#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৬
” কে আপনি পিছন থেকে এভাবে জড়িয়ে ধরেন কোন সাহসে? ”
” ভালোবাসার অধিকারে! ”
নীলা এবার আকাশের কাছ থেকে ৩ গজ দূরে সড়িয়ে এসে বলে __
” লজ্জা নেই আপনার নির্লজ্জ পুরুষ কোথাকার! একজন অবিবাহিত মেয়েকে এভাবে এসে ধরেন। আপনার নয় মান সম্মান নেই। কিন্তু আমারতো মান সম্মান আছে। ”
” ভালোবাসায় নির্লজ্জ হতে হয় নীলা। ”
” কিসের ভালোবাসা সেইটা তো চারবছর আগে শেষ হয়ে গেছে। নিজে হাতে আপনি আমাদের ভালোবাসার অদ্ভুত অধ্যায় শেষ করেছেন। ”
” ভূল করেছি নীলা। ”
” সেই ভূল চারবছর পরে এসে বুঝতে পারলেন। আপনি অনেক লেইট করেছেন আকাশ শিকদার। সম্পর্কে মান অভিমান থাকে, কিন্তু এভাবে কেউ কাউকে ছাড়েনা। ”
” ক্ষমা চাই নীলা। কিন্তু তুমি একবার শুনো আমি সেদিন কেনো এরকম করেছি। ”
” এখন শুনে আমার কি হবে? আমার হারানো সম্মান কি ফিরে আসবে? আমার বাবার অপমানের কি হবে? এতো সহজে সব ভূলা যায়না। এমন যাই ঘটুক না কেনো ভালোবাসার মানুষের এমন অপমান যেনো আর কেউ না করে। ”
” তুমি আমাকে আবারো ভূল বুঝলে নীলা। আমার কথাটা একবার শুনো সেইদিন আমি কোন পরিস্থিতিতে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা একটিবার শুনো। ”
” প্রতারণা কারীর গল্প বানিয়ে তৈরি করা স্বাভাবিক স্বভাব। আমি কিছু শুনতে চাইনা। আপনাকে ভালোবাসে চারটি বছর বুকে ক্ষত নিয়ে বেড়িয়েছি। সেই শুকনো ক্ষত আর তাজা করতে চাইনা। এখান থেকে চলে যান। ”
” বান্দা যদি ভূল করে আল্লাহর কাছে স্বীকার করে । সেই বান্দাকে আল্লাহ তালা স্বয়ং ক্ষমা করে দেন। আমি আমার ভূলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। একটিবার ক্ষমা করা যায়না আমাকে। ”
” শুনেন আকাশ, ‘যখন কেউ কারো জন্য কাঁদে, সেটা হলো আবেগ। যখন কেউ কাউকে কাঁদায়, সেটা হলো প্রতারণা। আপনি আমাকে কাঁদিয়েছেন। ”
” আর যখন কেউ কাউকে কাঁদিয়ে নিজেও কেঁদে ফেলে, সেটাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা।”
” ভালোবাসার ডেফিনিশন প্রতারণা কারীর মুখে মানায় না। আমাকে শান্তিতে থাকতে দিন। চিনচিন ক্ষতে আবার আঘাত করতে আসিয়েন না। ”
” অনেক হয়েছে তোকে আমি অনেক বুঝাইছি। তুই এভাবে শোনার মেয়ে না। নীলাকে পাঁজা কোলে করে নিয়ে নীলার রুমে যায় আকাশ। ”
” আমাকে ছাড়েন, এতবড় সাহস আপনার নীলার বাড়িতে এসে নীলার সাথে অসম্মান। ”
” চুপ কর তুই জানিস আমি রাগ হলে কি করি। বেশি ছুটাছুটি করবি না। এবার দাপাদাপি করলে সত্যি সত্যি তোকে ফেলে দিবো। বিয়ের আগেই কোমড় ভেঙ্গে পড়ে থাক। দেখি কে তোকে কানাডা নিয়ে যায়। ”
নীলার চিৎকারে নীলার মা দ্রুত নীলার রুমে আসে। নীলাকে আকাশের কোলে দেখে বলে ___
” আকাশ কি করছো তুমি? ”
” মামিমা আপনার মেয়ের সাথে আমার প্রাইভেট ক্লাস আছে। এরপরে নীলাকে বিছানায় ধুপ করে ফেলে দিয়ে রুমের দরজা লক করে দেয়। ”
” নীলার মা এই দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তাই সে রাগে কটমট করে নিচে আসে নীলার বাবাকে বলার জন্য। ”
” আপনি কাজ টা মোটেও ঠিক করলেন না আকাশ। এরফল আপনাকে পেতে হবে দ্রুত যদি বাচতে চান এখান থেকে পলায়ন করুন। নাহলে বাবা এসে আপনাকে গুলি করে মেরে ফেলবে। ”
” আমিয়ো দেখি কার এতো সাহস? সে যদি আমার মামা হয় আমিয়ো তার ভাগ্নে। সে যদি চলে ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায়। তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে বুঝিস না কেনো তুই? যদি একটু আমাকে বুঝতি তাহলে তোকে এভাবে আনতে হতো না। ”
” এই ভদ্রভাবে কথা বলবেন? আপনার তো সাহস কমনা কখন থেকে তুইতুকারি করে যাচ্ছেন। ”
” তো তোকে কি বলতে হবে ম্যাডাম আমাকে ক্ষমা করেন! ”
” আশ্চর্য, ভূলতো আপনার আপনি ক্ষমা চাইবেন না। ”
” না তোর মুখ অন্য উপায়ে বন্ধ করতে হবে। নাহলে ভাঙ্গা রেকর্ড কানের সামনে ভো ভো করতেই থাকবে। নীলার মুখে গাম টেপ লাগিয়ে দেয় আকাশ। ”
” নীলা উম উম বলে চেচিয়ে উঠলো। ”
” আকাশ এবার আড়চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে বলে এবার ঠিক আছে। ”
নীলা হাত দিয়ে খোলার চেষ্টা করলে ___
আকাশ নীলার হাত ধরে বলে আমাকে ক্ষমা করো নীলা। তোমার কষ্ট হলেও এইটা মুখে কিছুক্ষণ থাকবে। কারণ তুমি অনেক জেদী। এতো জেদী হলে চলে। আমি তোমাকে বারবার হারাতে চাইনা নীলা। তোমাকে পেতে আমি এবার সবকিছুর ঊর্ধ্বে যাবো। এক ভূল মানুষ বার বার করেনা। আমাকে ক্ষমা করো নীলা। চোখের পানি টপ করে আকাশের গাল বেয়ে পড়ে।
” নীলা আকাশের চোখে পানি দেখে বিচলিত হয়। মনে মনে বলে স্বার্থপর লোকের চোখে পানিয়ো থাকে। ”
” কি নীলা তুমি ভাবছো আমি সার্থপর। না নীলা আমি সার্থপর নই। পরিস্থিতির চাপে তোমার হাত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। একবার কি শোনা যায়না কেনো সেদিন এরকম করেছিলাম। ”
” নীলা হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করে বলে মুখ থেকে গামটেপ খুলতে। ”
” আকাশ ইশারা বুঝতে পেরে গামটেপ খুলে দেয়। ”
” হ্যা বলুন আমিয়ো শুনতে চাই। কিসের জন্য এরকম করলেন। ”
” আকাশ মুখে হাসি এনে বলে আমি জানতাম নীলা তুমি শুনবা। ”
” ভণিতা না করে দ্রুত বলুন। যেকোনো সময়ে বাবা চলে আসবে। ”
” হুম”
আমি তোমাকে ভালোবাসি। এই কথা আমি আম্মাকে জানাই তোমার ২০ তম জন্মদিনের দুইদিন আগে। কারণ আমি মনে করেছিলাম মা তোমার সাথে আমার এই সম্পর্কতে আপত্তি করবেনা। কারন আমি দেখতাম মা তোমাকে প্রচুর ভালোবাসতো। সেই আনন্দে সাহস করে সেদিন বলেছিলাম। কিন্তু মা এই কথা শুনে বলে, তুই যদি নীলাকে বিয়ে করিস। তাহলে আমার মরামুখ দেখবি।
” কেনো মা নীলাতো ভালো মেয়ে তাহলে এতো আপত্তি কেনো? তাছাড়া ওকে তুমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছো। সেই তোমার পুত্রবধূ হওয়ার যোগ্য। অন্য কোনো মেয়ের মধ্যে সেই গুন নাই যা নীলার মধ্যে আছে। ”
” দ্বিতীয়বার কখনো এই কথা বলবি না আমার মাথায় হাত দিয়ে কথা দে, নীলাকে তুই ভূলে যাবি। ”
সেদিন আমি নিরুপায় ছিলাম। কারণ মা ছলছল নয়নে আমার দিকে আকুল আবেদন ছুড়ে দিয়েছিলো। ছেলে হয়ে মা কে আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি। আমি ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হলো উল্টো টা। তোমার ২০ তম জন্মদিন আসলো আমাদের জীবনে ঝড় হয়ে। মায়ের কথা রাখতে সেদিন তোমাকে সবার সামনে অপমান করেছিলাম।
” ফুপি যতই যাই বলুক। আপনি ফুপির জন্য আমার সাথে সাথে আমার বাবাকেও অসম্মান করেছেন সেদিন।”
” হুম করেছি তো ” স্বীকার করলাম সবটা। আমাকে আরেকবার সুযোগ দাও নীলা। আমি সত্যির মুখোমুখি হতে চাই কেনো মা আমাদের সাথে এরকম করলো। ”
” সেই প্রশ্ন ফুপিকে যেয়ে করুন। অপমানিত স্থানে নীলা ফিরেনা। ”
” দেখো নীলা আমি আজো তোমাকে ভালোবাসি। সেদিন আমি ভাবতে পারি নাই তুমি কানাডা চলে যাবা। আমি ভেবেছিলাম একটা হলো আরেকটা। আমি যদি জানতাম এরকম কিছু হবে তাহলে কখনো তোমার হাত ছাড়ার কথা বলতাম না। তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে সেদিন কেনো আমার চোখের ভাষা বুঝো নাই। তোমাকে ভালোবাসি বলে চারটি বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করা। আমি জানতাম তুমি একদিন আসবে। আর সেদিন তোমাকে নিজের করে নিয়ে নিবো। ”
” সরি! আকাশ আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না। যে মানুষ আমাকে অপমান করতে পারে, আমার পরিবারের মান সম্মান খোয়াতে পারে। তাকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া যেতে পারেনা। ”
” আকাশ নীলাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে, কেনো বুঝোনা, তুমি ছাড়া আমার জীবন চলবে না। ”
এমন সময় নীলার বাবা আশফাকুল এসে নীলার দরজা ধাক্কায়। নীলা দরজা খোল। ওই শয়তানের এতো বড় সাহস আমার মেয়েকে রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। এই নীলার আম্মা তুমি যাওতো রেহেনাকে ডেকে নিয়ে আসো। ওকেও দেখাতে চাই ওর ছেলে কতটা কাপুরষ।
” আকাশ আমাকে ছেড়ে দিন। বাবা দরজা ধাক্কাচ্ছে। ”
” ধাক্কাতে দাও! এই বাবা মা গুলো না যখন তখন চলে আসে। হবু জামাইয়ের সাথে মেয়ের প্রেমে বাধা দিচ্ছে। কতোটা নির্লজ্জ হলে এরা এরকম করে শুটকি। ”
” কে আপনার বউ? কাপুরুষের মুখে এতো বড় বড় কথা মানায় না। যে সামান্য পরিবারকে সামলাতে পারেনা সে আমার জামাই হবে ভাবতেও ঘৃণা লাগে। কখনে আর এইরকম অশ্লীল দাবি করবেন না। ”
” শুনো নীলা আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে না পারি। এ জীবন আমি রাখবো না তোমাকে বলে দিলাম। ”
” মরে যাওয়া এতো সোজা না। মুখে মুখে সবাই বলে। ডায়লগ বাজী বন্ধ করেন যেকোনো মুহূর্তে বাবা দরজা ভেঙে ঢুকে পড়বে। ”
” আকাশ কখনো ডায়লগ বাজী করেনা। একভূল মানুষ একবার করে,বারবার না। তোমার অনুপস্থিতি আমাকে হারে হারে টের পাওয়াইছে। ”
আকাশের বাবা দরজা ভেঙ্গে নীলার রুমে ঢুকে পড়ে। ঢুকে দেখে নীলা আকাশের বুকে। এইরকম অশ্লীল অবস্থায় দেখে___
” নীলার বাবা চিৎকার করে রেহেনা তুই কোথায়। ”
” জ্বি মামা! মাকে ডাকতে হবেনা নিজের ঠোঁটে লোভাতুর চাহনি নিক্ষেপ করে নীলাকে। ইশারা দেয় উম্মাহ”
” আশফাকুল রেগেমেগে গিয়ে বলে। অভদ্র ছেলে কোথাকার। আমার মেয়ের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কে দিছে তোকে। ঘরে বউ রেখে আমার মেয়ের সাথে বলেই ঠাস ঠাস করে দুই গালে দুইটা চড় দেয়। ”
” চড় দিয়ে কি করবেন মামা। আপনার মেয়ের সবকিছু আমার। দেখি এই অপবাদ জানার পর আপনার মেয়েকে কোন ছেলে বিয়ে করে। ”
” এইবার আশাফাকুল অনেক রেগে যায়। রেগেমেগে চোখ লাল হয়ে যায় এই কথা শোনার পর। আকাশের শার্টের কলার ধরে ধরে টানতে টানতে গেটের কাছে নিয়ে যায় আকাশকে। গেটের বাইরে বের করে দিয়ে বলে আজ থেকে তোদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই । আর কখনো যদি আমার ফ্ল্যাটে আসিস তাহলে তোকে পঙ্গু করে পঙ্গু হসপিটালে ভর্তি করাবো।”
” পারবেন না মামা নীলা শুধু আমার। ”
” রেহেনা দ্রুত ছুটে আসে। আকাশের মুখে এই কথা শুনে ঠাস ঠাস করে গালে চড় দিয়ে বলে। তুই আমার মাথা খেলি শেষমেশ। ”
” সরি মা! নীলাকে আমি ছাড়তে পারবো না। কার এতো সাহস দেখি আমার নীলাকে আমার কাছে থেকে কেড়ে নেওয়ার। ”
আশফাকুল বলে ___
” চারবছর আগের অপমান ভূলিনি। এই ভালোবাসা কই ছিলো তখন। রেহেনা তোর বিয়াত্তা বেডা আমার বাড়িতে আরেকবার পা রাখলে পা ভেঙ্গে রেখে দিবো। সাবধানে রাখিস নিজের ছেলেকে। আর হ্যা আগামী পরশুদিন আমার মেয়ের বিয়ে। তোদের দাওয়াত থাকলো এসে খেয়ে যাইস কবজি ডুবে। ”
চলবে,,,,