#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৩
৫৩
রিহাবের বাবা মা এসেছে ইরা আর রিহাবের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে। আজ তারা ইরাকে আংটি পরাবে আর বিয়ের ডেট ঠিক করবে। রিহাবের কাজ আছে তাই সে আসতে পারবে না। রিহাবের বাবা মা চায় তাদের বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাক। কারন বিয়ে শেষ হয়ে গেলেই তারা আবার লন্ডনে ফিরে যাবেন। ইরা ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। তার কেন জানি খুব টেনশন হচ্ছে। এর মধ্যে ঈশা এসে বলল
–কি রে তুই এখনো রেডি হস নি? এতক্ষন ধরে ঘরের মধ্যে কি করছিস?
ঈশার ধমকে ইরা কাদ কাদ গলায়
–আপু আমার না খুব ভয় করছে।
তাদের কথোপকথনের মাঝেই ইভান এসে বলল
–আঙ্কেল আনটি ডাকছে। তোরা বাইরে আয়।
তাদের মুখ দেখে ইভান আবার থেমে বলল
–কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
ইরা আবার কাদ কাদ গলায় বলল
–আমার ভয় করছে ভাইয়া!
ইভান একটুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। একটু ভেবে গম্ভীর মুখে বলল
–তাহলে বিয়ে ক্যানছেল।
ইরা আর ঈশা দুজনি তার দিকে ঘুরে তাকায়। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে
–আমার বোনের থেকে কোন কিছুই ইম্পরট্যান্ট নয়। ইরা ভয় পাচ্ছে আর জেনে শুনে তাকে এই সম্পর্কের মধ্যে জড়াতে কিভাবে বাধ্য করি।
–কি বলছ এসব?
ঈশা চিল্লিয়ে বলে। ইভান ইরার দিকে তাকিয়ে বলে
–তোকে আমি এমন কোন সম্পর্কে জড়াতে দিতে পারিনা যেটা ভয় থেকে শুরু হয়। জেটার সাথে তোর কোন অনুভুতি জড়িত নয়। আমি বাইরে গিয়ে না করে দিচ্ছি। তুই ভাবিস না।
ইরা ইভানের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–থাক ভাইয়া সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। এখন আঙ্কেল আনটিও এসে গেছে। এই মুহূর্তে বিয়ে ভেঙ্গে দিলে কেমন হয়। ভালো দেখাবে না। তাছাড়া বড় দের কথাও তো ভাবতে হবে।
কথা শেষ করে আর কারও উত্তরের অপেক্ষা না করে ইরা কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ঈশা আর ইভান দুজনেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরা ওয়াশ রুমে ঢুকে যাওয়ার পর ইভান একটু হাসল। ইভানের হাসি দেখে ঈশা তার দিকে তাকাল। ইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল
–মেয়ে মানুষের স্বভাব! সহজ কথা সহজ ভাবে বলতে পারেনা।
ঈশা তার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকাল। ইভান ঈশাকে একটু কাছে টেনে এনে বলল
–তুইও এমন কথাই বলেছিলি। কিন্তু সিচুয়েশনটা আলাদা ছিল।
ঈশা ইভানের কলার টেনে ধরে বলে
–সিচুয়েশন যেমনি থাক ভেবে দেখ এক্সপেকটেশনটা কিন্তু তোমার কাছেই ছিল। সেটাই আছে। আর ভবিষ্যতেও থাকবে।
ইভান রাগী লুক নিয়ে বলল
–তাই না। আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবি সেটার এক্সপেকটেশনও আমার কাছেই করিস আর আমি তোর সেই এক্সপেকটেশন পুরন করবো ভাবলি কি করে।
–সেটা ভেবেই তো নিশ্চিন্তে ছিলাম। জানতাম তুমি এটা হতে দিবেনা।
ইভান ঈশার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। ঈশা একটু হেসে ইভানকে জড়িয়ে ধরল। ইভানও দুই হাতে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–তুই শুধুই আমার।
ঈশা একটু হেসে বলল
–জানি তো। কিন্তু এখন এভাবে ধরে রাখলে বাকি কাজ কে করবে?
ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলল
–ইরাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।
ইরা রেডি হয়ে বের হলে তাকে নিয়ে ঈশা বাইরে যায়। সবাই বাইরে বসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ইরাকে রিহাবের মা পাশে বসিয়ে নেয়। ইরা মাথা নিচু করে বসে আছে। এক রাশ লজ্জা ঘিরে ধরেছে তাকে। আবার মনের মধ্যে ভয়ও কাজ করছে। এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে এভাবে কেন বিয়ে করে। শুধু শধু এতো গুলা মানুষের সামনে লজ্জার একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। রিহাবের উপরে খুব রাগ হচ্ছে তার। নিজে তো এখানে না এসে লজ্জা থেকে বেঁচে গেলো। কিন্তু তাকে এরকম একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিলো। রিহাবের মা ইরার অবস্থা বুঝতে পেরে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন
–এই সময়টাতে এরকম মনে হওয়া স্বাভাবিক। একবার বিয়ে হয়ে গেলে সমস্ত ভয় কেটে যাবে।
তার কথা শুনে ইরা লজ্জায় আরও আড়ষ্ট হয়ে গেলো। এখন মনে হচ্ছে ওই জায়গা থেকে পালাতে পারলে বাঁচে। কাদ কাদ মুখ নিয়ে চোখ তুলে ঈশার দিকে তাকাতেই ঈশা তার অগ্নি দৃষ্টি ফেলে বুঝে দিলো যে সে একটু বেশি বেশি করছে। তাই আর সাহস করলো না কিছু বলার। পুনরায় মাথা নিচু করে বসে থাকলো। রিহাবের মা ইরার হাত টেনে নিয়ে আংটি পরিয়ে দিলো। এতে ইরার ভয় যেন আরও বেড়ে গেলো। এখন সে রীতিমতো কাঁপছে। রিহাবের মা তার অবস্থা বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে শান্ত সরে বলল
–তোমার আর এখানে দরকার নেই। তুমি এখন ঘরে যাও। আমরা কথা বলে বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেলব।
কথা শুনে ইরা হাফ ছেড়ে বাচল। ঈশা উঠে ইরাকে ঘরে নিয়ে এলো। ইরা ঘরে এসে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর নিজের হাতের আংটিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
৫৪
ঈশা সব কাজ শেষ করে ঘরে ঢুকে দেখে ইভান বারান্দায় বসে আছে। অন্ধকার ঘরে চাঁদের আবছা আলোয় তার ছায়া পড়ছে। ঈশা ঘরের দরজা বন্ধ করে একটু দুরেই দাড়িয়ে বলল
–ওখানে কি করছ?
ইভান কোন কথা বলল না। ঘুরেও তাকালনা। হাতটা পিছনে বাড়িয়ে দিলো। ঈশা হেসে হাতে হাত রাখে। হাত ধরেই তার পাশে গিয়ে বসে। ইভান হাত ছেড়ে দিয়ে তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। ঈশা ইভানের ঘাড়ে মাথা রাখে। ইভান তাকে আরও শক্ত করে ধরে সামনে তাকিয়ে থাকে। ঈশা সামনে তাকিয়েই বলে
–সারাদিন এতো কাজ করে টায়ার্ড লাগছেনা? চল ঘুমাবে।
ইভান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
–বিয়েটা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। বিষয়টা মোটামুটি এগিয়ে গেলো। এখন খুব ভালো লাগছে। বিয়েটা হয়ে গেলেই সব চিন্তা শেষ।
–কি করে পার এতো কিছু ক্লান্তি আসেনা।
আবেগি সরে ঈশা বলল। ইভান ঈশার কথা শুনে একটু হাসল। তারপর দুষ্টুমির সূরে বলল
–এতো বছর নিজের ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি। তোর বোঝা উচিৎ আমার কত ধৈর্য।
ঈশা বুঝতে পেরে বলল
–আমি তো ধৈর্যের পরীক্ষা নেইনি। তুমি নিজেই দিয়েছ। এখন আমার উপরে দোষ চাপিয়ে দিলেই তো আমি নিবনা।
ইভান একটু হেসে বলল
–আমি তোকে কখনই কোন দোষ দেইনা জান। আমি জানি তুই যা কিছু করেছিস বা করিস সব কিছুই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে।
ইভানের কথা শুনে ঈশার মন খারাপ হয়ে গেলো। এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কি তার আসলেই আছে। ঈশার চুপ করে থাকা দেখে ইভান বলল
–কি ভাবছিস?
ঈশা কোন কথা না বলে ইভান কে জড়িয়ে ধরল। তার যে মন খারাপ সেটা বুঝতে পেরে ইভান তাকে আরও শক্ত করে ধরে বলল
–তুই এভাবে মন খারাপ করে আমার মনটাও খারাপ করে দিচ্ছিস সেটা কি মাথায় আছে?
ইভানের কথা শুনে ঈশা একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল
–সারাদিন সবার খবর রাখো। নিজের জন্যও তো একটু সময় রাখতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে শরীর খারাপ করবে। অসুস্থ হয়ে গেলে তখন আর কারও খোঁজ খবর রাখতে পারবে না।
ঈশার কথা শুনে ইভান একটু হেসে বলল
–আমার খবর রাখতে তো তুই আছিস। তাই আর নিজেকে নিয়ে ভাবিনা। ঈশা তার হাত দিয়ে ইভানের মুখ মুছে দিতে দিতে বলল
–হেয়ালি না করে যা বলছি শোন। আমার কথা না শুনলে আমার খুব রাগ হয় সেটা তো জানো নাকি?
ইভান একটু দুষ্টুমির সূরে বলল
–তা জানি। আর রাগ কিভাবে ভাঙ্গাতে হয় সেটাও জানি।
কথা শেষ করেই ঈশাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে আসলো। বিছানায় শুয়ে দিলো। ঈশা একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–কি করছ?
বলেই উঠতে গেলে ইভান তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে
–কি করছি বুঝতে পারছিস না? অবশ্য না পারলেও অসুবিধা নেই একটু পরেই সব পরিস্কার বুঝতে পারবি।
ইভানের কথার মানে বুঝতে পেরে ঈশা তাকে সরাতে চেষ্টা করে বলল
–সর! আমার ঘুম পাচ্ছে।
ঈশার গলায় কিস করতে করতে বলল
–এতো সহজ না জান। আমি যতক্ষণ ঘুমাতে দিবনা ততক্ষন তুই চাইলেও ঘুমাতে পারবি না। তাই আর সময় নষ্ট না করে যা হচ্ছে মেনে নে। নাহলে তোর ঘুমাতে দেরি হয়ে যাবে আমাকে কিছু বলতে পারবি না।
ঈশা অনুরধের সূরে বলল
–ছেড়ে দাওনা প্লিজ!
ইভান আর কোন কথা না বলে ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো। ঈশা উঠে বসলো। নিজের কাপড় ঠিক করতে করতে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান যে তার উপরে রাগ করেছে বেশ বুঝতে পারল। তাই ইভানের পাশে শুয়ে পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল। ইভান এক ঝটকায় তার হাত সরে দিলো। কিন্তু ঈশা কিছুতেই হার মানার পাত্রি না। আবারো তাকে জড়িয়ে ধরল। এবার ইভান রাগ করে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল
–বিরক্ত করিস না ঘুমাতে দে।
ঈশা উঠে শরীরে হালকা ভর দিয়ে নিজের থুতনি রেখে আদুরে কণ্ঠে বলল
–শোননা!
ইভান ঘুরে রাগী চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–মাঝরাতে কি থাপ্পড় খাওয়ার সখ জেগেছে? সখ নাহলে চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো শুয়ে পড়।
ঈশা নাছোড়বান্দার মতো নিজের মুখটা ইভানের মুখের অনেকটা কাছে এনে একটু হেসে বলল
–তুমি আমাকে থাপ্পড় মারবে?
ইভান ঈশার কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারলনা। কারন ঈশা ভাল করেই জানে সে শুধু মুখেই বলবে কখনই তাকে থাপ্পড় মারবে না। ইভান ঈশার কপালে একটা আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে তার মুখটা সরিয়ে দিতে দিতে গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–নাটক বাদ দিয়ে শুয়ে পড়। আর আমাকেও ঘুমাতে দে।
ঈশা উঠা বসে পাশ ঘুরে বলল
–ঠিক আছে ঘুমাচ্ছি কিন্তু তুমি আমাকে ভুলেও টাচ করবে না। যদি করেছো তাহলে খুব খারাপ হবে কিন্তু। মনে রেখো।
বলেই শুতে যাবে তখনি ইভান তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে দাতে দাঁত চেপে বলল
–আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন তোকে টাচ করবো। সেটার জন্য আমার কারও পারমিশন নেয়ার প্রয়োজন নেই।
–মগের মুল্লুক পেয়েছ? তোমার ইচ্ছা মতো সব হবে? ছাড়ো আমাকে।
ঈশার এমন উত্তপ্ত কথা শুনে ইভান রেগে তাকে আরও জোরে চেপে ধরে তার ঠোঁট দুটোতে রুডলি কিস করতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুক্ষন পর ইভানের সব রাগ পানি হয়ে গেলো। সে ঈশার ঠোঁট দুটো পরম ভালবাসায় অনুভব করছে। ঈশাও চোখ বন্ধ করে ইভান কে অনুভব করছে। কিছুক্ষন পর ঈশার ঠোঁট ছেড়ে তার গালে নাক ঘোষতে ঘোষতে বলল
–আমাকে কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় সেটা খুব ভালভাবেই আয়ত্ত করেছিস।
ঈশা মুচকি হেসে ইভানকে জড়িয়ে ধরল।
চলবে………।