ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -৫

0
2516

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৫

পাপড়ি পুষ্পর থেকে সবকিছু দিয়ে এগিয়ে থাকলেও পড়াশোনার দিক দিয়ে পাপড়ির থেকে পুষ্প একটু বেশিই মেধাবী ছিলো।  পুষ্প তার ক্যাফের বিজনেসটা নিয়েই খুশি ছিলো বিধায় তার চাকরির প্রতি কোন ইন্টারেস্ট ছিলো না। তাই তার সার্টিফিকেট গুলো পাপড়ি ব্যবহার করে চাকরি পাওয়ার জন্য। এতে পুষ্পরও কোনো সমস্যা ছিলো না। চেহেরা এক থাকায় পাপড়িকে কখনো কোনো সমস্যায়ও পড়তে হয় নি এ নিয়ে। তবে এ কথাটা শুধু তারা দুইবোনই জানতো। সার্টিফিকেটে নাম পুষ্প থাকায় পাপড়িকে বাহিরে নিজেকে পুষ্প হিসেবেই পরিচিতি দিতে হয়েছে।

অফিসে শেষে পাপড়ি অফিস থেকে বের হতেই সে নীলকে বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। নীলকে এখন তার অফিসের বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পাপড়ি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
– কিরে তুই এখানে এখন কি করছিস?
– তোর মেয়ে কলিগদের পটানোর জন্য দাড়িয়ে আছি দেখছিস নাহ?
-(ভেংচি কেটে) গার্লফ্রেন্ড বানাতে কোয়ালিটি লাগে। আর তা তোর মধ্যে ছিটেফোঁটাও নেই।
– মেয়ে পটানো আমার বাম হাতের খেলা বুজলি!
– ওহ! তাহলে তোর কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে শুনি?
– নাই। আমি বিয়ের পর প্রেম করবো, এখন না বুজলি। এখন চল।
-হুম।
দুজনই রাস্তায় চুপচাপ হাঁটছে। হঠাৎ পাপড়ি বলে ওঠে
– আমাকে অফিসে দিয়ে গেলি আবার নিতে এলি, তা আজ হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলি কি করে?
-বাহ! ভুতের মুখে রাম রাম। শোনেন মিস্,  আপনাকে যেমন অফিসে দিয়ে গেছি, তেমন আপনাকে নিয়ে যাওয়াটাও আমার কর্তব্য। আর এখন থেকে আমি আমরা এক সাথেই যাওয়া-আসা করবো কেমন?
– হুম।

নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
– আকাশ কালো হয়ে এসেছে, বৃষ্টি আসবে আসবে বোধ হয়। একটা গাড়িও পাচ্ছি না যে বাসায় যাবো।
বলতে বলতেই বৃষ্টি চলে আসে। নীল আর পাপড়ি দৌড়ে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ে।

-বাহিরে যা বৃষ্টি হচ্ছে, মেয়েটার অফিস ছুটির টাইম হয়ে গেছে। ছাতাও নিয়ে যায় নি। একা একা কিভাবে আসবে মেয়েটা কে জানে?
বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কথাটা বলতে লাগলো আফিয়া বেগম।
পেছন থেকে পুষ্প বলে ওঠে
-চিন্তা করো না। আমি নীলকে ফোন করে বলে দিয়েছি আসার সময় যেন পাপড়িকে নিয়ে আসে। ওরা ঠিক চলে আসবে।
– নীল সাথে থাকলে আর চিন্তা নেই তোমার বউমা। তুমি বরং একটু পাকোড়া বানিয়ে দাও। এই বৃষ্টির দিনে একটু পাকোড়া না খেলে চলে।
দাদীর এমন কথায় পুষ্পও সম্মতি দিয়ে বলে
– হ্যা মা, পাকোড়া খাবো, প্লিজ বানিয়ে দাও। ওরা চলে আসবে।

টুলে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তারা দুজন বৃষ্টি দেখছে।
– আমার না বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন হলো বৃষ্টি ভিজি না।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথাটি বললো পাপড়ি।
নীল পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
– এতো শখ যখন হয়েছে তো যা ভিজ।
– সত্যিই ভিজবো। তুইও চল।
– নাহ বাবা, আমার এতো ভিজার শখ নেই। তুই যা।
– যেতে তো তোকে হবেই।
বলেই নীলকে টানতে টানতে বৃষ্টি মাঝে যায়।
নীল পেছন থেকে বলে ওঠে
– আরে আরে, পড়ে যাবো তো, আস্তে আস্তে।

পাপড়ি আর নীল বৃষ্টিতে ভিজে একাকার।
বৃষ্টির পানি যেন পাপড়ির সৌন্দর্যটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর নীল তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
-কিরে, কি দেখছিস?
– কিছু না। অনেক তো ভিজেছি এবার চল, পরে ঠান্ডা লেগে যাবে তোর।
– আর কিছুক্ষণ থাকি না?
– নাহ, একদমই না।
হঠাৎ বাজ পড়ে। বাজের শব্দে ভয় পেয়ে পাপড়ি নীলকে জড়িয়ে ধরে। পাপড়ি জড়িয়ে ধরায় নীলও কেমন কেঁপে ওঠে। পাপড়ি এমন একটা কিছু করবে সেটা সে ভাবতেও পারিনি।

– হয়েছে ছাড়েন আমায়, আশেপাশে যদি আমার হবু বউ থাকে তাহলে সে দেখলে অনেক রাগ করবে।
মুচকি হাসতে হাসতে নীল কথাটা বলে।
পাপড়ি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে বলে
– (ভেংচি কেটে)তোর কতো বউ এখানে বৃষ্টির মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা তো দেখছিই আমি। আমি বাজ পড়ায় একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম বলেই কিছু না বুজে জড়িয়ে ধরে ফেলেছি তোকে। নয়তো তোর মতো রামছাগলকে কে ধরতে যাবে।
– এই এতো ভেংচি কাটিস কেনো তুই। এই ভেংচি কাটতে কাটতে একদিন দেখিস তোর মুখটাই বেকে যাবে। হা হা হা।
– ধ্যাত, তোর সাথে থাকবোই না আমি। চললাম আমি।
বলেই হন হন করে বাড়ির দিকে রওনা হলো পাপড়ি। পিছন পিছন নীল চলতে শুরু করলো।

একটু পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে আফিয়া বেগম দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলে
অবাক হয়ে বলে
– এমা, একি অবস্থা তোদের। একদম কাকভেজা ভিজে বাসায় আসতে কে বলছে?
পেছন থেকে নীল বলে ওঠে
-আমি কিন্তু বারণ করেছিলাম জেঠিমা। কিন্তু এই শাকচুন্নি আমার কোনো কথায় শুনলো না, নিজেও ভিজেছে আমাকেও ভিজিয়েছে।
নীলের এমন কথা শুনে পাপড়ি রাগী চোখে নীলের দিকে তাকায়।
পেছন থেকে পুষ্প বলে
– হ্যা, মজা করে ভিজবে। পরে জ্বর ওঠে মরবে। আমার তাকে নিয়ে টেনসনে মরবো আমরা।
-আহ! এখন এসব কথা থাক। ওদের ভিতরে নিয়ে যাও তো এখন বউমা। শরীর শুকিয়ে নিক নাহলে তো জ্বর ওঠে যাবে।
দাদী কথা শুনে পাপড়ি হনহন করে ঘরে চলে যাই।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে