ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৬
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
সকালে রাইয়ান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো রুমে কেউ তার জন্য নাস্তা রেখে গেছে। রাইয়ান চারপাশ চোখ বুলিয়ে দেখে মনে মনে বললো,
– রুমে তো কেউ নেই, নাস্তাটা রেখে গেলো কে?
তারপর মুচকি হেসে রাইয়ান বললো,
– পুষ্পই রেখে গেছে হয়তো। কিন্তু নাস্তার সাথে আমার কফিটা দিলো না যে?
রাইয়ান রুম থেকে বের হয়ে পুষ্পকে খুঁজতে লাগলো। রান্নাঘরের সামনে রাইয়ান পেছন থেকে পাপড়িকে পুষ্প মনে করে বললো,
– পুষ্প আমাকে আজ কফি বানিয়ে দিলে না যে? আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে যাও প্লিজ।
বলেই রাইয়ান আবার রুমে চলে যায়।
রাইয়ানের কথা শুনে পাপড়ি মনে মনে অনেক খুশি হয়।
– এটাই সুযোগ রাইয়ানের কাছে যাওয়ার।
পাপড়ি এক কাপ কফি বানিয়ে রুমে যায়।
চেহেরা এক হওয়ায় রাইয়ান প্রথমে পাপড়ির দিকে এতটা খেয়াল না করে কফিটা নিয়ে নেয়। রাইয়ান কফিতে চুমুক দিতেই তার বুঝতে বাকি রইলো না এটা পুষ্পর বানানো কফি না। কফি কাপটা সাইডে রেখে রাইয়ান বললো,
– পাপড়ি তুমি কেন আমার জন্য কফি বানিয়ে এনেছো? আমি তো তোমাকে বলিনি কফি বানিয়ে আনতে?
রাইয়ানের এমন কথা শুনে পাপড়ি হকচকিয়ে যায়। সে ভেবেছিলো রাইয়ান হয়তো তাকে চিনতে পারবে না।
– আসলে আপু একটু অন্য কাজে বিজি ছিলো, তাই আমি ভাবলাম….
রাইয়ান একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– পুষ্প বিজি থাকলে সে ফ্রি হলে আমাকে কফি বানিয়ে দিতো, তুমি কেন কফিটা বানিয়ে আনলে?
– কেন রাইয়ান, কফিটা কি ভালো হয় নি?
– না তা নয়, আমি পুষ্পর বানানো কফি খেতে পছন্দ করি।
পাপড়ি এবার রাইয়ানের একটু কাছে গিয়ে বললো,
– আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন? এখন তো আপনি আমাকে মাফও করে দিয়েছেন, তো কেন এতো বিরক্তি আমার প্রতি?
পাপড়ি রাইয়ানের এতোটা কাছে আসতেই রাইয়ানের রাগ ওঠে যায়।
– তোমাকে বলেছি আমার থেকে দূরে থাকতে। তোমাকে মাফ করে দিয়েছি বলে আমাদের মধ্যে সবকিছু আগের মতো হয়ে যায় নি পাপড়ি।
– কেন রাইয়ান? আপনি তো আমাকে মাফ করে দিয়েছেন তো এতো রাগ কিসের?
রাইয়ান পাপড়ির কাছ থেকে একটু দূরে যেতেই পাপড়ি আহ! করে ওঠে।
রাইয়ান খেয়াল করলো পাপড়ির চুল তার শার্টের বোতামে আটকে গেছে।
রাইয়ান পাপড়ির চুল বোতাম থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না।
– আপনি ছাড়ুন আমি ছাড়িয়ে নিচ্ছি চুল।
বলেই পাপড়ি রাইয়ানের আরো কাছে এসে তার চুল ছাড়াতে থাকে। পাপড়ি মুখে বাঁকা একটা হাসি দিয়ে মনে মনে বললো,
– চুলটা আমি ইচ্ছে করেই আপনার শার্টের বোতামে লাগিয়েছি যেন আমি আপনার কাছে আসতে পারি।
ঠিক এমন সময় পুষ্প এক কাপ কফি নিয়ে রুমে ঢুকছিলো। কিন্তু রুমে ঢুকার আগেই এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে সে আর রুমে ঢুকতে পারে নি। চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়।
– পুষ্প তুই নিজেকে শক্ত কর। এতোটা কষ্ট পেলে তোর চলবে না। এটাই নিয়তি। রাইয়ান আর পাপড়ির মাঝে সব আগের মতো হচ্ছে, তুই ওদের মধ্যে আর কাঁটা হয়ে থাকিস না। নিজেকে সামলে নে। কিন্তু রাইয়ান কাছে থাকলে আমি দুর্বল হয়ে যাবো। ওর মায়ায় পড়ে গেছি আমি। না.. না… এখন থেকে আমি রাইয়ানের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবো। ওর কাছে থাকলে আমি রাইয়ানকে কখনও ছাড়তে পারবো না। পুষ্প তোকে আরো শক্ত হতে হবে।
একা একা এসব বলে কাঁদতে লাগলো পুষ্প।
বোতাম থেকে পাপড়ি তার চুলটা ছাড়াতেই রাইয়ান পাপড়ির কাছ থেকে দূরে সরে যেয়ে বলে,
– শুনো পাপড়ি, তোমাকে একটা কথা বলে রাখি, আমাদের মধ্যে আগের মতো আর কিছুই কখনো হয়ে ওঠবে না। তাই তুমি আমার থেকে দূরে থাকবে। বুজেছো?
– হুম।
বলেই পাপড়ি রুম থেকে বের হয়ে যায়। যেতে যেতে পাপড়ি মনে মনে বললো,
– সরি রাইয়ান, আপনার এ কথা আমি কখনই মানতে পারবো না। আপনাকে পাওয়া এখন এটা আমার জেদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনাকে যে কোন মূল্যে আমি পেয়েই ছাড়বো।
– ধ্যাত! মোবাইলের গেমও আর ভালো লাগছে না। আর পুষ্পটাও কোথায় গেছে? সকাল থেকে তাকে একবারো দেখলাম না।
বলেই রাইয়ান রুম থেকে বাহির হতে দেখলো পুষ্প তার মা, দাদী আর নীলিমার সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
রাইয়ান মনে মনে বললো,
– আমাকে রুমে একা ফেলে এখানে সে আড্ডা দিচ্ছে।
রাইয়ানকে পুষ্প দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে ফিরে কথা বলছে।
রাইয়ান পুষ্পর দিকে এগিয়ে যেতেই পুষ্প নীলিমাকে নিয়ে অন্যরুমে চলে যায়।
পুষ্পর এমন কান্ডে রাইয়ান বললো,
– কি হলো ব্যাপারটা? আমাকে তো পুষ্প দেখছেও না। বিয়ে বাড়িতে এসে তো আমাকে একদম ভুলেই গেছে পুষ্প। এতই যখন বিজি সবার সাথে তো আমাকে কেনো নিয়ে এসেছে তার সাথে।
রাতে পুষ্পকে বালিশ আর কাথা নিয়ে রুম থেকে বের হতে দেখে রাইয়ান খুব অবাক হয়।
– কি হলো? তুমি বালিশ কাঁথা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো পুষ্প? এখানে শুবে না?
পুষ্প মুখটা গম্ভীর করে বললো,
– আসলে অনেক দিন হলো মায়ের সাথে শোয়া হয় না। তাই ভাবছি এ কদিন আমি মায়ের সাথেই শোবো।
– কিন্তু….
পুষ্প রাইয়ানের কোনো কথা না শুনেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
পুষ্পকে চলে যেতে দেখে রাইয়ান বললো,
– ধূর, সারাদিন আমাদের সাথে কথা হয় নি। এখন ভেবেছিলাম যে রাতে দুজন মিলে গল্প করবো কিন্তু এখন সে মায়ের সাথে শুতে চলে গেছে। ( ভেংচি কেটে)
চলবে……