#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#বোনাসপর্ব_০৯
হসপিটালে রেহনা খান শিকদার পায়চারি করছিলো। কিছুক্ষণ পর পর আজাহারি করছে। নীলা শক্ত পুতুলের মতো বধূ সেজেই ওয়ালে ঘেষে দাড়িয়ে রইছে। দিলারা খান রেহেনাকে গালি দিচ্ছে তোর জন্য ছেলেটার আজকে এই অবস্থা।
আশফাকুল খান তার বাবাকে দূরে ডেকে এনে বলছে ___
” বাবা এই প্লান টা তো তোমার ছিলো। তোমার জন্যই আমি ধ্রুবের সাথে নীলার বিয়ে দিলাম। আমি জানতাম এরকম কিছু হবে তাই নীলাকে কখনো কানাডা থেকে আসার জন্য জোড় করি নাই। আমি ভেবেছিলাম ওদের মিল যেকোনো ভাবেই হবে। কতদিন পারে ওরা একে অপরকে ছেড়ে দূরে থাকতে পারে থাকুক। কিন্তু সেইদিন তোমার জোড়াজুড়িতে নীলাকে খবর দিই তুমি গুরুতর অসুস্থ। ”
” আমি তোর বাপ! আমার উপর ভরসা নাই তোর। আমি তোকে জন্ম দিছি, তুই আমাকে নয়। আমি বুঝতে পারি নাই আকাশ এতোদূর অব্দি যাবে। আসলে নাতীটার আমার মতো স্বভাব পেয়েছে। বুক ফাটবে তবুও মুখে বলবে না। ”
” কিন্তু বাবা বিয়েটাতো হয়ে গেলো। আমি কখনো চাইনাই নীলা অন্য কাউকে বিয়ে করুক। ছোটবেলা থেকে আকাশকে নিজের ছেলে ভাবতাম। বাবা কি কখনো ছেলেমেয়ের ক্ষতি চাইতে পারে। ”
” আল্লাহ আছে! টেনশন করিস না বাবা। ”
” বাবা এইটা টেনশনের কথা। তুমিতো জানো তোমার কৌটায় নাহলেও ১২ থেকে ১৫ টা ঘুমের ঔষধ ছিলো সবগুলো আকাশ খেয়েছে। আমি বাবা হয়ে সন্তান হারা হতে চাইনা। তুমিতো জানো নীলা আমার বিয়ের কতবছর পর আমার ঘরে আসছে প্রায় ৬ বছর। কত পাগল ছিলাম তোমার বউমা ও আমি। কিন্তু আকাশকে কাছে পেয়ে মনে হয়নাই আমরা ৬ বছর সন্তান হারা ছিলাম। আকাশের কিছু হলে আমি মুখ দেখাবো কি করে রেহেনাকে। ”
” এইখানে সব দোষ রেহেনার। তুইতো সবসময় ওদের দেখানোর জন্য এসব করতি। আমিতো জানি সব, আমি কখনো তোকে দোষী না। আল্লাহ তালা যা করে ভালোর জন্যই করে। আল্লাহর কাছো দোয়া কর আকাশ যেনো ফিরে আসে। রেহেনার একটা উচিত শিক্ষার দরকার এবার। ”
” ধ্রুব এদিকে এসে বললো আঙ্কেল, দাদু আপনারা কি বলতেছেন? জরুরি কিছু আমি কি এসে ভূল করলাম। চলে যাব। ”
” নীলার দাদু বললো দাদুভাই কি ভেবে স্টেপ নিলাম আর কি হয়ে গেলো। ”
” দাদু ভাই আকাশের কিছু হবেনা। আকাশের পেট থেকে মেডিসিনের নির্যাস বের করা হয়েছে। আকাশের জ্ঞান ফিরলে আকাশ সুস্থ হয়ে যাবে। ডক্টরের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমিতো কেবিনেই ছিলাম। ”
” আলহামদুলিল্লাহ দাদুভাই! ”
” কিন্তু দাদুভাই আমার কিন্তু জানা গল্পে এখনো অজানা কিছু রয়েছে। ”
” পরে শুনে নিয়ো। ”
আশফাকুল খানিক বিস্মিত হলো ধ্রুব ও বাবার কথায়।
_______
ডক্টর কেবিন থেকে বেড়োতেই রেহেনা খান শিকদার ডক্টরকে প্রশ্ন করে ___
” কি অবস্থা ডক্টর সাহেব। আমার ছেলে এখন কেমন আছে? ”
” উল্টো ডক্টর প্রশ্ন করলো আপনার ছেলে কেনো এরকম করলো? ”
রেহেনা খান শিকদার চুপ করে থাকে।
” নীলা এসে বলে ডক্টর সাহেব আমার আকাশ বাঁচবে তো। ”
” আপনি কে? বধূবেশে। আপনি কি পেসেন্টের ওয়াইফ। ”
” ধ্রুব বললো! সরি ডক্টর ও আমার ওয়াইফ। কিছুক্ষণ আগে আমাদের বিয়ে ঠিকমতো বাসর ও করতে পারলাম না। তারআগে শালাবাবু এরকম একটা কান্ড ঘটিয়ে বসলো। ”
” ধ্রুবর কথা শুনে নীলা রেগে যেয়ে বলে দেখছেন আমি কথা বলছি। কথার মাঝে কথা বলবেন না। এই ডক্টর আপনি চুপ কেনো আমার আকাশের এখন কি অবস্থা? ”
এরপরে দিলারা,আমজাদ, আশফাকুল,দাদু ও একই কথা জিজ্ঞেস করে।
” ডক্টর সাহেব। এতো দেখছি ফুল ফ্যামিলির সমস্যা। এরকম ফ্যামিলিতে সুস্থ মানুষ আর এমনি এমনি এসব করেনা। সবাই আগে চিকিৎসা করান। আপনারা সবাই মানসিক ভাবে অসুস্থ। সবার মুখে এক কথা। আমাকে তো বলার সময় দিবেন। একজন বলছে আমার ওয়াইফ। আরেকজন বলছে আমার আকাশ। ”
” আশফাকুল এবার রেগে দাঁত রি রি বের করে ডক্টরকে বলে পরে আমাদের ব্লেম করবেন। আপনি ডক্টর হয়ে বুঝেন না আমরা কতোটা উত্তেজিত। আমার ছেলের কি অবস্থা। ডক্টর মানুষ আপনি পেসেন্টের বাড়ির লোকের সাথে সান্সপেন্স ক্রিয়েট করছেন কেনো? সোজা কথা সোজাভাবে উত্তর দিবেন। ”
” সরি ভাই আমার ভূল হয়েছে। আকাশের জ্ঞান ফিরেছে কারো সাথে আকাশ দেখা করতে চাইতেছে না। আকাশ এখন দুর্বল। হার্টে সমস্যা হয়েছে। সো যে কারণে আকাশ সুইসাইট করছে সেই কারণ যেনো তাকে কোনোভাবে শক্ড না দেয়। এরজন্য আমি বাইরে এসে জানার চেষ্টা করেছি আকাশ কিসের জন্য এরকম করেছে। ”
এই কথা শুনে নীলা বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে। কারণ আকাশতো তার জন্যই এরকম করেছে।
” দাদু বলে আচ্ছা ডক্টর আকাশের সাথে আমরা দেখা করতে পারি। ”
” হ্যা পারেন। তবে পেসেন্টকে কোনোভাবে উত্তেজিত করা যাবেনা। সবাই একসঙ্গে কেবিনে যাবেন না এক এক করে দেখা করবেন। ”
” ঠিক আছে। ”
________
” নানাভাই! আমি ভেবেছিলাম তুমি স্ট্রং কিন্তু তুমি যে এতোবড় একটা কাজ করবা আমার ধারণার বাইরে ছিলো। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো আমাদের কি হতো? একটিবার সেই কথা ভেবেছো। ”
” নানু আসো পাশে বসো। আমি কিছুতেই নীলার বিয়ে অন্য কারো সাথে হোক মেনে নিতে পারিনাই। আমাকে তোমরা বাঁচালে ক্যান? এই শহরটা কতো ছোট। পথে হাটতে গেলে বারবার তার সাথে দেখা হবে। আমি কিছুতেই দেখতে পারবোনা আমি বেচে থাকতে নীলা অন্য কারো হাত ধরে বেড়াক। তাইতো আমি সুসাইড করবো সিদ্ধান্ত নিছি। ”
” পাগল একটা! তুই হয়েছিস ঠিক আমার মতো। এতোটা কষ্ট বুকে নিয়ে চাপা থাকলি ক্যান? ভয় খাস তোর আম্মাকে? সেদিনতো তোর চোখে ভয় দেখি নাই? সজীবের বউ ও সন্তানকে নিজ স্ত্রীর সামাজিকতার পরিচয় দিয়ে উচুভাবে তাদের বাঁচার পথ দেখাতে। তাহলে নিজের বেলা কেনো পারলি না? ”
” নানুভাই ওরাতো অসহায় ছিলো। অসহায়দের পাশে দাড়াইছি। কিন্তু আমি নীলার সাথে বার বার বোঝাপড়ায় এসেছিলাম। কিন্তু নীলা আমাকে বারবার শূন্যহাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। যেইখানে নীলার উৎসুকভাব নেই সেইখানে বাধা হয়ে দাড়াই কি করে? ”
” গত ০৪ বছর আগে এই ভূলটা কেনো করেছিলা তাহলে, ”
” নানাভাই গত ০৪ বছর আগে আমি এতো কিছু ভাবি নাই।জানতাম না আমার না বলা কথায় আমাদের জীবনে ০৪ বছর বিরহ _ বিচ্ছেদ ঘটাবে। সেইদিন আমি আম্মাকে না করতে পারিনাই। কারণ আম্মা বলেছিলো আমি যেনো নীলাকে ভূলে যাই। কেনো সে এরকম করাইছে আমি নিজেও জানিনা। তবে মামার উচিত হয়নি আমাকে না জানিয়ে এমন ঘোষণা দেওয়া। ”
” তোর মামা তোকে ছেলে ভাবে। বাবাদের কি ছেলের কাছে অনুমতি লাগে। বাবারা ছেলের জন্য সবসময় ভালো কিছু ভাবে। তোর মামা বাইরে থেকে কঠোর। কিন্তু ভিতরটা নরম তুলতুলে। ”
” ছেলে ভাবলে কি আর পারতো ছেলের মৃত্যুর কারণ হতে। আমার কাছ থেকে আমার কলিজা কেড়ে নিছে আমার মামা। আমি এখন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কলিজা হীন হয়ে বেড়াবো। ”
” সরি বাবা আমাকে প্রবেশ করতেই হলো। আমি জানতাম আমার অনুপস্থিতে আমাকে নিয়ে এখানে কথা হবে। ”
মামা আশফাকুল কে দেখে আকাশ চোখ বন্ধ করে ফেলে?
” কিরে বাবা! মামাকে নিষ্ঠুর লাগে। কিন্তু তুই জানিস না তোর মামার আরেকটা রুপ ও আছে। কেনো তুই এরকম করলি। তোকে ছোটবেলা থেকে কত পিঠে, কোলে, ঘাড়ে, গাড়িতে নিয়ে বেড়িয়েছি জানিস। আমি তোর ক্ষতি চাইবো। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কি করি নাই আমি কিন্তু তোর মা সবসময় আমাকে ভূল বুঝে রে। যেমন আজকে তুই করছিস। ”
” আকাশ এই কথা শুনে এবার উত্তেজিত হয়ে বলে। তোমরা এখানে ক্যান এসেছো। তোমাদের মুখ আমি দেখতে চাইনা। তোমরা আমার কেউ না। তুমি আর মা আমার বুক থেকে কলিজা টারে বের করে নিছো। ”
নার্স পেসেন্টের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে রুমে ঢুকে বলে আপনাদের কে স্যার বলে দিছেনা পেসেন্টকে এই মূহুর্তে উত্তেজিত করা যাবেনা। চলে যান এখান থেকে।
আশফাকুল ও আশফাকুলের বাপ কেবিন থেকে বের হয়ে আসে।
রেহেনা ও আমজাদ এবার কেবিনে ঢুকতে চায়।
” তুই কেবিনে ঢুকবি না রেহেনা। আজকে আমার ভাগ্নের এই অবস্থার জন্য তুই দায়ী। তোকে সেদিন কত করে বলেছি আমি তোর মেয়ে ও প্রাক্তন স্বামীকে মারেনি। তবুও তুই বিশ্বাস না করে সেই রেজাল্ট আমার ছেলে মেয়ে দুটিকে দিছিস। তোকে আমি ক্ষমা করবো না। আকাশ আজ থেকে আমার ছেলে।
#চলবে