ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৭
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
আজ নীলিমার গায়ে হলুদ। সকাল থেকে সবাই বিয়ের কাজে ব্যস্ত। রাইয়ান সকাল থেকে পুষ্পকে একবারো কাছে পায় নি। রাইয়ান যখনই পুষ্পর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তখনি পুষ্প কোনো না কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে সকাল থেকে পাপড়ি রাইয়ানের কাছে যাওয়ার অনেক ফন্দী করেছে কিন্তু রাইয়ান পাপড়িকে বরাবরই এড়িয়ে চলেছে।
কিছুক্ষণ পর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। পুষ্প একটা লং ড্রেস পড়েছে। ড্রেসটা পুষ্পর থেকে একটু বেশি লং হওয়ায় পুষ্পর চলাফেরা করতে খুব প্রবলেম হচ্ছে। পুষ্প জামা ঠিক করতে করতে হাটছে হঠাৎ সামনে রাইয়ান এসে দাড়ায়।
রাইয়ান পুষ্পর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম পুষ্পকে সে এমন একটা ড্রেসে দেখছে। সিম্পল সাজে পুষ্পকে খুব সুন্দর লাগছে।
পুষ্প রাইয়ানকে হঠাৎ দেখে থতমত খেয়ে যায়।
রাইয়ান নিজেকে সামলে বললো,
– পুষ্প কাল থেকে তোমার সাথে কথা বলার ট্রাই করছি কিন্তু তুমি সবসময় আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো কেন?
পুষ্প রাইয়ানকে আমতা আমতা করে বললো,
– না মানে, বিয়ে বাড়ি তো এখানে অনেক কাজ তাই তোমার সাথে ভালো করে কথা বলার সুযোগ পাই নি।
– মানে কি! আমার সাথে কথা বলতেও তোমার সুযোগ লাগবে?
পুষ্প কি বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ অন্যদিক থেকে নীল পুষ্পকে ডাক দেয়। নীলের ডাক শুনে পুষ্প রাইয়ানকে বললো,
– নীল ডাকছে, আমি আসছি।
বলেই দ্রুত রাইয়ানের সামনে থেকে চলে যায়।
পাপড়ি অনেক সুন্দর করে সেজে এসেছে অনুষ্ঠানে। রাইয়ান যেন তাকে দেখে তার প্রশংসা করে সেজন্য পাপড়ি রাইয়ানের সামনে ঘুর ঘুর করে। কিন্তু রাইয়ান তার দিকে একবারো তাকায় নি। উল্টো রাইয়ান পুষ্পকে খুজে বেড়াচ্ছে। রাইয়ানকে তার দিকে না তাকাতে দেখে পাপড়ির রাগ ওঠে যায়। পাপড়ি মনে মনে বলতে লাগলো,
– এতো সুন্দর করে সেজে এসেছি, আর একবারো আমার দিকে তাকাচ্ছেও না রাইয়ান।
কিছুক্ষণ পর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। নীলিমাকে সবাই এক এক করে হলুদ লাগাচ্ছে। রাইয়ান এক কোণায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুষ্পকে খোঁজচ্ছে। অন্যদিকে রাইয়ান যেন পুষ্পকে না দেখতে পায় সেইজন্য পুষ্প মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে আছে।
পাপড়ি নীলিমাকে হলুদ লাগিয়ে একটু হলুদ হাতে নিয়ে রাইয়ানকে লাগানোর জন্য রাইয়ানের দিকে পা বাড়ায়।
ভিড়ের মাঝে পুষ্পকে দেখে নীল পুষ্পকে টেনে ভিড় থেকে বের করে নিয়ে এসে বলে,
– কিরে পুষ্প, আমরা সবাই এখানে নীলিমাকে হলুদ দিচ্ছি আর তুই ভিড়ের মধ্যে কেন বসে আছিস?
নীলের এমন প্রশ্নের কোন উত্তর খোঁজে পাচ্ছে না পুষ্প। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– ইয়ে, না মানে…
– ও বুজেছি। কেউ যেন তোকে হলুদ না মাখিয়ে দেয় সেজন্য এ ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে ছিলি তাই না? দাড়া তোকে এখনি আমি হলুদ দিচ্ছি।
– না না… নীল ভাই আমার। হলুদ লাগাস না আমার চেহেরার সাথে আমার ড্রেসটাও নষ্ট হয়ে যাবে।
নীল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– এতো ভালো সুযোগ কিভাবে হাতছাড়া করি আমি পুষ্প?
নীল হলুদ নিতে পুষ্প দৌড় দিলো আর তার পেছনে নীলও।
পুষ্প লং ড্রেস নিয়ে ভালো করো দৌড়াতেও পারছে না আর দৌড়াতে দৌড়াতে আচমকা রাইয়ানকে সামনে দেখতে পেয়ে তাল সামলাতে না পেরে পুষ্প হোচট খেয়ে পড়ে যায় রাইয়ানের সামনে।
আর অন্য পাপড়ি রাইয়ানকে হলুদ লাগাতে এসে পুষ্প পেছনে দৌড়াতে থাকা নীলের সাথে থাক্কা খেয়ে দুজনেই পড়ে যায়। নীল নিচে আর তার ওপরে পাপড়ি।
পাপড়ি আর নীল দুজন দুজনের চোখে ডুবে যায়। পাপড়ির মনে আবার সেই অনুভুতিগুলো জেগে ওঠে। পাপড়ি খেয়াল করলো তার হার্টবিটও বেড়ে গেছে। ধকধক শব্দটা তার কান পর্যন্ত আসছে।
আর অন্যদিকে নীলের মনে তার চেপে রাখা ফিলিংসগুলো জেগে ওঠে। তার ইচ্ছে করছে পাপড়িকে এভাবেই জড়িয়ে ধরে আজীবন শুয়ে থাকতে। কিন্তু হঠাৎ সেদিনের অপমানের কথাগুলো মনে পড়তেই নীলের রাগ ওঠে যায়। পাপড়িকে থাক্কা দিয়ে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে নীল ওঠে সেখান থেকে চলে যায়।
অন্যদিকে পুষ্প রাইয়ানের সামনে হোটচ খেয়ে পড়ে যাওয়ায় তা দেখে রাইয়ান ফিক হেসে ফেলে। পুষ্প একবার রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে তাকে হাসতে দেখে আবার মাথা নিচু করে বসে থাকে।
পুষ্পকে এমন করতে দেখে রাইয়ান নিজের হাসি আটকে পুষ্পর দিকে তার হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– ওঠে পড়ো, কেউ দেখেনি।
পুষ্প কোন কথা বলছে না চুপচাপ বসে আছে। পুষ্পকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রাইয়ান তার কাছে বসে বললো,
– কি হয়েছে পুষ্প? ওঠছো না কেন? তুমি কি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো?
পুষ্প তখনও কোনো কথা বলছে না।
রাইয়ান এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,
– কি হয়েছে কি তোমার? কোনো কথা বলছো না কেন? কি সমস্যা তোমার?
পুষ্প এবার রাইয়ানকে কাছে ডেকে কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
– আমার জামা ছিড়ে গেছে।
রাইয়ান এ কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো,
– কিহ! কিভাবে হলো এটা?
– পায়ে জামা পেচঁ লেগে হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ায় পিঠের দিক দিয়ে জামা ছিড়ে গেছে।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান একবার পুষ্পের পেছনে তাকিয়ে দেখলো পুষ্প পেছনে ছেড়া জায়গায় হাত দিয়ে বসে আছে।
পুষ্প রাইয়ানের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললো,
– এবার কি হবে? আমি এতো মানুষের মাঝে ছেড়া জামা নিয়ে কিভাবে যাবো?
চলবে…..