#তোর_হতে_চাই
#Ariyana_Nur
#Part_08
মাথার উপর দাড়ানো বড় এক আম গাছের ছোট এক ডালে বসে আছে একটি শালিক পাখি।পাখিটি মাথা ঘুড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর একটু পর পর ঠোট নাড়িয়ে শব্দ করছে।একটু পর আরেকটা শালিক পাখি এসে ১ম পাখিটির পাশে বসতেই ১ম পাখিটি ঠোট নাড়িয়ে কিচিরমিচির শব্দ করতে লাগল।১ম পাখিটির কিচিরমিচির এর মাঝেই একটু পর পর ২য় পাখিটি ঠোট নাড়িয়ে শব্দ করতে লাগল।কিছুক্ষন এভাবে চলতে থাকার পর কিচিরমিচির বন্ধ করে একটু ডালে বসে থেকে দুটো পাখিই এক সাথে ডাল থেকে ঊড়ে চলে গেলো।
বেলকনির এক কোনে চুপটি করে দাড়িয়ে এতোক্ষন পাখিদের কার্যকলাপ দেখছিলো তোহফা আর আনিশা।পাখিদুটো ঊড়ে চলে যেতেই আনিশা বলে উঠল……
—সো কিউট না ভাবি?দেখলে বয়ফ্রেন্ড পাখিটা একটু দেড়িতে আশায় তার গার্লফ্রেন্ড পাখিটা তার উপর কি রাগটাই না ঝাড়লো।আর বয়ফ্রেন্ড পাখিটাও কি সুন্দর নিজের গার্লফ্রেন্ড এর রাগ ভাঙিয়ে ছাড়ল।সো কিউট😍
আনিশার কাথা শুনে তোহফা মুচকি হেসে
বলল……
—অন্য কিছু বাদ দিয়ে পাখিদুটোকে সোজা গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে দিলে?
—আমি একশতে এক পারসেন্ট শিউর এই পাখিগুলো গার্লফ্রেন্ড,বয়ফ্রেন্ড হবে।তাই তো এতো সুন্দর করে একজন আরেক জনকে মানালো।হায় আফসোস! হায় আফসোস!যদি আমার একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো তাহলে হয়তো সেও আমাকে এভাবে সুইট করে মানাতো।ফুটা কপাল আমার। একটা বয়ফ্রেন্ড ও কপালে জুটলো না।(আফসোসের সুরে)
তোহফা,আনিশার সাথে তাল মিলিয়ে আসসোসের সুরে বলল……
—আহারে…..।আমার ননদিনীর কত দুঃখ।চিন্তা করো না আমি আজকেই মা কে বলল, তোমায় যেন অতি তাড়াতাড়ি সিঙ্গের থেকে মিঙ্গেল করার ব্যবস্থা করে।
—দূর কি যে বল।এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে কে শুনি?মাত্র তুমি আমাদের বাড়িতে এসেছো।তোমাকে আগে দজ্জাল ননদের মত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভাজা,ভাজা করবো তার পরে এ বাড়ি থেকে যাব।তার আগে এক পাও নড়বো না আমি এ বাড়ি থেকে।
আনিশার কথা শুনে তোহফা মিটমিট করে হেসে বলল……
—হায় আল্লাহ!বলে কি এই মেয়ে?তুমি আমায় এতো অত্যাচার করার কথা ভেবে রেখেছো?তোমার এতো সব অত্যাচার সহ্য করতে পারবো তো আমি?দেখো সব অত্যাচার সহ্য করার আগেই যেন পরপারে না গমন করি।
তোহফার কথা শুনে আনিশা মৃদু চেচিয়ে রাগি গলায় বলল……
—ভাবি!কি সব কথা বল তুমি?যাও তোমার সাথে আর কোন মজাই করবো না।
আনিশাকে গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তোহফা আনিশার হাত ধরে বলল…..
—আরে ভাই রাগ করছ কেন?তুমি মজা করছিলে সাথে আমিও তো মজা করছিলাম।
আনিশা গাল ফুলিয়ে বলল……
—মরার কথা না বলে অন্য ভাবেও মজা করা যায় ভাবি।এসব মজা আমার ভালো লাগে না।
তোহফা মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে নিজের কান ধরে বেবি ফেস করে বলল……
—সরি মাই ডিয়ার ননদিনী।এসব মজা আর করবো না।
আনিশা,তোহফার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল……
—সত্যি তো?
তোহফা উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলতেই আনিশা তোহফাকে জড়িয়ে ধরে বলল…..
—তাহলে ঠিক আছে।আর কখনো তুমি এমন মজা করবে না।আর মরার কথা তো ভুলেও মুখে আনবে না।এতো বছর পর আমি আমার ভাবি রুপে বড় বোন পেয়েছি তাকে আমি এতো সহজে হাড়াতে চাই না ভাবি।
তোহফা,আনিশার কাজে মুচকি হেসে আনিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে গোপনে এক নিশ্বাস ফেলল।
তোহফা এই বাড়িত এসেছে এক মাসের বেশি হয়ে গেছে।এই বাড়ির প্রতিটা মানুষের কাছ থেকে সুন্দর ব্যবহার আর অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়ে তোহফা মুগ্ধ।বাড়ির সবাই যে তোহফাকে এতো তাড়াতাড়ি আপন করে সেটা তোহফার কল্পনার বাহিরে।তাদের কথা,কাজে মনে হয় তোহফা এই বাড়িরই মেয়ে।তোহফা নতুন করে সব পেয়ে আবার নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।তোহফা জানে কেউ চাইলেও তার পিছনের কালো অতীত ভূলতে পারে না।কেননা অতীত ভুলা কষ্টের।নিজে অতীত ভূলে থাকতে চাইলেও মানুষ খুড়ে খুড়ে তার কালো অতীত সামনে হাজির করে।তার পরেও তোহফা তার পিছনের কালো অতীতটাকে ধামাচাপা দিয়ে আগে বাড়তে চায়।এই সুন্দর পরিবেশে সবার ভালোবাসা নিয়ে সে নিজের একটা সুন্দর জীবন গড়তে চায়।তার এই কাজে সে কতটুকু সফল হবে সে নিজেও জানে না।
_________
তোহফা আগে ডিনার শেষ করে নিজের রুমে এসে বেড ঠিক করছে।কিছুক্ষন পর আদিয়াত রুমে ঢুকে তোহফাকে এক পলক দেখে কোন কথা না বলে অফিসের ব্যাগ নিয়ে সোফার এক কোনে বসে পরল।ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে তাতে চোখ বুলাতে লাগল।তোহফা নিজের হাতের কাজ শেষ করে রুম থেকে চলে যেতে নিলেই আদিয়াত ফাইলের দিকে চোখ রেখেই বলল……
—শোন!
আদিয়াতের ডাক শুনে তোহফা ঘুড়ে দাড়াতেই আদিয়াত বলল…….
—এদিকে এসো।
তোহফা গুটিগুটি পায়ে আদিয়াতের সামনে এসে দাড়াল।
আদিয়াত,তোহফার দিকে তাকিয়ে দেখে তোহফা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়েছে।তোহফা সবার সাথে নরমাল বিহেব করলেও আদিয়াতের সামনেই তার কাচুমাচু শুরু হয়ে যায়।তোহফা সব সময় আদিয়াতর সামনে থেকে পালিয়ে বেড়ায়।তোহফা নিজেও জানে না কেন সে আদিয়াতের সামনেই এমন করে?কেন সে আদিয়াতের সামনে আসলেই সব গুলিয়ে ফেলে।সে তো আদিয়াতের সাথেও নরমাল বিহেব করতে চায়।তাহলে কেন সে পারে না?এদিকে তোহফার ব্যবহার দেখে আদিয়াতও মনে মনে হতাস হয়।আদিয়াত খুজে পায় না তোহফা তার সাথে কেন এমন করে?সে তো কোন সময়ই তোহফার সাথে রুড বিহেব করে না এমনকি তার কোন কাজেও পাবন্ধী লাগায় না।তাহলে কেন তোহফা তাকে এতো এড়িয়ে চলে?তার সাথে কথা বলতে সংকোচ বোধ করে?
তোহফাকে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আদিয়াত কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল…..
—আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?নাকি রাক্ষস বা জম্বী?তুমি আমায় এতো ভয় পাও কেন?
আদিয়াতের গম্ভীর গলার কথা শুনে তোহফা তুতলিয়ে বলল…..
—ভ-ভয়!ভয় ক-কেন পা-পাবো? আমি তো একটু এমনি।
—তাতো দেখতেই পাই।বাড়ির সকলের সাথেও যে তুমি এভাবে কথা বল।
তোহফা,আদিয়াত এর কথা শুনে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রইল।আদিয়াতের প্রশ্নের উওর তোহফার কাছে নেই।মাঝে মাঝে তোহফার কাজে তোহফা নিজেই বিরক্ত হয়।সেখানে আদিয়াত কে সে কি বা জবাব দিবে।তোহফাকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আদিয়াত আবার গম্ভীর গলায় বলল…….
—কি হল কথা বলছ না কেন?
তোহফা আমতা আমতা করে বলল……
—আ-আপনি ভূল ভাবছেন?আসলে…..।
আদিয়াত, তোহফার কথার মাঝেই পিছন থেকে একটা প্যাকেট হাতে তুলে নিয়ে তোহফার দিকে প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল…..
—এটা তোমার।
তোহফা,আদিয়াতের হাতের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে থেকে আদিয়াতের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই আদিয়াত তোহফার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বলল…….
—তোমার জিনিস তুমিই খুলে দেখ।
কথাটা বলে আদিয়াত তোহফার হাতে প্যাকেট টা ধরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
বেডের এক কোনে বসে তোহফা কাপাকাপা হাতে প্যাকেট টা খুলতেই তোহফার মুখ হা হয়ে গেলো।প্যাকেটে ভিতর রয়েছে কতগুলো রঙ বেরঙ এর কাচের চুড়ি।সাথে কতগুলো চকলেট।সাথে ছোট একটা চিরকুট।তোহফা চিরকুটটা হাতে নিয়ে দেখতে পেলে সেখানে গুটিগুটি অক্ষরে লিখা,
“নানুর কাছে শুনেছি,বিয়ের পর মেয়েদের নাকি খালি হাতে থাকতে নেই।তাই তো তোমার হাত ভরিয়ে রাখতে ছোট এই উপহার।জানি স্বর্নের চুড়ি না দেওয়াতে তুমিও আনিশা ও মিতুর মত আমায় কিপটে বলবে।আসলে কি জানো? এই কাচের চুড়িগুলো যখন একে অপরের সাথে মিশে রিনঝিন শব্দ করে সেই শব্দটা আমার অনেক ভালো লাগে।তাই…..।”
চিরকুটটা পড়তেই তোহফা মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল।তোহফা হাত দিয়ে চুড়িগুলো কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে ঝটপট দু’হাতে দু’মুঠো করে কাচের চুড়ি পরে নিল।তোহফা দু’হাত নাড়িয়ে শব্দ করতে লাগল।চুড়ির ঝিনঝিন শব্দ কানে যেতেই খিলখিল করে হেসে উঠল তোহফা।
তোহফা এক ধ্যানে নিজের হাতের চুড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তোহফার চোখে-মুখে হাসি ঝিলিক উপচে পরছে।তোহফা শেষ করে এতো খুশি হয়েছিলো তা তার জানা নেই।নিজের খুশি নিজের কাছে ধরে রাখতে না পেয়ে তড়িঘড়ি করে চিরকুটটা কাবার্ডে নিজের কাপড়ের ভাজে রেখে প্যাকেট টা হাতে নিয়ে আনিশার রুমের দিকে চলে গেলো।
তোহফা রুম থেকে বের হতেই আদিয়াত মুখে হাসি নিয়ে রুমের আড়ল থেকে বের হল।আদিয়াত এতোক্ষন আড়ালে থেকে তোহফার কার্যকলান পর্যবেক্ষণ করছিলো।তোহফার যে কাচের চুড়ি পছন্দ সেটা আদিয়াত,আনিশার থেকেই জেনেছে।আনিশার সাহায্য নিয়েই আদিয়াত,তোহফার জন্য চুড়িগুলো কিনেছে।আদিয়াত ভাবতেও পারেনি সামান্য কাচের চুড়ি পেয়ে যে তোহফা এতো খুশি হবে।আদিয়াত এই ছোট্ট উপহার পেয়ে তোহফাকে এতো খুশি হতে দেখে তোহফার উপর থেকে আদিয়াত এর সকল রাগ অভিমান চলে গেলো।
_______
কফি হাউজে কোনের এক টেবিলে সামনাসামনি বসে রয়েছে তাহমিদা আর আনিশা।তাহমিদা অধিক আগ্রহ নিয়ে কফি হাউজের দরজার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।এমন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে যে, চোখের পলক ফালালেই তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা হাড়িয়ে যাবে। আনিশা বার বার ঘড়ি দেখছে আর তাহমিদার কাজে বিরক্ত হচ্ছে।আনিশার ইচ্ছে করছে তাহমিদাকে ঠাটিয়ে কয়েকটা লাগাতে।পাবলিক প্লেস দেখে আনিশা নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখছে।আনিশা অনেকক্ষন দাতে দাত চেপে বসে থাকার পর নিজের রাগটাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে মৃদু আওয়াজে রাগি গলায় বলল…..
—ঐ ছেমড়ি!আর কতক্ষন এমনে বইসা থাকুম।তোর ঐ সাগর সমুদ্র এখন তরি আসে না কেন?ঢেউ এর ঠেলায় কি রাস্তা হাড়াইয়া ফালাইছে নাকি।
তাহমিদা দরজার দিকেই চোখ রেখে বলল…..
—আমার ও তো একি কথা।ও এখনো আসছে না কেন?আমার খুব চিন্তা হচ্ছে জানিস।ও রাস্তায় কোন বিপদে পরল না তো?আমি কি একটু ফোন দিয়ে জিগ্যেস করব এতো দেড়ি হচ্ছে কেন?
তাহমিদার কথা শুনে আনিশার চেপে রাখা রাগটা বেড়ে গেলো।আনিশা দাতে দাত চেপে বলল…….
—তোর ন্যাকামি বন্ধ কর।তা না হলে আমি ভুলে যাব এটা রেস্টুরেন্ট।
তাহমিদা,আনিশার দিকে বেবি ফেস করে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই আনিশা চোখ রাঙিয়ে বলল…..
—তুই কি চাস আমি এই পাবলিক প্লেসে তোর তেরোটা বাজাই?
তাহমিদা কাদো কাদো হয়ে বলল……
—তুই আজকেও আমার সাথে এভাবে কথা বলবি?
আনিশা তেজি গলায় বলল……
—কেন আজকে কি তোর বিয়া লাগছে না তুই মইরা যাবি যে তোর লগে এমনে কথা বলতে পারুম না।এমনিতেই তুই আমায় জোর কইরা এখানে আনছোস তার উপরে এক ঘন্টা ধরে খালি মুখে বসাইয়া রাখছোস।পারলি না তো এতোক্ষনে এক হট কাপ খাওয়াইতে।
তাহমিদা চোখ বড় বড় করে আনিশার দিকে তাকিয়ে বলল……
—দুই কাপ কোল্ড কফি খাইছোস তার পরেও বলতাছোস আমি তরে কিছু খাওয়াই নাই?
আনিশা মাথা চুলকে বলল……
—আমি হট কফির কথা বলছি।কোল্ড কফি সেন খাওয়াইছোস। হট কফি তো আর খাওয়াস নাই।
—তুই এমনিতেই আজকে হট হয়ে আছিস।দু’কাপ কোল্ড কফি খাওয়ানের পরেও তোর সামনে আমার বইসা থাকতে কষ্ট হইতাছে।হট কফি খাওয়াইলে তো আমি তো ভালো কথা এই কফিসপ খুজে পাওয়া যাইবো কিনা সন্দেহ?
আনিশা কটমট করে তাহমিদার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই তাহমিদা দরজার দিকে তাকিয়ে মৃদু চেচিয়ে বলল……
—আনু!এ এসে পরেছে,ও এসে পরেছে।বাকি কথা পরে হবে আগে দেখ তো আমার সব ঠিক আছে কিনা।
তাহমিদা নিজের ড্রেস, চুল ঠিক করতে উঠে পরে লাগে কথাগুলো বলল।তাহমিদার কাজে আনিশা নিজের রাগ ভুলে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।
#চলবে,
(ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)