তোর মায়ায় পর্ব-০১

0
2400

#তোর_মায়ায়
#Part_01
#Ariyana_Nur

ওরে….আমার কি হবে গো….আল্লাহ গো…..আমারে উঠাইয়া নেও গো…..এই দিন দেখার আগে আমার মরন হলো না কেনো গো…..

কারো এমন মরা কান্না শুনে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে এভাবে কান্না করছে। তার এক হাত দিয়ে একটা ৪/৫বছরের মেয়েকে ধরে রেখেছে।আরেক হাতে ছোট একটা ব‍্যাগ।

মেয়েটি আস্তে আস্তে স্টেজের সামনে এসে বলল….

—আপনে এইডা করতে পারলেন আমার লগে?আপনে আমারে হালাইয়া আইয়া এহানে আরেকজনরে নিজের কইরা নিতাছেন।আরে আমার কথা না হয় নাই ভাবলেন আপনের এই মাইয়াডার কথাডা তো ভাববেন।আপনের এই মাইয়াডারে নিয়া আমি কৈই যামু।আপনে আমার সাথে এমন কেমনে করতে পারলেন?এই বলে মেয়েটি আবার মরা কান্না জুরে দিল।

মেয়েটির এমন কান্না দেখে সবাই অবাক হয়ে স্টেজের উপর দাড়িয়ে থাকা নিলাভ চৌধুরীর দিকে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে রইলো।

নিলাভ চৌধুরী।চৌধুরী গ্রুপ এর ceoমিঃআদনান চৌধুরীর ছেলে।দেখতে মাশাল্লাহ্।বাকি পরিচয় পরে জানা যাবে।

আজ নিলাভ চৌধুরীর এন্গেজমেন্ট।নিলাভ চৌধুরীর মা মিসেস চৌধুরীর পছন্দের মেয়ে সুইটির সাথে ঘরোয়া ভাবেই আজ নিলাভের এন্গেজমেন্ট ছিল।নিলাভ স্টেজে উঠে যেই না আংটি পরাতে যাবে তখনি মেয়েটা সেখানে এন্টি নিল।

নিলাভ রক্ত চক্ষু করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু মুখে কিছু বলছেনা।

একজন মধ‍্য বয়ষ্ক মহিলা মেয়েটির সামনে এসে উচু গলায় বলল….

—এই মেয়ে কে তুমি???কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছো???
তুমি জানো তুমি কার সম্পর্কে কি বলছো???

মেয়েটিঃআপনে কেডা???হের কি লাগেন???

—আমি যেই হই না কেনো তুমি বল কে তুমি আর আমার ছেলেকে চিনো কি করে???

মেয়েটি মহিলাকে বড় একটা সালাম দিয়ে বলল….

—আম্মাগো…..
আমারে বাচান গো….আপনের পোলায় আমারে এমনে ধোকা কেমনে দিতে পারলো গো…..😭হেরে ছাড়া আমি বাচুম না গো….

মহিলাটি ধমক দিয়ে বলল….

—চুপ আর একটাও উল্টোপাল্টা কথা বলবে না।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো???দেখতেই মনে হচ্ছে ভিক্ষারির বাচ্চা।তোমার মত কালো,ক্ষেত,মূর্খ,আনস্মার্ট মেয়েকে আমার ছেলে কখনো বিয়ে করবে না।কোন উদ্দেশ্যে এখানে এসেছো সেটা বল?আর এই মেয়েটিকে কোথার থেকে ধরে নিয়ে এসেছো?এর সাথে তো আমার ছেলের কোনই মিল নেই।না চেহারায় না গায়ের রং এর।

মহিলাটির এমন কথা শুনে নিলাভ এর চেহারার রং পাল্টে গেলো।তার শরীরে রক্ত টগবগ করতে লাগলো।দুই হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে অনেক কষ্টে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে লাগলো।

মেয়েটি কিছুক্ষন মহিলাটির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল….

—কেন আম্মা???আমি কি মানুষ না।হ আমি দেখতে খারাপ লেহাপড়া পারিনা তাই বইলা কি আপনে আমারে এমনে কইবেন।মাফ করবেন আম্মা আমারে আর আপনেরে কিন্তু একজনই বানাইছে।তাই তার বানানো জিনিসেরে এভাবে ছোড করা ঠিক না।মানুষেরে ছোড কইরা,মনে কষ্ট দিয়া কথা কইলে আল্লাহ্ নারাজ হয়।আপনে লেহাপরা কইরাও এডা জানেন না।
আর একডা কথা,হের লগে মিল না থাকলেও আপনে লগে কিন্তু আপনের নাতীনের অনেক মিল আছে।চেহারায় মিল না থাকলেও গায়ের রং এ আছে।

মহিলাটি এবার রাগে অপমানে ফেটে পরল।কেননা বাচ্চা মেয়েটির গায়ের রং শ‍্যমবর্ন।আর মহিলাটি যে শ‍্যমবর্ন তা তার হাতপা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।মহিলাটি চেহারায় ইচ্ছেমত মেকআপ করে এনার্জি লাইট জ্বালিয়ে রাখলেও হাতপায়ে কিন্তু লোডসেডিং হয়ে আছে।

মহিলাটি ত‍েড়ে এসে বলল….
—কি বললে তুমি আমি কালো???কোন সাহসে তুমি আমাকে কালো বললে???

মেয়েটি মুখে হাত দিয়ে বলল….

—এ আল্লাহ্….
আমি এডা কহন কইলাম।আপনে কালা হইবেন ক‍্যান।আরে আপনি তো…আমগো গেরামে ঐ যে হেঝেক লাইড ধরায় না আপনের চেহারাডা তো হেই লাইডের মত।একে বারে ফকফোকা।

মেয়েটির এমন কথা শুনে নিলাভ এর বোন মাশিয়া মিটমিট করে হাসছে।আর হেঝেক লাইট শব্দটা শুনে নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল….

—আচ্ছা ভাবি হেজেক লাইট কি????

মাশিয়ার কথা শুনে মহিলাটি কটমট করে মাশিয়ার দিকে তাকাতেই মাশিয়া চুপ করে রইলো।

সুইটি স্টেজ থেকে ন‍্যকা কান্না করে বলল….
—পাপা আমি এই বিয়ে করবো না।আমার ইচ্ছে নেই কারো সংসার ভাঙ্গার সতীন হবার।

সুইটি স্টেজ থেকে নেমে মেয়েটিক জরিয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল….

—ধন‍্যবাদ আপু আমাকে এই বদরাগী,ডেভিল কে বিয়ে করা থেকে বাচানোর জন‍্য।আজকে যদি এন্গেজমেন্ট হয়ে যেত তাহলে আমাকে আধামরা করে হলেও আন্টি তার ছেলের বউ করতেন।

_____________________________

সূর্য ঠিক মাথার উপরে।রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা খুব কম।কাঠ ফাটা রোদের মধ‍্যে হেটে বাড়িতে যাচ্ছে আফিফা।একটু পর পর ওরনা দিয়ে মুখ মুছচ্ছে।হঠাৎ করেই একটা বাইক ওর সামনে এসে থাকাতেই ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো ও।বাইকের থেকেই দুজন লোক বত্রিশ পাটি দাত বের করে একজন আরেকজনকে বলছে….

—মামা দেখ ফুলবানু এই রোদের মধ‍্যে হেটে হেটে ঘেমে নেয়ে গেলো।

—ঠিক কইছো মামা।তা ফুলবানু তোমার বাড়ি কই চলো পৌছিয়ে দেই।তা নাম কি তোমার???

আফিফা ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কোন মানুষ না দেখে কাপাকাপা গলায় বলল….
—আপনারা আমার পথ ছাড়ুন।

—কেন গো ফুলবানু… চল আমরা তোমায় পৌছিয়ে দেই।তার আগে ঠিকানাটা দাও।

আফিফা কিছু একটা ভেবে বলল….
—আপনারা আমার পথ আটকিয়েছেন কেনো??আপনারা জানেন আমি কে???

—না গো ফুলবানু…জানিনা দেখেই তো জিগ্যেস করছি তুমি কে???
কথাটা বলে তারা দুজন আবার বত্রিশ পাটি দাত বের করে হাসতে লাগলো।

আফিফা কি বলবে নিজেও জানে না।একটু চুপ থেকে মাথায় যা এলো ফট করে তাই বলল….

—আপনারা এই এলাকার বড় ভাই,গুন্ডা,বদমাশ জিদান এর নাম শুনেছেন???

মেয়েটির মুখে জিদান নামটা শুনে লোকদুটো একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ঘারবে বলল….
—ভাই!!!ভাই আপনার কি লাগে???

আফিফা আমতা আমতা করতে করতে বলল….
—আমার…আমার…..আমার ভ…..

পিছন থেকে একটা কন্ঠে ভেসে আসলো….
—এটা তোদের ভাবি।

কথাটা শুনে লোকদুটো চমকে সামনে তাকিয়ে বড় সর একটা ধাক্কা খেলো।একজন অস্পষ্ট শুরে বলল…

—ভা…ভাই…আপনে এখানে????

_________________________

একে একে মেয়ের বাড়ির সবাই চুপ করে চলে গেলো।কেননা চৌধুরী বাড়ির কারো উপর দিয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।আর নিজেদের মেয়েই যখন বলেছে এখানে বিয়ে করবে না সেখানে কথা বাড়িয়েও কোন লাভ নেই।নিলাভ স্টেজে উপর স্ট‍্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।তার মুখে কোন কথা নেই।এদিকে ঐ বয়ষ্ক মহিলাটি রাগে সামনের থেকে একটা ফুলদানি তুলে দূরে ছুড়ে মেরে বলল….

—এই দুইটাকা ওয়ালা ভিক্ষেরী মেয়ের জন‍‍্য সবার কাছে আমি ছোট হলাম।সবাই এই ভিক্ষেরী মেয়েটার কথা বিশ্বাস করলো আমার কথা কেউ শুনলোই না।আর তুমি (নিলাভকে উদ্দেশ্যে করে)কেন বললে না এই মেয়েটাকে তুমি চিনো না।এতগুলো লোকের সামনে আমাকে আপমান করতে ভালো লাগলো তোমার।পেলে শান্তি আমাকে আপমান করে।এই ভিক্ষেরির মেয়েকে কেনো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের করে দিলে না।এন্সার মি….(চিৎকার করে)

নিলাভ সামনের একটি ফুলদিনি দেয়ালে ছুড়ে মেরে বলল….
—স্টপ(চিৎকার করে)

নিলিভ এর চিৎকারে বাড়ির সবাই ভয়ে জরোসড়ো হয়ে গেলো।কেননা নিলাভ এর রাগ সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানে।ওর রাগ হলে যে কি করতে পারে তা সবার ধারনা আছে।

—তুমি এই মেয়েটার জন‍্য আমার সাথে উচু গলায় কথা বলছো।এই মেয়েটির জন‍্য??কি হয় তোমার যার জন‍্য তুমি আমাকে কথা শুনাচ্ছো??নাকি এই দুটাকার মেয়েকে নাটক করার জন‍্য এনেছো??

নিলাভ সামনের বড় একটা সোপিসে ঘুসি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলল।ওর হাত থেকে টপটপ করে রক্ত বের হচ্ছে।চোখদুটো আগুনের মত লাল হয়ে আছে।নিলাভের এমন রুপ দেখে মহিলাটি এবার ভয় পেয়ে গেলো।

নিলাভ গুটি গুটি পায়ে মেয়েটির সামনে এসে শান্ত শুরে বলল…
—হু…আর…ইউ????

নিলাভের কথা শুনে মেয়েটি ফেলফেল করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।নিলাভ এবার সামনের চেয়ারে একটা জোরে লাথি মেরে চিৎকার করে বলল…..

—এন্সার মি….হু…আর…ইউ???

কথাটা শুনে মেয়েটির মাথায় জেনো আকাশ ভেঙ্গে পরল।মেয়েটি আবাক হয়ে নিলাভের রাগে লাল হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল।যেভাবে রেগে আছে মনে হচ্ছে কাচা চাবিয়ে খাবে।

বয়ষ্ক মহিলাটি ঝাঝালো গলায় বলল….

—তুমি ওর সাথে ইংলিশে কথা বললে বুঝবে তুমি কি বলছো।দেখলে না কথার কি ছিড়ি ছিলো।ঠিক মত তো শুদ্ধ ভাষায় কথাই বলতে পারে না। একে….

মহিলাটি আর কিছু বলার আগেই মেয়েটির ফোন বেজে উঠলো।মেয়েটি ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই তার চেহারার রং পাল্টে গেলো।মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বলল…..

—হোয়াট…..
আর ইউ কিডিং মি…..

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে