ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৫
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেয়ে পুষ্প দরজা খুলে। দরজায় আফিয়া বেগম, নীল আর নীলের মা কে দেখে খুব অবাক হয়ে যায় পুষ্প। তবে অনেকদিন পর পুষ্প নিজের মাকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো আফিয়া বেগমকে।
আফিয়া বেগম বললো,
– কেমন আছিস তুই?
– আমি অনেক ভালো আছি মা। কাকিমা, নীল কেমন আছো তোমরা?
নীল জবাব দিলো,
– এইতো আল্লাহ রহমতে ভালো আছি।
-হঠাৎ তোমরা আজ এইখানে?
নীল বললো,
– বাহ রে! তোর জামাইয়ের বাড়িতে কি আমরা আসতে পারি না?
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
– আমি কি তা বলেছি? আসো, ভিতরে আসো তোমরা।
বাসায় মেহমান আসতে দেখে মিসেস মাহমুদা, মি. রাশেদ তাদের কাছে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করলো।
পুষ্প আর মিসেস মাহমুদার মধ্যে এতো মিল দেখে আফিয়া বেগমের মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।
– তোমরা আসবে আমাকে আগে বলে দিলেই তো পারতে। আমি খাবার-দাবার সব আয়োজন করে রাখতাম।
পুষ্পর কথা শুনে নীলের মা হেসে বললো,
– না রে মা। কোন কিছুর আয়োজন করতে হবে না। আমরা বেশিক্ষণ থাকতে আসি নি।
ব্যাগ থেকে একটা বিয়ের কার্ড বের করে তা পুষ্পর কাছে এগিয়ে দিলো নীলের মা। কার্ড দেখে পুষ্প বললো,
– কার বিয়ের কার্ড?
কার্ডটা হাতে নিয়ে অনেক উৎসাহ নিয়ে কার্ডের লেখাটা পড়ে খুশিতে আত্মাহারা হয়ে ওঠে।
– সে কি! আমাদের নীলিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো,
– হ্যা। ৪ দিন পর বিয়ে।
– কখন হলো এসব? আমাকে তো কেউ কিছু না জানালেই না?
মিসেস মাহমুদা ও মি. রাশেদ অবাক হয়ে তাদের কথা শুনছে। মি. রাশেদ বললো,
– আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। নীলিমা কে?
– ওহ বাবা, তোমাদের তো বলতে ভুলেই গেছি। নীলিমা হচ্ছে নীলের বোন। এতোদিন পড়াশোনার জন্য ঢাকায় তার মামা বাড়িতে থাকতো। তাই আমার বিয়েতেও আসতে পারে নি।
– ওহ এবার বুজলাম।
– হ্যা। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে সেদিনের ছোট্ট নীলিমার ৪ দিন পর বিয়ে।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো,
– তোরা বড় হয়ে গেছিস ও কি আজীবন ছোটই থাকবে নাকি। আর হ্যা আমি কিন্তু আগেই বলে রাখছি পুষ্প তোকে আর তোর জামাইকে কিন্তু বিয়ে ৩ দিন আগেই যেতে হবে।
নীলের এমন কথা শুনে পুষ্প মিসেস মাহমুদা দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি কিভাবে….
নীল পুষ্পর মনের কথা বুজতে পেরে মিসেস মাহমুদাকে বললো,
– আন্টি আপনার কি এতে কোন আপত্তি আছে।
মিসেস মাহমুদা হেসে বললো,
– না বাবা, আমার কোন আপত্তি নেই। তবে রাইয়ান মতও থাকতে হবে?
– পুষ্প আন্টি তো মত দিয়ে দিয়েছে এবার তুই রাইয়ানকে রাজী করিয়ে কালকেই চলে আসবি। তোকে ছাড়া তো বিয়ে বাড়িতে কোন মজাই হবে না।
পুষ্প বললো,
– আচ্ছা। আমি রাইয়ানকে বলে দেখবো।
রাতে রাইয়ান বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। পুষ্প রাইয়ানের কাছে বললো,
– একটা কথা বলার ছিলো।
– হ্যা বলো?
পুষ্প বিয়ের কার্ড রাইয়ানের হাতে দিয়ে বললো,
– নীলিমার বিয়ে।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– নীলিমা কে?
– নীলের বোন নীলিমা। আজ মা, কাকিমা আর নীল এসে দাওয়াত দিয়ে গিয়েছে। আর নীল বলেছে আমরা যেন কালই চলে যাই।
– হুম
বলেই রাইয়ান আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
– তুমি কি কাল যেতে পারবে আমার সাথে?
রাইয়ান কোন কথা না বলে নিজের কাজ করছে। রাইয়ান কোন জবাব না দিয়ে কাজ করতে দেখে পুষ্প বললো,
– বুঝতে পেরেছি তুমি যেতে পারবে না। আমি নীলকে ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি যে আমরা কাল আসতে পারবো না।
বলেই পুষ্পটা ফোনটা হাতে নিতেই রাইয়ান বললো,
– আমি কি একবারো বলেছি যে যেতে পারবো না?
পুষ্প অবাক হয়ে বললো,
– তুমি কাল যাবে?
– হুম।
– সত্যিই যাবে?
– হ্যা সত্যিই যাবো।
রাইয়ানের শুনে খুশিতে আত্মাহারা হয়ে পুষ্প রাইয়ানকে জড়িয়ে ধরে। পুষ্পর এমন কান্ডে রাইয়ানও একটু চমকে ওঠে বললো,
– এটা কি হলো?
রাইয়ানের কথায় পুষ্প হুশ ফিরতেই পুষ্প রাইয়ানকে ছেড়ে দাড়িয়ে বলে,
– আসলে, আমি একটু বেশি খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। সরি।
বলেই পুষ্প কিছুটা লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রাইয়ান মুচকি হেসে আবার কাজে মনোযোগ দেয়।
পরক্ষণেই রাইয়ানের মনে হলো সেখানে গেলে তো আমাকে পাপড়ির সামনে থাকতে হবে। সেদিনের পর পাপড়ি আর অফিসে আসে নি। কিন্তু এখন পাপড়ির সামনে কিভাবে যাবো আমি?
পরদিন সকালে পুষ্প আর রাইয়ান গাড়ি থেকে নামতেই তাদের আমন্ত্রণ জানাতে এগিয়ে আসলো আফিয়া বেগম আর দাদী।
সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ঘরে ঢুকতেই রাইয়ানের সামনে পাপড়ি পড়ে যায়। রাইয়ান পাপড়ি দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে তাই সে তার মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে ঘরের অন্য দিকে চলে যায়।
পাপড়ি রাইয়ানকে দেখে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু রাইয়ান চলে যাওয়ায় আর কিছু বলতে পারে নি সে।
তাদের এ দৃশ্য পুষ্পর নজর এড়ালো না।একটু দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো পুষ্প।
পুষ্প রাইয়ানের কাছে গিয়ে বললো,
– তোমাকে যদি একটা কথা বলি, রাখবে তা?
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– কি কথা?
– তুমি পাপড়িকে মাফ করে দিয়ে তোমাদের মধ্যের সম্পর্কটা আগের মতো করতে পারবে?
– এসব কি বলছো তুমি? এটা সম্ভব না।
– কেনো সম্ভব না? তোমাকে তো আগেই সব সত্য আমি বলে দিয়েছি তাহলে পাপড়িকে কেনো তুমি মাফ করতে পারছো না?
পুষ্পর কথার কোন উত্তর নেই রাইয়ানের কাছে। তাই চুপচাপ সে দাঁড়িয়ে রইলো।
পুষ্প রাইয়ানের কাছে এসে তার হাত ধরে বললো,
– আমার জন্য হলেও তুমি পাপড়িকে মাফ করে দাও। কারণ আমি আমার বোনকে আর এভাবে দেখতে পারছি না। সবকিছুর মধ্যে ভুলটা আমার বেশি ছিলো, পাপড়ি মাফ করে দাও প্লিজ?
রাইয়ান আর কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
পুষ্প খুশি হয়ে বললো,
– সত্যি বলছো? তোমাদের সম্পর্কটা আগের মতো করতে তুমি রাজি?
রাইয়ান এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,
– আমি পাপড়িকে মাফ করতে রাজি হয়েছি, আমাদের সম্পর্কটা আগের মতো করতে রাজি হই না। আমাদের মধ্যে আগের মতো সম্পর্ক হবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে।
– তুমি পাপড়িকে মাফ করেছো এতেই আমি খুশি। তুমি দাঁড়াও এখানে, আমি এখনই আসছি।
বলেই পুষ্প পাপড়ির কাছে গিয়ে পাপড়ির হাত ধরে টেনে রাইয়ানের কাছে নিয়ে এসে বললো,
– পাপড়ি রাইয়ান তোকে মাফ করে দিয়েছে।
পুষ্পর কথা শুনে পাপড়ি খুব খুশি হয়ে বললো,
– সত্যিই কি আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েছেন?
রাইয়ান গম্ভীর মুখ করে বললো,
– হ্যা। আর ওই দিন অফিসেও তোমাকে এতোটা অপমান করা ঠিক হয় নি। তার জন্য সরি। তুমি আবার অফিস জয়েন করতে পারো।
পাপড়ি খুশিতে আত্মাহারা হয়ে ওঠলো।
– আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েছেন ওটাই আমার কাছে অনেক।
পুষ্প পাপড়ির কাছে এগিয়ে এসে বললো,
– এখন তো তুই আমার ওপর আর রাগ করে থাকবি না বল?
পাপড়ি পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– নাহ, আর কোনো রাগ নেই তোর ওপর।
পুষ্প খুশি হয়ে বললো,
– আমি জানতাম একদিন তুই আমাকে ঠিকই বুঝবি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
অপরপাশে পাপড়ি মনে মনে বলতে লাগলো,
– আমাদের মধ্যে মিল করিয়ে দেওয়ার জন্য তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমাকে দেওয়া সব কষ্টের হিসাব তো তোকে দিতেই হবে আপু। আর রাইয়ানকে তোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েই আমি সব কষ্টের প্রতিশোধ নিবো।
চলবে…..