#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৩
নীলা আনমনে ইজি চেয়ারে বসে ভাবছে। ফুপি তো এমন ছিলো না। ব্যবহার কত অমায়িক ছিলো। গত পাঁচ বছর আগে আমার জন্মদিনের দিন ___
” ফুপি তোমার ছেলে এখনো আসছে না কেনো? সে কি জানেনা আজকে আমার জন্মদিন। ”
” আমার ছেলেতো অফিস করে নীলা। তোর বার্থডে রাত বারোটায়। এখনি তাকে দিয়ে করবি কি? ”
” তার একটা মাত্র বোনের বার্থডে আজ ফুপি। তাহলে সে আমাকে সারপ্রাইজ দিবেনা। ”
” ঠিক সময়ে পেয়ে যাবি বার্থডে গিফট। আমায় কাজ করতে দেতো। ”
” ফুপি সাতটা বেজে গেলো। তোমার ছেলে প্রতিদিন পাঁচটায় আসে। আজকে সে ইচ্ছে করে দেরি করে আসছে। ”
” ওইতো আকাশ চলে এসেছে নীলা। আমার আর মাথা ঘাস না এই মধ্যে ২২ বার আকাশের খোঁজ নিয়ে আমাকে বিরক্ত করছিস। ”
আকাশ এই কথা শুনে বললো ___
” কি শুটকি মাছ আমার খোঁজ নিচ্ছিস ক্যান! ”
” খবরদার আমাকে শুঁটকি মাছ বলবেন না ভাইয়া ”
” তো শুঁটকিকে শুঁটকি মাছ বলবো নাতো সুন্দরী বলবো। ”
” এই ফুপি তোমার ছেলেকে এই পঁচা নামে ডাকতে মানা করো। আজকে আমার ১৯ বছর হবে। আমি মোটেও শুঁটকি মাছ না। ”
রেহেনা খান শিকদার হেঁসে বলে ___
” একটু আগেতো আমার ছেলেকে চোখে হারাচ্ছিলি। এখন শুন তার বয়ান আমি বাপু তোদের এসবে নাই। ”
” মা তোমার ভাইজি কে বলে দাও তাকে মোটেও সুন্দরী লাগেনা। আর শুটকির মতো দাঁত গুলো বের করে থাকে এর জন্য শুটকি মাছ বলি। ”
” আপনি আমাকে শুঁটকি মাছ বললে আমি আপনাকে চিটার বলবো। ”
” আমি কি চিটারি করলাম বলতো! বলেই নীলার হাত নিজের হাতের তালুতে নিয়ে জোড়ে মুষ্টিবদ্ধ করলো। ”
” অ্যা! আমার ব্যাথা লাগছে ছাড়েন ভাইয়া। নীলা কেঁদে ফেলে এতোটা জোড়েই চেপে ধরছিলো। ”
” বল আর কখনো চিটার বলবি। জানিস না এই চিটার কি কি করতে পারে। নীলার হাত এবার ছেড়ে দেয়। ”
” নীলা আকাশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বলে ফুপি তোমার ছেলে মানুষ হবেনা। এতো বড় ধামরা একটা ছেলে একটা নিরীহ মেয়েকে একা পেয়ে এইভাবে ব্যাথা দিলো। ”
রেহেনা বেগম তখন দৌড়ে এসে আকাশকে চড় দিয়ে বলে___
” এটা তুই কি করলি আকাশ! ”
” কি করলাম। দেখতে পাইলাতো? ”
” মেয়েটার আজকে বার্থডে তুই মেয়েটার হাত চিপে ধরে এভাবে লাল করে দিলি। তোর আসার জন্য মেয়েটা বিকাল ৫.০০ টা থেকে ৭.০০ টা পযর্ন্ত ২২ বার আমাদের ফ্ল্যাটে এসেছে। ”
” সরি! মা আমি জানতাম না আজকে শুঁটকি মাছের বার্থডে। ”
” সরি আমাকে না নীলাকে বল। ”
” আই আ্যাম সরি নীলা। সত্যি তোর খুব লেগেছে। ”
” ব্যাথাতো দিয়ে দিছেন। সরি বলে কি আমার ব্যাথা নিরাময় হবে। তারচেয়ে আমাকে বার্থডে গিফট দেন। তাহলে ভেবে দেখতে পারি। ”
” হ্যা পেয়ে যাবি সময় মতো। এখন তুই তোদের বাসা যা আমি আসছি কিছুক্ষণ পর। এই বলে আকাশ নিজের রুমে চলে গেলো। ”
” কি নীলা এবার হ্যাপি তো! পেয়ে যাবি গিফট। ”
” তোমার ছেলেকে ভরসা নেই ফুপি। কারন গতবার গিফট দেওয়ার কথা বলে বাদামের খোসা প্যাক করে দিছে। এবার যে কি করবে। যা একটা কিপ্টা ছেলে জন্ম দিছোনা। ”
” তোরা বড় হয়ে গেছিস তবুও তোদের স্বভাব সেই ছোট রয়ে গেলো। আদায় কাচকলা সম্পর্ক। ”
” আসি ফুপি! ”
রাত বারোটা বাজলো নীলাকে সবাই উইশ করলো। নীলার ফুপি, নীলার বাবা – মা ও দাদু। কিন্তু আকাশ এখনো আসলো না। আকাশ না আসাতে নীলা মন খারাপ করলো। সবাই আকাশকে বারবার ফোন দিচ্ছিলো কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলছে। নীলা মনে করলো আকাশ ঘুমিয়ে গেছে। তাই মন খারাপ করল সবার সাথে কেক কেটে উপরে চলে গেলো নিজের রুমে। রাত বারোটা চৌদ্দ মিনিট। নীলার ফোন বেজে উঠলো। নীলা ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পেলো আকাশের নম্বর থেকে কল এসেছে । নীলা আকাশের ফোন পেয়ে এক্সাইমেন্ট হয়ে ফোন ধরে বলে ___
” আপনার সাথে আমার আড়ি। কিপ্টা কোথাকার বললেই হয়, আপনার কাছে টাকা নাই। গিফট কিনতে পারেন নাই। তাই বলে আমাকে উইশ করতে আসবেন না। আমার হাতে কেক খাবেন না। ”
” সবার সাথে কি প্রতিবার উইশ করা যায় তোকে। ছাঁদে আয়। ”
” এখন ছাঁদে । কোন ছাঁদে যাবো আমি। ”
” তোদের বিল্ডিং এর ছাঁদে আয়। ”
” ওখানে যেয়ে আমি কি করবো এতো রাতে। তাছাড়া মেঘলা রাত, ছাদে যেতে পারবো না বাইরে হিম হিম বাতাস বইছে। ”
” এই শুটকি মাছ আমি আছিনা! দ্রুত ছাঁদে আয় নাহলে তোর রুমে যেয়ে তুলে আনবো তোকে!”
” এই না এমন করবেন না আমি যাচ্ছি। ”
” এইতো বাকা মেয়ে ভয় না দেখালে কিছু হয়না। ”
নীলা দ্রুতবেগে ছাদে যায়। ছাঁদে যেয়ে দেখতে পায় ছাদটা সুন্দর করে সাজানো। লাইটিং এর ব্যবস্থা করা করেছে। মাঝখানে একটা টেবিল, টেবিলের উপর কেক রাখা হয়েছে। টেবিলের একপাশে গিফটের বক্স রাখা হয়েছে। এমন কিছু যে নীলা দেখতে পাবে তা নীলার ধারণার বাইরে ছিলো ।
” কখন করলেন এসব! ”
” তুই পিচ্চি মেয়ে পিচ্চির মতো থাক। এতো কথা বলিস ক্যান কখন কি করলাম তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। বল কেমন লাগছে তোর। ”
” আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি কিপ্টা আকাশ ভাই আমার জন্য এতোকিছু করছে। কিন্তু আমিতো কেক কেটেছি আবার কাটবো ক্যান? ”
” আমি এনেছি তাই কাটবি। কিন্তু তার আগে টেবিলের উপর যে গিফট রাখা হয়েছে। রুমে নিয়ে তা খুলে পড়ে আসবি। ”
” কি রয়েছে ওখানে। ”
” রুমে যেয়ে দেখেক। তারপর পছন্দ হলে পড়ে আসবি then কেক কাটবি। ”
নীলা কিছু না বলে গিফটের বক্স হাতে নিয়ে নিজের রুমে যায়। কারন এই প্রথম আকাশ তার জন্য এতো কিছু করেছে। তারমানে গিফ্টে গতবারের মতো কিছু নেই। নীলা রুমে যেয়ে গিফট বক্স খুলে দেখতে পেলো একটা নীল শাড়ি। শাড়িটা দেখে নীলা খুব খুশি হয়। খুশিতে গদগদ হয়ে শাড়িটা পড়ে কারন নীল রঙ নীলার খুব প্রিয়ো। সাথে নীল বেলোয়ারের চুড়ি।
নীলা প্রথম আকাশের দেওয়া গিফট পেয়ে অনেক খুশি তাই সেগুলো পড়ে ছাদে যায়। ছাঁদে যেয়ে দেখতে পায় আকাশ নীল পাঞ্জাবি,সাদা পায়জামা পড়ে আছে। হাতে গোলাপ ফুল। নীলা আকাশের সামনে আসতেই আকাশ হাঁটু গেড়ে ছাঁদে বসে নীলাকে প্রপোজ করে।
” নীলা আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ নীলা। তুমি কি আমাকে একটু ভালোবাসবা। ”
” নীলা এই কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। সারাক্ষণ শুটকি মাছ বলা মানুষটা আমাকে নাকি ভালোবাসে। আল্লাহ এইটায় দেখার ছিলো। নাকি ইনি মজা করছে আমার সাথে। ”
” এই তুমি কিছু বলছো না কেনো। আরকিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকলে আমার পায়জামা ফেটে যাবে ”
” ফিক করে হেসে দিয়ে নীলা বলে! ছি কি অশ্লীল কথা ”
” এই শুটকি মাছ তুই এখনো ছোট না যথেষ্ট বড় হয়ে গেছিস! বল তুই আমাকে ভালোবাসিস ”
” নীলা নিস্তব্ধ হয়ে যায়! ”
” আকাশ রেগে যেয়ে ছাদ থেকে উঠে নীলাকে ছেচকা টান দিয়ে বুকে নিয়ে বলে। ভালোবাসি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি। ”
” আগে বলেন নাই কেনো! ”
” আগেতো তুই শুটকি মাছ ছিলি।
” এখন নেই!”
” এখনো শুটকি মাছ আছিস। তবে সমস্যা নাই বিয়ের পর তোকে বোয়াল মাছ বানিয়ে রাখবো! ”
” নীলা এই উত্তর শুনে মুখ গম্ভীর করে বলে আপনার ভিতর সিরিয়াসনেস নাই। সবকিছু তামাশা মনে হয় আপনার ”
” ভয় খেতাম যদি মামাকে বলে দিস। এই ভয়ে তোকে কিছু বলতাম না। ”
” আমি আপনার মামাকে না সোজাকে ফুপিকে বিচার দিবো। ”
” আমি জানি আমার শুটকি মাছ এরকম করবে না! ”
” আবার শুঁটকি ”
” নীলার চুলের খোপায় গোলাপ গুঁজে দিয়ে বলে এইতো শুটকিকে রানী লাগছে! ”
” হয়েছে অনেক আমাকে ছেড়ে দিন। ”
” না ছাড়বো না তার আগে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো। ”
” নীলা আকাশকে দুহাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ”
” ওরে আল্লাহ তোমার এতো জোড়। সরি আমার ভূল হয়েছে আর কোনোদিন শুঁটকি বলবো না। এখন যাই করো বিয়ের পর কিন্তু আমি তোমাকে এভাবে ফেলবো। ”
” নীলা লজ্জা পেয়ে যায়। ”
” চলো আর লজ্জা পেতে হবেনা। কেক কাটি। ”
এরপরে নীলা ও আকাশ কেক কেটে একে অপরকে খাইয়ে দিয়ে ছাঁদে বেশকিছুক্ষণ মেঘলা রাতের চাঁদ দেখে।
” আমার এই জন্মদিন স্বরণীয় হয়ে থাকবে আকাশ। ”
” আমার এই ভালোবাসার মেঘলা রাতটি ।”
এরপরে নীলা বেশকিছু মাস ভালোভাবেই আকাশে সাথে কথা বলছিলো। দুজনের সম্পর্ক কয়েকমাসে মাখো মাখো হয়ে যায়। আকাশ কোনো ছুতো পেলেই সেই সূত্রে নীলার বাড়িতে আসে। নীলা বারবার আকাশের বাড়িতে যায়। যেয়ে ফুপির সাথে গল্প করে। একদিন নীলা তার ফুপিকে বলে ___
” ফুপি কি করছো!”
” দেখছিস না কাজ করছি। ”
” এই বয়সে আর কতো কাজ করবা। ”
” তাহলে কে করবে! ”
” কেনো ঘরে বউ নিয়ে আসলেই তো হয়? ”
” পাগল মেয়ে! আকাশ এক্ষুণি বিয়ে করে। ”
” নীলা মুচকি হেসে বলে ফুপি তোমার কেমন মেয়েকে বউ হিসাবে পছন্দ? ”
” আমার ”
” হুম তোমার ”
” আকাশের চেয়ে তিন ইঞ্চি লম্বা মেয়েকে বউ হিসাবে পছন্দ আমার।”
” নীলা নিজের উপর হাত তুলে বলে, ধুর ফুপি কি বলছো এতো বড় লম্বা মেয়েকে দিয়ে তুমি কি করাবে। ঘরের খুঁটি বানাবে নাকি? ”
” নারে ঘরের ওয়াল গুলো যাতে অনায়াসে মুছতে বা ছুতে পারে সেজন্য। ”
” শোনো ফুপি বউ হবে তোমার ছেলের বুক পছন্দ তাহলে তোমার ছেলের সাথে মানাবে ভালো। ছেলে বউয়ের সম্পর্ক টা হবে মাখোমাখো। ”
দুই ফুপি ভাতেজী এই কথা বলে হাসতে থাকে।
নীলা ইজি চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে কেনো এরকম করলো ফুপি। আমিতো ওনার ছেলের বউ হিসাবে খারাপ ছিলাম না। তাহলে ফুপি সেদিন আমাকে রিজেক্ট করলো ক্যান? ফুপির সাথে তো আমার সম্পর্ক টা ভালোই ছিলো। এরমধ্যে কোন জিনিস বাঁধা হয়ে দাড়ালো। এমন সময় দরজায় নক করে বৃষ্টি ভিতরে ঢুকে বলে।
” কেমন আছেন নীলা ! ”
” আলহামদুলিল্লাহ। আপনি আকাশের ওয়াইফ না ”
” না নীলা আমি আকাশের ওয়াইফ নই। ”
” মানে, আপনিতো আকাশের সঙ্গে থাকেন। একটি বাচ্চাও আছে। যদিও শুনলাম বাচ্চাটি আকাশের নয়। ”
চলবে,,,,
[ গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। ]