#তোর_হতে_চাই
#Ariyana_Nur
#Part_06
মাথার উপরের ফ্যানটা আপন মনে ঘুরেই চলেছে।ফ্যানের বাতাসের তালে তালে জানালার পর্দাগুলো নড়ছে।রুমের মধ্যে বিরাজ করছে পিনপতন নিরবতা।কারো মুখেই কোন কথা নেই।তোহফার কাটা হাতে মলম লাগিয়ে দিয়ে হাতের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রয়েছে আদিয়াত।তোহফা প্রথমে স্টেচু হয়ে থাকলেও এখন আদিয়াতের কাজে নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে তার।আদিয়াত কোন কথা জিগ্যেস না করাতে তোহফাও আদিয়াতকে মুখফুটে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।এখান থেকে যে উঠে চলে যাবে তার ও উপায় নেই।কেননা আদিয়াত, তোহফার অপর হাত ধরে বসে রয়েছে।তোহফা,আদিয়াতের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও সক্ষম হয়নি।তাই কোন উপায় না পেয়ে আদিয়াতের সামনে কাচুমাচু করে বসে রয়েছে সে।
দরজা নক হওয়ার শব্দ পেয়ে আদিয়াত, তোহফার হাত ছেড়ে দিল।হাত ছাড়া পেতেই তোহফা তড়িঘড়ি উঠে দাড়ালো।বড় করে নিশ্বাস নিয়ে মনে মনে দরজার বাহিরের মানুষটাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ঘুরে দাড়িয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে দরজার সামনে মিতু দাড়িয়ে আছে।
মিতু দরজার সামনে থেকেই আওয়াজ দিল…….
—ভাইজান!
মিতুর গলার আওয়াজ পেয়ে আদিয়াত গলার আওয়াজ কিছুটা উচু করে বলল……
—ভিতরে আয় মিতু।
মিতু হাতে করে এক মগ কফি নিয়ে ভিতরে ঢুকে আদিয়াতরের দিকে কফির মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—ভাইজান আপনার কফি।
আদিয়াত,মিতুর হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে মৃদু হেসে বলল…..
—ধন্যবাদ।এটারই এখন দরকার ছিল।
আদিয়াতের কাজে মিতুর মুখে হাসি ফুটে উঠল।মিতু খুশি হয়ে বলল…..
—ভাইজান খেয়ে দেখেন কফি ঠিক আছে কিনা?খালাম্মা যেভাবে আপনার জন্য কফি বানায় আমি কিন্তু হুবুহু সেই ভাবে বানিয়েছি।
আদিয়াত কফির মগে চুমুক দিয়ে মুচকি হেসে বলল….
—হুম সব ঠিক আছে।মা এছেসে?
মিতুঃনা খালাম্মা তো এখনও আসে নাই।ফোন করেছিলো।বলেছে, ফিরতে কিছুটা দেড়ি হবে।চিন্তা করতে না করেছে।বলেছে,বড় বাবা তার সাথে আছে।দুজন এক সাথেই ফিরবে।সবাইকে ডিনার করে নিতে বলেছে।
আদিয়াতঃআনিশা কই?
মিতুঃআপার মাথা ধরেছে।মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।
আদিয়াতঃখাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়েছে নাকি না খেয়ে?
মিতুঃনা খেয়েই মেডিসিন নিতে চেয়েছিলো।আপনার কথা বলে ব্যাকমেইল করাতে খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়েছে।
আদিয়াত বিরবির করে বলল…..
—বাদরটাকে সোজা ভাবে কোন কাজই করানো যায় না।
মিতু,আদিয়াতের কথা শুনতে না পেয়ে বলল……
—ভাইজান কিছু বললেন?
আদিয়াতঃরাত তো আর কম হয়নি।তুই যা খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে থাক।
মিতুঃঘুমিয়ে থাকবো কেন ভাইজান?আপনারা খাবেন না?
আদিয়াতঃআমাদের খেতে একটু দেড়ি হবে।শুধু শুধু তুই কেন আমাদের জন্য বসে থাকবি।যা খেয়ে ঘুমিয়ে থাক।আমার চিন্তা করতে হবে না।আমি নিজে নিয়ে খেতে পারব।তাছাড়া তোর ভাবি তো আছেই।
মিতুঃকইলেই হইল নাকি?আমি আপনাগো না খাইতে দিয়া ঘুমাইয়া পরুম।আপনারা আগে খাইবেন তার পরে আমি ঘুমামু।তার আগে না।
আদিয়াত,মিতুর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাতেই মিতু শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল……
—সরি ভাইজান!আসলে হয়েছে কি?এভাবে কথা বলে অভ্যাস হয়ে গেছে তো তাই মুখ ফসকে….।মিতু কথা ঘুরাতে বলল…..
—আপনাদের খাবার কি রুমে দিয়ে যাব ভাইজান?
আদিয়াত বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে বলল…..
—ঠিক আছে।আমাদের খাবার রুমে দিয়ে নিজে খেয়ে তারপরে ঘুমাবি।
মিতু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে রুম থেকে চলে গেলো।
তোহফা সেই এক জায়গাই মাথা নিচু করে ঠাই দাড়িয়ে রয়েছে।আদিয়াত,তোহফাকে সহজ করার জন্য কিছুটা মশকরা করে বলল……
—এই তোমার মুখে কোন সমস্যা নেই তো?কথা বললে কি তোমার মুখ ব্যাথা করে?
আদিয়াতের কথা শুনে তোহফা ফট করে আদিয়াতের দিকে তাকাতেই দেখে আদিয়াত ওর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।তোহফা,আদিয়াতের দিকে তাকাতেই আদিয়াত বলল……
—না মানে যেভাবে মেপে মেপে তুমি কথা বল তাই আরকি বলছিলাম।তুমি কি সব সময়ই কম কথা বল?
আদিয়াতের কথা শুনে তোহফা তাচ্ছিল্য হাসল। মনে মনে বলল…..
—আমি আর কম কথা?এই কথাও শুনতে হল আমায়?আপনি তো আর জানেন না আমি হলাম বকবক রানি।আমার কথা শুনলে আপনি আমার কথার অত্যাচারে কানে তুলা লাগাতেন।কিন্তু পরিস্থিতি আমায় এমন করেছে যে,না নিজের কথা বলতে ভালো লাগে আর না কারো কথা শুনতে।ভালো,খারাপ সব কথাই আমার কাছে এখন বিষের মত লাগে।কথাগুলো মনে মনে বলে তোহফা গোপনে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।
_______
ঘড়ির কাটায় ১১:৪২ ঘরে।আদিয়াত বেডে উপর নিজের কাগজ পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে কাজ করছে।তোহফা সোফার এক কোনে বসে ঘুমে ঝিমুচ্ছে।আদিয়াত কাজের ফাকে ফাকে তোহফাকে সোফায় বসে ঘুমে ঝিমুতে দেখে মিটমিট করে হাসছে।আদিয়াত আজ পণ করেছে তোহফা নিজের থেকে কিছু না বললে সেও এখান থেকে উঠবে না।তোহফা ঘুমের চাপে কিছুতেই চোখ খুলে রাখতে পারছে না।বার বার আপনা আপনিই চোখ লেগে আসছে।তোহফা উপায় না পেয়ে সোফার উপর পা উঠিয়ে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পরল।সাথে সাথেই কারো গম্ভীর গলার আওয়াজে কানে ভেসে এল……
—না খেয়ে ঘুমালে একেবারে রুমের বাইরে রেখে আসবো।
তোহফা ঘুম পাগলী মেয়ে।এমনিতেই ঘুমাতে না পেরে তার মেজাজ বিগড়ে রয়েছে।তার উপর আদিয়াতের কথা শুনে তার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।তোহফা সব হুশ-জ্ঞান হাড়িয়ে ঘুম ঘুম চোখে ঝাঝালো গলায় বলল……
—ও মিঃকথায় কথায় এমন থ্রেড দেন কেন?রুমটা কি একা আপনার নাকি যে আপনার কথা মত কিছু না হলেই সব রুমের বাহিরে চলে যাবে?
তোহফার ব্যাবহারে আদিয়াত অবাক হয়ে বলল……
—রাগ করছ কেন?আমি তো শুধু না খেয়ে ঘুমাতে নিষেধ করেছি।
—আহা বউ এর জন্য কত দরদ।রাত বাজে ১২টা এখন আসছে সে দরদ দেখিয়ে বউ কে খাওয়াতে।এতোই যখন বউ এর জন্য দরদ তাহলে আরো আগে আপনার দোকানপাট নিয়ে সরে আমাকে ঘুমাতে যায়গা দিলেন না কেন?
—আমি তো কাজ করছিলাম।তাছাড়া আমি তোমাকে কয়েক বার বলেছি খেয়ে নিতে।তুমিই বলেছ পরে খাবে।এখানে আমার দোষটা কোথায়?
—সব দোষ আপনার।আপনি কেন আরো আগে আপনার দোকানপাট সরিয়ে আমায় ঘুমানোর জায়গা দিন নি।অর্ধেক না পুরো একটা ঘুমের ঔষধ খেয়েছি।ঘুমের ঔষধ খেয়েও যে আমার মত ঘুম পাগলী মেয়ে এখন জেগে আছে সেটাই আপনার ভাগ্য।তোহফা আপন মনে চেচামেচি করে আদিয়াতকে নানান কথা শুনাতে লাগল।
তোহফার ঘুমের ঔষধ খাওয়ার কথা শুনে আদিয়াতের মনে খচখচ করতে লাগল।আদিয়াত মনে মনে নানান কথা ভাবতে লাগল।নানান ভাবনার মাঝে তার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক করতে লাগল……
—ও তো সেই কখন থেকেই আমার সামনে বসে রয়েছে ঘুমের ঔষধ খেল কখন?তাছাড়া ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাবে ভালো কথা এমন উল্টাপাল্টা বিহেব করছে কেন?সরাদিন তো ও ঠিক থাকে রাত হলেই ওর ব্যবহারে কেমন পরিবর্তন দেখা দেয়।কিন্তু কেন?
_______
সকাল সকাল ফোনের অত্যাচারে ঘুম ছুটে গেলো আনিশার।আনিশা ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে কানের সামনে ধরে কিছু বলার আগেই ফোনের অপর পাশ থেকে কারো ঝাঝালো গলার আওয়াজে ভেসে এল……
—শয়তান্নী,বান্দরন্নী কই আছোস তুই?কোন সাহসে তুই আমার নাম্বার ব্লক করছোস?আয় আজকে তুই দেখিস তোরে আমি কি করি।হারামী কথা লাগছে কথা বলবি নাম্বার ব্লক করছোস কেন?তোর নাম্বার ব্লক করা আমি ছুটাইতাছি দাড়া তুই।তুই জানোস তোর খবর নেওয়ার জন্য সাত সকালে উইঠা আমি সিম টোকাইতে গেছি?
ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির কথা শুনেই আনিশার ঘুম ছুটে গেলো।কথা শুনে আনিশার বুঝতে বাকি রইল না ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটা কে।আনিশা, তাহমিদার কথা শুনে রাগী গলায় বলল…….
—ঐ মহিলা তুই আমায় ফোন দিছোস ক্যান?লজ্জা করে না নাম্বার ব্লক করার পরেও আমায় কল দিতে?সাত সকালে আমার জন্য সিম টোকাইতে তোরে কে কইছে শুনি?থাক তুই তোল সাগর,সমুদ্র গো নিয়া আমারে দিয়া তোর কি কাম?
—তুই আয় তারপর বলতাছি।
—আমি কোথাও যামু না।
—তুই হোস্টেলে আসবি না?
—না আমি যামু না।
—সত্যি আসবি না?
আনিশা ঝাঝালো গলায় বলল……
—কইলাম তো যামু না।বয়ড়া হইছোস?বার বার এক কথা জিগাস কেন?
আনিশার কথায় তাহমিদার বুঝতে বাকি রইল না তার পাগলী বেষ্টুটা একটু বেশিই তার উপর অভিমান করেছে।তাহমিদা শুর টেনে আদুরে গলায় বলল……
—তুই না আমার জানটুস বেস্টু।আমার ময়না পাখি।প্লিজ চলে আয় না।তোরে ছাড়া ভালো লাগছে না।
আনিশা ভেঙচি কেটে বলল……
—সাত সকালে আমার ফোন দিয়া তোমার ঐ রঙের কথা না শুনাইয়া তোমার জামাইরে শুনাও।আমি এখন ঘুমামু যদি দ্বিতীয় বার আমারে ফোন করছ তাইলে দেখবি তোরে কি করি।তোর একদিন আর আমার যেই কয়দিন লাগে লাগব।
কথা শেষ করে আনিশা রাগে গজগজ করতে করতে ফোন কেটে দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে বেড থেকে নেমে গটগট করে ফ্রেস হতে চলে গেল।
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)