#তোর_হতে_চাই
#Ariyana_Nur
#Part_05
—আপনি!আপনি আবার আমায় কথা শুনাচ্ছেন?
সামনের লোকটা আর কেউ না ফাহাদ।ফাহাদ,আনিশার কথায় কান না দিয়ে তাহমিদার পাশে চেয়ার টেনে বসে বলল……
—ভাবি এটা আপনার বেস্টফ্রেন্ড?যে নাকি সামান্য খাবার খাইয়ে আপনাকে হাজারটা কথা শুনাচ্ছে।
ফাহাদ এর কথায় তাহমিদার হিচকি উঠে গেল।ফাহাদ,তাহমিদার সামনে থেকে পানির বোতলটা হাতে নিয়ে বোতলের ঢাকনা খুলে তাহমিদার দিকে বাড়িয়ে দিতেই তাহমিদা,ফাহাদ এর হাত থেকে পানির বোতল ছো মেরে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করল।
ফাহাদঃআস্তে খান ভাবি।তা না হলে তালুতে উঠে যাবে।আর হ্যা হোস্টেলে ফিরে মনে করে একটা হজমের ঔষধ খেয়ে নিবেন কেমন।তা না হলে পেট ব্যাথা করবে।কেউ একজন যে ভাবে শকুনী দৃষ্টিতে আপনার খাবারের দিকে তাকিয়ে ছিল।
শেষের কথাটা ফাহাদ আড়চোখে আনিশার দিকে তাকিয়ে বলল।আনিশা ফাহাদ এর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল……
—তাহু এই সেই লোক যে কালকে আমায় মার্ডার করতে চেয়েছে?
ফাহাদঃও হ্যালো!আমি আপনাকে কোন মার্ডার টার্ডার করতে যাই নি ওকে।আপনি নিজেই আমার বাইকের সামনে মরতে এসেছিনেল।
আনিশাঃকানার মত বাইক চালিয়ে মানুষ মারার চেষ্টা করে এখন সাধু সাজা হচ্ছে।আমার যদি মরার ইচ্ছা থাকতো তাহলে ভালো কোন গাড়ির সামনে পরে মরতে যেতাম।আপনার ঐ খাটারা বাইকের সামনে না।
ফাহাদঃভাবি একে বলুন আমার বাইক নিয়ে যেন কিছু না বলে।
আনিশাঃখাটারা বাইক কে খাটারা বলাতে লাগল বুঝি?একশ বার বলল খাটারা বাইক হাজার বার বলল। কি করবেন আপনি?
ফাহাদ হতাস হয়ে বলল……
—কি আর করব?কিছুই করার নেই।পাগলের সাথে লাগতে গিয়ে কি নিজেকে পাগল বানাবো নাকি।
ফাহাদ এর কথা শুনে তাহমিদা ফিক করে হেসে দিল।আনিশা তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল……
—তাহু আমি তোর দাত ভাঙুম।তোর সামনে তোর জানটুস রে বাইরের মানুষ কথা শুনাইতাছে আর তুই দাত কেলাইতাছোস😤
ফাহাদঃও হ্যালো মিসঃ!বাইরের মানুষ কাকে বলছেন?আপনি হতে পারেন বাইরের মানুষ আমি না।
আনিশাঃকি!আমি বাইরের মানুষ?তাহু তুই কিছু বলছিস না কেন?একটা বাইরের মানুষ এসে আমাকে কথা শুনাচ্ছে আর তুই চুপ করে বসে আছিস?একে তো আমি ক…..।
তাহমিদা আশেপাশে তাকিয়ে আনিশাকে থামিয়ে দিয়ে বলল…..
—আনু মাথা ঠান্ডা কর।আশেপাশে সবাই দেখছে।তুই চুপ করে বস আমি তোকে সব বলছি।
আনিশা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেন্টিনের অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আনিশা,তাহমিদার দিকে রাগি চোখে তাকাতেই তাহমিদা,আনিশার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে বলল……
—সেদিন বলেছিলাম না সাগর এর কথা।(তাহমিদার উডবি)উনি সাগরের ফ্রেন্ড।
আনিশার এতোক্ষনে মাথা কাজ করল লোকটা তাহমিদাকে প্রথম থেকেই ভাবি ভাবি বলে সম্বধোন করেছে।আর সে পাগল এর মত সেদিকে কান না দিয়ে বসে আছে।
তাহমিদা একটু চুপ থেকে ফাহাদ এর দিকে তাকিয়ে বলল…..
—ভাইয়া এর কথায় কিছু মনে করবেন না।ও একটু পাগলাটে টাইপের।
ফাহাদ মুচকি হেসে বলল……
—কি যে বলেন না ভাবি!এসব পাগলদের কথায় কিছু মনে করে নিজের মুড খারাপ করার কোন মানে হয় বলুন।
আনিশা,ফাহাদ এর দিকে চোখ রাঙিয়ে দাতে দাত চেপে বলল……
—তাহু থাক তুই তোর সাগর,সমুদ্রর ফ্রেন্ডরে নিয়া।আমি গেলাম।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে আনিশা রাগ করে সেখান থেকে চলে গেল।পিছন থেকে তাহমিদা বার কয়েক বার ডেকে আনিশার উওর না পেয়ে হতাস হয়ে বসে রইল।
______
ফাকা রেস্টুরেন্টে কোনের এক টেবিলে পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে আদিয়াত আর তার বন্ধু রাজিব।বিয়ের দিন রাত থেকে তোহফা সকল ব্যবহারের কথা আদিয়াত,রাজিব এর সাথে সেয়ার করার পর থেকে রাজিব গভীর চিন্তায় ডুবে রয়েছে।রাজিব কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আদিয়াত বলল…..
—কিরে কথা বলছিস না কেন?এমন স্টেচু হয়ে বসে রয়েছিস যে?
রাজিব মুখ ভরে নিশ্বাস ছেড়ে টেবিলের উপর থেকে পানি ভর্তি গ্লাস উঠিয়ে গলা ভিজিয়ে নিল।বড় করে দম নিয়ে আদিয়াতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারল…….
—ভাই আল্লাহ তোরে এতো ধর্য্য কিভাবে দিয়েছে বলত?আমার বউ যদি এমন করত র্নিঘাত আমি দু’তিন টা চর, থাপ্পড় লাগাতাম।কিভাবে পারিস তুই এতোটা নরম হতে?
আদিয়াত,রাজিব এর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল……
—শালা! আমি এসেছি ওর থেকে এডভাইজ নিতে আর ও উল্টোপাল্টা কথা শুরু করে দিয়ে আমায় বিভ্রান্ত করছে।
—শালা!আমি তোর শালা হই কিভাবে?তোর বউ যদি আমার বোনও হয় তারপরেও তো আমি তোর শালা হই না?
বড়জোর শমন্দি হতে পাবি।
—শালা,শমন্দি পরে কর।আগে তোর মেন্টাল বোনরে ঠিক করার আইডিয়া দে।
রাজির আপন মনে কিছুক্ষন হেসে সিরিয়াস হয়ে বলল……
—ভাবির কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে সে কোন ট্রামায় আছে।তোর প্রতি ভাবির যেই ভয়টা কাজ করছে প্রথমে তোর সেই ভয়টা দূর করতে হবে।ভাবিকে বুঝতে শিখ।তার সাথে সহজ ব্যবহার করে তার সাথে বন্ধুত্ব কর।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।সব রোগের চিকিৎসা ঔষধ হয় না।কিছু রোগের চিকিৎসা বন্ধুসূলভ আচারন দিয়ে করতে হয়।
রাজিব এর কথা শুনে আদিয়াত কিছু না বলে গোপনে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।
______
আদিয়াত সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।তোহফা গুটিগুটি পায়ে আদিয়াত এর সামনে এসে দাড়ালো।আদিয়াত,তোহফার উপস্থিতি বুঝতে পেরেও চোখ বন্ধ করে রইল।তোহফা কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে মিনমিনে গলায় বলল…….
—আমায় ডেকেছেন?
আদিয়াত চোখ বন্ধ রেখে বলল……
—হুম।মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে।একটু মলম লাগিয়ে দেও তো।
তোহফা ভীত কন্ঠে বলল……
—আমি!
আদিয়াত ফট করে চোখ খুলে তোহফার দিকে তাকিয়ে বলল……
—তুমি ছাড়া এখানে কি অন্য কেউ আছে?
তোহফা মাথা নাড়িয়ে না বলল।আদিয়াত কিছু না বলে আবার চোখ বন্ধ করে বসে রইল।কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর আদিয়াত বলল…..
—দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমায় দেখা শেষ হলে এবার একটু মাথায় মলম লাগিয়ে দেও।ব্যাথায় মাথা ফেটে যাচ্ছে।আমি মেডিসিন নিতে পারি না।মা বাসায় নেই।থাকলে মা কেই বলতাম।
তোহফা এতোক্ষন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে কি করবে তাই ভাবছিলো।আদিয়াতের কথা শুনে হকচকিয়ে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে দেখে আদিয়াত আগের মত চোখ খিচে বন্ধ করে বসে রয়েছে।তোহফা কাপাকাপা গলায় বলল……
—মলম?
আদিয়াত হাত দিয়ে ইশারা করে মলম দেখাতেই তোহফা গুটিগুটি পায়ে আদিয়াত এর পাশ থেকে মলম নিয়ে কাপাকাপা হাতে আদিয়াত এর কপালে মলম লাগিয়ে দিয়ে মাসাজ করতে লাগল।
কিছুক্ষন পর আদিয়াত বলল……
—দুপুরে খেয়েছ?
তোহফা ছোট করে উওর দিল……
—হুম।
—সন্ধ্যায় পর নাস্তা করেছো?
তোহফা এবারো ছোট করে উওর দিল…..
—হুম।
—তাহলে এমন আস্তে আস্তে মাসাজ করছো কেন?শরীরে শক্তি নেই?একটু জোর খাটিয়ে মাসাজ করো না ভাই।মনে হচ্ছে কেউ কপালে শুড়শুড়ি দিচ্ছে।
আদিয়াতের কথা শুনে তোহফার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল……
—কাটা হাতে মলম লাগাতে জ্বলে যাচ্ছে।তা নিয়ে এর বেশি জোরে আর দিতে পারবো না আমি।
কথাটা শোনার সাথে সাথে আদিয়াত ফট করে চোখ খুলে তোহফার হাত দুটো ধরে ফেলল।আদিয়াতের কাজে তোহফা হকচকিয়ে ভীত চোখে আদিয়াতের দিকে তাকালো।নিজের কাজে তোহফা নিজেকে গালমন্দ করতে লাগল।তোহফার বাম হাতে আঙুল গুলোতে কয়েকটা কাটা দাগ।দেখে মনে হচ্ছে ব্লেড জাতীয় জিনিস দিয়ে কাটা।মলম লাগাতে কাটা জায়গা গুলো কেমন লাল হয়ে আছে।এছাড়াও হাতের তালুতে বড় করে এটটা কাটা দাগ দেখা যাচ্ছে।যদিও ঘা শুকিয়ে গেছে।তারপরেও দাগ কিছুটা রয়ে গেছে। আদিয়াত কোন কথা না বলে তোহফাকে টেনে ওয়াসরুমে নিয়ে গিয়ে টেপ ছেড়ে তোহফার হাতা ভালো করে পানি দিয়ে ধূয়ে দিল।আদিয়াতের কাজে তোহফা কথা বলার ভাষা হাড়িয়ে ফেলেছে।আদিয়াত যে দিকে নিচ্ছে তোহফা চুপচাপ সে দিকে যাচ্ছে।তোহফার মাথায় এখন ঘুরছে অন্য চিন্তা।আদিয়াত যদি জিগ্যেস করে এগুলো কিসের কাটা দাগ তখন কি বলবে সে?
#চলবে
(ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ধন্যবাদ)