ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৭
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
খুব সকালেই ঘুম থেকে ওঠে যায় পুষ্প। আজ থেকে নতুন একটা শুরু করতে হবে। ফ্রেশ হয়েই সরাসরি রান্নাঘরে চলে যায় পুষ্প। কিচেন স্টাফ বাসন্তীও এখনো আসেনি রান্নাঘরে। রান্নার শুরুটা আজ তাকেই করতে হবে। আফিয়া বেগমকে ফোন দিয়ে সবকিছু জেনে নেয় পুষ্প। আজ একটা ভুল করাও চলবে না তার। মায়ের কথামতো সব রান্না করতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর বাসন্তী এসে পুষ্পকে রান্নাঘরে রান্না করতে দেখে অবাক হয়ে বলে,
– আমি তো ভেবে ছিলাম কালকের রান্নার পর আপনি আর রান্নাঘরেই আসবেন না।
পুষ্প মুচকি হেসে বলে,
– রান্নাঘরে না আসলে রান্না শিখবো কিভাবে?
পুষ্পর কথা শুনে বাসন্তী মুচকি হেসে পুষ্প কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়।
দুজনে মিলে খুব তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে ফেলে।
রাইয়ানের কথামতো এক মগ কফি বানিয়ে রুমে নিয়ে যায় পুষ্প। রাইয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। পুষ্প ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৮ টা বেজে গেছে। কিন্তু রাইয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। কফির মগটা পাশে রেখে রাইয়ানকে কি ডাক দিবে কি দিবে না সেটা ভাবছে পুষ্প। এখন ডাক না দিলে অফিসে যেতে তার লেইট হয়ে যাবে। রাইয়ানকে ঘুম থেকে ডাক দিতেও তার কেমন লাগছে তার। কিছুক্ষণ ভেবে ফোনটা বের করে তাতে রিংটোন বাজিয়ে রাইয়ানের কানের পাশে ধরে রাখে। রিংটোন এর শব্দে রাইয়ান লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে পুষ্পকে বললো,
– কি হচ্ছে টা কি? এভাবে কেউ কানের কাছে ফোনের কাছে রিংটোন বাজায়?
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প অবাক হয়ে বললো,
– আমি তো তোমাকে জাগানোর চেষ্টা করছিলাম।
-তো মুখে ডাক দিলে কি হতো, এভাবে ফোনের রিংটোন কানের কাছে বাজিয়ে ঘুম থেকে ওঠাতে হবে?
-একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো তো কয়টা বাজে?
রাইয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
– ও, সিট। এতো লেট হয়ে গেছে। তুমি আমাকে আগের জাগাও নি কেন?
-বাহ! এখন আমার দোষ। নিজে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিলে সেটা কি?
– হয়েছে তোমার সাথে কথায় আমি পেরে ওঠবো না। সাইড হও, আমি ফ্রেশ হতে যাবো।
– কফিটা কে খাবে?
– কফিটা নিচে নাস্তার সাথে দিও এখন সরো।
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। শ্বশুরের কথামতো পুষ্পও গিয়ে সবার সাথে খাবার টেবিলে বসে। পুষ্পকে বসতে দেখে মিসেস মাহমুদা কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু মি. রাশেদের ইশারার কারণে আর কিছু বলতে পারে নি। সবাইকে নাস্তা দেওয়া হয়েছে। পুষ্প নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ নেই, তার সব মনোযোগ মিসেস মাহমুদার দিকে। পুষ্প মনে মনে বলছে,
– হে আল্লাহ, আজ যেন খাবারটা ভালো হয়।
মিসেস মাহমুদা খাবার মুখে নিতে দেখে আবার পুষ্প মনে মনে বলে,
– এই বুজি এখনি খাবারের ভুল ধরবে, নুন তো ঠিক মতো দিয়েছি আজ।
পুষ্প বিবর্ণ চেহেরা নিয়ে তাকিয়ে আছে মিসেস মাহমুদার দিকে। কিন্তু মিসেস মাহমুদাকে কিছু বলতে না দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
– বাহ! আজ নাস্তা খুব ভালো হয়েছে। দেখছো মাহমুদা তোমাকে আমি বলেছিলাম না বউমা ঠিক পেরে ওঠবে। প্রথমদিন সবার একটু ভুল হতেই পারে তাই বলে তো আর প্রতিদিন ভুল হবে না। আজ কি বলবে তুমি?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মিসেস মাহমুদা কোন কথা বলছে না, চুপচাপ খেয়ে চলে যায়।
মি. রাশেদের মুখে নিজের রান্নার প্রশংসা শুনে যুদ্ধ জয় করার মতো একটা হাসি ফুটে পুষ্পর মুখে। খাবার শেষে সবাই চলে গেলেই পুষ্প আফিয়া বেগমকে ফোন দিয়ে সবকিছু বলে।
আফিয়া বেগম সব শুনে খুশি হয়ে বলে,
– মা, এইভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যা। তুই একদিন নিশ্চয়ই সফল হবি।
রাইয়ান আজ ফুড়ফুড়ে মেজাজ নিয়েই অফিসে এসেছে। কিন্তু অফিসে এসে পাপড়িকে দেখেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। পাপড়ি দেখলে তার অতীতের সব মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে অফিসে যখন কেউ পাপড়িকে পুষ্প বলে ডাকে। মনের চেপে থাকা কষ্ট গুলো আবার জেগে ওঠে রাইয়ানের।
সময় নিজ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পুষ্প তার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। বাড়িতে এখন তার অবস্থান আগের থেকে একটু ভালো হয়েছে তবে মিসেস মাহমুদার মনে এখন নিজের জন্য জায়গা করতে পারে নি পুষ্প। পুষ্পর একটু ভুল হলেই তাকে কথা শোনানোর সুযোগটা হাত ছাড়া করে না মিসেস মাহমুদা।
সকালে পুষ্প ফোনের রিংটোন বাজিয়ে রাইয়ান কানের কাছে ধরতেই রাইয়ান চিৎকার দিয়ে ওঠে বলে,
– তোমাকে না কতোবার বলেছি আমাকে এইভাবে জাগাবে না।
– মুখে ডেকে ঘুম থেকে ওঠানোর মানুষ তুমি না। তাই এভাবে জাগাই।
-কিহ! তবে রে…
বলেই পুষ্পকে দৌড়াতে শুরু করলো রাইয়ান।
পুষ্প হঠাৎ হোচোট খেয়ে পড়ে যেতেই পেছন থেকে রাইয়ান এসে তাকে ধরে ফেলে।
দুজনের নজর দুজনের চোখের ওপর পড়ে যায়। কিছুক্ষণ চোখাচোখির পর দুজনেরই হুশ ফিরতেই দুজন দুজনকে ছেড়ে দাড়ায়। পুষ্প রাইয়ানকে কিছু বলতে না পেরে লজ্জায় ব্যালকনিতে চলে যায়। রাইয়ানও এমন একটা কান্ড হওয়ায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে চুপচাপ ফ্রেশ হতে যায়।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া কথা কল্পনা করে নিজে নিজে লজ্জা পাচ্ছে পুষ্প। হঠাৎ একটা গাড়িকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুষ্প। গাড়িটা দেখে পুষ্প বললো,
– এই গাড়ি এ বাসায় এর আগে তো দেখেনি।
একটুপর নুরীকে দেখলো গাড়িটির কাছে গিয়ে দাড়াতে। নুরীকে দেখে একটা ছেলে গাড়ি থেকে নেমেই জড়িয়ে ধরে কথা বলে।
পুষ্প ওপর থেকে তাদের সবকিছু খেয়াল করছে।
ছেলেটা নুরীকে বাজে টাচ করছে যা পুষ্পর চোখ এড়ায় না। পুষ্প মনে মনে বলছে,
– ছেলেটা নুরীর সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করছে, বাজে ভাবে টাচ করছে অথচ নুরী তাকে কিছুই বলছে না। নুরী সাথে একবার কথা বলা দরকার।
কিছুক্ষণ পর নুরী ছেলেটির সাথে গাড়িতে ওঠে চলে যায়।
বিকেলে নুরী বাসায় এসে রুমে যাওয়ার সময় পুষ্প নুরীকে ডাক দেয়।
– নুরী তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
– কি কথা?
– সকালে একটা ছেলে বাসার সামনে থেকে তোমাকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিল সে কি তোমার ফেন্ড?
– হ্যা।
– শুধু ফেন্ড?
– সেই কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে যাবো কেন?
– আমি শুধু জানতে চাচ্ছি আর কিছু না।
– বলবো না কি করবে?
– কিছু না। শুধু এতোটুকু বলবো যে ছেলেটাকে আমার বেশি সুবিধার মনে হয় নি। তুমি ওর থেকে দূরত্ব বজায় রেখো।
নুরী এবার রেগে ওঠে বলে,
– হাউ ডেয়ার ইউ! আমি কার সাথে মিশবো কি মিশবো না তাও তুমি আমায় বলে দিবে? তুমি কে হও এই কথা বলার?
নুরীর কথা শুনে রুম থেকে মিসেস মাহমুদা বের হয়ে এসে নুরী জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে, মামনি?
– দেখো না মা, এই মেয়েটা আমায় কি বলছে?
– কি বলেছে?
– তুমি তো আমার ফেন্ড রনিকে চিনো তাই না?
-হুম। খুব ভালো একটা ছেলে। কেনো কি হয়েছে?
– হ্যা খুব ভালো সে, কিন্তু এই মেয়েটা আমি রনির সাথে কেনো মিশি তার কৈফিয়ত চাইছে। রনির সাথে আমাকে মিশতে না বলছে।
নুরীর মুখে এসব কথা শুনে মিসেস মাহমুদারও রাগ ওঠে যায়।
– কিহ! এই মেয়ে তোকে এই কথা বলেছে।
পুষ্প মিসেস মাহমুদাকে বুঝানোর জন্য বললো,
– না মা, আসলে আমি…
– এই মেয়ে কয়েকদিন এ বাড়িতে থেকে নিজেকে এই মেয়ের মালিক ভাবা শুরু করে দিয়েছো? আমার মেয়ে কার সাথে মিশবে কি মিশবে না তাও তুমি বলে দিবে? বড্ড বাড় বেড়েছে তোমার। এতো সাহস হয় কি করে তোমার যে নুরীকে এইসব কথা বলো?
মিসেস মাহমুদার চেচামেচি শুনে মি. রাশেদ এসে বললো,
– আহ! এতো চেচামেচি করছো কেন কি হয়েছে?
– কি হয়েছে, তোমার আদরের বৌ আমার মেয়েকে বলে ওর ফেন্ডের সাথে না মিশতে?
নিজেকে এখন এ বাড়ির মালিক ভেবে নিয়েছে নাকি যে সে যা বলবে তাই করতে হবে?
পুষ্প আর অপমান সইতে না পেরে সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুমে চলে যায়।
-দেখেছো কত ঢং মেয়েটার?
মি. রাশেদ রেগে বলে,
– বউমা, যদি এমন কথা নুরীকে বলে থাকে তাহলে এর পিছে হয়তো কোনো কারণ আছে। নাহলে এমন কথা…
– তুমি এসবই বলবে। ঐ মেয়ে তো তোমাকে জাদু করে রেখেছে তাই কিছু দেখতে পাও না।
– এবার কিন্তু বেশি বলে ফেলছো মাহমুদা তুমি?
– কিহ! বেশি বলে ফেলেছি। দুদিন আগে আসা মেয়ের জন্য তুমি আমাকে শাসাচ্ছো? ঐ মেয়েকে আজ আমি আর ছাড়বো না।
বলেই মিসেস মাহমুদা ২ কদম এগুতেই পিছন থেকে মি. রাশেদ তার হাত ধরে বলে,
– কোথায় যাচ্ছো, তুমি বউমাকে কিছুই বলবে না।
– ছাড়ো তুমি,আজ ঐ মেয়েকে আমি দেখেই ছাড়বো।
– না তুমি কিছুই, আ….আ…
মি. রাশেদ বুকে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। মিসেস মাহমুদা মি. রাশেদের এ অবস্থা দেখে চিৎকার করে বলে,
– কি গো, কি হলো তোমার?
মি. রাশেদ কোন কথা বলছে না তিনি অজ্ঞান হয়ে যায়।
-নুরী হসপিটালে ফোন দে তোর বাবাকে এখুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
চলবে…..