দখিনের জানলা পর্ব-২৬

0
550

#দখিনের_জানলা (পর্ব-২৬)
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

৫২.
আজ অফিসে এসে চমচম একটা নতুন সংবাদ পেয়েছে। সংবাদটা সুসংবাদ নাকি দুঃসংবাদ এটাই সে ভেবে পাচ্ছে না। তবে শোনার পর থেকেই মনের মধ্যে আরামের অভাব অনুভব করছে। সংবাদ বলতে সে একটা প্রস্তাব পেয়েছে। আব্রাহামদের কোম্পানির সাথে যে ডিলটা নিয়ে তাদের কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তার একটা আপকামিং মিটিং এটেন্ড করতে হবে কক্সবাজারে। বিদেশি ক্লায়েন্ট আসবে সেখানে। সেখানে ছোট খাটো একটা পার্টি দেওয়ার কথাও হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন দিনের মতো থাকতে হবে কক্সবাজারে। চমচম কয়েকবার ওয়াসিমকেও বলেও তেমন একটা লাভ করে উঠতে পারেনি।

বিকেলে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসায় ফিরতেই সে চমকে গেল। সায়ন এসেছে। তাকে দেখেই এক গাল হেসে সায়ন বলল,

-‘বাহ্! চমচম ম্যাম তো বড় হয়ে গেছেন!’

-‘কখন এলে তুমি? জানাও নি যে আসবে!’

-‘জানালে সারপ্রাইজড হতি কি এমন?’

কথাটা বলেই সে আড়চোখে চিনির দিকে তাকালো। চিনি নির্বিকার মুখ করে তাকিয়ে ছিল সায়নের দিকে। সায়নের উপস্থিতি তাকে বিস্মিত করেছে ঠিকই কিন্তু সে সেটা প্রকাশ করেনি একবারও। চমচম বলল,

-‘আজ কিন্তু ডিনার করে যাবে। বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

-‘উহু! আজ না। আজ শুধু মুখ দেখাতে এসেছি। দেশে এসেছি এটা জানান দিয়ে গেলাম কেবল। অন্যদিন এসে ডিনারে বসব।’

-‘ভাবী কোথায়? তাকে আনোনি?’

এই কথার জবাব সায়ন দিলো না। মৃদু হেসে বলল,

-‘ভাবী যেদিন হবে সেদিন আনব।’

-‘বুঝলাম না!’

-‘বুঝে যাবি। সময় হোক!’

সায়ন যেন চোখের পলকেই বিদায় নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে আরেকবার চিনিকে দেখল। চিনি পারল না চোখ তুলে তাকাতেই সেই চোখের দিকে। ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে রইল।

রাতে চমচম এক কাপ চা নিয়ে অফিসের ফাইল গুলো ঘেটে দেখছিল। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই হাতে নিয়ে দেখল আব্রাহাম কল করেছে। না চাইতেও কলটা রিসিভ করে সে কানে তুলল। ওপাশ থেকে আব্রাহাম বলল,

-‘আজ আমার অফিসে আপনার আসার কথা ছিল মিস আজরা।’

-‘তো?’

-‘তো মানে? আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন! আপনার আসার কথা ছিল। আর আপনি আসেননি। যেখানে আপনার বলার ছিল স্যরি সেখানে আপনি বলছেন তো! হাউ ইররেসপন্সিবল ইউ আর!’

-‘ভালো করেছি যাই নি। আমি দু মুখো মানুষদের দেখতে পারিনা আর তাদের সামনে যেতেউ পছন্দ করি না।’

-‘কি! আমি দু মুখো! কেন? কি করেছি আমি যার জন্য এমনটা ভাবছেন আপনি?’

-‘আমার বাড়িতে আর কখনো বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হবে না। এই কথাটি বলেছিলেন আপনি।’

-হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম। আর কাজেও করে দেখিয়েছি। পাঠাইনি কোনো প্রস্তাব।’

-‘ঢং করছেন? প্রস্তাব পাঠিয়ে বলছেন পাঠাননি!’

-‘আশ্চর্য! আমি কখন প্রস্তাব পাঠালাম?’

-‘কখন মানে! গতকালই তো আন্টি এসে আমাকে গয়নাগাটি দিয়ে বলে গেলেন আমাকে আমানত রেখে যাচ্ছেন। বুঝতে পারছেন আপনি! আমানত রেখে যাচ্ছে মানে কী? আমি আপনাদের কারো আমানত না। কান খুলে শুনে রাখুন।’

আব্রাহাম জানত না এসব কিছু। তাই সে অবাকই হলো। তবে চমচমের শেষ কথাটা তার ভালো লাগল না। তাই গম্ভীর স্বরে বলল,

-‘তো কার আমানত তুই? ওয়াসিমের!’

-‘বা’জে বকবেন না। খবরদার আমার পার্সোনাল লাইফে এন্টারফ্যায়ার করবেন না।’

-‘করব। একশ বার করব, হাজার বার করব। ওয়াসিম ব’দ’মা’শটাকে আমি মে’রেই ফেলব।’

-‘হামের বাচ্চা! তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস!’

-‘কি বললি? তুই তুকারি করছিস তুই আমার সাথে! দাঁড়া, করছি তোর ব্যবস্থা। আমি ভালো মানুষ না তারপরেও তোর জন্য একটু ভালো হতে চেয়েছিলাম। তোর তো আবার আমার ভালো মানুষী সইছে না। তবে আমি খা’রা’পই ঠিক আছি।’

আব্রাহাম কল কে’টে দিলো কথাটা বলেই। চমচম ফোনটা ছুড়ে মারল। বিছানায় পড়াতে ফোনের কিছু হলো না। কিন্তু চমচম মাথা রা’গে ফেটে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে তবুও রা’গ পড়ে না। তাই বাথরুমে গিয়ে মাথায় পানি দিলো বেশ সময় নিয়ে।

৫৩.
বাথরুম থেকে বের হতেই দেখল তার বিছানায় অনামিকা আর চিনি বসে আছে। সে চমকে উঠল। বলল,

-‘তোমরা! অনামিকা আপু কখন এলে?’

-‘এই তো এসেছি সবেমাত্র। দেখি এদিকে আয়। কাপড়টা পরে নে।’

-‘কীসের কাপড়?’

-‘বিয়ের কাপড়। উপস্! শাড়ি।’

-‘মশকরা করছ?’

চিনি উঠে বলল,

-‘সময় নেই বেশি। কাজি এসে পড়বে একটু পরেই। তাড়াতাড়ি কর।’

চমচম তেঁতে উঠল। বলল,

-‘কি হচ্ছে এসব আপু! কোন ধরনের মজা করছ এসব তোমরা?’

-‘কোনো ধরনের মজা না। গলা নামিয়ে কথা বল। ড্রয়িং এ আঙ্কেল আছেন।’

-‘কোন আঙ্কেল!’

অনামিকা হেসে বলল,

-‘আমার বাবা।’

-‘তোমরা কি করতে চাইছ? দ্যাখো আমি ছোট মানুষ না। বাচ্চা না আমি! এসব আমার সাথে করতে পারবে না তোমরা।’

চিনি এগিয়ে এসে ঠাস করে একটা চ’ড় বসিয়ে দিলো চমচমের গালে। চমচম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল বড় বোনের এহেন কাজে। ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল চিনির মুখের দিকে কিন্তু কোনো কথা বলল না। চিনি বেশ কড়া ভাষায় বলল,

-‘ছোট থেকে যা চেয়েছিস তাই পেয়েছিস। মন মতো উড়েছিস বলে যে সব স্বাধীনতা পেয়ে গেছিস তা নয়। বাবা মা আছে এখনও। তাদের উপস্থিতিতে তুই কে এত কথা বলার!’

চমচম গলায় আটকে থাকা কথাগুলো কোনো রকমে বের করতে চাইল,

-‘এমন কেন করছিস!’

-‘চমচম ঝামেলা করিস না। যা বলছি তা কর। তৈরি হ। শুধু বিয়ে পড়ানো হবে। এখন তোকে কোথাও যেতে হবে না।’

-‘করব না আমি বিয়ে। ওই বে’য়া’দ’বটাকে আমি আজকে খু’ন করব। বে’য়া’দবের বিয়ের শখ গুচিয়ে দিব।’

-‘চুপ! বে’য়া’দ’বি তুই করছিস। বাবা মা যা বলছে তাই কর।’

-‘বাবা মত দিয়েছে এতে? বাবা!’

-‘দিয়েছে। সবাই মত দিয়েছে।’

-‘করব না। আমি তো মত দেইনি।’

আরেকটা চ’ড় পড়ল চমচমের গালে। চমচম বুঝতে পারছে না চিনি বারবার তার গায়ে হাত তুলছে কেন! ওই বাহিরের ছেলেটা এখন তার বোনের থেকেও বেশি হয়ে গেছে তার কাছে! অনামিকা চিনিকে সরিয়ে নিয়ে বলল,

-‘বারবার ওর গায়ে হাত তুলছিস কেন?’

-‘ও ছেলে মানুষি করছে কেন!’

চমচম বলল,

-‘আমি করছি নাকি তোমরা?’

-‘আবারও! আবারও তর্ক করছে!’

-‘আপু আমি কিন্তু ছোট না। মে’রে ধ’মকে আমাকে বিয়েতে রাজি করানো যাবে না।’

-‘তাহলে পা ধরতে হবে! আয় পা ধরি।’

চমচম এবার অসহায় হয়ে পড়ল। বলল,

-‘এমন করছ কেন? কি হয়েছে!’

-‘দ্যাখ! বাবা মত দিয়ে দিয়েছে। বাবার মুখ ছোট করিস না।’

-‘আমি বাবার সাথে কথা বলব।’

-‘বিয়ের কাজ শেষ হোক। তারপরই বলবি।’

চমচম রাজি হলো না কোনো ভাবেই। পরে শেষে তার বাবা এসে কথা বলল। কিছুক্ষণ বোঝালো। বিয়ে করতে তো হবেই। তাদের দুই মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। একটা তো দূরে চলে গেছে বিয়ে করে। আরেকটাকেও দূরে পাঠাবে ভাবতেই তাদের বুক ভার ভার লাগে। কাছে রাখার জন্য এর থেকে ভালো অপশন নেই। আজ এভাবেই বিয়েটা দিতো না। আব্রাহামের বাবা এমন ভাবে অনুরোধ করছেন যে তা ফেলাও যাচ্ছে না। এছাড়া কিছু ভেতরের কথা আছে যা আপাতত তারা চমচমকে জানাতে চাইছে না। তবে এখন বিয়েটা চমচম না করলে একটা বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তাদের।

এরপর আর কি! এক ঘন্টার মধ্যেই অনাড়ম্বরভাবে বিয়ের কার্য সম্পন্ন হলো।
চমচম আব্রাহাম কেউই একে অপরকে দেখল না। চমচমই দেখা দিলো না।

রাত যখন দুইটা তখন চমচমের ফোনে মেসেজ আসে। ঘুম না আসায় চমচম জেগেই ছিল। শব্দ পেয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখল আব্রাহাম লিখেছে,

“Love does not begin and end the way we seem to think it does. Love is a battle, love is a war; love is a growing up.” – James Baldwin”

#চলবে।

(রি চেইক দেইনি। অনেক ভুল থাকতে পারে। দয়া করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে