#তোর_হতে_চাই
#Ariyana_Nur
#Part_02
—কি মেয়ে ছেলের বউ করে এনেছো গো আদিয়াতের মা।কত বেলা হয়ে গেলো এখনো উঠার নাম নেই।বাপ,মা কি কিছু শিখিয়ে পাঠায় নি গো।কোথায় সকাল, সকাল উঠে শাশুড়ির হাতে,হাতে কাজ করবে তা না করে নবাবজাদীর মত পরে, পরে ঘুমাচ্ছে।
আইরিন বেগম(আদিয়াত এর মা) কিচেনে কাজ করছে।তার সামনে দাড়িয়ে নতুন বউ এর নামে কথাগুলো বলল তার বড় জা নাসিমা বেগম।
আইরিন বেগম নিজের হাতের কাজ করতে,করতে বলল……
—আপনি এতো অস্থির হচ্ছে কেন ভাবি?সবে তো সকাল সাড়ে সাতটার মত বাজে।নতুন মানুষ নতুন জায়গা খাপ খাওয়াতে তো একটু সময় লাগবে।
আইরিন বেগম এর কথা নাসিমা বেগম এর পছন্দ হল না।সে মুখটা বাকা করে বলল……
—প্রথম থেকেই বউকে টাইট দিয়ে রেখো।বেশি মাথায় তুলে আল্লাদ দিয়ে রেখো না।তা না হলে দেখবে দু’দিন পর বউ তোমার ছেলের মাথা খেয়ে তাকে নিয়ে তোমাদের ছেড়ে চলে যাবে।একটা মাত্র ছেলে তোমার একটু দেখে শুনে রেখ।
আইরিন বেগম কোন কথা না বলে নিজের কাজ করতে লাগলো।মানুষটাকে সে বউ কাল থেকেই পছন্দ করে না।সব সময় মানুষে বদনাম নিয়ে পরে থাকে।কে কি করল না করল তা খুটে খুটে বের না করলে মনে হয় তার পেটের ভাত হজম হয় না।
আইরিন বেগমকে চুপ করে থাকতে দেখে নাসিমা বেগম পুনরায় বলতে শুরু করল……
—আমার কথা এখন তোমার খারাপ লাগতেই পারে।পরে যখন বউ ছেলেকে নিয়ে চলে যাবে তখন মনে পরবে আমার কথা।মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে বলবে ভাবি ঠিক কথাই বলেছিল।তোমার ছেলে তোমার বউ আমার কি?যা মন চায় করো।পরের গান গেয়ে আমার কোন লাভ আছে বল।মনে রেখ আমি কাউকে কখনো খারাপ বলি না।
আইরিন বেগম মিষ্টি হেসে বলল….
—কি যে বলেন না ভাবি!খারাপ কেন লাগবে?আপনি কি কখনো কারো খারাপ চেয়েছেন বলেন?চিন্তা করবেন না ভাবি আমি আপনার কথা মেনে চলার চেষ্টা কবরো।
আইরিন বেগম এর কথা শুনে নাসিমা বেগম এর মুখ কালো হয়ে গেলো।হাতে থাকা চায়ের কাপটা শব্দ করে পাশে রেখে কিছু না বলে হনহন করে কিচেন থেকে বের হয়ে গেলো।নাসিমা বেগম চলে যেতেই কাজের মেয়ে মিতু খুশিতে গদগদ করতে করতে বলল…..
—খালাম্মা আপনে তো আজ ফাটাইয়া দিছেন।উচিত শিক্ষা হইছে তার।তাই তো কথা বলার আজ মুখ না পাইয়া চইলা গেলো।এই মহিলারে আমার একদম সহ্য হয় না।সারাক্ষন খালি মুখের মধ্যে অন্য মানুষের বদনাম।আজ যা বলছেন নাকে শরম থাকলে আর আপনার লগে এই নিয়া কথা কইতে আসবো না।বড় বাবায় সবাইরে দাওয়াত করছে ভালো কথা এই মহিলারে কেন করতে গেছে কন তো?এই মহিলা তো দোয়া দিবো আগে পরে উল্টা বদনাম ছড়াইবো।
—আহা চুপ থাক তো।কথা কম বলে হাত চালা।
—আমার হাত আর মুখ দু’ইটাই একসাথে চলে।হাতের কাজ হাতে করুম মুখের কাজ মুখে।শুধু দোয়া করেন ঐ মহিলা যেন সামনে না পরে।তার সামনে আমার হাতে কাজ উঠে না।শরীরের মধ্যে রাগে কিলবিল করে।
আইরিন বেগম চোখ রাঙিয়ে বলল…..
—আবার শুরু করেছিস?
মিতু ভুবোন ভুলানো হাসি দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলো।সাথে বকবক তো আছেই।
_______
সকালের মিষ্টি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে চোখে মুখে পরতেই ঘুম ছুটে গেলো তোহফার।পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজেকে বেডে আবিষ্কার করলো।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে।আস্তে আস্তে উঠে বসে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিল।ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই মুখটা আটোমেটিক হা হয়ে গেলো।ঘড়ির কাটা ৮.০৫ এর ঘরে।নতুন বউ হয়ে এতো বেলা পযর্ন্ত ঘুমিয়ে ভাবতেই মুখের উপর এসে ভিড় করলো একরাশ ভয়।মনে মনে ভাবতে লাগলো তারা কি এতো দেড়িতে উঠার জন্য আমায় বকাবকি করবে নাকি মারবে?ভাবতেই তার শরীর কাটা দিয়ে উঠল।মনে মনে নানান কথা ভাবতে ভাবতে বেডে বসেই হাফসাফ করতে লাগল।
—উঠে গেলো?
কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চটজলদি ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখলো আদিয়াত দাড়িয়ে আছে।আদিয়াত,তোহফাকে তার দিকে তাকাতে দেখে মিস্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলল……
—নিচে মেহমানরা তোমার কথা জিগ্যেস করছে।তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও।আমি মিতুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।কিছু লাগলে ওর সাহায্য নিও।
কথাটা বলেই আদিয়াত চলে গেলো।তোহফা সেই আগের মতই চুপ করে বেডে বসে নানান ভাবনায় ডুবে রইল।
_____
কিছু বরফের টুকরা কাপড়ে পেচিয়ে মাথায় ধরে রেখেছে আনিশা।তাহমিদা ক্লাশ শেষ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে হোস্টেলে ফিরে রুমে এসে আনিশাকে দেখে বড় বড় চোখ করে আনিশাকে পরখ করে বলল…….
—কিরে তুই এখানে?সকাল সকাল না গার্ড এর চোখ ফাকি দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য পালালি আবার ফিরে এলি কেন?আন্টি কি বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছে?
আনিশা গাল ফুলিয়ে বলল……
—আমি বাড়িতে যাইনি।
তাহমিদা হাতের ব্যাগটা জায়গা মত রেখে আনিশার পাশে বসে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…..
—কি হয়েছে বল তো?চেহারার এই দশা কেন?
আনিশা মনে হয় এতোক্ষন এই প্রশ্নের উওরের আশাই ছিলো।কতক্ষনে তাহমিদা প্রশ্নটা করবে আর সে নিজের মনের সব ক্ষোভ শুনাবে।তাহমিদার প্রশ্ন করতে দেড়ি হলেও আনিশা উওর দিতে দেড়ি হল না।আনিশা গড়গড় করে বলতে লাগল…..
—একটা রামছাগল,গাধা,গরু,গন্ডার, গরিলা,উল্লু,ইন্দুর,চিকা,বাইট্টা রাস্তার মধ্যে আমারে মার্ডার করতে নিছিলো।যখন আমি প্রতিবাদ করতে গেছি তখন আমায় পাগল বলে একগাদা কথা শুনাইয়া দিছে।
তাহমিদা গোল গোল চোখ করে আনিশার দিকে তাকিয়ে বলল……
—সত্যি?তোকে ঐ লোকটা প্রথম দেখাতেই পাগল বলেছে?
আনিশা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।
তাহমিদা খুশি হয়ে বলল……
—ওয়াও এক দেখাতেই বলে দিল তুই পাগল।সত্যি মানুষটার বুদ্ধি আছে।তা না হলে কেউ এক দেখাতে মানুষ চিনে বল।আমার মনে হচ্ছে লোকটা কোন জ্যৌতিষ।তা না হলে তোর মত পাগলকে কেউ এক দেখাতে চিনে নাকি।
আনিশাতাহমিদার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তাহমিদা বিছানায় শরীর বিছিয়ে দিয়ে বলল…..
—আনু রে তোর হাতের বানানো দম আলু খেতে বড্ড ইচ্ছে করছে।যা না আজ গিয়ে করে নিয়ে আয়।
আনিশা,তাহমিদার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল……
—দম আলু না বানাইয়া তোরে আলুর দম বানাইলে কেমন হয়।বেশি খাইতে মন চাইলে বল এখনই খাওয়াই।
তাহমিদা আর কথা না বাড়িয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।পাগল বহুত ক্ষেপিয়ে ফেলেছে।বেশি ক্ষেপালে তার কপালেই শনি আছে তাই চুপ করে থাকাই ভালো।
______
দুপুরে পর বাড়ির সকল মেহমানদের বিদেয় দিয়ে আদিয়াত কিছুটা রেষ্ট নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।বাড়িতে ডাকাত পরার চিৎকার চেচামেচি শব্দে ঘুম ছুটে যায় আদিয়াত এর।আদিয়াত জানে এটা কার কাজ।আদিয়াত ঘুমঘুম চোখে নিচে আসতেই আদিয়াতের দিকে একটা মেয়ে ছুটে এসে আদিয়াতের হাতে দাত বসিয়ে দিল।আদিয়াত দাতে দাত চেপে ব্যাথা সহ্য করে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল।আদিয়াতকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় আদিয়াতের হাত ছেড়ে দিল।মেয়েটি,আদিয়াতের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কামড়ের যায়গা রক্ত জমাট বেধে গেছে।মেয়েটি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আদিয়াত কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে বলল……
—তুমি খুব খুব খারাপ।তুমি আমায় একটু ভালোবাসো না।তুমি ভালো না অনেক অনেক অনেক জঘন্য খারাপ।
আড়াল থেকে তোহফা এতোক্ষন সব দেখছিলো।মেয়েটির কথা শুনে না চাইতেও তোহফার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল।
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)