লাড যাচ্ছে অনবরত।
তুমি কেমন আছো রে?
জানার জন্য মনটা খুব আনচান করছে রে।
আচ্ছা!
আমি যদি একবার তোমার হাতটা ধরতে চাই,
দিবে তো?
জানি রাইটস্ নেই আমার।
তবুও ধরি?
ওই যে, কল্পনায় যেভাবে ধরি?
খারাপ লাগছে কি খুব তোমার?
ওকে,তুমি শুয়ে পড়ো।
দেখো,আমি তোমার মাথার দিকে ফ্লোরে বসে আছি।
এই যে, আমি গ্লাভস্ পরে নিলাম।
আমার ক্যান্সারের জীবানু তোমাকে স্পর্শ করবে না।
ফিল করো তুমি,
তোমার বাম হাতটা চেপে ধরে আছি,
আচ্ছা!
যখন যন্ত্রনায় আমি কুঁকড়ে যাবো,
আমার পুরো শরীরে যন্ত্রনার ঢেউ আছড়ে পড়বে,
কষ্টেরা বানের জলের মতো ভাসাবে আমাকে যখন-
তখন যদি একটু ঝোরে চাপ দিয়ে বসি আমার মুষ্টির মধ্যে থাকা তোমার হাতের তালুতে,
তুমি কি আমাকে থাপ্পর মারবে?
নাকি টাই দিয়ে মারবে?
আচ্ছা, সেদিনের মতো নাহয় লাথি দিও।
তবু ওই হাতটা কেড়ে নিও না রে।
জানো কি তুমি?
আমার যখন খুব কষ্ট হয়,
আমি তখন আমার ফোনের গ্যালারী তে যাই।
তোমার সবকটা পিক আমি দেখি,
তোমার চোখ,তোমার চশমা,তোমার চুল!
কি অসম্ভব রকমের সুন্দর!!
আমি হারিয়ে যাই তোমার চোখে,
কষ্ট, যন্ত্রনা সব লুকিয়ে যায় তোমার চুলের বনে।
আমি দেখতেই থাকি – দেখতেই থাকি রে।
ওগো মায়া,
মায়া গো…….
তুই এতো নেশাময় কেনো?
আমি একবার দেখি বারবার পড়ি তোমার মায়ায়।
আচ্ছা!
তুমি কি সত্যিই চলে গেছো?
কিন্ত আমি চোখ খুললে,বুজলে তোমাকে দেখি!
বাতাসে তোমার গন্ধ পাই!!
হার্টের প্রতিটা স্পন্দনে তোমাকে টের পাই আমি।
আচ্ছা,
তোমাকে তো জানানো হয় নি,
আমার মস্তিষ্কের দুটো ভ্যান্ট্রিকলেরই সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড শুকিয়ে গেছে,
হার্টের আর্টারি ধীরে ধীরে ব্লকড হয়ে যাচ্ছে।
অথচ আমি তোমাকে সেই হার্ট দিয়ে ফিল করি,
মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরন জুড়ে তোমার বসতি গড়ি।
আর তুমি?
না থাক,আজও ভালোবাসি তো।
জয়গান আর গুনগানই গাইবো।
ভালোবাসার কি বদনাম করা যায় কখনো বোকা?
আচ্ছা,
আমি তো হসপিটালে পড়ে থাকি।
কত বড় বড় ডাক্তার আসে,
আমাকে দেখে।
সবাই তো আমাকে চেনে,
ওরা অবাক বিস্ময়ে তাকায়।
আমি কি চিড়িয়া নাকি?
দেখো,মাত্র হসপিটালে ঢুকলাম।
আসা মাত্রই একটা ইনজেকশান পুশ করে দিয়েছে ডাক্তার আংকেল।
কি বোকা ডাক্তার,
আমার পেইন হার্টে আমার মাথায়।
ইনজেকশান দিলো বাম হাতের ভেইনে।
তারপর আবার প্রশ্ন করে,
“অরদ্ধি,ব্যাথা পাইছো?”
কি বোকা ডাক্তার গো,
আমার চোখের সামনে তুমি,
হার্টে তুমি মস্তিকে তুমি।
আর সেই আমি কি ব্যাথা পাই?
ইশ্,যদি বাচ্চাকাল টা থাকতো আমার,
তাহলে তো এতক্ষনে নিশ্চয়ই
বোকা ডাক্তার, বোকা ডাক্তার বলে উল্লাসে চেঁচাতাম।
ঠিক যেমনটা তোমাকে পেয়ে চেঁচিয়েছিলাম।
আচ্ছা, হসপিটাল থেকে যদি আর না ফিরি আমি?
যদি কেউ তোমাকে বিশুদ্ধ না বলে,
যদি কেউ তোমাকে ভালোবাসি না বলে আমার মতো?
যদি কেউ তোমার গন্ধ নেবার জন্য সিক থেকেও তোমার এলাকায় না যায়?
যদি কেউ তোমার শুভকামনায় রাত জেগে প্রভুর কাছে দুআ না করে?
সেদিন কি তোমার একটুও কষ্ট হবে?
কোনো এক মাঝরাতে কি তুমি ঘুমের ঘোরেও অরদ্ধি বলে বসবে মুখ ফসকে?
কোনো এক সন্ধ্যায় কি তারা দেখে আমার কথা মনে পড়বে তোমার?
কোনো এক রঙ্গিন বিকেলে কি চিকন, ফরমাল ড্রেস পরিহিত,মোটা ফ্রেমের চশমাওয়ালা কাউকে দেখে অরদ্ধি ভেবে বসবে?
কোনো এক দুপুরে ভার্সিটি থাকাকালীন সময়ে তোমার ফোনে ম্যাসেজ টিউন বাজলে ভুল করেও আমার কথা মনে পড়বে?
ওই যে টেক্সটে লিখা থাকতো,
“খেয়ে নিও প্লীজ”
কোনো এক সকালে কি ঘুম ভেঙ্গে ভুল করেও একবার ফোনটা হাতে নেবে?
আমি টেক্সট করেছি বলে?
হি হি হি………
কি বোকা আমি তাই না?
যা হবে না তাও ভাবি।
আচ্ছা!
এই বেডেই যদি আমি মরে যাই,
তুমি খবর পেলে আসবে ছুঁয়ে দিতে?
থাক,
ছুঁয়ে দিতে হবে না।
একনজর দেখিও!
কি, পারবে না?
তাহলে আমার কফিনটা দেখিও?
তা না পারলে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িটা দূর হতে দেখিও।
হি হি হি,
তাও পারবে না?
আচ্ছা!
শুধু একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ কবরের উপরে লাগিয়ে দিয়ে গেলেই হবে।
অন্তত গাছের মাঝে তোমার ছোঁয়া মিশে থাকলেই হবে।
ককরটা পাশাপাশি না হোক,
ভীড় ঠেলে একবার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই হবে।
মাঝে মাঝে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় কবরটা দেখে কিছুক্ষন থমকে দাড়ালেই হবে,
ততোদিনে কৃষ্ণচূড়া গাছটাও ফুলে ভরে যাবে।
নাহয় ফুল দেখার ছুঁতোই একবার দাড়িয়ে গেলে।
খুব বেশি সময় লস করতে হবে না।
শুধু আক্ষেপ কি জানো?
তোমায় আর “ভালোবাসি পাগলা তোকে” কথাটা বলা হবে না।
দিনশেষে আমি বরাবরের মতোই পড়ে রবো কৃষ্ণচূড়ার ছায়াতলে।
আর যদি কোনোটাই না পারো,
তবে থাক।
আমি জানি,
কোনো এক রাতে তুমি ঘুম ছেড়ে জেগে থাকবে।
হয়তো সেদিন আমার ২০/৩০ তম মৃত্যুদিবস পালিত হবে।
আমার কবরের মাটি দেবে যাবে।
আমার কবরের নেমপ্লেট টুকুও খসে পড়বে।
আমার কবরেরও হয়তো অস্তিত্ব থাকবেনা।
যদিওবা তখন ভুল করেও মনে পড়ে,
তখন জানালা দিয়ে উঁকি দিও,
নয়তো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশে তাকিও।
তারা রূপে আমাকে দেখতে পাবে।
মিট মিট করে পোড়া হৃদয় নিয়ে জ্বলবো।
আর ঠিক তখনই তোমার মনে পড়বে আমার বলা সে কথাটা,
“আমার লাশের পাশের আগরবাতির ঘ্রান,
অনেক বছর তোমাকে ঘুমোতে দেবে না।”
ডায়েরীটা পড়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে শুদ্ধ।
অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যায় সে।
বেশ কিছুদিন ডাক্তারের নজরদারির মাঝে চলতে হয়েছে তাকে।
.
পরিশিষ্টঃ
শুদ্ধ বিয়ে করেছে চার বৎসর হলো।
একটা মেয়ে আছে শুদ্ধের।
নাম অরদ্ধি!
হয়তো অরদ্ধি নামটা বাঁচিয়ে রেখেছে এই বাচ্চার
মাঝে।
ও গো…..প্রেম……
প্রেম গো………
তুই এতো নিশ্চুপ ডাকাত কেনো?
নীরবে নীরবে কার্বন মনোক্সাইড এর মতো
কেনো ধ্বংস করিস জীবন?
কি মায়ায় তুই মায়াবী বাঁধনে বাঁধিস দুজনকে?
অতীত ভুলেও না, আবার বর্তমানেও পায় না।
কি জিনিস রে তুই?
প্রেম…..ও প্রেম?
কথা বল,
চুপ কেনো তুই?
.
শুদ্ধ ছাদে দাড়িয়ে আছে।
আজ তো অরদ্ধির জন্মদিন।
শুদ্ধের বড় জানতে ইচ্ছে করে,
ওপারে কেমন আছে অরদ্ধি?
কি করছে?
শুদ্ধর ইদানিং ঘুম আসেনা রাতে।
অরদ্ধির কথাটাি হয়তো ঠিক।
তার লাসের পাশের আগরবাতির ঘ্রান শুদ্ধকে ঘুমাতে দেয় না।
মনে মনে অরদ্ধিকেই স্মরন করছে শুদ্ধ।
চোখের জলে দুগাল সিক্ত।
ভালোবাসি বলার সময়টুকুও দেয়নি অরদ্ধি।
হুট করে হারিয়ে গেলো।
শুদ্ধ তাকিয়ে আছে আকাশে।
যেখানে বসে আছেন জীবনের পরিচালক।
হঠাৎ করে কেমন একটা মোহ জড়িয়ে ধরলো
শুদ্ধকে।
কে যেনো পেছন হতে ডাকলো,
কেমন আছো শুদ্ধ?
শুদ্ধ চমকে উঠে পেছনে তাকাতেই দেখে
অরদ্ধি দাড়িয়ে আছে।
শুদ্ধ অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই অরদ্ধি বলে
উঠলো,
এই শুদ্ধ, কেমন আছো?
এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
বলবে না আমাকে, কেমন আছো?
“আমি কেমন আছি অরদ্ধি?” অরদ্ধিকেই প্রশ্নটা
করে শুদ্ধ।
কিন্ত অরদ্ধি সে প্রশ্নের উত্তর দেয় না।
প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা ছাত্রীর মতই মাথা নিচু
করে হেঁটে যায় অরদ্ধি।
শুদ্ধ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে,
অরদ্ধি হেঁটে যাচ্ছে।
ছাদ পার হয়ে বাতাসে হাঁটছে,
ভেসে ভেসে হাঁটছে অরদ্ধি।
শুদ্ধকে আশ্রয়হীন,
অবলম্বনহীন করে একসময় হাঁটতে হাঁটতে মিলে
যায় আকাশে অরদ্ধি।
শুদ্ধর সমস্ত পৃথিবীটা দুলে উঠে।
মনে হয়,
কেউ ছিলো না শুদ্ধের।
কোনো দিন না,
কখনো ছিলো না।
ঠিক এতটুকুন সময়ের জন্যেও না।
বুকের মাঝখানে নিঃশব্দে আর্তনাদে সবকিছু
কেমন যেনো মনে হয় –
স্থির! বিবর্ণ!!মৃত!!!
অথচ ছাদে এসে আজ শুদ্ধ একটা কথা বলতে
চেয়েছে অরদ্ধি কে।
“অরদ্ধি,শুভ জন্মদিন!”
কিন্ত অরদ্ধির অবছায়া তা আর হতে দিলো কই?
মোহের ভাঁজে পড়ে ছিলো সুপ্ত কথন,
বুকের খাঁজে জ্বলছে কেনো নীরব দহন?!
লিখাঃ Chowdhury Ayeaan Muhammad Shuddho
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.