ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৪
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
– তুমি এইখানে এভাবে……
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করে বললো,
– এইখানে এসেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে কিন্তু এইখানে এসে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছি।
পুষ্প রাইয়ানের থেকে অন্যদিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
– তুমি যা ই বলো, কাজটা তোমার একদম ঠিক করো নি।
– ও রেইলি, তাহলে পাপড়ি যা করছিলো তা তোমার কাছে ঠিক ছিলো?
– তা আমি জানি না, কিন্তু এখন আমাকে পাপড়ির কাছে যাওয়া দরকার। এখন আমাকে তার প্রয়োজন আছে।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান আরো রেগে গিয়ে বললো,
– না, কোথাও যাবে না তুমি। তুমি এখন বাসায় যাবে। আমি ড্রাইভারকে বলে দিয়েছি, সে তোমায় বাসায় নিয়ে যাবে।
– কিন্তু আমি এখন….
– আমি যা বলছি তাই করো পুষ্প। বাসায় যাও।
রাইয়ানকে অনেক রেগে থাকতে দেখে পুষ্প আর কোন কথা বললো না। চুপচাপ তার কথা মেনে নিলো পুষ্প।
পুষ্প গাড়ির সামনে যেতেই পাপড়ি তার ধরে টান দিয়ে বললো,
– এবার খুশি তো তুই? এটাই তো চেয়েছিলি তুই?
-পাপড়ি এসব কি বলছিস তুই? আমি এমনটা…
– রাইয়ানের চোখে আমায় নিচে নামিয়ে তোর আত্মার শান্তি মিলেছে? এটাই তো চাস তুই যে রাইয়ান আর আমার সম্পর্কটা কখনও ঠিক না হোক।
– পাপড়ি তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি জানতাম না যে রাইয়ান এখানে এভাবে চলে আসবে।
– আর কতো মিথ্যে বলবি তুই? আজ তুই যা করলি তার জন্য তোকে আমি কোন দিনও মাফ করবো না।
বলেই পাপড়ি সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।
পুষ্প আর কিছু বলতে পারে না পাপড়িকে। সে হতাশ হয়ে মনে মনে বললো,
– পাপড়ি, তুই আবার আমাকে ভুল বুজলি।
ডিনারের টেবিলে বসে আছে সবাই। হঠাৎ মি. রাশেদ বললো,
– আজ অনেকদিন পর আমরা সবাই মিলে একসাথে খাবার খাচ্ছি। খুব আনন্দ লাগছে আমার।
মি. রাশেদের কথায় সবাই খুশি হলেও পুষ্প আর রাইয়ানের মুখে কোনো হাসি নেই। দুজনেই চুপচাপ বসে খাচ্ছে।
দুজনকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মিসেস মাহমুদা বলে ওঠলো,
– কিরে, তোরা কোনো কথা বলছিস না যে? কি হয়েছে?
শাশুড়ীর কথা শুনে পুষ্প একবার রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কই কিছু না মা। আমার খাওয়া শেষ, আমি আসি।
বলেই টেবিল থেকে ওঠে চলে যায় পুষ্প।
একটুপর রাইয়ানও টেবিল ছেড়ে ওঠে যেতেই মিসেস মাহমুদা বললো,
– কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস? তুই তো কিছুই খাসনি?
– আসলে মা, আজ আমার মোটেও খিদে নেই। আমি আসি।
বলেই রাইয়ানও চলে যায়।
পুষ্প আর রাইয়ানকে এভাবে উঠে যেতে দেখে নুরী বললো,
– ভাইয়া-ভাবীর মধ্যে হয়তো ঝগড়া হয়েছে তাই কেউ ঠিকমতো ডিনার করেনি।
রাইয়ান রুমে যেতেই দেখলো পুষ্প ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাইয়ান পুষ্পর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। রাইয়ানকে পুষ্প অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
দুজন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে ব্যালকনিতে। অনেকক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকার পর রাইয়ান নিরবতা কাটিয়ে বললো,
– এখনো কি আমার ওপর রাগ করে থাকবে?
– আমি তোমার ওপর রাগ না।
– তাহলে আমার সাথে কথা বলছো না কেন?
– এমনি আমার কথা বলতে ইচ্ছে নেই।
রাইয়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
– উফ! এইভাবে কথা না বলে কি থাকা যায়? আমার একদম ভালো লাগচ্ছে না।
– অফিসে তুমি যা করেছো সেটাও আমার একদম ভালো লাগেনি।
রাইয়ান এবার পুষ্পর হাতটা ধরে তার কাছে এসে বললো,
– এতো বোন বোন করো, বোনকে নিয়ে এতো ভাবো, কিন্তু তোমার বোন তোমার জন্য কয়বার ভাবে?
– তুমি এমনটা বলছো কারণ পাপড়িকে তুমি এখনো ঠিকমতো চিনো নি।
– এটা তোমার ভুল ধারণা। এতোদিনে পাপড়ি কেমন তা আমি চিনে গেছি। যে নিজের বোনকে হিংসে করে সে আর কতো ভালো হতে পারে তা আমার জানা আছে।
– না তুমি চিনতে পারো নি। আমার বোনকে আমার থেকে বেশি তুমি চিনতে পারো না। ও আমার সাথে এসব যা করেছে তা আমার ওপর রাগ করে করেছে।
– কিসের রাগ এতো তার? আমাদের বিয়ে নিয়ে? এতোদিনে সবাই যেটা বুঝে গেছে তার সেটা বুজতে এতো প্রবলেম কেনো?
– তার প্রবলেম কারণ পাপড়ি সবটা সত্য জানে না।
– মানে, কি বলতে চাচ্ছো তুমি পুষ্প?
– আমাদের বিয়েটা একটা ভুল বুঝাবুঝিতে হয়েছে। আর আমাদের বিয়েতে পুষ্প ছিলো না।
– হ্যা, এটা তো সবাই জানে। এতে নতুন কি?
– বলছি। আমি তোমাকে একরকম বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছিলাম, কারণ মা আমাকে তার কসম দিয়েছিলো। মার কসম রাখতে গিয়েই তোমার সম্পর্কে না জেনে, তোমাকে না দেখে আমি এ বিয়েটা করেছিলাম।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– মানে, কি বলছো তুমি?
– হ্যা। আর এসব কথা পাপড়ি জানে না। সে এটাই মনে করে যে আমি সব জেনে শুনে তোমাকে বিয়ে করেছি। এখন তুমিই বলো নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে কেই বা দেখতে পারবে? তারপর ওপর থেকে সেই অন্য মানুষটি যদি তার বোন হয় তাহলে কি সেই মানুষটি সহ্য করতে পারবে? মোটেই না। তুমি একবার নিজেকে পাপড়ির জায়গায় রেখে দেখো, তুমি দেখতে পারতে তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে? তোমার কি হিংসা হতো না? রাগ হতো না তোমার?
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান একদম নির্বাক হয়ে যায়। কিছুই বলতে পারছে না।
পুষ্প আবার বললো,
– কি হলো, কোন কথা বলছো না যে? আমি জানি তোমার কাছে কোন উত্তর নেই।
রাইয়ান এবার বললো,
– কিন্তু তুমি এসব পাপড়িকে জানাও নি কেন? সব কিছু বলে দিলেই তো সব ভুল বোঝাবোঝি মিটে যায়।
– বিশ্বাস করো আমি পাপড়ি এই কথাগুলো অনেকবার বলতে চেয়েছি। কিন্তু পাপড়ি আমার ওপর এতোটাই রেগে আছে যে সে আমার কোন কথায় কখনো শুনেনি।
এখন বলো সব শুনার পরও কি তুমি পাপড়িকে ভুল বুঝবে?
পুষ্পর কথা রাইয়ান দোটানাই পড়ে গেল। মনে মনে বলতে লাগলো,
– পাপড়ির প্রতি কি আমি বেশি অন্যায় করে ফেলেছি? তাকে এতোটা খারাপ ভাবা আমার ঠিক হয় নি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পুষ্প আবার বললো,
– আমি জানি একদিন পাপড়ি সব সত্য জানলে আর এমন রাগ করে থাকতে পারবে না। তখন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস কিছুদিন পর আমাদের ডিভোর্সটা হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাইয়ান আর একটি কথাও বললো না। চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
চলবে…..