#তোর_হতে_চাই
#Ariyana_Nur
#Part_03
মেয়েটির কথা শুনে আদিয়াত কিছু না বলে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।আদিয়াত কে হাসতে দেখে মেয়েটি আদিয়াতের বাহুতে চিমটি কেটে রাগি গলায় বলল……
—একদম হাসবে না।আমি কিন্তু প্রচুর রেগে আছি।কাল কে রাগ করে আমি হোস্টেলে চলে গেলাম তুমি আমায় আটকালে না কেন?এমন কি এক বারের জন্য ফোন করে আমার খবরও নিলে না।লোকে ঠিকই বলে বিয়ের পর ভাইরা, বোনদের ভুলে যায়।আগে তো খারাপ ছিলে এখন বিয়ে করতে না করতে আরো বেশি জঘন্য খারাপ হয়ে গেছো।এক দিনেই আমার মত মাসুম আপন মায়ের পেটে খালাতো ছোট বোনটা কে পর করে দিলে?
(মেয়েটি আর কেউ নয় আদিয়াতের ছোট বোন আনিশা।অনিশা কালকে যে আদিয়াতের সাথে রাগ করে হোস্টেলে চলে গিয়েছিলো সে খবর আদিয়াত রাতের বেলা পায়।আদিয়াত খবর পেয়ে সাথে সাথে আনিশার নাম্বারে কল করে।আনিশার নাম্বার বন্ধ থাকায় তার সাথে আর কথা বলা হয়নি।অতো রাতে বোনের মান ভাঙাতে হোস্টেলে গিয়ে লাভ হবে না ভেবে আদিয়াদ, তাহমিদার কাছ থেকে আনিশার সকল খবর নেয়।)
আদিয়াত মুচকি হেসে বোন এর নাক টেনে দিয়ে বলল…….
—আসছে আমার দাদি আম্মা।সব সময় শুধু মুরুব্বিদের মত কথা।আমি জানি আমি খারাপ।নতুন করে আর বলতে হবে না।তুই তো অনেক ভালো।তাহলে বাড়িতে আসতে না আসতেই আমায় কুকুর এর মত কামড় দিলি কেন?
আদিয়াতের কথা শুনে আনিশা চোখ রাঙিয়ে চেচিয়ে বলল……
—মা কই তুমি!তোমার এই বদমাইশ পোলারে কিছু কও।ও আমারে কুত্তা কইতাছে।
মিতু,আনিশার পাশে দাড়ানো ছিল।আনিশার কথা শুনে ফোড়ন কেটে বলল…..
—আফা আপনে ভুল কইলেন ভাইজান আপনারে কুকুর কইছে কুত্তা কয় নাই।
আদিয়াত,মিতুর ধমক দিয়ে বলল….
—পড়া-লিখা শিখেছিস কি করতে?তোদের না বলেছি আমার সামনে ভাষা ঠিক করে কথা বলবি।এটা তো বাদর কথা শুনাতে পারি না।তার সাথে সাথে কেন নিজের নাম জড়াচ্ছিস তুই?আরেক দিন যেন এসব ভাষায় কথা বলতে না শুনি।
আদিয়াতের কথা শুনে আনিশা চেচিয়ে বলল…..
—কি বললা আমি বাদর?তুমি বাদর তোমার বউ বা…..।
কথাটা বলতে গিয়ে আনিশা থেমে গেলো। আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল……
—ভাবি কই ভাইয়া?দেখছি না যে।শরীর ঠিক আছে তো তার?কাল তো কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।কি খবর তার?
আদিয়াত,আনিশার কথা শুনে কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।আনিশা, আদিয়াতকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবার বলল……
—কি হল কথা বলছো না কেন?বললে না ভাবি কোথায়?
আদিয়াত সেখান থেকে চলে যেতে নিয়ে বলল…….
—আমায় জিগ্যেস করছিস কেন।আমি কি জানি।তুই খুজে দেখ তোর ভাবি কোথায়।
আনিশা,আদিয়াতের পথ আটকে আদিয়াতের দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…….
—কি লুকাচ্ছিস তুই?ভাবিকে মেরে টেরে আবার গুম করে দিসনি তো?
আদিয়াত আনিশার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।
তোহফা সেই আগের জায়গায় জড়সড় হয়ে দাড়িয়েই রয়েছে।একটু আগে নিজের চিন্তা ভাবনার কথা মনে করে নিজের কাছে নিজেকে এখন ছোট মনে হচ্ছে।ভাই-বোনের মিষ্টি সম্পর্ককে সে কি থেকে কি ভেবে নিয়েছিলো।ভাবতেই মুখটা ছোট হয়ে গেলো।
_______
রাতের বেলা ড্রাইনিং টেবিলে বসে সবাই এক সাথে খাবার খাচ্ছে।তোহফা খাচ্ছে কম খাবার গুলো হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছে বেশি।শশুরের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খেতে নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে তার।আইরিন বেগম তোহফার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল……
—তোহফা তুমি খাচ্ছ না কেন?প্লেটের কিছুই তো ফুরোয় নি।কোন সমস্যা হচ্ছে তোমার?
তোহফা মাথা নাড়িয়ে না করে আস্তে করে বলল…..
—খাচ্ছি তো।
আসলাম সাহেব(আদিয়াতের বাবা)ঃবউ মা একদম লজ্জা পাবে না।যা লাগবে নিয়ে নিবে।আমাদের কে নিজের লোক মনে কর দেখবে সহজেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
মিতু মুখের খাবার তাড়াতাড়ি করে গিলে বলল……
—ভাবি আপনার যা খেতে ইচ্ছে হবে,যা কিছু লাগবে শুধু আমায় বলবেন।আমি ফটাফট রান্না করে দিব।
আসলাম সাহেব(আদিয়াতের বাবা)খাবার মুখে দিতে নিয়ে হাত নামিয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল……
—আমি কি কানে আজ ভূল শুনছি?
আসলাম সাহেবের কথা শুনে মিতু কিছু না বলে মাথা নিচু করে খাবারের দিকে মনযোগ দিল।আদিয়াত,মিতুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল…….
—ভূল না বাবা ঠিক শুনেছ।
আনিশা মুখের মধ্যে খাবার নিয়ে অস্পষ্ট ভাবে বলল……
—বাবা ভাইয়া না আজ মিতুরে বকছে।তাই তো ভয়ে অসহায় মাইয়াডার মুখ দিয়া এমন কথা বাইর হইতাছে।
আইরিন বেগম মেয়েকে ধমক দিয়ে বলল…….
—হয় মুখের খাবার শেষ করে কথা বল নয়তো কথা শেষ করে তারপরে খাবার খা।
আনিশা পানি দিয়ে মুখের খাবার গিলে বড় করে একটা ঢেকুর দিয়ে বলল……
—খিলতে গেলে তো কথা মিস কইরা ফালাইতাম।তাই…..।আচ্ছা মিতু মিস রে খাটি বাংলায় কি কয়রে?(মিতুর দিকে তাকিয়ে)
মিতু এক পলক আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে আনিশাকে ফিসফিস করে বলল…..
—ভাইজান এর এক ধমক খাইছি।কেন আবার বকা খাওয়ানের ব্যবস্থা করতাছো কও তো?
আনিশা দাত কেলিয়ে হেসে বলল…….
—একা বকা খেতে মজা লাগে না মিলেমিশে খেতে ভালো লাগে।চিন্তা করিস না কিছুদিনের মধ্যেই ভাবিকেও আমাদের দলে নাম লিখাবো।আর তারে টিউশন দিবি তুই।আমি হোস্টেল থেকে ফিরে এসে পরিক্ষা নিব।
মিতুর মুখে খাবার ছিলো।আনিশার কথা শুনে তার কাশি উঠে গেল।আনিশা তাড়াতাড়ি সামনে থেকে পানির গ্লাস মিতুর দিকে বাড়িয়ে দিতেই মিতু গটগট করে পানি খেয়ে নিল।মিতু কিছুটা সাভাবিক হতেই আদিয়াত ধমক দিয়ে বলল……
—খাবার খাওয়ার সময় কি এমন কথা তোদের?একটু চুপ করে সান্তিতে কি খেতে পারিস না?মা এদের কিছু শিখাও না কেন?
আইরিন বেগমঃদু’টোই পাজি। তোকে ছাড়া কাউকে ভয় পায় না।তুই নিজেই এদের যেভাবে পারিস শিখিয়ে দিস।আমি এদের কিছু শিখাতে পারবো না।
আসলা সাহেবঃকি শুরু করেছো তোমরা?মেয়েটা যে কিছুই খাচ্ছে না সেদিকে কি কারো খবর আছে?
আইরিন বেগম এর খাওয়া শেষ হয়ে গেছে।সে নিজের প্লেটে হাত ধুয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে তোহফার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে তোহফার খাবারের প্লেটটা হাতে তুলে নিয়ে বলল……
—অনেক খেয়েছো আর খেতে হবে না।
শাশুড়ির এমন কাজে তোহফা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে রইল।আইরিন বেগম তোহফার মুখের সামনে খাবার ধরতেই তোহফা অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকাল।আইরিন বেগম মুচকি হেসে বলল……
—আমাকে পরে দেখতে পাবে।এখন তাড়াতাড়ি হা কর।আমি কিন্তু অতো ভালো না বুঝলে।এখন না খেলে পরে কিন্তু আর খেতে দিব না।না খাইয়ে রাখবো।
তোহফা,আইরিন বেগম এর কথা শুনে না চাইতেও অটোমেটিক তোহফার মুখটা হা হয়ে গেল।আইরিন বেগম তোহফার মুখে খাবার দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল……
—হাত ধুয়ে নাও।বাকিটা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
আইরিন বেগম তোহফাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর তোহফা মাথা নিচু করে তৃপ্তি সহকারে খাবার খাচ্ছে।কতগুলো বছর পর কেউ যে আদর করে তার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ভাবতেই তার চোখের কোনে জল চিকচিক করতে লাগল
আনিশা,তোহফাকে সহজ করার জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে কাদো কাদো হয়ে বলল……
—দেখ মিতু দেখ মা নতুন মেয়ে পেয়ে আমাদের ভুলে গেছে।আমাদের একটুও খাইয়ে দিচ্ছে না।
মিতু,আনিশার সাথে তাল মিলিয়ে বলল…..
—হুম।তা তো দেখতেই পাচ্ছি।আমরা এখন পর হয়ে গেছি আপু।
আইরিন বেগমঃআহা চুপচাপ খা তো তোরা।মেয়েটাকে আর লজ্জা দিস না।এমনিতেই লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।
_______
তোহফা অনেক রাত পযর্ন্ত আনিশার সাথে গল্প করে এসে গুটি গুটি পায়ে রুমে ঢুকলো।সেই যে সকালে সে রুম থেকে বের হয়েছে।সারাদিনে আর রুমে ভুলেও পা দেয়নি।বেশি সময় শাশুড়ির রুমেই কাটিয়েছে।আর আনিশা আশার পর তো তার সাথে তার রুমেই ছিলো।তোহফা রুমে ঢুকে দেখে আদিয়াত বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটবে কাজ করছে।তোহফাকে রুমে ঢুকতে দেখে আদিয়াত ল্যাপটবের দিকে তাকিয়েই বলল……
—বকবক রানীর কথা শেষ হল তাহলে।এতো তাড়াতাড়ি ছাড়লো তোমায়?আমি তো মনে করেছিলাম সারা রাত ওর ননস্টপ বকবক দিয়ে তোমার কান শেষ করবে।
আদিয়াতের কথার প্রতি উওরে তোহফা কিছু না বলে কাচুমাচু করে দরজার সামনে দাড়িয়ে রইল।আদিয়াত ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে তোহফার দিকে তাকিয়ে বলল……
—সামনে এসে বস।কথা আছে।
তোহফা কাচুমাচু করতে করতে গুটিগুটি পায়ে আদিয়াতের সামনে এসে দাড়াতেই আদিয়াত ল্যাবটবটা পাশে রেখে সোজা হয়ে বসে কিছুটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল……
—দাড়িয়ে না থেকে বস।
আদিয়াতের কথা শুনে তোহফা দেড়ি না করে বেডের এক কোনে মাথা নিচু করে বসে পরল।আদিয়াত কন্ঠ স্বরটা কিছুটা গম্ভীর করে বলল…….
—কাল রাতে কি হয়েছিলো?এমন করছিলে কেন?তুমি কি এই বিয়েতে রাজি ছিলে না?তোমার বাবা,মা কি তোমায় জোর করে বিয়ে দিয়েছে?
আদিয়াতের গম্ভীর গলার কথা শুনে তোহফা কাপতে লাগলো।ভয়ে চোখ মুখ খিচে বসে রইল।আদিয়াত সেদিকে তোয়াক্কা না করে আবার সেই গম্ভীর গলায় বলল……
—আমি কিছু জিগ্যেস করছি উওর দাও।
তোহফা কাপতে কাপতে কিছু একটা বিরবির করল।যেটা আদিয়াতের কান পযর্ন্ত পৌছালো না।আদিয়াত একটু জোর গলায় বলল……
—এই মেয়ে কি বিরবির করছো?জোরে বল শুনতে পাচ্ছি না।আর এমন মৃগী রুগিদের মত কাপছো কেন?আমি তোমায় বকেছি না মেরেছি?তো…..।
আদিয়াত আর কিছু বলার আগেই তোহফা সেন্সলেস হয়ে বেডের উপর পরে গেলো।তোহফা কে সেন্সলেস হতে দেখে আদিয়াত স্টেচু হয়ে গেলো।তোহফার দিকে তাকিয়ে মনে মনে নানান কথা ভাবতে লাগলো।
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)