#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_১৩
স্যার আমাদের আর মারবেন না। আমরা মারা গেলে আমাদের বউ বাচ্চার কি হবে? আমরা আপনাকে সবটা বলছি।
” সোজা কথায় এতক্ষণ কাজ হচ্ছিলো না। তাই আঙুল টা একটু বাকালাম। পথে আসো এবার! ”
” স্যার আমরা মূলত টাকার জন্য এসব কাজ করি। কিন্তু শাজাহানের লাশ কে চুরি করতে বলছে আমরা কিছু জানিনা? আমাদের কে একটা আননোন নম্বর থেকে কল করা হয়। এরপরে সবকিছু ফোনেই বলে আমরাও টাকার জন্য রাজি হয়ে যাই। ”
” দেখি সেই নম্বর! বেলাল নম্বরটা ট্রেস করো কোথায় আছে এখন লোকেশন ট্রাক করে জলদি জানাও। ”
” ইয়েস স্যার! ”
” তোদের দুইটাকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি। তোরা টাকার জন্য এসব করিস না। টাকা কামাইয়ের এই অবৈধ নেশা তোদের মাথা থেকে ছুটাবো আমি। ”
বেলালা এসে বলে ___
” স্যার নম্বর টা কোয়ালিটি ইন (আবাসিক হোটেল) এর দিকে নির্দেশ করছে। ”
” এখনো নম্বর অন আছে যত তারাতাড়ি সম্ভব আমাদের কে এখনি ওই জায়গায় পৌছাতে হবে। আর হ্যা মাসুদকে বলো এই নম্বরের গত ১ মাস কার কার সাথে কথা বলছে তার লিষ্টটা বের করতে। দ্রুত গাড়ি বের করো আমাদের এক্ষুণি যেতে হবে। ”
” ইয়েস স্যার ”
থানায় এমন সময় নীলা ও আকাশের আগমন হয়। নীলাকে দেখে আরিয়ান বলে ম্যাডাম আমাদের দ্রুত গুলশান_২ এ যেতে হবে।
আকাশ বলে কেনো যেতে হবে।
” প্রশ্ন করবেন না স্যার আমাদেরকে যেতে হবে মানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। ”
বেলাল বলে স্যার গাড়ি বের করছি দ্রুত আসেন।
গাড়িতে আকাশ, নীলা,আরিয়ান, বেলাল গুলশানের দিকে রওনা হয়। গাড়িতে সবটা নীলাকে বলে আরিয়ান।
২০৩ নম্বর রুমে বারবার কলিং বেল বাজায় বেলাল। কারো কোনো সাড়া না পেয়ে আরিয়ান দরজা ভাঙ্গতে উদ্যত হয়। এমন সময় দরজা খোলে একটি মেয়ে। অর্ধনগ্ন অবস্থায়। আমাদের বুঝতে আর বাকি রইলো না এইখানে কি চলছে। দ্রুত হনহনে রুমে ঢুকে আরিয়ান ও বেলাল। পুলিশ দেখে হকচকিয়ে যায় মেয়েটি। তাই সুযোগ বুঝে সে পালায়। রাতুল পায়ের শব্দ পেয়ে বলে কে এসোছিলো সুইটি আমাদের কে ডিস্টার্ব করার জন্য?
এসআই আরিয়ান বলে ___
” তোর সুইটি না আমি তোর বাপ বলছি। ”
পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায় রাতুল। স্যা স্যা স্যার আপনি? এখানে কেনো? কি করেছি আমি?
” এসব প্রশ্ন তো আমি জিজ্ঞেস করবো। বাহ তুই তো অনেক স্মার্ট । এই শ্লা তাড়াতাড়ি প্যান্ট পড়, আন্ডারওয়্যার পড়ে তোকে বাইরে নিয়ে যেতে পারিনা । বাইরে ম্যাডাম আছে। ”
” এরপরে রাতুলের হাতে হ্যানকাপ পড়িয়ে বাইরে নিয়ে আসে। রাতুলের মুখ দেখে আকাশ বলে___
” রাতুল আপনি এখানে! ”
এসআই আরিয়ান ও এএসআই বেলাল আকাশের মুখপানে তাকিয়ে থাকে। নীলা আচমকা জিজ্ঞেস করে আপনি ওকে চিনেন কিভাবে আকাশ?
ও তো আমাদের শিকদার গ্রুপের ২য় তলার ফ্লোর ম্যানেজার।
” স্যার আমাকে বাঁচান। আমি কিছু করিনাই। আমাকে কেনো এরেস্ট করা হচ্ছে আমি কিছু জানিনা? ”
আরিয়ান স্যার আপনার কোথাও ভূল হচ্ছে। রাতুল সাহেব এমন কেনো করবে। আপনি ওনাকে ছেড়ে দিন।
” এটা আমাদের ডিউটি আকাশ শিকদার। কে অপরাধী? কে অপরাধী নয় এইটা থানা জাস্টিফাই করবে। আমরা কাউকে এমনি এমনি তুলি না। বেলাল তুমি মাসুদকে ফোন দাও। মাসুদ পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসুক এই কোয়ালিটি ইন ( আবাসিক হোটেল) রেট হবে। ”
” নীলা তুমি কিছু বলছো না কেনো? ”
” আকাশ এখনতো আমার মনে হচ্ছে সরষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে রয়েছে। ”
” এইতো ম্যাডাম আপনি ঠিক ধরে ফেলেছেন। মিস্টার আকাশ শিকদার এখনতো আপনাকেও আমার সন্দেহ হচ্ছে। আপনি এসব অপকর্মে জড়িত আছেন কিনা দেখতে হচ্ছে। ”
” এই অফিসার মুখ সামলে কথা বলবেন। নীলা তুমি কি আমাকে অপমান করার জন্য সঙ্গে করে নিয়ে আসছো এখানে। ”
” আকাশ বি কোয়াইট। আরিয়ান কে তার কাজ করতে দিন। ”
” ওহ্ আমার স্টাফকে তুলে নিয়ে যাবে। আর আমি চুপচাপ দেখবো। কালকে যদি পত্রিকায় কিছু বেড়ায় তাহলে শিকদার গ্রুপের কতোটা সম্মানহানি হবে একটুবার ভেবে দেখেছো। ”
” আকাশ এটা ওনাদের দায়িত্ব। সত্যি অব্দি পৌঁছাতে হবে। আর রাতুল কোনো ভালো পুরুষ নয় নিজে চোখে তো দেখলেন। অন্য মেয়েকে নিয়ে কিভাবে রাত কাটাচ্ছিলো। ”
আকাশ চুপ করে যায়। মনে মনে ভাবে ঠিকইতো বলছে নীলা। রাতুলের বউ বাচ্চা থাকা সত্বেও কিভাবে অন্য মেয়েকে নিয়ে রাত কাটাতে পারে ছি!
স্যার ম্যাডাম আপনাদের কথা শেষ হলে আমরা থানায় যেতে পারি।
” হুম ”
নীলা আর আকাশ তাদের বাড়িতে চলে যায়।
____
মাসুদ পুলিশ ফোর্স নিয়ে হোস্টেল রেট করলে জানতে পায় এই হোস্টেলের মালিক আমজাদ শিকদার। অনেক টাকা এখানে গচ্ছিত রাখছে সে,যেগুলো সবই কালো টাকা। সরকার কে ট্যাক্স দেওয়া হয় নাই। হোস্টেল থেকে স্টাফরা আগেই পালিয়ে গেছে। কিছু মেয়ে ছিলো যারা দেহব্যবসা করে এখানে রোজগার করতো। সেসব মেয়েদের মাসুদ তার ফোর্স নিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এসআই আরিয়ান রাতুলকে অনেক মার দেয়। তবুও রাতুল মুখ খুলতে চায়না। এতো মার দেয় শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে যায় নিজেই। পানি খেতে বের হয়ে আসে চেম্বারে। পানি খেয়ে এরপরে মেয়েগুলোর সাথে কথা বলতে যায় আরিয়ান।
মেয়েগুলো বলে স্যার আমরা জেনেশুনে এই পেশায় আসিনি স্যার। আমরা সবাই শিকদার গ্রুপে চাকরি নেওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে চাই। কিন্তু এর বিনিময়ে আমাদেরকে চাকরির লোভ দেখিয়ে শিকদার গ্রুপের স্টাফরা শরীর ভোগ করে। এরপরে আবাসিক হোটেলে এসব চাকরি করতে দেয়। টাকার বিনিময়ে আমরাও দুবেলা দুমুটো খাওয়ার লোভে সেফলিভাবে এই কাজ চালিয়ে যাই।
” এসব কথা শুনে আরিয়ান ভাবে সব কাজের মূল শিকদার গ্রপ। আমার এখন ডাউট হচ্ছে আকাশ শিকদারো এসব কাজে জড়িত। ”
বেলাল বলে স্যার টিভিটা হেডলাইনে দিই সারাবিশ্ব দেখুক শিকদার গ্রুপের কুকীর্তি। কোয়ালিটি ইন ( আবাসিক হোটেলের) কাহিনী। এই হোটেলে মানুষ রাত কাটার নাম করে যৌনব্যবসা চালায় এই হোটেলের মালিক।
এখনি না বেলাল আগে রাতুলের সাথে আমাদের কথা বলতে হবে। সত্যি আবচা রেখে যেকোনো কিছু প্রকাশ করতে পারিনা।
” হুম স্যার। ”
আরিয়ান রাতুলের জেলে এসে জিজ্ঞেস করে ___
” দেখ রাতুল তুই যদি বাঁচতে চাস তাহলে সত্যি দ্রুত বলে দে। আমরা সবকিছু জেনে গেছি শিকদার গ্রুপ সুন্দরী মেয়েদের চাকরি দেওয়ার নাম করে আবাসিক হোটেলে যৌনতার চাকরি দেয়। তুই যদি এখন সত্যি টা না বলিস এসব অপকর্মে শিকদার গ্রুপের জড়িত ব্যাক্তি কে ? মর্গে লাশ চুরি করতে ক্যান তুই পাটাইছিস। যদি না বলিস তুই মারা যাবি। তুই কি চাস তোর বউ, বাচ্চা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করুক। ”
” না স্যার! ”
” তাহলে সত্যি টা বল! ”
” স্যার মর্গে লাশ চুরি করতে পাটাইছি শিকদার গ্রুপের হেড আমজাদ শিকদারের কথায়। ”
” কেনো শাজাহানকে আমজাদ শিকদার মারলো দ্রুত বল! ”
” স্যার শাজাহান একজন সাংবাদিক। বিপদে পড়ে সে গুলশানের কোয়ালিটি ইন আবাসিক হোটেলে রাত কাটানোর জন্য সিট বুকিং করে। কিন্তু সে রাতে জানতে পারে এই হোটেলে রাত কাটানোর পরিবর্তে যৌন ব্যবসা চালায় হোটেলের মালিক। শাজাহান সুযোগ বুঝে এই দৃশ্য তার ক্যামেরায় ধারণ করে। এই দৃশ্য দেখতে পায় হোটেলের ক্যাশ কাউন্টারের লোক রিয়াদ। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে স্যারকে জানায়। স্যার এই কথা শুনতে পেয়ে আমাকে ফোন করে। আমি যেনো শাজাহানকে কিছু টাকা দিয়ে কথাটি ধামাচাপা দেই। শাজাহানের সঙ্গে মিট করে টাকার প্রভোলন দেখাই কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিলো না। আমি স্যারকে মেজেস দেই। স্যার টাকাতে কাজ হবেনা। স্যার মেজেস পেয়ে খাবার ডেলিভারি বয়ের ছদ্মবেশ ধরে শাজাহানের জন্য খাবার নিয়ে আসে। আমি সেইখান থেকে চলে যাই ব্যাস একটুপর শুনি শাজাহান মারা গেছে। কিন্তু মারা যাওয়া পযর্ন্ত এই কেইস থামেনি। আপনারা বেশি বাড়াবাড়ি করছিলেন তাই মর্গে লাশ চুরি করাতে পাঠাই আমজাদ শিকদারের কথামতো। ”
” আর এই নিরীহ মেয়েগুলাকে চাকরির প্রভলন দেখিয়ে বেশ্যা বানাচ্ছিস। তোদের একবারো মনে হয়না এই সব মেয়েদের ভিতর যদি তোদের বউ বা বোন কোনোদিন ফেসে যায়। তোরা মানুষ হবিনা। ”
” দ্রুত আমজাদ শিকদার কে ধরতে হবে বেলাল গাড়ি রেডি করো। ”
” হুম স্যার। ”
” আরিয়ান নীলাকে ফোন দেয়। ম্যাডাম আমরা আসছি আপনাদের বাড়িতে আকাশ শিকদারের পরিবারকে রেডি থাকতে বলেন৷ সর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে রয়েছে। আরিয়ান ফোন কেটে দেয়। ”
নীলা হ্যালো হ্যালো করতে থাকে। দাদু বলে কে ফোন দিছে নীলা। নীলা হতভম্ব হয়ে বলে এসআই আরিয়ান।
“পুলিশের কথা শুনে দিলারা খান হকচকিয়ে যায়। তোকে পুলিশ কেনো ফোন করলো নীলা। আর ফোনে কি বললো নীলা। ”
” জানিনা মা আমাদের দ্রুত আকাশের বাড়িতে যেতে হবে। ”
” আকাশদের বাড়িতে কেনো? ”
” গেলেই বুঝতে পারবা! ”
_____
পুলিশ ফোর্স নিয়ে শিকদার দের ফ্ল্যাটে আসে আরিয়ান। পুলিশকে দেখে রেহেনা খান শিকদার বলে___
” কি হয়েছে আপনারা আমাদের বাড়িতে কেনো? ”
” আপনার স্বামী কোথায় ম্যাডাম? ”
” কেনো সে কি করেছে স্যার?”
” তাকে ডাকুন সে আসলে সব জানতে পারবেন। ”
” এমন সময় আকাশ নিচে নেমে বলে সে নাই স্যার। যা বলার আমাদেরকে বলতে পারেন। ”
খান বাড়ির সবাই ছুটে আসে শিকদারের ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটে এসে পুলিশ দেখে বিস্মিত হয়ে যায়।
পুলিশ ফোর্সরা সম্পূর্ণ বাড়ি ঘেরাও করে। এরপরে আরিয়ান বলে মিস্টার আকাশ শিকদার আপনি যেখানেই থাকুন বেড়িয়ে আসুন। আপনার সম্পূর্ণ বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয়েছে আজকে আপনার রক্ষা নাই।
এমন সময় আকাশের ফোন বেজে উঠে। আকাশ দেখতে পায় তার বাবা ফোন করছে। ফোন তুলে আকাশ। হ্যালো বাবা তুমি কোথায়?
” আমি কিছুদিনের জন্য অন্য দেশে যাচ্ছি। তোরা সাবধানে থাকিস। ”
” পুলিশ এই কথা জানামাত্রই গাড়ি নিয়ে দ্রুত এয়ারপোর্টে রওনা দেয়। ”
শিকদার পরিবার, খান পরিবার কিছুই বুঝতে পারছেনা। আমজাদের আসলে দোষ কি? পুলিশ তাকে খুঁজছে ক্যানো। আমজাদ কেনো পলায়ন করছে? নানান প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিলো সবার।
” এয়ারপোর্টে এসে পুলিশ ফোর্স চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। আকাশ এয়ারপোর্টে কথা বলে ফ্লাইট ছাড়ার জন্য ১৫ মিনিট সময় চায়। এয়ারপোর্টের দায়িত্বশীল ব্যাক্তি সবাইকে জানায় সম্মানিত যাত্রীগণ যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে আমাদের ফ্লাইটের সময় ১৫ মিনিট পরে ছাড়া হবে। ”
একথা আমজাদ শুনে বুঝতে বাকি রইলো না আজকে আর রক্ষা নাই। তাকে ধরার জন্য এইরকম মরণ ফাঁদ পেতেছে। চারদিকে চোখ বুলাতেই দেখে পুলিশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এতগুলো পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে সে এয়ারপোর্ট থেকে পলায়ন করবে। এমন সময় পিছন দিকে কাধে কারো হাতে স্পর্শ অনুভব করলো।
আরিয়ান বললো ___
” কই যাচ্ছেন মিস্টার আমজাদ শিকদার। আজকে আপনার রক্ষা নাই ইউ আর আন্ডার এরেস্ট। ”
#চলবে,,,