ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৮
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
ডাক্তারের কেবিনের বাহিরে এক পাশে মিসেস মাহমুদা বসে কান্না করছে। নুরী তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর অন্য পাশে পুষ্প দাড়িয়ে আছে।
মি. রাশেদ এখনো ডাক্তারের কেবিনেই আছে।
চোখে জল ছলছল করছে পুষ্পর। নিজের বাবাকে অনেক আগেই হারিয়েছে সে। বাবার ভালোবাসা কাকে বলে তা মি. রাশেদের কাছ থেকেই জেনেছে পুষ্প। মনে মনে নিজেকেই দোষারোপ করছে পুষ্প। তার জন্যই সব হয়েছে। সে যদি নুরীকে ঐসব না বলতো তাহলে হয়তো এসব কিছুই হতো না।
মিসেস মাহমুদা পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমার স্বামীর যদি কিছু হয় তো আমি তোমাকে ছাড়বো না বলে দিলাম। তোমার জন্য সবকিছু হয়েছে। এ বাড়িতে আসার পর থেকে আমার সুন্দর সংসারটাকে নষ্ট করে ফেলেছো। তোমার জন্য আমার স্বামী আমার সাথে ঝগড়া করছে। আর আজ……
নুরী রাইয়ানকে এখুনি ফোন দে। ও এসে দেখুক ওর বউয়ের কীর্তি।
পুষ্প চুপচাপ দাড়িয়ে দাড়িয়ে মিসেস মাহমুদার কথা শুনছে। কিছু বলার সাহস তার নেই।
মিটিং এ বসে আছে রাইয়ান। নুরীর বারবার কল আসায় সেখান থেকে একটু সাইড হয়ে কলটা রিসিভ করে। কলে নুরীর কাছ থেকে সব শুনতে পেয়েই সে কাউকে কিছু না বলেই মিটিং থেকে চলে আসে। মিটিং থেকে হঠাৎ করে রাইয়ান এভাবে চলে যাওয়ায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রাইয়ানর দিকে।
রাইয়ানকে এভাবে চলে যেতে দেখে পাপড়ি পেছন থেকে তাকে কয়েকবার ডাকও দেয়। তবে রাইয়ানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে দৌড়ে গাড়িতে ওঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
-দাদাকে হারানোর ব্যাথাটা এখনো ভুলতে পারিনি আর এখন বাবা….. হে আল্লাহ এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে ওঠো না। আমার বাবাকে সুস্থ করে দাও।
গাড়ি চালাতে চালাতে রাইয়ান কথাগুলো বলছে। তার চোখে পানি এসে চোখ ঝাপসা করে তুলছে। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে রাইয়ান। কিন্তু চোখ ঝাপসার কারণে সামনে সবকিছুই ঝাপসা দেখছে রাইয়ান।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। ডাক্তারকে বের হতে দেখে মিসেস মাহমুদা ডাক্তার কাছে গিয়ে বলে,
– আমার স্বামী ঠিক আছে তো?
ডাক্তার মিসেস মাহমুদাকে সান্তনা দিয়ে বলল,
– হ্যা, ওনি ঠিক আছে। বেশি উত্তেজিত হওয়ার কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। তবে সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে আসার কারণে এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন তিনি। তবে নেক্সট টাইম থেকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে ওনি যেন বেশি উত্তেজিত না হয়। এমন হলে তিনি আবার হার্ট অ্যাটাক করতে পারে।
মি. রাশেদ এখন বিশ্রাম করছেন। কাল আপনারা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
ডাক্তারের কথা শুনে নিজের খুশি আর ধরে রাখতে পারে না পুষ্প। পরক্ষনেই তার মনে হয় রাইয়ানের কথা। রাইয়ান হয়তো বাবাকে নিয়ে টেনসনে আছে। তাকে বাবার সুস্থ হাওয়ার খবরটা জানানো দরকার। এ ভেবে পুষ্প রাইয়ানকে কল দেয়। কিন্তু রাইয়ান কল রিসিভ করছে না।
দু-তিনবার কল দেওয়ার পর কলটা রিসিভ হয়।
– হ্যালো রাইয়ান, তুমি আমার ফোন ধরছিলে না কেন? বাবাকে নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না,ওনি সুস্থ আছেন।
– হ্যালো, আপনি কে বলছেন?
পুষ্প কলে অপরিচিত কারো কন্ঠ পেয়ে চমকে ওঠে বলে,
– আপনি কে বলছেন? আর রাইয়ানের ফোন আপনার কাছে কেন?
-দেখুন, এখানে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি গাড়ির ভিতরে থাকা ফোনে আপনার কল পেয়ে রিসিভ করেছি।
লোকটির কথা শুনে পুষ্প মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। লোকটির কথা সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। মুখ থেকে তার কথা বের হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে এখনি সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।
– হ্যালো, আপনি শুনতে পারছেন। হ্যালো…
লোকটির কথায় পুষ্পর হোশ ফিরে। কান্না জড়িত কন্ঠে পুষ্প বললো,
-হ্যালো, রাইয়ান কেমন আছে? সে ঠিক আছে তো?
– ওনি অজ্ঞান হয়ে আছেন। ওনাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়েছে, আপনিও তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে আসুন।
বলেই লোকটি ফোন কেটে দেয়।
পুষ্প শরীর কাপছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও শরীরে পাচ্ছে না। হঠাৎ নুরী তার সামনে দিয়ে যেতে দেখে তাকে ডাক দিয়ে বলে,
– নুরী, রাইয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।
নুরী কিছু বলার আগেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা বলে ওঠে,
– কিহ! রাইয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।
পুষ্প পেছনে ফিরতেই মিসেস মাহমুদা তার কাছে এসে বলে,
– আমার ছেলের কি হয়েছে? রাইয়ান কোথায়?
পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– মা, রাস্তায় রাইয়ানের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মিসেস মাহমুদা এবার রেগে বললেন,
– এসব কিছু তোমার জন্য হয়েছে। তোমাকে আমি ছাড়বো না। তোমাকে তো আমি…
নুরী মিসেস মাহমুদাকে থামিয়ে বললো,
– মা, এখন এসব বলার টাইম না। আগে ভাইয়ার কাছে চলো।
-হ্যা, আমাকে রাইয়ানের কাছে যেতে হবে চল।
বলেই মিসেস মাহমুদা আর নুরী সেখান থেকে চলে যায়।
পুষ্প আর রাইয়ানের কাছে যাওয়ার সাহস করে ওঠতে পারলো না। সে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে। সে কি করবে বুজতে পারছে না।
-আজ আমার একটু ভুলের জন্য এসব কিছু হয়ে গেছে। প্রথমে বাবা আর এখন রাইয়ানকে হারাতে বসেছি। রাইয়ানের কিছু হলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না। হে আল্লাহ, তুমি আমার সাথে এমন কেন করছো?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অনেকক্ষণ পর একজন নার্স এসে পুষ্পর কাছে এসে বললো,
– আপনার নাম কি পুষ্প?
পুষ্প অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
– হ্যা। আমি পুষ্প।
– মি. রাশেদ আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে।
পুষ্প আস্তে আস্তে ওঠে মি. রাশেদের কাছে যায়। মি. রাশেদ পুষ্পকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
– বউমা, এসেছো?
পুষ্প বেডে পাশে বসে বললো,
– এখন কেমন লাগছে, বাবা?
– আরে এতো চিন্তা করো না তো, আমি একদম ঠিক আছি। আমার কিছু হয় নি। রাইয়ান আসে নি?
রাইয়ানের কথা শুনতেই পুষ্প তার কান্নাটা আর চেপে রাখতে পারে না। সে ঢুকরে কেঁদে ওঠে। পুষ্পকে এভাবে কাঁদতে দেখে মি. রাশেদ বললো,
– কি হয়েছে বউমা, এভাবে কাঁদছো কেন?
পুষ্প প্রথমে বলতে না চাইলেও মি. রাশেদ তাকে জোর করায় সে সব বলে দেয়।
– কিহ! রাইয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি এখনি রাইয়ানের কাছে যাবো।
– না বাবা, আপনি এখনো সুস্থ হন নি। মা আর নুরী রাইয়ানকে দেখতে গিয়েছে আপনি উত্তেজিত হবেন না।
– আমার ছেলের এক্সিডেন্ট হয়েছে আর তুমি আমাকে এখানে শুয়ে থাকতে বলছো? কিছুতেই না। আমি এখনি যাবো আর তুমিও চলো আমার সাথে।
চলবে…..