ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪৩ (শেষ পর্ব)
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে আফিয়া বেগম দরজা খুলে দেখলো রাইয়ান দরজার বাহির দাঁড়িয়ে আছে। রাইয়ানকে দেখে আফিয়া বেগম অবাক হয়ে বললো,
– বাবা, তুমি এখন এইখানে?
রাইয়ান আফিয়া বেগমের কথার কোন জবাব না দিয়ে বললো,
– মা, পুষ্প কোথায়?
– সে তো ছাঁদে কিন্তু…..
রাইয়ান আর কোনো কথা না শুনে ভিতরে ঢুকে ছাঁদে চলে যায়।
রাইয়ানের এখানে আসার কারণ আফিয়া বেগম বুঝতে পেরে আর কিছু না বলে মুচকি হেসে দরজার লাগিয়ে দেয়।
ছাঁদে একা একা দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে পুষ্প। নীল আকাশটার মতো আজ সেও একা হয়ে গেছে, আর এই একা একা হয়েই বাকি জীবনটা তাকে কাটাতে হবে। চোখের পানিও এখন তার সাথে নেই, শুকিয়ে গেছে। বুকের কষ্টটাকে চাপা দিতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
হঠাৎ রাইয়ান পেছন থেকে পুষ্পকে ডাক দেয়। রাইয়ানের কন্ঠ শুনে পুষ্প অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে বললো,
– তুমি এখন এইখানে?
– হ্যাঁ পুষ্প। আমি বুঝতে অনেক লেট করে ফেলছি। কিন্তু এখন আমি বুঝে গেছি।
– কি বুঝতে গেছো?
রাইয়ান পুষ্পর কাছে এসে তার হাত ধরে বললো,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি পুষ্প। অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে ।
পুষ্প রাইয়ানের কাছ থেকে ২ কদম পিছিয়ে বললো,
– কিন্তু তুমি তো পাপড়িকে….
– না পুষ্প, আমি পাপড়িকে কখনই ভালোবাসিনি। খানিকের দেখায় আমি তাকে পছন্দ করেছিলাম শুধু। ভালোবাসা তো তুমি আমায় শিখিয়েছো। তোমার কাছ থেকে একদিন দূরে থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তোমাকে কতটা প্রয়োজন আমার। আমার বাসা, আমার রুম সব কিছুই তুমি ছাড়া শূণ্য। তুমি ছাড়া আমি একদম ভালো থাকতে পারবো না, পুষ্প।
এসব বলে রাইয়ান কাঁদতে কাঁদতে হাটু ভেঙে নিচে বসে পড়লো।
পুষ্প রাইয়ানের হাত ধরে তার সামনে বসে বললো,
– আমি তোমাকে অনেক আগেই ভালোবেসে ফেলেছি, শুধু মুখ ফোটে বলতে পারি নি।
রাইয়ান অবাক হয়ে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
– তুমি সত্যিই বলছো?
– হ্যাঁ। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
পুষ্প কথাটি বলতেই দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর রাইয়ান পুষ্পকে ছেড়ে বললো,
– চলো আমার সাথে।
– কোথায়?
– কোথায় আবার আমার বাসায়।
– না আমি যেতে পারবো না।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান চমকে ওঠে বললো,
– কেনো যেতে পারবে না? এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে?
– হ্যাঁ সব ঠিক হয়ে গেছে, কিন্তু তোমার বাড়িতে আমি কি অধিকারে যাবো? তুমি কি ভুলে গেছো আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে?
রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– ডিভোর্স হয়ে গেছে তো কি হয়েছে? আমি আবার তোমাকে বিয়ে করবো। আর এই চুপিচুপি বিয়ে নয়, ধুমধাম করে বিয়ে হবে আমাদের। পুরো মহল্লা দেখবে যে রাইয়ান চৌধুরী তার বউ নিতে এসেছে। কি করবে না বিয়ে আমায়?
পুষ্প একটু লজ্জা পেয়ে রাইয়ান বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,
– করবো।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান পুষ্পকে পাজোঁকোলে নিয়ে বললো,
– ঠিক এইভাবে নিয়ে যাবো আমার বউকে।
হঠাৎ পেছন থেকে আফিয়া বেগম দৌড়ে ছাঁদে এসে পুষ্পকে ডাক দেয়।
আফিয়া বেগমকে দেখে রাইয়ান আর পুষ্প দুজনই অবাক হয়ে বললো,
– কি হয়েছে মা?
আফিয়া বেগম কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
– পাপড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাড়াতাড়ি চল হসপিটালে।
– চিন্তা করবেন না মিস্ পাপড়ি এখন সেইফে আছে। ওনার ভাগ্য ভালো যে সঠিক সময়ে চালক গাড়ির ব্রেকটা দিয়েছিলো, নাহলে হয়তো ওনাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। কিছুক্ষণ পরই পেসেন্টের জ্ঞান ফিরবে, আপনারা অপেক্ষা করুন।
ডাক্তারের কথা শুনে আফিয়া বেগম, পুষ্প, রাইয়ান সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
– আপু আমাকে মাফ করে দে, আমি তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে।
পাপড়ির কথা শুনে পুষ্প বললো,
– চুপ, একদম চুপ। তোকে তো আমি অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি। আর তুই এমন একটা কাজ কিভাবে করলি পাপড়ি?
– আমি যে ভুল করেছি তার জন্য তোর কাছে মাফ চাওয়ার শক্তি আমার ছিলো। তাই মরে গিয়ে সেই ভুলের প্রাশ্চিত্য করতে চেয়েছিলাম।
পাপড়ি কথা শুনে পুষ্প পাপড়িকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললো,
– আর কোনদিনো এমন কাজ করবি না। তোর কিছু হলে আমাদের কি হতো ভেবেছিস তুই।
পাপড়ি রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– রাইয়ান তোমার সাথেও আমি অনেক অন্যায় করেছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।
রাইয়ান বললো,
– তুমি তোমার ভুল বুজতে পেরেছো এটাই আমার কাছে অনেক। আমি তোমাকে আগেই মাফ করে দিয়েছি। আর হ্যাঁ এখন আমাকে একটু সম্মান দিয়ে কথা বলো। তোমার হবু দুলাভাই আমি এখন।
রাইয়ানের কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে। পাপড়ি হেসে বললো,
– আচ্ছা।
৭ দিন পর ধুমধাম করে বিয়ের সম্পন্ন হলো পুষ্প আর রাইয়ানের। আজ সবার মুখে কষ্টর থেকে হাসি বেশি। মিসেস মাহমুদার ছেলের বিয়ে নিয়ে যতো আশা সব পূরণ হলো। বিদায় মূহুর্তে পুষ্পকে গাড়িতে ওঠিয়ে রাইয়ান যখন গাড়িতে ওঠতে যাবে তখন দূরে নীলকে দেখতে পায়। রাইয়ান নীলের কাছে এগিয়ে গিয়ে নীলকে জড়িয়ে ধরে আর কানের ফিসফিস করে বললো,
– পাপড়ির কাছে থেকো। এখন পাপড়ির তোমাকে বেশি প্রয়োজন।
বলে মুচকি হেসে রাইয়ান গাড়িতে ওঠে চলে যায়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বিয়ে শেষে পাপড়ি যখন বাসার ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনি পাপড়ি আর নীলের মুখোমুখি পড়ে যায়। নীলকে দেখে পাপড়ির চোখের কোণে পানি জমে যায়। পাপড়ির চোখের পানি নীলের চোখ এড়ায় না তবুও সে না দেখার ভান করে পাপড়ির পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলে পাপড়ি নীলকে পেছন থেকে ডাক দেয়।
পাপড়ি ডাক শুনে নীল দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু পাপড়ির দিকে ফিরে না।
পাপড়ি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
– তোকে বারবার এতো অপমান করেছি যে তোর কাছে মাফ চাওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। তবুও যদি পারিস আমাকে মাফ করে দিস। আমি আর এ মুখ তোকে কখনও দেখাবো না। ভালো থাকিস।
বলেই পাপড়ি চলে যেতে লাগল। তখনি নীল পেছন থেকে বললো,
– তোকে মাফ করতে পারি এক শর্তে।
পাপড়ি অবাক হয়ে বললো,
– কি শর্ত?
নীল মুচকি হেসে পাপড়ির কাছে তার চুল টেনে বললো,
– এভাবে সারাজীবন আমি তোকে জ্বালাতে চাই শাঁকচুন্নি, বিয়ে করবি আমায়?
নীলের কথা শুনে পাপড়ি কেঁদে ওঠে নীলকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– হ্যাঁ আমার রামছাগল। সারাজীবন তোর শাঁকচুন্নি হয়ে থাকতে চায়।
—————সমাপ্ত——————–