দহন পর্ব-০৫

0
794

#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৫

” নীলা সমাজের কাছে আমার বাচ্চার পরিচয়ের জন্য আকাশ তার বাবা হওয়ার দায়িত্ব পালন করছে শুধু। আমি জানি, আকাশ আপনাকে অনেক ভালোবাসে। এখানে থাকার অনেকদিন হলো আকাশ ভাই যদি খারাপ হতো তাহলে আমার সুযোগ নিতো। ”

” ফুপি জানে, এসব বৃষ্টি। ”

” হুম আমি খালাম্মাকে সব বলেছি। প্রথম প্রথম তো মানে নাই এরপরে আমার শিশুর দিকে চেয়ে আমার কষ্টের কাহিনী শুনে তার মন গলে গেছে। আমাকে দেখে তার মেয়ের মা হওয়ার ইচ্ছেটা পূর্ণ হয়েছে । ”

” কিন্তু সমাজতো জানে, আপনারা দুজন স্বামী স্ত্রী। ”

” সমাজের কথা ভাবলে হবে নীলা। নিজে কিভাবে ভালো থাকবেন নিজের কথা ভাববেন । সমাজ কারো ভালো দেখতে পারেনা। তাই সমাজের সাথে প্রতিযোগিতা না করে নিজের সাথে প্রতিযোগিতা করেন। ”

” সরি বোন! আমাকে মাফ করবেন প্রথমে আপনাকে ভূল বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম আপনি হয়তো লোভের বশবর্তী হয়ে আকাশকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করছেন। আকাশকে হিবনোটাইস করার জন্য বাচ্চাটাকে ব্যবহার করেছেন। ”

” ঠিক আছে! আমি বুঝি মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে তৃতীয় কোনো ব্যাক্তিকে সহ্য করতে পারেনা। এরজন্য আপনি এমন করেছেন। আচ্ছা সবকিছু ভূলে আবার আপনারা এক হতে পারেন না ”

” না বৃষ্টি এইটা সম্ভব না! কারণ আমি ওর সাথে প্রতারণা করি নাই। ও আমার সাথে প্রতারণা করছে। সোসাইটির সামনে অপমান করছে। এই অপমান ভূলার নয় বৃষ্টি। আমার জন্য আমার বাবা সেদিন অপমানিত হয়েছে। নীলা অপমানিত স্থানে দ্বিতীয় বার ফিরেনা। যোগাযোগ তৃষ্ণায় মারা যাবো তবুও দ্বিতীয়বার ফিরবো না। ”

” সেদিন এমন কি হয়েছিলো। আমি কি জানতে পারি নীলা। ”

” আপনার সাথে তো ভালোই মিল রয়েছে আকাশ শিকদারের। ওর কাছেই সবটা শুনে নিয়েন। ”

” দেখো দুই পক্ষ রেগে থাকলে সমাধান হয়না। আমি একপক্ষকে সঠিক পথ দেখাতে পারি। তাই আপনাকে বলতে হবে সেদিন এমন কি হয়েছিলো যারজন্য আপনাকে কানাডা যেতো হলো দয়া করে আমাকে বন্ধু মনে করে সবটা শেয়ার করবেন। ”

” বন্ধুও বলছেন আবার আপনি করে সম্বোধন করছেন। ”

” আপনিতো বন্ধু মনে করেন না। দয়া করে আমাকে বন্ধু মনে করলে আপনাদের সেদিন কি হয়েছিলো আমাকে বলবেন। ”

” শুনো তাইলে। ”

সেদিন ছিলো আমার ২০ তম জন্মদিন। ২০ তম জন্মদিন উপলক্ষে বাবা এক পার্টির আয়োজন করে। পার্টিতে খান গ্রুপের সকল ওয়ার্কার ও স্টাফদের ইনভাইট করা হয়েছিলো। আমি যে আকাশকে ভালোবাসি এই কথা বাবা সজীব ভাইয়ার কাছ জেনেছিলো। এই কথা শুনে বাবা আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ইভেন্টে এক ঘোষণা দেয় সবার সামনে। আমার একমাত্র মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে আমি একটি বিশেষ ঘোষণা দিতে চাই। সবাই মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবেন। আমার একমাত্র মেয়ে নীলা আমার একমাত্র ভাগ্নে আকাশকে ভালোবাসে। আকাশ ও নীলাকে ভালোবাসে। আমি চাই ওদের চারহাত এক হয়ে যাক। আমি এই কথা শুনে ভিষণ এক্সাইটেড হয়ে যাই। সবার সামনে বাবাকে হাগ করি। কিন্তু এমন সময় ফুপি বলে উঠে ___

” ছেলে আমার, দায়িত্ব আমার। আমার একমাত্র ছেলেকে যার তার সাথে বিয়ে দিতে পারিনা। আমি এই প্রস্তাবে মোটেও রাজিনা। আর কে বলেছে আকাশ নীলাকে ভালোবাসে। ”

” রেহেনা তুই আমার সাথে মজা করছিস? ”

” না ভাইয়া, আমি আপনাকে বড় ভাই হিসাবে মানি। তারমানে এই না যে আকাশের ঘাড়ে নীলাকে চাপিয়ে দিবেন। ”

” আমার মেয়ে এতোটা সস্তা নাকিরে। যে চাপিয়ে দিবো। আমার মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী। বিশ্বাস না হলে আকাশকে ডাক দে। দেখি আকাশ কি বলে? ”

আমি ফুপি ও বাবার এইরকম কথোপকথনে খুব ভয় খাই। বাবাকে জড়িয়ে ধরি। ফুপি আকাশকে ডাক দেয়।

” তুমি কি নীলাকে ভালোবাসো? তাকে বিয়ে করতে চাও। ”

এই প্রশ্নে আকাশ অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। আমার দিকে বারবার তাকায়। আমি ওনার এইরকম অদ্ভুত চাহনি কখনো দেখিনি। চাহনিতে মনে হয়েছিলো ওনি দোটনায় ভূগছে। খুব ভয় পেয়ে যাই।

আকাশ বলে উঠে ___

” সরি মামা আপনি ভূল করতেছেন। আমি নীলাকে ভালোবাসি না। সারাজীবন ও আমার কাছে শুটকি মাছ হয়ে থাকবে। আর যাই করি শুঁটকি মাছের সাথে প্রেম হয়না। ”

” আকাশের এই উত্তরে আমি শক্ড পাই। ভাগ্যিস হার্টের রোগী ছিলাম না। নাহলে সেদিন আমাকে আর জ্যান্ত পাওয়া যেতো না। ”

এই উত্তর শুনে বাবা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি মাথা নিচু করে রুমে চলে যাই। এপিক্লোন খেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিই। সকালে শুনতে পাই পার্টিতে নাকি বাবাকে নিয়ে সবাই ছি! ছি! করছে। সবাই নাকি বলছে। খান পরিবারের মান সম্মান নাই। বাবার এই অপমান সহ্য করতে না পেরে ঘুমের ঔষধ সব খাওয়ার জন্য দৌড় দেই। কিন্তু মা আমার রুমে আগে থেকে ছিলো। তাই আর খেতে পারি নাই। দুপুরে বাবার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। বাবা সবটা বুঝতে পেরে গ্রাজুয়েশন শেষ করার জন্য কানাডা পাটিয়ে দিলো। বলো এখানে দোষ কোথায় আমার। ”

” দোষ আকাশের তবে আপনার উচিত ছিলো আকাশকে প্রশ্ন করা কেনো সে আপনার সাথে এরকম করলো। ”

” সেইদিন এই অপমানের পর তার সাথে কথা বলতে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমার ইচ্ছেশক্তি মরে গিয়েছিলো। তাছাড়া প্রতারককে আবার কি জিজ্ঞেস করবো? সে সত্যি আমাকে ধোকা দিয়েছিলো। ”

” কিন্তু আমিতো এখানে অন্য গল্প পাচ্ছি নীলা। ও যদি আপনাকে না ভালোবাসতো তাহলে এতদিনে সে বিয়ে করে নিতো। কিন্তু সে আপনার অপেক্ষায় আছে। একবারো ভেবে দেখেছেন এইটা। ”

” পরিস্থিতি যাই হোক! তাই বলে সবার সামনে ভালোবাসার মানুষ কে ছোট করতে পারতো না। সে আমাকে ভালোবাসে নাই আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছে। ”

” কিন্তু আমি বলছি সে আপনাকে এখনো ভালোবাসে। কারণ এতদিন থেকে তার সাথে আমার চলাচল। একবারো ভেবে দেখেছেন আপনার ফুপি বলার পর সে আপনার সাথে এইরকম করেছে। এখানে খালাম্মার অবদান রয়েছে। ”

” ফুপি আম্মা যাই করুক! তাই বলে সবার সামনে অপমান কম কথা নয়। আমি কি এতোটা সস্তা! আসলে মানুষকে প্রায়োরিটি দিতে নেই। বেশি প্রায়োরিটি পেলে মানুষ এরকম করে। আকাশ ও তাই করেছে। ”

” আচ্ছা আসি নীলা! অনেক ক্ষতি করলাম ভালো থাকবেন! ”

নীলা শাওয়ার নিতে বাথরুমে চলে যায়।

দাদু অসুস্থ হওয়ার নাটক করা শুরু করলো । আশফাকুল কে ডেকে বলে বাবা আমি আর বেশিদিন বাচবো না। আমি মারা যাওয়ার আগে নীলপাখির বিয়ে দেখতে চাই। তোর বাবার এই আশাটা পূরণ কর বাপ।

” ছি! বাবা এসব কি বলছো তুমি। কেবল এক নাতির বউ দেখেছো তুমি। আমার মেয়ের জামাই না দেখে এসব মরে যাওয়ার কথা বলবা না। নীলাকে কি আর এমনি এনেছি আমি। আমি ওকে কানাডা পাটাইছি আমার ইচ্ছেই। নিয়েও এসেছি আমার ইচ্ছেই। ছেলে ঠিক করা হয়ে গেছে বাবা বিয়ের দিন ঠিক করবো। এই নাও ছেলের ছবি। ”

” আশফাকুল বাপ নীলা আজকালের মেয়ে। তার উপর ০৪ বছর কানাডা থেকে আসলো কোনোতো পছন্দ থাকতে পারে। ”

” না বাবা! একবার সেই ভূল করেছি বারবার নয়। একবার নীলার পছন্দমতো রাস্তায় যেয়ে অনেক অপমানিত হয়েছি আর নয়। আমার পছন্দকরা ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে নীলাকে। আচ্ছা ছেলে কেমন দেখলা। ”

” দাদু মন খারাপ করে বললো, ডিসিশন টা একবার ভেবে নিস বাপ। ”

” বাবা আমার মেয়ের সারাজীবনের ব্যাপার। ভেবেইতো নিবো। আচ্ছা আসি আমি তুমি থাকো। ”

দাদু মনে মনে ভাবতে থাকলো, আমি কি কোনোভাবে তাহলে আমার নাতী নাতনীকে এক করতে পারবো না। এইটা যে আমার বহুদিনের ইচ্ছে। ইচ্ছেটা কি শেষ পযর্ন্ত ইচ্ছেই রয়ে যাবে।

এমন সময় আকাশ তার নানুভাইকে দেখতে আসে ___

” নানুভাই কেমন আছো আজকে? শরীর কি আরামবোধ লাগছে? ”

” আকাশকে দেখে আশরাফুল মানে আকাশের নানু কেঁদে ফেলে। ”

” কি ব্যাপার নানু তুমি কাঁদছো ক্যান? ”

” নানুভাইরে আমার ইচ্ছার কোনো মূল্যে নাই কারো কাছে। ”

” কেনো নানু, মামা তোমাকে কিছু বলেছে। কি বলেছে তোমাকে? মামার এতোবড় সাহস আমার নানুর ইচ্ছার দাম দেয়না। ”

” নানুভাইরে আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো? আমার দুই নাতী নাতনীকে বিয়ে দিয়ে আমার কাছেই রাখবো। মৃত্যু পযর্ন্ত যেনো তাদের সাথে থাকতে পারি। কিন্তু তা আর হলো কই। আমার নানুভাই টাও একটা প্রতারক! সাথে আমার ছেলে মেয়ে দুটি! ”

” কেনো নানু নীলাতো কাছেই আছে তাহলে? ”

” আরে বলদ সেই কাছে থাকার কথা বলি নাই। তোদের বিয়ে করাতে চাই আমি। ”

” কিন্তু তোমার নাতনী তো আমাকে আর পছন্দ করেনা। ”

” কে বলছে পছন্দ করেনা। ভালোবাসার তৃষ্ণায় দুটি মারা যাবি তবুও স্বীকার করবি না। নীলাকে যদি ভালোবাসিস তাহলে সেই দিনের করা ভূল গুলো নীলার কাছে স্বীকার কর। অন্যথায় নীলা অন্য কারো হয়ে যাবে। ”

” অন্যকারো মানে, নীলা শুধু আমার। নীলাকে ভালোবাসি আজ ২৮ টা বছর থেকে আমি কুমার। আর কত সহ্য করা যায় এই কুমার জীবন। আমারতো ইচ্ছে হয় তোমাকে বড় আব্বু করার। যে তোমার সাথে খেলবে তোমাকে সময় দিবে। ”

” নিলজ্জ! চুপ থাক। তোর মামা নীলার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করছে ডিসিশন ফাইনাল। তুই ভালো করেই চিনিস তোর মামাকে। ”

” সে যা ইচ্ছে তাই করুক। পাখি যেহেতু ঘরে ফিরেছে সে শুধু আমার হয়েই থাকবে। কার ক্ষমতা আছে আমার নীলপাখি ছিনিয়ে নেওয়ার। যে এইরকম চেষ্টা করবে তাকে হ*ত্যা করবো। মামা যদি আশফাকুল খান হয়, আমিয়ো আকাশ শিকদার।

” যা নানুভাই নীলাকে দ্রুত সেইদিনের ঘটনা টা বল। আর তুই যে বিবাহিত নয় সেইটাও বল। ”

” হুম ”

নীলা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। চুলগুলো নাড়াছাড়া করছিলো গামছা দিয়ে। এরপরে গামছা বেলকনিতে মেলিয়ে দিলো। এমন সময় নীলা কারো স্পর্শ অনুভব করলো নীলার কাঁধে । ”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে