ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৯
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
গায়ে হলুদটা খুব ভালো ভাবেই কেটে গেলো। সে ঘটনার পর পুষ্প আর রাইয়ানের সাথে কথা বলেনি। রাইয়ানের কাছ থেকে একরকম পালিয়ে পালিয়েই পার করল দিনটা পুষ্প।
আজ নীলিমার বিয়ে। রাইয়ান খুব সুন্দর করে সেজে স্মার্ট হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাইয়ানকে দেখার পর অনেক মেয়ে অবশ্য ক্রাশও খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু রাইয়ানের সেসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। রুম থেকে বেরিয়ে রাইয়ান পুষ্পকে খুজতে লাগল। কোথাও পাচ্ছে না পুষ্পকে রাইয়ান। নীলকে দেখতে পেয়ে রাইয়ান তাকে পুষ্পের কথা জিজ্ঞেস করার জন্য নীলের কাছে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো পুষ্প-পাপড়ি সিড়ি দিয়ে নামছে। তাদের দুজনকে দেখেই রাইয়ান অবাক হয়ে আছে। কারণ পুষ্প-পাপড়ি দুজনই একই রকম শাড়ি পড়েছে। তাদের সাজগোজও একই রকম। এদের মধ্যে কে পুষ্প আর কে পাপড়ি তা চেনা রাইয়ানের পক্ষে মুশকিল হয়ে গেলো।
– এদের মধ্যে পুষ্প কে আর পাপড়ি কে সেটাই তো চিনতে পারছি না।
দ্বিধায় পড়ে কথাটা বললো রাইয়ান।
একই রকম শাড়ি পড়ার আইডিয়াটা পাপড়ি থাকলেও পুষ্পও এতে খুশি কারণ সে দুজনকে একরকম দেখালে রাইয়ানের কাছ থেকে তাকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে না।
আর অন্যদিকে পাপড়ি এই আইডিয়া বের করেছে রাইয়ানের কাছে থাকার জন্য।
রাইয়ান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তারপর পুষ্পকে ডাক দিলো।
রাইয়ানের ডাক শুনে একটু হেসে পাপড়ি রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে রাইয়ানের দিকে যেতে শুরু করে।আর অন্যদিকে পুষ্প পাপড়িকে রাইয়ানের কাছে যেতে দেখে সে অন্যদিকে চলে যায়।
রাইয়ান প্রথমে পাপড়িকে পুষ্প ভাবলেও যখন দেখলো পুষ্প অন্যদিকে চলে যাচ্ছে তখন রাইয়ানের আর বুঝার বাকি রইল না কে পাপড়ি আর কে পুষ্প। কারণ পুষ্প যে তাকে এড়িয়ে চলছে সেটা এ ২ দিনে রাইয়ান ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। তাই সে পাপড়িকে পাশ কাটিয়ে যেয়ে পুষ্প সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– কি ভেবেছিলে, একই রকম সাজসজ্জা করলে তোমাকে আমি চিনতে পারবো না?
রাইয়ানের এমন কথা শুনে পুষ্প কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।
পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
– আমার এমন কোনো চিন্তা ছিলো না। পাপড়ির মন রাখতে আমরা একই এরম শাড়ি পড়েছি।
– হুম তা তো দেখতেই পারছি। একটা কথা বলবো?
– কি?
– আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, একদম একদম বউ বউ লাগছে।
রাইয়ানের কথার কোনো রিএক্ট না দিয়ে পুষ্প বললো,
– হুম। আমাকে মা একটু ডাকছে, আমি আসছি।
বলেই পুষ্প চলে যায়।
অন্যদিকে রাইয়ানকে পুষ্পর কাছে যেতে দেখে পাপড়ির রাগ ওঠে যায়। মনে মনে বলে,
– কি ভেবেছিলাম আর কি হলো! আমাকে আর একটা প্লেন বের করতে হবে।
পুষ্পকে এভাবে চলে যেতে দেখে রাইয়ানের মনটা ভাড় হয়ে ওঠে। মুখটা কালো করে বললো,
– এতো প্রশংসা করলাম আর সে আমার সাথে ভালো করে কথাও বললো না। চারদিকের মেয়েরা আমার ওপর মেয়েরা ক্রাশ খাচ্ছে আর সে প্রশংসা তো দূর কথা আমার দিকে একবার তাকালো না।
বলে একটা ভেংচি কাটলো রাইয়ান।
পাপড়ি প্লেন করে সব ঠিকঠাক করে বসে আছে এখন শুধু রাইয়ানের এদিকে আশার অপেক্ষা। একটুপরই রাইয়ান পুষ্পকে খুজতে খুজতে পাপড়ির দিকে আসতে লাগলো। রাইয়ানকে দেখে পাপড়ি তাড়াতাড়ি একটা উচু টুলে ওঠে ওপরে ফুল সাজানোর অভিনয় করে। রাইয়ান পাপড়ির দিকে আসতে আসতে হঠাৎ আফিয়া বেগমের সাথে পুষ্পকে দেখতে পেয়ে অন্যদিকে চলে যায়, যা পাপড়ি দেখলো না।
পাপড়ির প্লেন মোতাবেক একটুপর পাপড়ি টুল থেকে পড়ে যাওয়ার ভান করে পড়ে যায়। আর কেউ একজন তাকে ধরেও ফেলে। পাপড়ি চোখ মেলে দেখলো তাকে রাইয়ান নয় নীল ধরে আছে।
নীলকে দেখে পাপড়ির মনে আবার সেই অনুভুতি, বুকে সেই ধকধক শব্দ শুরু হয়।
নীল পাপড়িকে ছেড়ে দাড়ায় আর কিছু না বলেই অন্যদিকে চলে যায়।
– ওফ! এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে? আমি যখনই রাইয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য কিছু একটা করতে যায় তখনি নীল মাঝে চলে আসে। আর নীল আমার কাছে আসলে আমার এমন কেন লাগে? কেনো আমার বুকে ধকধক শব্দ করে? নীলকে দেখলে কেনো আমার মনটা ছটফট করে? কিচ্ছু বুজতে পারছি না।
পাপড়ি একা একা নিজেকে এসব কথা বলছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পাপড়ি আবার একা একা নিজেকে বললো,
– নাহ পাপড়ি, এভাবে চললে হবে না। নীলের কথা ভেবে তুই রাইয়ানকে হারাতে পারিস না। আমাকে দেওয়া সব কষ্টের হিসাব আমাকে আপুর কাছ থেকে নিতে হবে। যেখানে তোর থাকার কথা ছিলো সেই জায়গা আপু দখল করে আছে। তোর সব সুখ আপু নিচ্ছে আর সব দুঃখ তোকে দিচ্ছে। এসব কিছু তোর ভুলে গেলে চলবে না। এখন আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে রাইয়ান একদম আমার কাছে এসে আসে। আর এবার নীলকে আমার কাজে বাঁধা হতে দিবো না আমি।
চলবে…..