দহন পর্ব-০২

0
950

#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০২

নীলা নিজের রুমের সোফায় বসে ঘুমাচ্ছিলো। এমন সময় তার রুমে আকাশের মায়ের আগমন। ফুফিকে ০৪ বছর পর দেখে, নীলা জিজ্ঞেস করলো ___

” কেমন আছেন ফুফি ?”

” ভালো আছিরে নীলা। হঠাৎ করে বাংলাদেশ আগমন তোর। তুই না কানাডা যাওয়ার আগে অঙ্গীকার করছিলি কখনো বাংলাদেশে আসবি না? ”

” হ্যা ফুফি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বাংলাদেশে এসেছিলাম দাদুর অসুস্থতার খবর শুনে। সমস্যাটা নাকি গুরুতর ছিলো আমাকে এই কথা বলা হয়েছিলো। ”

” বাবার গুরুতর কোনো সমস্যা হয়নাই। বয়স বেড়েছে তো। এই বয়সে একটু আধটু এসব হবেই। ”

” আমি বাংলাদেশে এসে কি আপনার খুব সমস্যা করে দিলাম ফুফি। অনেকে তো এমন কথা দিয়েছিলো। তারাতো তাদের প্রতিশ্রুতো অনায়াসে ভূলে গেছে। ”

” তোর ট্যাস মারা কথা বন্ধ হয়নাই এখনো। ”

” ফুফি এই কথা কেনো ভূলে যান আপনিয়ো খান পরিবারের মেয়ে হলে। আমিয়ো খান পরিবারের মেয়ে। একই রক্ত আমাদের শরীরে প্রবাহিত। তাই ইট মারলে পাটকেল খেতেই হবে। ”

” চুপ কর বেদ্দপ মেয়ে। কিসের জন্য আসছিস বাংলাদেশে জানিনা। তবে তুই অতীতকে অতীতের মতো থাকতে দিবি। কোনো বাড়াবাড়ি করলে রেজাল্ট কিন্তু ভালো হবেনা। ”

” নিশ্চিতে থাকতে পারেন আপনি। আমি কোনো বিবাহিত বেডার দিকে নজর দেইনা। নীলার সবকিছু পার্সোনাল। যেখানে আমি আমার কোনো জিনিসের শেয়ার করতে পছন্দ করিনা। সেখানে আপনার ছেলে ইউসড। খুব দ্রুত কানাডা ফিরবো আমি। ”

” রেহেনা এবার চোখ রাঙিয়ে বলে, সবকিছু তোর বাবার জন্য। যেই দহনে আমি সাফার করছি। সেই দহন তোর বাপকে আমি তোর মাধ্যমে ফিরিয়ে দিছি। এই কথা বলে স্থান ত্যাগ করে রেহেনা খান শিকদার।

নীলা এবার মনে মনে বলে ফুফি তুমিতো এমন ছিলে না! কি এমন করেছিলো আমার বাবা যারজন্য তুমি আমাকে আকাশের থেকে আলাদা করলা। ”

আনমনে ভাবতে ভাবতে দাদুকে দেখতে গেলো নীলা। রুমে যেয়ে দেখতে পেলো দাদু একাই রুমে শুয়ে আছে। দাদুকে জিজ্ঞেস করলো ___

” দাদু তুমিতো অনেক বড় অভিনেতা হয়ে গেছো। তা এসব অভিনয় জগতে প্রবেশ করলে কবে? ”

” দাদু নীলার কথা শুনে আমার নীলপাখি তাহলে এসেছো। আমি অভিনয় না করলে নীলপাখি কি দেশে আসতো। আমারতো খুব ইচ্ছে নীল পাখির সঙ্গে মরার আগে দেখা করা। ”

” ছি! দাদু তুমি এখন মরবা কেনো? এসব কথা কখনো মুখে আনবা না। বাবাতো প্রায় কানাডা যায়। ভিসাতো তোমার ও আছে বাবার সঙ্গে যেতে পারো না নীলপাখিকে দেখতে। এতো যদি মিস করতা? ”

” আমার বয়স হয়েছে নীলপাখি। এখন কি জার্নি করার বয়স আছে? আমায় বুঝি নীলপাখি মিস করতো না। ”

” সেতো করতাম দাদু। কিন্তু কেনো আসতাম না ভালো করেই জানো। প্রতারকগুলো পাশের ব্লিডিং থাকে। ”

” থাক নীলপাখি! আমার আকাশ ভাইয়ের কোনো দোষ ছিলো না? ”

” দোষ ছিলোনা মানে। ওইতো আমার সাথে প্রেমের খেলা খেলছে। আমার গল্পে ভিলেন আকাশ।”

” আমি যদি বলি ভিলেন নয় নীলপাখি। ও তোমার জন্য রিয়্যাল হিরো। ”

” বাদ দাও দাদু তুমি অসুস্থ। অসুস্থতার ঘোড়ে তুমি ভূলভাল বলছো। ও যদি সত্যিকারে সেদিন কোনো চাপের জন্য আমার সাথে এরকম করছে। তাহলে আজকে বউ বাচ্চা নিয়ে আমাকে সারপ্রাইজ দিতো না। খুব কষ্ট লাগছে দাদু যখন আম্মা বলেছিলো আকাশ বিয়ে করছে। কানাডায় দুইবছর এইভেবে কাটাছিলাম আকাশ বোধহয় ফুফির জন্য এরকম করছে। কিন্তু দুইবছর পর সে উল্টো আমাকে সারপ্রাইজ করলো। প্রতারক একটা। ”

” কিন্তু নীলপাখি তুমি কি ভেবে দেখেছো। আকাশ বিয়ে করছে দুই বছর হলো, বাচ্চার বয়স তিনবছর কি করে? ”

নীলা এই কথা শুনে আড়চোখে দাদুর দিকে তাকায়। তারপরে মনে মনে বলে হুম হসপিটালে আকাশ বললো বাবুর তিনবছর।

” সত্যি তো দাদু এর মানে কি? তারজন্য কি কোনো মেয়ে ছিলোনা যে বাচ্চাসহকারে বউ বিয়ে করছে অন্য মানুষের। ”

এমন সময় আকাশ তার নানুর ঘরে ঢুকে বলে___

” নানুভাই এই নেও তোমার চার্জার ওয়াটার ব্যাগ। এইটা দিয়ে নিয়মিত কোমড়ে স্যাক দিবা। ঠিক আছে। ”

” নীলপাখিকে কিছু বলতে যেয়ে থেমে যায় দাদু। এরপরে আকাশকে বলে নীলপাখির সাথে কথা বলছো? ”

” হ্যা নানুভাই তোমার নীলপাখি তো এখনো শ্বাসকষ্টে ভূগে। ইনহেলার এখনো কাছে রাখেনা যদি আজকে কিছু হয়ে যেতো। তোমার নীলপাখিকে হসপিটালে ভর্তি করাইতে হতো । ভাগ্যিস আমি ছিলাম তখন। ”

” কি বলতে চান আপনি? আমি আপনাকে ছাড়া অচল। নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি। আপনি আমার জন্য না ভাবলেও চলবে। ০৪ টি বছর কাউকে পাশে দরকার ছিলো না, এখনো নেই। ”

” হ্যা সেতো দেখতেই পাচ্ছি। কেমন খেয়াল রাখছো নিজের। তোমাকে দেখে কেউ বলবে যে তোমার ২৪ বছর। চোখের নিচে কালি, মুখে ডার্ক সার্কেল, সিল্কি চুলগুলো এখন উসখুসে, শরীর ফেন্সিকুলের মতো। এইটাকে নিজের খেয়াল রাখা বলে। শরীরে বৃদ্ধর ছাপ স্পষ্ট। ”

” এক্স গালফ্রেন্ডের দিকে এতো নজর না রাখলেও হবে আপনার। বলাতো যায়না আপনার ওয়াইফ আবার কি ভেবে বসে। চেহেরা দিয়ে কি করবো? এতই যদি আমার জন্য আপনার মায়া কাজ করতো সেদিন আমাকে এভাবে ছাড়তেন না। ”

” হ্যা আমি ভালো করে জানি। তোমার সবকিছুর মূল উচ্ছেদকারী আমি। সামনে আছি কি সাজা দিবা তুমি? সুযোগ আছে দিতে পারো। ”

” মানুষকে আঘাত দেওয়ার ইচ্ছে নেই আকাশ শিকদার । এই নীলা অপমানিত স্থানে দ্বিতীয়বার ফিরেও না। আর হ্যা দাদু তোমার নাতিকে বলে দাও ওনার ওয়াইফ আছে। আমার দিকে নজর দিলে ওনার ওয়াইফ ওনাকে ভূল বুঝবে। জীবন মানুষকে বারবার সুযোগ দেয়না। ”

” নানু তুমিয়ো বলে দাও। আমি কারো দিকে নজর দিচ্ছি না। সত্যিটা বলছি। ভালোবাসার দহনে পুড়তে পুড়তে নিজেকে ছাই না করে যত্ন নিতে বলো। ”

এইবার দাদু বললো____

” অসহ্যকর! অনেকদিন পর তোমাদের দেখা হলো। এখন কি আদায় কাঁচকলা হওয়ার কথা। কোথায় প্রেম ভালোবাসা বিরহ মিলে একাকার হবে। তা না করে অভিমানগুলো ক্ষোভ আকারে প্রকাশ করছে। ”

” দাদু তুমি বিয়াত্তা বেডার সম্পর্কে দালালি করার জন্য আমাকে অভিনয় করতে কানাডা থেকে নিয়ে আসছো । ”

” এই কথা শুনে আকাশ এবার রেগে যায়। কি বললি তুই দাদুকে দালাল বললি। আমি বিয়াত্তা পুরুষ। তোর কি কমনসেন্সে লোপ পেয়েছে নীলা। এই বলে নীলার ডান গালে একটা জোড়ে থাপ্পড় দেয়। ”

” নীলা গালে হাত দিয়ে বলে। এটাইতো পারেন আপনি ঠিক ০৪ বছর আগেও এটাও করেছেন আমার সঙ্গে। নীলা গালে হাত দিয়ে চোখের পানি সঙ্গে করে নিয়ে নিজের রুমে দৌড়ে যায়।”

বৃষ্টি নীলাকে এই অবস্থায় দেখতে পায় কারণ তখন বৃষ্টি বেলকনিতে ভেজা কাপড় মিলছিলো।

” কি করলি আকাশভাই? নীলপাখিতো কোনো কথা ভেবে বলেনা। ও হয়েছে তোর মায়ের মতো। ফুফুর স্বভাব পেয়েছে নীলপাখি। ”

” নানুভাই, ওর জেদটাই আসল। আমাকে যদি ও সেদিন বুঝতো তাহলে ০৪টি বছর ভালোবাসার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেড়াতাম না। কবে বুঝবে ও আমাকে নানুভাই। এই কথা বলে নিজের রুমে চলে যায় আকাশ। ”

” এই দুইটা আমার নাতি নাতনি। এদের এতো কষ্ট আর সহ্য হচ্ছেনা। সবকিছু এবার আমাকেই ঠিক করতে হবে! ”

আকাশ নিজের রুমে এসে ওয়ালের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই হাত দিয়ে আমি নীলাকে মেরেছি।

বৃষ্টি রুমে ঢুকে বললো ___

” কি করছেন আকাশ? হাত ফেটে যাবে তো! ”

” ফেটে যাক। এই হাত দিয়ে আমি নীলাকে আঘাত করছি। এই হাত আঘাতে জর্জরিত হয়ে যাক। ”

” বৃষ্টি এবার দৌড়ে যেয়ে আকাশের হাত চেপে ধরে। পাগল হয়েছেন আপনি। এভাবে নিজেকে কেউ আঘাত করে। আকাশের হাত ফেটে রক্ত পড়ছে। বৃষ্টি দ্রুত আকাশের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। ভালোবাসার দহনে আর কত পুড়বেন আকাশ। লাইফে এগিয়ে যেতে হয়, নাহলে সবকিছু ঠিক করে নিতে হয়। ”

” বৃষ্টি তুমিতো জানো আমি নীলাকে কতোটা ভালোবাসি। ও আমাকে এতো কষ্ট দেয় কেনো? আমার ভালোবাসা এখনো বুঝতে পারলো না। ”

” সে বুঝবে কি করে সেতো জানে আপনি বিবাহিত। ”

” ভালোবাসা কত জ্বালা। এবার বোঝাবে হাড়ে হাড়ে আমার আম্মা ও নীলাকে। তাদের জেদের জন্য ০৪ টা বছর আমি পুড়েছি। এবার তাদের পোড়াবে আমি। ”

” আমি কিন্তু নীলার কোন দোষ পাচ্ছি না আকাশ। ”

” সে যদি আমাকে ভালোবাসতো যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাকে বুঝতো। কিন্তু নীলাতো আমাকেই ছেড়েই গেছে। ”

” একবার তাকে বলে দেখেন, আসলে আমরা বিবাহিত না। সত্যিটা সব বলে দিন। দেখবেন সমস্যা অনেকটা ক্লিয়ার। ”

” যে যেমন বুঝে তাকে তেমন থাকতো দাও বৃষ্টি। নীলা কি জানেনা আমি তার জায়গা অন্য কাউকে কি করে দেই।! ”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে