ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৬

0
1259

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৬
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

– কংগ্রেস স্যার, আমরা নতুন ডিলটা পেয়ে গেছি।
ম্যানেজারের কথা শুনে রাইয়ান খুব খুশি হয়ে বলে,
– আপনাকেও কংগ্রেস।  আপনাদের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।
– হ্যা তবে এর জন্য বেশি ক্রেডিট পায় মিস্ পুষ্প।
ম্যানেজার পাপড়িকে দেখিয়ে বলে কথাটি বলে। ম্যানেজারের কথা শুনে রাইয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– সে কেনো?
-স্যার অফিসে আপনার অনুপস্থিতিতে সবকিছু মিস্ পুষ্পই দেখাশুনা করেছেন। এমনকি আপনার অনুপস্থিতিতে সকল মিটিং গুলোও তিনিই সামলেছেন।
রাইয়ান পাপড়ি দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে তারপর আস্তে করে বলে,
– থ্যাংক ইউ।
পাপড়ি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
– মাই প্লেজার।
– এবার আপনারা আপনাদের নিজ নিজ কাজে যান। ডিলটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এর জন্য অনেক কাজ করতে হবে।
রাইয়ানের কেবিন থেকে সবাই চলে গেলেও পাপড়ি এখানে কেবিনেই দাঁড়িয়ে আছে।
-তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও নিজের কাজ করো।
পাপড়ি রাইয়ানের কাছে এসে তার হাত ধরে বলল,
– এখনো কি রাগ করে আছেন আমার ওপর?এখনো কি মাফ করেন নি আমায়?
রাইয়ান নিজের হাতটা ছাড়িয়ে বলল,
– হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার? একটা ডিল পাইয়ে দিয়েছো বলে এটা ভেবো না আমি সব ভুলে গেছি, তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।
– আমি জানি আপনি আমাকে এখানো ভালোবাসেন। যদি ভালো না বাসতেন তবে আপুকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরই আপনি আমাকে এ চাকরি থেকে বরখাস্ত করতেন। কিন্তু আপনি করেন নি কারণ আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
– ও জাস্ট স্যাট আপ। আমি তোমাকে এখনো বের করে দেই নি কারণ……
– কারণ আপনি এখনো আমার ওপর রেগে আছেন। আমি এমন কি করবো যেটাতে আপনি আমাকে মাফ করে দিবেন?
– আমি তোমাকে কখনও মাফ করবো না। তোমাকে দেখলে আমার বিরক্তি লাগে। আমি সবাইকে মাফ করে দিলেও তোমাকে করবো না কারণ তুমি তোমার পরিচয় টা না লুকালে এসব কিছুই হতো না। এন্ড আই ওয়ার্নিং ইউ নেক্সট টাইম থেকে যদি আমার সাথে এমন কিছু ভিহেব করেছো তো এর পরিণাম ভালো হবে না।
বলেই রাইয়ান  রেগে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।
অন্যদিকে পাপড়ি কাঁদতে লাগলো।
-কি এমন ভুল করেছিলাম আমি নিজে পরিচয় লুকিয়ে যার শাস্তি এইভাবে পাচ্ছি। তবে আমিও হাল ছাড়ছি না আপুর কাছ থেকে আমি আপনাকে ছিনিয়ে আনবোই রাইয়ান।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রাইয়ান গাড়িতে ওঠে শায়নকে ফোন দেয়
– হ্যালো, কই তুই?
– এইতো কাজেই আছি।
– দেখা করতে পারবি?
– এখনি?
– হ্যা এখনি।
-ওকে আচ্ছি আমি।
– আমার অফিসে না আমাদের পুরনো জায়গায় আসিস।
– ওকে।

– বাবাকে তো বলে দিয়েছি যে দাদাভাই যা দায়িত্ব আমাকে নিতে বলেছে আমি সব দায়িত্ব নিবো। এ বাড়ির যোগ্য বউ হওয়ার চেষ্টা করবো কিন্তু যোগ্য বউ হতে গেলে তো ভালো রান্না করতে হবে। আর আমি তো রান্নাই করতে পারি না। আজ রান্নায় যা করেছি আবার এমন করলে বাবাই আমাকে রান্নাঘরে যেতে নিষেধ করবেন। আমি বরং মাকে ফোন দিয়ে সবকিছু জেনে নিই।
পুষ্প কথাটা বলেই আফিয়া বেগমকে ফোন দেয়।
-হ্যালো মা?
– হ্যালো। কেমন আছিস? ও বাড়িতে সবাই তোর সাথে ভালো আচরণ করছে তো?
মায়ের এমন কথা শুনে পুষ্পর মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।
– এতো তাড়াতাড়িই কি সব ঠিক হওয়া সম্ভব মা? তবে আমার শ্বশুর আমাকে আপন করে নিয়েছে।
– হ্যা। রাশেদ সাহেব মানুষটাই আলাদা। খুব ভালো মনের মানুষ।
-হ্যা। যেখানে এ বাড়িতে কেউ আমায় পছন্দই করে না সেখানে বাবা আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন।
– ওনার সব কথা তুই মেনে চলিস। কখনো  ওনার মনে কষ্ট দিস না।
-হুম। শুনো তোমাকে যেটার জন্য ফোন দিয়েছি, আমি ভালো রান্না কিভাবে করবো বলে দাও না মা?
– হা হা হা… কতো করে বলেছিলাম আগে যে রান্নাটা একটু শিখে নে বিয়ে পর কাজে আসবে। তখন আমার কথা শুনিস নি আর তোকে এখন আমি ফোনে ভালো রান্না করা শিখাবো কিভাবে?
– তা আমি জানি না। ভালো রান্না না করতে পারলে বাবার মন রক্ষা করতে পারবো না তুমিই বলো এখন আমি কি করবো?
– আচ্ছা এখন তো বলতে পারবো না। তুই যখন রান্না করতে যাবি তখন আমাকে ফোন দিস। আমি তোকে সব বলে দিবো।
-ওকে মা। এখন রাখি। তুমি নিজের আর বাসার সবার খেয়াল রেখো।
-আচ্ছা।

– এই কয়দিনে তোর জীবনে কতো কিছু হয়ে গেছে। আর আমি কিছুই জানলাম না। তোর জীবনের কাহিনী তো একদম ফিল্মের কাহিনির মতো হয়ে গেছে। দুই নায়িকা এক নায়ক। হা হা হা..
শায়নের মুখে এমন কথা শুনে রাইয়ান রেগে বললো,
– ফিল্মে তো নায়ক কোন এক নায়িকাকে তো চায় কিন্তু আমি কাউকেই চায় না। আমার জীবনটা কেমন যাচ্ছে সেটা আমি বুঝছি। তুই এখানে ফিল্ম নিয়ে আসছোস।
-সরি দোস্ত, আমি তোর মুড ভালো করার জন্য বললাম। তুই একটু শান্ত হ।
– হুম তুই বল তোর কি অবস্থা?
– আরে আর বলিস তোর ভাবি আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিসে। তোর ভাবি থেকে যেন কিছু দূরে থাকতে পারি তাইতো লন্ডনে চলে গেছিলাম। একটু এস করার জন্য।
-তো এই কথাটা কি বলবো নাকি ভাবিকে।
-রাইয়ান তুই আমার বন্ধু হয়ে শত্রুর কাজ করিস না। তুই বরং খাবার অর্ডার দে।
– হা হা হা। ওকে।

-রাত ১১ টা বাজতে চলছে এখনি রাইয়ান আসেন নি। এর আগে তো দেখেছি সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসে। তবে আজ এতো দেরি করছে?
রুমে বসে বসে রাইয়ানের কথা ভাবছে পুষ্প।

অন্যদিকে কিছুক্ষণ পর রাইয়ান আসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ১১ টা বাজতে দেখে সে তার জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,
– এতো দেরি হয়ে গেছে। শায়নের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে কখন টাইম চলে গেছে বুঝতেই পারি নি।
বাসায় ঢুকে সবাইকে ঘুমোতে দেখে বলল,
-যাক, সবাই ঘুমোচ্ছে। কিন্তু আমার মাথাটা ধরে আছে খুব। একটা কফি খেলে হয়তো ঠিক হয়ে যেতাম। কিন্তু সবাই ঘুমোচ্ছে কফিটা বানিয়ে দেবে কে?
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর আবার বলল রাইয়ান,
– আমি নিজেই কফিটা বানিয়ে নেই।
তারপর সে রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে চেয়ারে বসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
– ধুর, এতো বাজে কফি বানিয়েছি আমি। কফি খাওয়ার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন একটা কফির মগ রাইয়ানের সামনে এগিয়ে দেয়। রাইয়ান পেছনে তাকিয়ে দেখলো পুষ্প কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্পকে দেখে রাইয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি এখনো ঘুমান নি?
– না, আমার ঘুম আসচ্ছিলো না। আপনাকে এখানে দেখে নিচে চলে আসলাম।
তারপর পুষ্প ইশারা দিয়ে রাইয়ানকে বললো কফিটা নিতে।
রাইয়ান কফিটা নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বলল,
-সকালে আপনার হাতের পায়েস টেস্ট করার পর আমি ভাবিনি আপনি এতো ভালো কফি বানাতে পারেন।
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প মুচকি হেসে বলল,
-রান্নাটা আগে কখনো করিনি তাই পায়েসটা ভালো রান্না করতে পারিনি। তবে ক্যাফেতে অনেকদিন কাজ করায় কফি বানানোটা শিখে গিয়েছি।সত্যিই খুব ভালো হয়েছে কফিটা?
– হ্যা।
পুষ্প এবার আস্তে করে বললো,
-একটা কথা বলবো?
-জ্বি বলেন।
– আমরা কিন্তু বন্ধু হতে পারি?
– মানে?
-দেখুন, আমাদের মধ্যে কখনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয়ে ওঠবে না। আর আমিও কখনো আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসবো না। আর এখন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে  আমাদের ৩ মাস একসাথে থাকতে হবে। আর আমরা যেভাবে থাকছি সেভাবে বেশিদিন একসাথে থাকতে পারবো না। তার চেয়ে বরং আমরা না হয় বন্ধু হয়েই থাকি এই ৩ মাস।

পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান চুপচাপ বসে আছে। তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে পুষ্প মনটা খারাপ করে বললো,
– আমি বোধ হয় আপনার উত্তরটা পেয়ে গেছি। আমি আপনাকে জোর করবো না, এটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা।
বলেই পুষ্প ২ কদম এগুতেই পেছন থেকে রাইয়ান বললো,
– বন্ধু হতে পারি তবে একটা শর্ত আছে আমার।
পুষ্প অবাক হয়ে পেছনে ফিরে বললো,
– কি শর্ত?
রাইয়ান মুচকি হেসে বললো,
– আমাকে রোজ সকালে এমন কফি বানিয়ে খাওয়াতে হবে।
পুষ্প রাইয়ানের কথা শুনে হেসে বলল,
-ওকে।
রাইয়ান কাছে এসে হাতটা বাড়িয়ে বললো,
-ফেন্ডস্?
-হুম ফেন্ডস। চলুন অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘুমিয়ে পড়ুন কাল আপনাকে অফিসেও যেতে হবে।
-হ্যা চলুন।

রুমে গিয়েই রাইয়ান বললো,
– এখন তো আমরা বন্ধু হয়ে গেছি তো আজ থেকে আপনি বিছানায় শোবেন আর আমি সোফায়।
পুষ্প বললো,
– না তা কিরে হয়? রুম আপনার তাই আপনি বিছানায় শোবেন।
– নাহ! আপনি শোবেন।
– দেখুন আমি তো মাত্র ৩ মাস এ বাড়িতে থাকবো তো কেনো আর এ বিছানায় শুয়ে এর অভ্যাস বানাবো? আর এই কয়দিন সোফায় শুয়ে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনি প্লিজ না করবেন না আর।
– হুম। আচ্ছা আমরা তো বন্ধু হয়ে গেছি তাই না?
– হুম।
– তাহলে আপনি আমায় আপনি আপনি করে বলছেন কেন?
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প মুচকি হেসে বলল,
-তো আপনিও তো আমাকে আপনি আপনি করে বলছেন।
– এখন থেকে আর বলবো না। এখন থেকে আমরা তুমি করে কথা বলবো।
– ওকে। এবার ঘুমিয়ে পড়ুন।
– আবার আপনি?
– ওহ! ঘুমিয়ে পড়ো।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে