#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৯
৪৪
ভেজা চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ইভান বাইরে এলো। ঈশা টেবিলে বসে চায়ে চুমুক দিয়ে ফোনে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। ইভান ঈশার পাশের চেয়ারে বসে বলল
–বাসায় কেউ নেই?
–আমরা ছাড়া ইরা আর ইলহাম আছে। মা আর চাচি ফুপুর বাসায় গেছে। সবাই মিলে কোথায় যেন যাবে। আসতে সন্ধ্যা হবে।
–ওহ আচ্ছা!
ইভানের কথা সম্পূর্ণ না হতেই ইরা পিছন থেকে বলল
–ভাইয়া এভাবে বোরিং টাইম পাস করতে ভালো লাগছেনা। বিরক্ত লাগছে।
বলেই ইভানের পাশের চেয়ারে বসলো। ইভান কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। ইরা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে ইরাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঈশা ভিতর থেকে একটু মাথা বাকিয়ে দেখে হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে বলল
–আরে রিহাব ভাইয়া কেমন আছেন?
রিহাব একটু হেসে বলল
–ভালো আছি।
ইরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
–আমাকে দেখা শেষ হয়ে গেলে আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
রিহাবের এমন কথা শুনে ইরা বিরক্ত হল। একটু সরে দাঁড়ালো। রিহাব ভিতরে এসে চেয়ারে বসলো। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমার চা কোথায়?
ঈশা একটু হেসে বলল
–আনছি।
ইরা দরজা লাগিয়ে একটা চেয়ার টেনে এনে বসে পড়লো। রিহাব ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুই এখন কেমন আছিস? রেস্ট নিচ্ছিস নাকি অফিসে জয়েন করেছিস?
ইভান খুব শান্ত গলায় বলল
–ভালো আছি। এখনো জয়েন করিনি। সাহিল সব সামলে নিচ্ছে।
রিহাবের দিকে একটু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তুই কি আমাকে দেখতে এসেছিস?
রিহাব একটু হেসে বলল
–তোদেরকে!
ইভান তার কথা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে ইরার দিকে তাকাল। ইরা চোখ নামিয়ে বসে আছে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। রিহাবের আসাতে যে সে খুশি হয়নি তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ইভান বিষয়টাকে স্বাভাবিক করতে বলল
–ইরা তুই কি যেন বলছিলি?
ইরা চমকে উঠে তাকাল। একটু ভেবে বলল
–কই না তো!
ইভান তার আচরণে একটু অবাক হল। একটু আগেই খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিল কিন্তু এখন চুপ হয়ে গেলো। তাহলে কি রিহাবের আসাতে ইরা বিরক্ত হচ্ছে। আর হবেই বা কেন? রিহাব তো তাকে বিরক্ত করেনি। এমন সময় ল্যান্ড ফোন বেজে উঠলো। ইভান উঠে গেলো ফোনটা ধরতে। ইরা মাথা নিচু করেই আছে। রিহাব তার দিকে তাকিয়ে বলল
–ইরা।
ইরা মাথা না উঠিয়েই বলল
–কিছু বলবেন?
–কোন কারনে তুমি কি আমার উপরে বিরক্ত?
একি অবস্থা থেকেই বলল
–না তো।
–তাহলে কথা বলছনা যে।
–এমনি।
রিহাব এবার একটু ধমক দিয়ে বলল
–লুক এট মি!
ইরা ভ্রু কুচকে তাকাল। একটু কড়া গলায় বলল
–কি বলতে চান ক্লিয়ার করে বলুন। এতো হেয়ালি করার কোন প্রয়োজন নেই তো। এখানে আমি আর আপনি ছাড়া কেউ নেই। আমি খুব স্পষ্ট কথা বলতে এবং শুনতে পছন্দ করি।
রিহাব ভ্রু কুচকে তাকাল। ইরা রিহাবের দিকে তাকিয়ে থেকে কঠিন গলায় বলল
–বুঝতে পারছেন না তো আমি কি বলছি? আপনি আমার জীবনে ইন্টারফেয়ার কেন করছেন? আমি এখন আগের মত ছোট না। আমি কিছু করলে সেটা বুঝেই করি। আর আমাকে কেউ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুক সেটা আমি কোন ভাবেই মেনে নিবনা।
কথা গুলো বলেই ইরা উঠে গেলো। ইভান দরজায় দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছিল। ইরার কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারল না। ইরা যে কারও সাথে এভাবে কথা বলতে পারে সেটাও ইভানের ধারণা ছিলোনা। সে রিহাবের কাছে এসে বলল
–ইরা কি বলে গেলো?
রিহাব একটা ছোট শ্বাস ছেড়ে বলল
–আমি ইরার ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এক বন্ধুর সাথে ইরার খুব ভালো সম্পর্ক আছে। আমি সেই ছেলের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেই। নিয়ে জানতে পারি সেই ছেলে ইরাকে পছন্দ করে। কিন্তু ইরা তার সম্পর্কে যা কিছু জানে সে সেরকম না। তাই আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সেই ছেলের সাথে কথা বলে তাকে ইরার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলি। কিন্তু সে ইরাকে গিয়ে আমার সম্পর্কে অনেক মিথ্যা কথা বলে। এই জন্যই ইরা আমার উপরে রেগে আছে।
ইভান তার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। ইরার আচরণ এক রকম আর রিহাবের কথা এক রকম। দুইটার মধ্যে অনেকটা পার্থক্য। যদি রিহাবের কথা ঠিক হয়ে থাকে তাহলে ইরা অবুঝের মত আচরণ ইচ্ছা করে করছে। কিন্তু এভাবে সবার কাছে নিজেকে অবুঝ প্রমান করার কারন কি? ইভানের গভীর ভাবনার মাঝেই ঈশা চা নিয়ে আসলো। ঈশা টেবিলে চা রাখতেই ইভান একটু নড়েচড়ে বসলো। রিহাব আর ঈশা কথা বলছে। কিন্তু ইভান গভীর ভাবে ভাবছে। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসল। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–বাইরে যাবি?
ইভানের কথায় ঈশা কি বলবে বুঝতে পারল না। ইভান একটু হেসে বলল
–আজ আমরা সারাদিন ঘুরব। বাইরে খাবো। রিহাবও থাকবে আমাদের সাথে। বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। এখন একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার।
ঈশা আর কিছু না বলে একটু হেসে বলল
–ইরা আর ইলহাম কে বলি।
ইভান হাসল। ঈশার কথা শেষ হতেই রিহাব কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ইভান তার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। তার ইশারা বুঝতে পেরে রিহাব বলল
–আমি আজ ফ্রি। সারাদিন সময় দিতে পারব।
কথা শুনেই ঈশা উঠে গেলো। ইভান আর রিহাব দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসল। এর মাঝেই ইরা এসে বলল
–ভাইয়া আমি বাইরে যাবনা। আমার ইচ্ছা করছে না।
–সারাদিন বাসায় বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। একটু তো ঘুরে আসা দরকার। তুই যদি না যেতে চাস তাহলে থাক অন্যদিন না হয় যাব।
হতাশার সূরে বলল ইভান। ইরা তার কথায় না বলতে পারবে না সে জানে। কারন ইভান তাকে খুব ভালবাসে। আর তার সব কথাই প্রায় রাখে। ইরা একটু হতাশ হয়ে বলল
–অন্যদিন না ভাইয়া। আজকেই যাব। আমি রেডি হয়ে আসছি।
সবাই রেডি হয়ে নিচে নামছে। ইরা ইভানের গাড়ির কাছে এসে দাড়াতেই ইভান বলল
–রিহাব একটা কাজ কর তুই ইরা আর ইলহাম কে নিয়ে যা। আমার আর ঈশার একটু কাজ আছে আমরা শেষ করেই আসছি।
কথা শেষ করেই ইলহামের দিকে তাকাল ইভান। ইলহাম মাথা নাড়ল। দুজনে পিছনে বসতে যাবে তখনি ইলহাম বলল
–তুই সামনে বস। আমি পিছনে শুয়ে যাব। আমার ঘুম হয়নি।
ইরা বিরক্ত হয়ে বলল
–আমি সামনে বসব না। আমি পিছনেই বসব। তুমি সামনে যাও।
–বেশি কথা বলছিস তুই। আমি তোকে পিছনে বসতে দিবনা।
বলেই ইলহাম পুরো সিট দখল করে শুয়ে পড়লো। ইরা বিরক্তি নিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ভাইয়া দেখ না। আমি এই গাড়িতে যাবনা। তোমাদের সাথে যাব।
–আহা তোরা এভাবে ঝগড়া করিস না তো। শান্ত হয়ে বস।
একটু রাগ করে ইভান বলল। ইভানের রাগ করা দেখে ইরা আর কিছু বলল না। গিয়ে সামনে বসে পড়লো। কিন্তু মুখ ফুলিয়ে। রিহাব সিটে বসেই গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। ইভান পিছনে শুয়ে কানে হেড ফোন গুঁজে দিলো। বাইরের কোন কথাই তার কানে যাবে না এখন। এসব আসলে তাকে ইভানই বলে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী সে সব কিছু করছে।
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–কেন মিথ্যা বললে?
ইভান একটু হেসে বলল
–তোকে নিয়ে হানিমুনে যাব তো তাই।
–তুমি কি কখনও সিরিয়াস কথা বলতে পারনা?
–বিয়ের পর প্রথম তোকে নিয়ে বের হয়েছি। ওই দুইটাকে সাথে রাখলে সারাক্ষন বক বক করে মাথা খারাপ করে দিত। রিহাব এখন ওদেরকে কিছুক্ষন সামলাক। আমরা একটু প্রেম করি কি বলিস!
ঈশা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ইভান একটু বাকা হেসে গাড়িতে উঠলো।
৪৫
গাড়ি চলছে আপন গতিতে ইরা ফোনের মাঝে ব্যাস্ত। রিহাব আড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাল। তারপর কঠিন গলায় বলল
–তোমাকে আমি আশে পাশের মানুষকে সময় কম দিতে বলেছিলাম। ভুলে গেছো?
রিহাবের কথা শুনে ইরা ঘাড় বাকিয়ে ইলহামের দিকে তাকাল। সে চোখ বন্ধ করে হেড ফোন লাগিয়ে আছে। রিহাবের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল
–শুনুন রিহাব ভাইয়া। আমি আমার উপরে খবরদারি পছন্দ করিনা। আর বাইরের কেউ হলে সেটা তো কোনভাবেই আমি মেনে নিবনা। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো। কাউকে এসবের কইফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।
রিহাব খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করলো। গাড়ি ব্রেক করা দেখে ইলহাম চমকে উঠে বলল
–আমরা কি এসে গেছি?
রিহাব তার দিকে তাকিয়ে বলল
–খুব গরম পড়েছে কোল্ড ড্রিঙ্কস হলে কেমন হয়?
ইলহাম হ্যা বলে মাথা নাড়াল। রিহাব তাকে টাকা বের করে দিয়ে আনতে বলল। ইলহাম বের হয়ে গেলো। রিহাব ইরার দিকে কঠিন ভাবে তাকিয়ে বলল
–তুমি কি ভাবছ আমি জোর করে তোমার জীবনে হস্তক্ষেপ করছি। তাহলে ঠিক ভাবছ। আমি তাই করছি। আর হ্যা তুমি যার সাথে সব সময় এভাবে মেসেজিং করছ সে তোমার সম্পর্কে কি ভাবে তা কি যান? আমি জানিনা তুমি কত টুকু জানো। কিন্তু যদি জেনেও তার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাও তাহলে খুব ভুল করবে।
তারপর সামনে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে বলল
–ইরা আমি তোমাকে আগেও জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার কোন বয় ফ্রেন্ড আছে কিনা। কিন্তু তুমি না বলেছিলে। তাই আমি আমার দিক থেকে এগিয়ে গিয়েছি। যদি সেরকম কিছু থাকতো আমি কখনও তোমাকে জোর করতাম না। আমি যখন নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়েছি তখন তোমার সাথে খারাপ কিছু হোক তা আমি কিভাবে মেনে নিবো। যাই হোক। তবুও তোমার যদি খারাপ লাগে তাহলে আই এম সরি!
রিহাবের কথা শুনে ইরা তার দিকে তাকাল। সেই সময় ইলহাম ড্রিঙ্কস নিয়ে এলো। সবার ক্যান সবার হাতে দিয়ে দিলো। নিজের টা নিয়ে পিছনে বসে পড়লো। ইরা ক্যানটা ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–ভাইয়া এটা কেন এনেছ? আমার এটা ভালো লাগেনা।
রিহাব একবার ক্যানটার দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল
–না লাগলে ফেলে দাও। রেস্টুরেন্টে গিয়ে যেটা ভালো লাগে সেটা অর্ডার করবে।
ইরা ক্যানটা সযত্নে পাশে রাখল। ফাকা একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। ইরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আশে পাশে তেমন গাড়ি নেই। কোথায় যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু তবুও কোন প্রশ্ন করছে না। রিহাব গাড়িতে উঠার পর থেকেই আড় চোখে তাকে কিছুক্ষন পর পর দেখছিল। এখন তাও দেখছে না। ইরা গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। রিহাবও সামনে তাকিয়ে ভাবছে। তার মনের কথা কি ইরা বুঝবে?
চলবে…………।