#তোর_মায়ায়❤
#Part_04
#Ariyana_Nur
নিলাভ চোখ মুখ শক্ত করে বলল….
—তোমার ঐ মহিলার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না।
আশু অবাক হয়ে বলল….
—কেনো???
নিলাভ কোন কথা না বলে হনহন করে চলে গেলো।
আশু তার যাওয়ার দিকে হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল….
— এর আবার কি হল???কেনো আমাকে আন্টির কাছে ক্ষমা চাইতে দিবে না ???
মাশিয়াঃকারন তিনিই ভাইয়াকে ব্যাকমেইল করেছিলো।
আশু অবাক হয়ে বলল….
—আপনার মা আপনার ভাইয়াকে ব্যালমেইল করছিলো???কোন মা কি তার সন্তানের সাথে এমন করে???
মাইশা নরম শুরে বলল…
—কেউ করে কিনা জানিনা তিনি করেছেন। কারন তিনি আমাদের সৎ মা।
আশু কিছু জিগ্যেস করতে নিয়েও থেমে গেলো।কেননা কারো পারর্সোনার বিষয়ে বেশি প্রশ্ন করা ওর ভালো লাগেনা।
______________________________
বেলকনিতে দাড়িয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নিলাভ।চোখে জমে রয়েছে তার নোনা জল।কখন যেন টুপ করেই তা গড়িয়ে পরে।নিলাভ আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে দাড়িয়ে থেকে রুমে গিয়ে টেবিলে তার ডাইরী কলম নিয়ে বসল। নিলাভ ডাইরীটা খুলে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে লিখতে লাগলো….
—আমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে খুব মজা লাগছে তোমার তাই না??কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি??আমি যে তোমাকে খুজে পাচ্ছি না।না কি কখনো পাবো না??আমি যে তোমাকে খুব মিস করছি??তুমিও কি আমাকে মিস করছো???
কথাটা লিখে আনমনে মুচকি হেসে ফেলল।তারপর আবার লিখতে লাগলো….
—দেখলে আমি কেমন হয়ে গেছি।নিজেকে আমার এখন পাগল পাগল লাগে।তুমি পুরোই আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছো।তা না হলে আমার মত একজন লোকের জীবন এভাবে চলে বল???তুমি কি কখনো জানতে পারবে আমি তোমার জন্য কি কি পাগলামো করেছি???
আমার এই সুন্দর জীবনটা কি এভাবে এলোমেলো না করলে তোমার হতো না??
জানো সেদিন যখন ঐ মহিলার(নিলাভের সৎ মা) মুখে শুনেছি তোমায় পেয়েছে তখন যে আমি কি খুশি হয়েছিলাম তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।মনে হচ্ছিলো আমার কাছে পুরো দুনিয়ার সুখ চলে এসেছে।পর মুহূর্তে তার কথায় আমি বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েলাম।সে তোমাকে দিয়ে আমাকে ব্যাকমেইল করছে।আমি তোমাকে দেখতে চাইলে সে আমাকে কোন একটা রক্তাক্ত মেয়েকে দেখায়।রাগ করোনা প্লিজ…তখন আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না।তাই তো তোমাকে চিনতে পারিনি।বললাম না তুমি আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছো।তাই তো সাত পাচ না ভেবে ঐ মেয়েটাকেই তুমি ভেবে এতো বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার যে কিছু করার ছিলো না।আমার কাছে তো আমার জীবনের চেয়ে তোমার জীবন মুল্যবান।তাই তো সেদিন…..
এতটুকু লিখে নিলাভ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ডাইরীর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো।
কি ভাবছেন বেচারা এমন দেবদাস হয়ে রয়েছে কেনো???আরে বেচারা তো কারো প্রেমে পরে হাবুডুবু খাচ্ছে।
নিলাভ নিজের পড়াশুনো শেষ করে কিছুদিনের জন্য তার এক অত্নীয়ের বাড়ি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলো।একদিন দুপুর দিকে বাড়িতে ফেরার সময় দেখে মাঠের মাঝখানে কিছু ছোটছোট বাচ্চাদের সাথে একটা মেয়ে খেলছে।
মেয়েটি বাচ্চাদের সাথে খেলছে আর হাসছে। একটু পরপর নিজের ওরনা দিনে মুখের ঘাম মুখছে।
নিলাভের চোখ না চাওয়া শর্তেও ঐ মেয়েটার হাসিখুশি ঘামাক্ত চেহারায় আটকে গেলো।বেচারা একধ্যনে সেদিকে তাকিয়ে আছে।তার কোন হুস নেই।পাশের থেকে একজন লোকের কথা শুনে নিলাভ নিজেকে সাভাবিক করে তার সাথে কথা বলা শেষ করে মাঠের দিকে তাকাতেই নিলাভের চেহারা রং পাল্টে গেলো।কেননা মেয়েটি সেখান থেকে ছু মন্তর হয়ে গেছে।সাথে বাচ্চাগুলো।নিলাভ হতাশ হয়ে বাড়িতে চলে আসলো।বেচারার সেদিন রাতে আর ঘুম হয়নি।সারা রাত মেয়েটির ঐ হাসিমাখা চেহারা মনে করতে করতে কাটিয়ে দিয়েছে।
পরের দিন ঐ সময়ের আগেই নিলাভ আগের জায়গায় গিয়ে মেয়েটিকে দেখার জন্য দাড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষন পর মেয়েটি তার বিচ্ছু বাহিনী নিয়ে এসে খেলতে লাগলো।নিলাভ আজ সুযোগ বুঝে মেয়েটির অগচোরে কিছু ছবি তার ফোন বন্দি করে নিল।কিন্তু সাহস করে সামনে যেতে পারলো না।
পরের দিন নিলাভ আনেক সাহস করে মাঠে এসেই দাড়ালো।কিন্তু অনেক সময় চলে যাওয়ার পর মেয়েটির আসার খবর নেই।একটু পর বাচ্চারা এসে খেলতে শুরু করলো।নিলাভ একটা বাচ্চাকে মেয়েটির কথা জিগ্যেস করলে বাচ্চাটি বলে…
—ঐ আফু তো শহরে থাকে।এহানে কোন বাড়িতে যেন আইছিলো আমরা কেউ জানি না।আফুডা অনেক ভালো।প্রতিদিন আমাগো চকলেট কিন্না দিত আমগো লগে খেলতো।কালকেই আফুডা চইলা গেছে।
নিলাভ মেয়েটির নাম জিগ্যেস করলে বলে,ওরা তার নাম জানে না।সবাই মেয়েটিকে আফু বলে ডাকতো।
নিলাভ গ্রামে আর দেরি না করে সেদিন শহরে চলে আসে।
নিলাভের মা নিলাভের বন্ধুর মাধ্যমে মেয়েটির কথা জানতে পারে।তারপর লুকিয়ে ওর রুম থেকে মেয়েটির একটি ছবি জোগার করে নিলাভকে ব্যাকমেইল করে।যদি তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে না করে তাহলে ঐমেয়েটিকে মেরে ফেলবে।নিলাভ প্রথমে রাজি না হলে সে এডিট করে ঐ ছবিটা দেখায়।আর সাথে অন্য একটা রক্তাক্ত মেয়ের ভিডিও দেখায়।
__________________________________
রেস্টুরেন্টে অনেকক্ষন ধরে বসে আছে জিদান।পাশের টেবিল থেকে জিদানকে সাভাবিক ভাবে থাকার জন্য ফ্রেন্ডরা উৎসাহিত করছে।আর এদিকে তো বেচারার অবস্থা খারাপ।কেননা আজ সে সাহস জুগিয়ে তার প্রিয় মানুষটাকে নিজের মনের কথা বলবে বলে ঠিক করেছে।একটু পর একটি মেয়ে জিদান এর সামনে আসতে জিদান বসা থেকে দাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।জিদান কিছু বলবে তার আগেই দূরে আরেজনকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিদানের সব শক্তি,সাহস ফুস হয়ে গেলো।বেচারার হাত পা কাপতে আর ঘামতে লাগলো।বেচারা আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে ঢপ করে বসে পরল।
জিদান এর কাহিনী দেখে ওর ফ্রেন্ড এর থেকে একজন মেয়ে সামনে এসে বলল….
—ঐ হারামী এমন রুগী মানুষের মত কাপাকাপি করতাছোস কেন???
জিদান অসহায় চোখে মেয়েটির দিকে তাকালে মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলল….
—তোর এই রংঢং বাদ দে।
তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল….
—হাই আমি মাশিয়া জিদানের ফ্রেন্ড।
সামনের মেয়েটি জোরপূর্বক হেসে বলল….
—আমি আফিফা….
মাশিয়া,আফিফাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে ওর পাশে বসে বলল….
—কিছু মনে করবেনা।এই গাধা এমনি।তোমার সামনে এসে সব হাওয়া ফুস হয়ে যায়।আর আমাদের সামনে সারাক্ষন তোমার গুনোগান করে।
আফিফা মুচকি হেসে বলল….
—সমস্যা নেই এর কাহিনী আমার জানা আছে।জানো আমাদের বাড়িতে বিয়ের পাকা কথা ঠিক হবার দিন ও তিনি যায়নি।বাড়ির লোকদেরকে পাঠিয়েছে।আজ মনে হয় তাহলে আপনাদের কথায় আমারকে এখানে আসার জন্য বলেছে।
—ঠিক বলেছো।আমরাই জোর করে ওকে দিয়ে তোমাকে এখানে আসার খবর দিয়েছি।আমাদের ও তো দেখতে হবে আমাদের ভাবি কেমন।
মাশিয়ার কথায় আফিফা কিছু না বলে মিষ্টি হাসলো।
(আফিফা হল মিথিলার চাচাতো বোন।জিদান ছোট থেকেই আফিফাকে পছন্দ করে।কিন্তু কখনো সাহস করে ওকে বলতে পারেনি।জিদান আফিফাকে পছন্দ করে এটা ওর বাড়ির সবাইকে জানালে তারা এক কথায় রাজি হয়ে যায়।আর তারপরে আফিফাদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তারাও রাজি হয়ে যায়।কেননা জিদান ছেলে হিসেবে কোন অংশে খারাপ নয়।আজ জিদান আফিফাকে তার ফ্রেন্ডদের কথায় এখানে আসতে বলেছে)
মাশিয়া খেয়াল করে দেখলো জিদান বার বার পিছনে তাকাচ্ছে আর ঘাম মুছছে।এটা দেখে মাশিয়া রেগে বলল….
—ঐ মেয়ে মানুষের মত এমন করছিস কেন??আর ভাবি তোর সামনে।বার বার পিছনে কাকে দেখে এভাবে ঘামতাছোস??
—আরে ঘামবেইতো কেননা দুলামিয়া জানে যে,এখন তার ব্যান্ড বাজবে।
পিছন থেকে কথাটা কেউ বলল।মাশিয়া পিছনের মানুষটিক দেখার জন্য তাকাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কেননা……
#চলবে…..