ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ২
পাপড়ি আর পুষ্প দুই যমজ বোন। চেহেরা একি হলেও পার্সোনালিটিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পুষ্প নিজেকে ছেলেদের মতো গড়ে তুলছে। তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের মা তাদেরকে কতো কষ্টে লালন পালন করেছে সেটা তারা খুব ছোট থেকেই দেখে এসেছে। তাদের পরিবারে ছেলের অভাবটা যেন কখনো না বুজতে হয় তাই পুষ্প নিজেকে ছেলেদের মতো গড়ে তোলেছে। পুষ্পোর পোশাক-আশাকও ছেলেদের মতোই। দূর থেকে কেউ তাকে দেখলে কেউ মেয়ে ভাবতেই পারবে না।
অপর দিকে পাপড়ি পুষ্প থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাপড়ি রূপে গুনে সম্পুর্ন লাবণ্যময়ী নারী। তার শখ, তার ইচ্ছা সবকিছুই পুষ্পোর থেকে আলাদা।
পুষ্প একটা ছোটখাটো ক্যাফে চালিয়ে নিজেদের সংসার চালাচ্ছে। আর অন্যদিকে পাপড়ি চাকরি পাওয়ার আশায় অনেক জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছে। আজও ইন্টারভিউ দিয়ে বাসায় আসার সময়ই এ পরিস্থিতির স্বীকার হয় সে।
দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে আফিয়া বেগম দৌড়ে দরজা খোলে পুষ্প পাপড়ি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুটা রাগী সুরে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
– এতো দেরি কেন বাসায় ফিরতে? জানিস না সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে হবে? তোর জন্য টেনশনে আমি মরে যাচ্ছি।
মায়ের এমন কথা শুনে পাপড়ি আফিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরলো। আর অজান্তেই পাপড়ির চোখে পানি চলে আসলো। হঠাৎ করে পাপড়ির এমন কান্ডতে অফিয়া বেগম কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
– কিরে, কি হয়েছে? এমনভাবে জড়িয়ে ধরলি যে?
পুষ্প বেপারটা বুজতে পেরে বলে ওঠলো
– আরে মা, ওসব কিছু না। তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য এমন করেছে। আচ্ছা করে বোকা দাও যেন আর লেট না হয়।
– হয়েছে এবার, ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হও। আর পুষ্প তোকে তোর দাদি ডাকছে। দেখা করে আয়।
– ওকে মা।
পুষ্প দাদীর ঘরেই যেয়ে দেখলো দাদী কিছু ছবি নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কিন্তু কার ছবি দেখছে বুজতে পারছে না।
– আসবো দাদী?
– আয় এদিকে।
– কার ছবি দেখছো? দাদুর নাকি?
– তোর দাদু তো কোনদিনই ছেড়ে চলে গেছে। ওই বুড়া বেটার ছবি দেখে কি করবো আমি?
– তো কার ছবি দেখছিলে?
– এই নে, ধর।
কতগুলো ছেলের ছবি দেখিয়ে বলল
– দেখ তো দি-ভাই কোন ছেলেটাকে পছন্দ হয়?
পুষ্প কিছুটা অবাক হয়ে দাদী দিকে তাকিয়ে বলল
– ছেলের ছবি দেখে আমি কি করবো?
– দেখ দি-ভাই, বয়স তো তোর অনেক হলো, বিয়ে-সাদি তো দিতে হবে তোকে তাই না?
– কি বলছো এসব, আমি তোমাদের আগেই না করে দিছি যে আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করছি না। তবে কেনো তুমি বুঝো না দাদী?
– কেনো বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কই শুনি?
-আমার বিয়ে গেলে তোমাদের দেখবে কে? তোমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে আর আমার অসহায় মাকে কে দেখবে বলো?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পেছন থেকে পাপড়ি বলে ওঠে
– হে, আমি তো মরেই গেছি তাই না।
পুষ্প কিছুটা অবাক হয়ে পেছন তাঁকায়
পুষ্পের দিকে তাকিয়ে পাপড়ি আবার বলা শুরু করলো
– আমি মনে হয় মা,দাদীর দেখাশোনা করি না। তুই একাই করিস নাহ!
– নাহ! আমি কি তা বলেছি? আর তাছাড়া আমার ক্যাফের দেখাশোনা করবে কে?
-এসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি সবকিছুর দেখাশোনা করে নিবো তুই শুধু বিয়েতে মত দে।
– নাহ, বিয়ে আমি করছি না। তার চেয়ে বরং তুই বিয়েটা করে নে। এমনিতেও তুই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দিতে বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস, তোর আর চাকরি হবে না। হা হা!
– দেখেছো দাদী, কি বলছে? একদিন একটা ভালো চাকরি পেয়ে তোকে আমি দেখিয়ে দিবো দেখিস।
– হে জানি তো কিভাবে, চাকরি ইন্টারভিউতে তোর আমার….
পাপড়ি ইশারা দেওয়ায় কথাটা আর শেষ করেনি পুষ্প।
এতোক্ষণ দাদী তাদের ঝগড়া শুনচ্ছিল। এখন তিনি বললো
– পাপড়ির সিরিয়াল ও আসবে আগে তোর বিয়েটা দিয়ে নেই। শত হলেও তুই ওর থেকে ৫মিনিটের বড়। সেটা তো ভুললে চলবে না?
পুষ্প একটু রাগী কন্ঠে বলে ওঠলো
– মাত্র ৫ মিনিট। এতে কি মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছি আমি। আমি কোন বিয়ে টিয়ে করছি না ব্যাস। আর এটাই আমার শেষ কথা।
হঠাৎ পেছন থেকে আফিয়া বেগম বলে ওঠলো
– হয়েছে হয়েছে এবার থাম। ভাত বেড়ে রেখে এসেছি খেতে আসেন সবাই।
চলবে…