ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ ৩৮
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পুষ্পর এ করুণ দশা দেখে রাইয়ান হাসবে না দুঃখ পাবে সেটাই ভাবছে। কিন্তু পুষ্পর সামনে একবার হেসে সে পুষ্পর মন খারাপ করে দিয়েছে তাই আর হাসাও যাবে না। একটু ভেবেচিন্তে পুষ্পকে বললো,
– এখন কি এভাবেই বসে থাকবে সারাদিন এখানে?
পুষ্প অসহায় দৃষ্টি নিয়ে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– এই ছেড়া জামা নিয়ে আমি সবার সামনে যেতে পারবো না। আর আমার সাথে তো অন্য একটা ড্রেসও আনি নি যে চেঞ্জ করে ফেলবো। ড্রেসের জন্য নীলদের বাসা থেকে আমাদের বাসায় যেতে হবে।
-হুম। কিন্তু এখানে এভাবে কতক্ষণ বসে থাকবে? মানুষ দেখলেও তো হাসাহাসি করবে? তুমি একটা কাজ করো তোমার ওড়নাটা আগে শরীরে মুড়িয়ে নাও।
পুষ্প ওড়নাটা শরীরে মুড়িয়ে নিয়ে বললো,
– তবুও তো ছেঁড়াটা বুঝা যাচ্ছে! এখন কি করব?
রাইয়ান একটু ভেবেচিন্তে বললো,
– তুমি ওঠে দাড়াও আমি তোমার পেছন পেছন আছি।
– মানে? আমার পেছনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে লোকজন কি বলবে?
– সেটা তোমার শুনতে হবে না, তুমি ওঠে দাড়াও।
রাইয়ানের কথায় পুষ্প ওঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করে আর রাইয়ান পুষ্পর পেছন পেছন হাঁটছে।
হঠাৎ তাদের সামনে নীলের মা এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– পুষ্প তুই নীলিমাকে হলুদ দিস নি। আয় ওকে হলুদটা দিয়ে যা। আর জামাই বাবাজী আপনি পুষ্পর পেছনে কেন দাঁড়িয়ে আছেন?
পুষ্প করুণ দৃষ্টি নিয়ে রাইয়ানের দিকে তাকায় আর রাইয়ান কি বলবে তা ভাবছে। রাইয়ান আমতা আমতা করে বললো,
– ইয়ে, মানে আন্টি……
নীলের মা রাইয়ানের কথা না শুনে বললো,
– আচ্ছা এসব কথা থাক। পুষ্প তুই আগে হলুদটা দিয়ে যা, নীলিমাকে গোসলও তো করাতে হবে।
পুষ্প মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে নীলিমার কাছে গেলো। আর পুষ্পর পেছনে রাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
পুষ্পর পেছনে রাইয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলিমা বললো,
– দুলাভাই আপনি আপুর পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
রাইয়ান নীলিমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
নীলিমা মজা করে বললো,
-দুলাভাই আপুর প্রেমে এতটাই পাগল হয়েছে যে আপুর পিছুই ছাড়ছে না।
বলতেই সেখানে বসে থাকা সবাই হেসে ওঠে। পুষ্প আর রাইয়ানও কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। পুষ্প তাড়াতাড়ি নীলিমাকে হলুদ লাগিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে আর পুষ্পর পেছন পেছন রাইয়ানও। রাইয়ানকে আবার পুষ্পর পেছন পেছন যেতে দেখে সবাই আবার হাসাহাসি শুরু করে।
সেখানে সবাই হাসাহাসি করলেও পাপড়ির মুখে হাসি নেই, সে উল্টো তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে আর সেখান থেকে চলে যায়।
পুষ্প আর রাইয়ান দ্রুত হেঁটে একটা রুমের ভিতর ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। পুষ্প একবার রুমটা ভালো করে দেখে বললো,
– আরে এটা তো নীলিমার রুম।
রাইয়ান বললো,
– তাতে কি? দেখো,এখানে বিছানার ওপর কতো শাড়ি পড়ে আছে, একটা পরে নাও।
– আমাকে যেন এসব শাড়ি পরতে না হয় তাইতো এই ড্রেসটা পড়েছিলাম। কিন্তু….
রাইয়ান এবার একটু রেগে বললো,
– দেখো তোমার জন্য আমি বাহিরে সবার সামনে হাসিরপাত্র হয়েছি আর তুমি এখন এসব বলছো? চুপচাপ এইখান থেকে একটা শাড়ি পড়ে নাও। আমি বাহিরে দাঁড়াচ্ছি।
বলেই রাইয়ান রুমের দরজা লাগিয়ে বাহিরে দাড়িয়ে থাকে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো রাইয়ান রুমের বাহিরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে কিন্তু পুষ্প এখনো বের হচ্ছে না। এদিকে বাহিরে সবাই পুষ্পকে খোঁজাখোজি করছে। রাইয়ান মনে মনে বলছে,
– পুষ্প কি ভিতরে ঘুমিয়ে পড়লো নাকি?
রাইয়ান ২/৩ বার দরজায় টোকা দেয় কিন্তু ভিতর থেকে পুষ্প কোনো কথা বলছে না। পুষ্পর আওয়াজ না পেয়ে রাইয়ান সরাসরি রুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে। রুমের ভিতর ঢুকে রাইয়ান পুষ্পকে দেখে চমকে ওঠে চোখ বন্ধ করে উল্টো দিকে ঘোরে যায়।
আর রাইয়ানকেও এভাবে আসতে দেখে পুষ্প অবাক হয়ে যায়।
– রাইয়ান তুমি আমাকে না বলে ভিতরে আসলে কেন?(রেগে)
– আরে আমি তো দরজায় টোকা দিয়েছিলাম কিন্তু ভিতর থেকে তোমার কোনো সারা শব্দ না পেয়েই দেখতে আসলাম তোমাকে। আর এতোক্ষণ হয়ে গেলো তুমি এখনো শাড়ি পড়ো নি কেনো? বাহিরেও তোমাকে সবাই খোজাখোজি করছে।
– সেই কখন থেকে শাড়ির কুঁচি দেওয়ার ট্রাই করছি কিন্তু পারছিই না।
– কিহ! শাড়ি পড়তে পারছো না? তাহলে বাসায় কিভাবে শাড়ি পড়তে?
– আরে! সেইগুলো তো সুতির শাড়ি ছিলো। কোনোরকমে কুঁচি পেচিয়ে পড়ে নিতাম কিন্তু এখানে তো একটাও সুতির শাড়ি নেই।
পুষ্পর কথা শুনে একটু বিরক্তি বোধ করে রাইয়ান। নিজেকে একটু শান্ত করে রাইয়ান বলবো,
– আচ্ছা আমি হেল্প করে দিচ্ছি।
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প চমকে ওঠে বললো,
– না না.. তুমি কিভাবে…
– আহ! আমি চোখ বন্ধ করেই থাকবো। আই প্রমিস।
পুষ্প আর কোন কথা বললো না। রাইয়ান চোখ বন্ধ করে পুষ্পর দিকে ফিরে পুষ্প শাড়ি ধরে কুঁচি করে দেয়। রাইয়ান শাড়ির কুঁচি করতে গিয়ে পুষ্প শরীরে তার হাতের টাচ লাগতেই পুষ্প শিউরে ওঠে। আর অন্যদিকে রাইয়ানও এই প্রথম কোনো মেয়ের শরীরে এভাবে টাচ লেগেছে। তবে এতে রাইয়ানের মনে একটুও খারাপ লাগছে না।
রাইয়ানের প্রতি পুষ্পর মনে থাকা অনুভুতি গুলো আবার জেগে ওঠেছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ পুষ্পর সব কথা মনে পড়ে যায়। পুষ্প মনে মনে বললো,
– পুষ্প এ তুই কি করছিস? তুই এভাবে রাইয়ানের কাছে কাছে থাকলে তুই আরো দুর্বল হয়ে যাবি। ওর মায়ায় আবার আবদ্ধ হয়ে যাবি। এমনটা হলে তুই রাইয়ানকে ছাড়তে পারবি না। তোকে যে করেই হোক রাইয়ানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে পুষ্পর চোখে জল চলে আসে।
রাইয়ান শাড়ি কুঁচি করা শেষ করতেই পুষ্প তাড়াতাড়ি শাড়ি কুঁচি কোমড়ে গুজে শাড়ি ঠিক করে নিয়ে রাইয়ানের চোখ খোলার আগেই সেখান থেকে বাহিরে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর রাইয়ান বললো,
– পুষ্প শাড়ি ঠিক করে পড়েছো?
পুষ্পর কোনো আওয়াজ না পেয়ে রাইয়ান চোখ খুলে দেখলো পুষ্প সেখানে নেই।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– আমাকে একা ফেলেই চলে গেলো?
চলবে…..