#তোর_মায়ায়❤
#Part_03
#Ariyana_Nur
জিদান কিছু বলবে তার আগেই মুখের মধ্যে পানির ঝাপটা পরায় ধরফরিয়ে উঠে বসে সামনে তাকিয়ে আবাক হয়ে বলে….
—তুমি????
(বেচারা জিদান এতোক্ষন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল।তার ক্রাশ কে নিয়ে।বেচারার এই স্বপ্নের মধ্যে কে পানি ঢাললো🤔)
সামনের মানুষটি রাগি গলায় বলল….
—এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমাকে প্রথম দেখছো??
জিদান বিরবির করে বলল….
—আরে প্রথম দেখবো কেন।এই চেহারা কি আমি ভুলতে পারি।যে চেহার শুধু বাস্তবে না স্বপ্নেও দেখলে আমি ভয় পাই।
—কি বলছো বিরবির করে???(ভ্রু কুচকে)
—কিছু না।বলছি কেনো এভাবে আমার উপর পানি ফেলে আমাকে উঠালে।দেখো পুরো ভিজে গেছি।
—ভালো হয়েছে।সারাদিন তো পরে পরে ঘুমাও।এবার একটু কাজের কাজ করো।কালকে মিথিরা আসবে।সাথে আরো কিছু লোক আসবে তাই সকাল সকাল বাজার করে আনবে।কথাটা যেনো মনে থাকে।
—আমি কেনো???বাড়িতে কি কোন কাজের লোক নেই???
—আছে তার পরেও তুমি যাবে।
—আমি পারবো না।(মুখ ভার করে)
—কি বললে পারবে না।(চোখ রাঙ্গিয়ে)
—ঠিক আছে।সাকালে ডেকে দিও।
—ওকে।এবার ফ্রেস হয়ে নিচে আসো।
জিদান কিছু একটা ভেবে নরম সুরে বলল….
—আপু…..
ওর এই নরম শুরের ডাক শুনে জিদানের বোন জিনাত ভ্রু কুচকে বলল….
—এতো আবেগ না দেখিয়ে যা বলার বলে ফেলো।
জিদান লজ্জা মাখা মুখে বলল…
—বলছি কি কাল কি মিথি আপুর সাথে আ….
ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জিনাত বলল….
—জ্বী ভাই সেও আসবে।তোমাকে আর মেয়ে মানুষের মত লজ্জা পেতে হবে না।
কথাটা বলে জিনাত মুচকি হেসে চলে গেলো।
(জিদান আর জিনাত দুইভাই বোন।জিদান খান।খান বাড়ির ছোট ছেলে।উচ্চতা ৬”গায়ের রং শ্যমবর্ন।দেখতে মাশাল্লাহ্।জিদান এর বড় বোন জিনাত।মিথিলা আর মিহান ওদের মামাতো ভাই-বোন।)
_____________________________
আশু মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে।নিজের কাছে নিজেকে এখন খুব ছোট মনে হচ্ছে।ভুল করে হলেও সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।কিভাবে সে রাগের মাথায় এমন কাজ করে ফেললো ভাবতেই তার রাগে নিজের মাথা নিজেরি দেয়ালের সাথে বারি মারতে ইচ্ছে করছে।যাই কিছু হোক তার ওদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।ভুল যখন করেছে ক্ষমাতো চাওয়া উচিত।দুদিন ধরে নিজের ভুলের জন্য অনেক অনুতপ্ত করছে।তাই ও ঠিক করলো কালকে ও বাড়িতে গিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসবে।
আশু চন্চল,রাগি, একগেয়া টাইপের মেয়ে।যা বলবে তা করেই ছাড়বে।বেচারারীর এই রাগের জন্য সব সময় তার মার কাছে বকা শুনে।আর বাবা এসে মেয়েকে আদর করে মেয়ের মান ভাঙ্গিয়ে আরো বাদর বানিয়ে দেয়।কিন্তু এই সব কিছুর পরেও একটা কোমল হৃদয় আছে।
___________________________________
চৌধুরীর বাড়ির সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আশু।ভয়ে ভয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে কলিংবেল চাপ দিলো।একটু পর একজন এসে দরজা খুলে জিগ্যেস করলো কাকে চাই।আশু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।আসলে তো সে এখানকার কাউকে চিনেই না।
সে যে তার ফ্রেন্ড দের দিয়ে খবর নিবে তার ও উপায় নেই।প্রথমতো তারা ওকে এখানে আসার কথা শুনলে আসতে দিবে না। দ্বিতীয়ত ও ওদের সাথে রাগ করে কোন যোগাযোগ করতে চাচ্ছে না।
কাজের লোককে দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে মাশিয়া সামনে এসে বলল….
—খালা…কে এসেছে???
খালাঃদেখো আম্মা একটা মাইয়া এখানে আসছে কিন্তু কইতে পারতাছেনা কার লগে দেখা করতে আসছে।
মাশিয়াঃআচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।
মাশিয়ার কথা শুনে খালা চলে যেতেই মাশিয়া সামনে এসে আশুকে দেকে অবাক হয়ে বলল….
—আরে… তুমি এখানে???
আশু কাচুমাচু করে বলল….
—সরি আপু….আমার সেদিনের বিহেবিয়ারের জন্য।
—আরে তোমার সরি টরি পরে শুনবো আগে ভিতরে এসো।
মাশিয়া আশুর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে সোফায় আয়েশ করে বসে বলল….
—বল কি খাবে চা না কফি???
আশু মেয়েটাকে যত দেখছে ততো অবাক হচ্ছে।ও মনে মনে
বলছে এ দেখি আমার চেয়ে এক ধাপ উপরে।আশু নিজেকে সামলিয়ে বলল….
—না আপু আমি কিছু খাবো না।আমি আপনাদের কে সরি বলতে এসেছি।
—কেনো???
আশু মাথা নিচু করে বলল….
—সেদিন আমার জন্য আপনাদের বাড়িতে এতো কিছু হয়ে গেলো।আসলে তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না।তাই রাগের মাথায় আমি আন্টির সাথে মিস বিহের করে ফেলি।সরি….
—আচ্ছা একটা কথা বলবো???রাগ করবে না তো???
—জ্বী বলুন।
—আমার মনে হচ্ছে সেদিন তুমি ভুল করে এখানে চলে এসেছিলে।যদি তুমি আমাকে পুরো ঘটনাটা বল তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করবো।প্লিজ প্লিজ বলো….
আশু না চাওয়া শর্তেও সব মাশিয়াকে বলল।তার পর দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বলল….
—সব তো শুনলেন এবার বলুন তাদের কাছে ক্ষমা চাইলে আমাকে ক্ষমা করবে তো???দরকার পরলে আমি হাত জোর করে ক্ষমা চাইবো।
—তার আর দরকার নেই।
কথাটা বলে সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসে পরে নিলাভ।নিলাভকে দেখে আশু ভয়ে ঘামতে থাকে।কেননা তার রাগ সম্পর্কে তার ধারনা হয়ে গেছে।যে রাগ রে বাবা।যদি মাথায় তুলে আছাড় মারে।তাহলে সে শেষ।
নিলাভ ওর দিকে তাকিয়ে ওর কাহিনী দেখে মুচকি হেসে বলল….
—ধন্যবাদ।
ওর কথা শুনে আশু হা করে নিলাভের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিলাভের মুখের কথাটা ওর হজম হলো না।নিলাভ আশুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাশি দিয়ে বলল….
—কেউ ধন্যবাদ দিলে ওয়েলকাম বা ইট্স ওকে বলতে হয়।এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে হয় না।
আশু নিলাভের কথা শুনে কাশতে লাগলো।মাশিয়া তারাতারি পানি এনে আশুর হাতে দিলে ও ঢকঢক করে একবারেই সব পানি খেয়ে ফেলল।তারপর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল….
—সরি….আমার সেদিনের ব্যবহারের জন্য।আসলে সেদিন আমি ভুল করে…
ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিলাভ বলল….
—আরে তুমি সরি বলছো কেন।ভুল করে হলেও সেদিন তুমি আমার উপকার করেছো।
আশু অবাক হয়ে বলল….
—মানে???
—মানে হল সেদিন যার সাথে আমার এঙ্গেজমেন্ট হচ্ছিল সেখানে আমি রাজি ছিলাম না।কেননা আমি আরেক জনকে পছন্দ করি।আর তাকে ছাড়া অন্য আরেকজনকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
আশু অবাক হয়ে বলল….
—তাহলে সেদিন আপনি রাজি কেনো হয়েছিলেন???
মাশিয়াঃভাবির জন্য।
আশু কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।নিলাভ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল….
—আসলে আমি যাকে পছন্দ করতাম তাকে কিডন্যাপ করে আমাকে ব্যাকমেইল করা হয়।যদি আমি সুইটির সাথে এঙ্গেজমেন্টে রাজি না হই তাহলে তাকে মেরে ফেলবে।তাই সেদিন আমি বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছিলাম।
আশুঃতা না হয় বুঝলাম।কিন্তু ঐ আপুটা কেনো রাজি হয়েছিলো???সে তো আপনাকে পছন্দ করতো না।
—সেটা আমি জানি না।তুমি চাইলে আমি ঠিকানা দিতে পারি তুমি জিগ্যেস করে নিতে পারো।(মুচকি হেসে)
—তার আর দরকার নেই।(মুচকি হেসে)
মাশিয়া আশুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে ওদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুজছে।মাশিয়া ওর কাধে হাত রেখে বলল….
—কাউকে খুজছো???
—হুম।আপনারা তো মাফ করে দিলেন।কিন্তু ঐ আন্টিকে তো দেখছি না।তার সাথে সেদিন অনেক অন্যায় করে ফেলেছি।তাকেও তো সরি বলতে হবে।
আশুর কথা শুনে নিলাভের চেহারার রং পাল্টে গেলো।
#চলবে…..
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)