ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৫

0
1309

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৫
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

আজ কোর্টে রাইয়ান আর পুষ্পর ডিভোর্সের পেপার সাবমিট করবে উকিল। কোর্টের এক পাশে পুষ্প,পাপড়ি,আফিয়া বেগম আর অপর পাশে রাইয়ান, মিসেস মাহমুদা আর মি. রাশেদ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর জর্জ সাহেব আসার পর কেস শুরু করা হয়। রাইয়ানের উকিল জর্জ সাহেবকে সকল কাগজপত্র দেখায়। জর্জ সকল কাগজ পত্র দেখে আশ্চর্য হয়ে বলেন,
– আপনাদের বিয়ের এখনো ২০ দিনই হয় নি আর আপনারা এখনি ডিভোর্স চাচ্ছেন?
জর্জের এমন কথায় দুই পক্ষই চমকে ওঠেছে।  রাইয়ানের উকিল এগিয়ে গিয়ে জর্জ সাহেবকে বলে,
– আপনাকে তো আগেই সব বলা হয়েছে। একটা ভুল বুঝাবুঝিতে এ বিয়েটা হয়েছে। এখন সব কিছু পরিষ্কার হওয়ায় তারা দুজনেই ডিভোর্স চাচ্ছে।
-দেখুন বিয়ে আর ডিভোর্স দুইটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে চাইলেই বিয়ে করবেন আর চাইলেই ডিভোর্স দিবেন। কোর্ট ২০ দিন পরই ডিভোর্স গ্রহণ করবে না।
উকিল সাহেব আবার বলল,
– কিন্তু দম্পতিরা তো একসাথে থাকতে পারবে না।
– আপনার কথায় তো সব হবে না। জর্জ আমি আর সঠিক রায়টাও আমিই দিবো। আর আমার রায় হলো,
মি. রাইয়ান আর মিসেস পুষ্প কে আগমী ৩ মাস একসাথে থাকতে হবে। ৩ মাস একসাথে থাকার পরও যদি তারা ডিভোর্স চায় তবেই এ ডিভোর্স কোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে।

জর্জ সাহেব এমন রায় শুনে মিসেস মাহমুদার রাগ ওঠে যায়। পাপড়িও রাগের সাথে সাথে মনটাও খারাপ হয়ে যায়। অপরদিকে মি. রাশেদ আর আফিয়া বেগম খুব খুশি হয়।
কোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় পাপড়ি পুষ্পর কাছে গিয়ে বলল,
– তোর ভাগ্য ভালো যে রাইয়ানের সাথে আরো ৩ মাস থাকার সুযোগ পেয়ে গেছিস। তবে এটা ভাবিস না যে সুযোগ পেয়ে গেছিস বলে রাইয়ানও তোর হয়ে যাবে। রাইয়ান এখনো আমাকেই ভালোবাসে। আর ৩ মাস পর তোকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকেই বিয়ে করবে, তুই দেখে নিস।
বলেই হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে যায় পাপড়ি।
পাপড়ির কথা শুনে পুষ্পর মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়। আবার ভাবে, এটাই তো এখন হওয়ার কথা ছিল। রাইয়ানও পাপড়িকে ভালোবাসে। আমি শুধু শুধু  তাদের মাঝে কাটা হয়ে রয়ে গেলাম।
পেছন থেকে আফিয়া বেগম পুষ্পর কাঁধে হাতে দিয়ে বলে,
– তুই পাপড়ির কথায় মন খারাপ করছিস না। আল্লাহ তোকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিয়েছে এ বিয়েটা টিকিয়ে রাখার। সুযোগটা হাত ছাড়া করিস না। অন্যের জন্য ভেবে নিজের জীবনটা নষ্ট করিস না। তুই একবার চেষ্টা করে দেখ, আমার বিশ্বাস একদিন তোকে ও বাড়ির সবাই আপন করে নিবে।
-হুম।

কোর্ট থেকে আফিয়া বেগম আর পুষ্প বের হতেই পেছন মি. রাশেদ পুষ্পকে ডাক দিয়ে বলে,
– বউমা, তুমি  ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছো?
মি. রাশেদের কথা শুনে মিসেস মাহমুদা এসে বলে,
– ঐদিকে যাবে না তো কোথায় যাবে?
-বউমা আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যাবে।
– মানে?
– কেন, তুমি কি শুনতে পাও নি জর্জ সাহেব কি বলেছে? বউমা আর রাইয়ানকে ৩ মাস একসাথে থাকতে হবে।
-তাই বলে কি এখনি…
– হ্যা। বউমা এখনি আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যাবে। চলো বউমা।

পুষ্প একবার রাইয়ানের দিকে তাকালো। রাইয়ান কিছু বলে গাড়িতে গিয়ে ওঠে বসলো।
-কি হলো বউমা? এখনো দাঁড়িয়ে আছো যে?
পুষ্প এখন আফিয়া বেগমের দিকে তাকালে তিনি চোখের পলক ফেলে ইশারা দিয়ে যেতে বলে পুষ্প।
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পুষ্প নিজের শ্বশুরবাড়ি চলে যায়।

রাতে রাইয়ান, পুষ্প কারো চোখেই ঘুম নেই। রাইয়ান বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবছে। জীবনের কোন কিছুই এখন তার ইচ্ছেমতো হচ্ছে না। যত চাচ্ছে এসব থেকে বের হতে ততই এসব কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়চ্ছে সে।
অন্যদিকে পুষ্প সোফায় শুয়ে ভাবছে সে কিভাবে এখানে থাকবে ৩ মাস। তাকে বুঝার মতো কেউ নেই এখানে। তবে তার মায়ের কথাটাও মাথায় রেখেছে। একবার না হয় চেষ্টা করে দেখি, হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে যেতে পারে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

পরদিন খুব সকালেই ঘুম ভেঙে যায় পুষ্প। রাইয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। সে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ভাবছে কি করবে সে। রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে কিচেন স্টাফ বাসন্তীকে দেখতে পেলো। তাকে রান্না করতে সাহায্য করার জন্য রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় পুষ্প। রান্নাঘরে পা রাখার আগেই পিছন থেকে মিসেস মাহমুদার গলার আওয়াজ পেল পুষ্প।
– এই মেয়ে এই, এদিকে কোথায় যাচ্ছো?
পুষ্প আস্তে করে নিচু স্বরে জবাব দিলো
– না মানে, ওনাকে রান্নার কাজে একটু সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম।
– কোনো দরকার নেই। এই রান্নাঘরে তুমি কখনও পা রাখার সাহস করবে না। তুমি এ বাড়িতে ৩ মাসের মেহমান মাত্র। এ বাড়িতে বৌয়ের অধিকার খাটাতে আসবে না।
কথাগুলো শুনে পুষ্প আর কিছু বলতে পারলো না চুপচাপ রুমে দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে মি. রাশেদ তাকে ডাক দিলো।
– দাড়াও বৌমা। তুমি রান্নাঘরে যাবে।
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা রেগে গিয়ে বলে,
– এসব কি বলছো তুমি? এ মেয়ে আমার রান্নাঘরে কিছুতেই যাবে না।
– তুমি চুপ করো। এ বাড়িতে বৌ হিসেবে তোমার যতটুকু অধিকার ঠিক ততটুকু অধিকার বৌমারও আছে বুজেছো?
– তুমি কি ভুলে গেলে নাকি যে ও এ বাড়িতে মাত্র ৩ মাসের জন্য এসেছে। ৩ মাস পর ওকে আমার ছেলে ডিভোর্স দিয়ে এ বাড়ি থেকে বিদায় করে দিবে।
– ৩ মাস পর কি হবে তা তখন দেখা যাবে। আর পুষ্প যতদিন এ বাড়িতে থাকবে ততদিন সে এ বাড়ির বৌ। আর ওর ঐসব অধিকার আছে যা এ বাড়ির বউ হিসেবে ওর পাওয়া দরকার।
-কিন্তু…
– আর কোন কিন্তু নয়। এটা আমার বাড়ি আর এখানে কে কোথায় যেতে পারবে কি পারবে না সেটা আমিই ঠিক করব।
-কাজটা তুমি ঠিক করলে না।
মিসেস মাহমুদা মি. রাশেদকে আর কিছু বলতে না পেরে সেখান থেকে চলে যায়।

এতোক্ষণ পুষ্প নিজের শ্বশুরকে তার জন্য এভাবে লড়াতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। পুষ্পকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মি. রাশেদ জিজ্ঞেস করলো,
– কি হলো বউমা, এভাবে দাড়িয়ে আছো যে?
পুষ্প আর কিছু না বলে মি. রাশেদের কাছে এসে তাকে সালাম করলো।
– থাক বউমা।সালাম করতে হবে না। একটা ভুল বুঝাবুঝিতে বিয়েটা হলেও প্রথমদিন থেকে আমি তোমাকে বৌ হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। জানি এ বাড়িতে এ ৩ মাস থাকতে তোমার কষ্ট হবে তবু্ও আমার বিশ্বাস তুমি একদিন সবার মন জয় করে নিবে। আমার বাবার বলে যাওয়া শেষ কথাগুলো কি তুমি পালন করবে না?
পুষ্প অবাক হয়ে মি. রাশেদের দিকে তাকায়।
– ভাবছো, আমি সেটা কিভাবে জানি? ঐদিন যখন বাবা তোমাকে ঐ কথাগুলো বলেছিলো তখন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি সব শুনে নিয়ে ছিলাম। বাবার মতো আমিও চাই তুমি এসব দায়িত্ব নাও। আর ভেবো না তোমার এ বাড়িতে আপন বলতে কেউ নেই, আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।
এবার যাও রান্নাঘরে। আজ তুমি প্রথম রান্না করবে। আমি চাই সকালে মিষ্টি কিছু রান্না করো আর মিষ্টির মধ্যে পায়েস রান্না করলে খুব ভালো হয়। কারণ পায়েস তোমার শ্বাশুড়ির খুব পছন্দ। হা হা।
-জ্বি, বাবা।
বলেই রান্না ঘরে যায় পুষ্প। রান্না গিয়ে পুষ্প চিন্তায় পড়ে যায় কারণ সে তো রান্না করতেই পারে না। তার ওপর থেকে পায়েস রান্না করতে বলা হয়েছে তাকে।হঠাৎ তার নিজের ফোনটার দিকে নজর যায়। ফোনটা দেখেই সে বুদ্ধি পেয়ে যায়।

সকালে শায়নের ফোনে রাইয়ানের ঘুম ভাঙ্গে।
– হ্যালো, রাইয়ান।
– হ্যালো। কেমন আছিস?
– একদম বিনদাস। তুই?
– হুম ভালো। এতো সকালে ফোন দিলি যে?
– আরে আজ সকালের ফ্লাইটেই দেশে ফিরেছি। দেশে ফিরেই প্রথম তোকেই ফোনটা দিলাম।
– হুম।
– কিরে এমন মনমড়া কন্ঠে কথা বলছিস কেন? ভাবি কি কম ভালোবাসে নাকি তোকে?
– ইয়ার্কি করছিস না। নিজে তো আমার বিয়ের দিনই লন্ডন চলে গেলি আর এদিকে আমার জীবনে যে কতো কিছু ঘটে গেছে তা তো তুই জানিস না।
– কি বলিস? কি হয়েছে?
– ফোনে বলা সম্ভব না এতোকিছু। অফিসের পর দেখা কর।
– ওকে।
ফোনটা কেটেই রাইয়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়।

নেট থেকে ভিডিও দেখে অনেক কষ্টে পুষ্প পায়েসটা রান্না করেছে। খাবার টেবিলে সবাইকে আসতে দেখেই সে তাড়াতাড়ি পায়েসটা টেবিলে রেখে দূর সরে যায়। কারণ পায়েসটা সে রান্না করেছে জানলে হয়তো কেউ খেতে চাইবে না।
খাবার টেবিলে সবাই বসতেই কিচেন স্টাফ বাসন্তী  সবাইকে নাস্তা বেড়ে দেয়। পায়েসটা দেখে মিসেস মাহমুদা খুশি হয়ে যায়। তাই সে আগে পায়েসটাই খাওয়ার জন্য দিতে বলে ।
রান্নাঘর থেকে পুষ্প সব দেখছে। আর পায়েসটা যেন ভালো হয় মনে মনে সেটাই দোয়া করছে।
মিসেস মাহমুদা পায়েস নিয়ে মুখ নিতেই মুখটা বিবর্ণ করে ফেলে।
– থু থু। এটা কোন পায়েস? এ পায়েস কে বানিয়েছে?

মিসেস মাহমুদা মুখে এমন কথা শুনে রাইয়ান, নুরী, মি. রাশেদ সবাই অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে।
মি. রাশেদ বললো,
– কি হয়েছে পায়েসে?
– মিষ্টির বদলে পায়েসটাকে লবণ দিয়ে বিষ বানিয়ে ফেলছে।

শাশুড়ীর মুখে কথা শুনে জিহ্বা কামড় দিয়ে পুষ্প বলল,
– চিনির বদলে কি নুন দিয়ে ফেলাম আমি?

মিসেস মাহমুদা বাসন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– কে বানিয়েছে পায়েস?
স্টাফ বাসন্তী ভয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
বাসন্তী কিছু না বলায় মিসেস মাহমুদা আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে বলে,
– নিশ্চয়ই ঐ মেয়েটা রান্না করেছে তাই না। দেখো রাইয়ানের বাবা, খুব শখ করে পাঠিয়ে ছিলে না তোমার বৌমাকে রান্নাঘরে। এসব রান্না করেছে। বেশি লবণ খাইয়ে আমাকে মারার প্লেন করেছে।
-আহ! এমন কেনো বলছো? আজ বউমা প্রথম রান্না করেছে এখানে। তাই একটু ভুল হতেই পারে।  আর তুমি বউমাকে কি বলছো তুমি নিজে যখন প্রথম রান্না করেছিলে তখন মনে হয় খুব ভালো রান্না করেছিলে? পুড়া রুটি বানিয়ে খাওয়েছিলে সবাইকে ভুলে গেলে? তারপর কি তুমি ভালো রান্না করো নি?
মি. রাশেদের কথা শুনে লজ্জায় আর কিছু বলতে পারলো না মিসেস মাহমুদা। রাগে গরগর করতে খাবার টেবিলে থেকে ওঠে চলে যায়।
খাওয়া শেষে সবাই চলে গেলে মি. রাশেদ পুষ্পকে ডাক দিয়ে বলে,
– তুমি মন খারাপ করো না বউমা। একদিন রান্না খারাপ হতেই পারে, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি তোমার চেষ্টা চালিয়ে যাও।আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো। আর আমরা নাস্তা করার সময় তুমি কেনো আসনি টেবিলে নাস্তা করতে?
– না মানে, বাবা…
– এরপর থেকে যেন এমন না হয়। তুমি আমাদের সবার সাথে বসে খাবার খাবে মনে থাকবে?
– হুম।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে