#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_৩৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
লোকটি আমার বারণ শুনলেন না। উত্তেজিত হয়ে আমায় আপন করে নিতে তৎপর হয়ে উঠলেন। প্রথম অবস্থায় যদি ও আমি সায় দিতে চাই নি লোকটিকে। তবে পরবর্তীতে সায় দিতে বাধ্য হলাম!
,
,
আজ পিয়ালী আপু এবং পায়েলের হলুদ সন্ধ্যে! বাড়ি ভর্তি আনন্দ-অনুষ্ঠান এবং জমকালো উৎসবের রকমারি আয়োজন! সারা বাড়িময় মুখরিত হাসি, খুশি, হৈ-হুল্লোড় এবং আমোদ-প্রমোদে। রান্না ঘর থেকে অতি লোভনীয় খাবারের ঘ্রাণ ভেসে আসছে নাকে। আত্নীয় স্বজনদের চাপ যেন বিপুল হারে বাড়ছে। তাদের যত্ন আত্তি করতে করতে আমি ক্লান্ত প্রায়। শরীরে দম খুঁজে পাচ্ছি না। এত ক্লান্তি এবং ব্যস্ততার মাঝে ও আমার মন পড়ে আছে অন্য ধ্যানে! সন্ধ্যে ৭ টা বাজতে চলল ঘড়িতে। অথচ আমার বাবার বাড়ির লোকজনের সাথে এখন ও কোনো দেখাই নেই। তাদের আসার কোনো গতগম্য ও নেই। অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ও বাড়ির একটি লোকের সাথে ও সংযুক্ত হতে পারছিলাম না প্রায় অনেকক্ষন যাবত। সবার ফোনই ব্যস্ত আসছে নয়তো সংযোগ বিচ্ছিন্ন আসছে! পরশকে ও এক মুহূর্তের জন্য একা খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও। চিন্তার বিষয়টি ও লোকটির কাছে ব্যক্ত করতে পারছি না। ঐদিকে পার্লার থেকে কয়েকজন স্পেশালিষ্ট এসে পায়েল এবং পিয়ালী আপুকে সাজাতে আরম্ভ করেছে। কিছুক্ষন পর হয়তো আমার ও ডাক আসবে!
জনাজীর্ণ শরীর নিয়ে আমি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ দু আঁখি পল্লবে আমার শোবার ঘরে প্রবেশ করলাম। সেই একই উদ্যমে অটল থেকে আমি তড়িঘড়ি করে পুনরায় বাবার নাম্বারে ডায়াল করলাম। এবার ও কলটি অবলীলায় বেজে গেল। ঐ পাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়াই পরিলক্ষিত হলো না! এর মধ্যেই রুমের দরজা ঠেলে পরশ রুমে প্রবেশ করলেন। এদিক ওদিক না তাকিয়েই তিনি অতি ব্যস্ত ভঙ্গিতে আলমারির ড্রয়ার খুলে টাকার প্যাকেটটা হাতে নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নেওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে। আহত দৃষ্টিতে আমি লোকটির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,
“ঐ বাড়ি থেকে কেউ আমার কল তুলছেন না পরশ। ভীষণ টেনশান হচ্ছে আমার। রাস্তায় কোনো বিপদ-আপদ ঘটল না তো?”
পরশ ঘাবড়ালেন! কপালের ভাঁজে কয়েক দফা বির্দীণতার ছাপ ফুটিয়ে বললেন,,
“বাবা ও কল তুলছেন না?”
“না। তাই তো বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছে!”
“ওয়েট। আমি দেখছি!”
পরশ এবার উনার ফোনটা হাতে নিলেন। প্রখর উদ্বিগ্নতা সমেত ডায়াল করলেন বাবার নাম্বারে। চার দফা রিং বাজার পর পাঁচ বারের বেলায় বাবা কলটা তুললেন! স্বস্তির শ্বাস নির্গত করে পরশ সঙ্গে সঙ্গেই অনুরক্ত গলায় বাবার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“কি হয়েছেটা কি শ্বশুড় আব্বা? আপনারা কোথায়?”
বাবা কেমন যেন শুষ্ক এবং অস্থির গলায় বললেন,,
“চলে এসেছি! আর একটু।”
“এতক্ষন কলটা তুলছিলেন না কেন বাবা? কি হয়েছিল?”
“বাড়ি এসে বলছি!”
“বাড়ি আসতে আসতে আপনার মেয়েকে সামলানো যাবে না। দুশ্চিন্তা এবং আতঙ্কে আপনার মেয়ের যায় যায় অবস্থা।”
“টয়াকে বলো একদম দুঃশ্চিন্তা না করতে। আমরা ভালো আছি, নিরাপদে আছি। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা ওর সামনে হাজির হচ্ছি!”
টুং টাং শব্দে কলটা কেটে গেল। পরশ কান থেকে ফোনটা সরাতেই আমি কান্নাজড়িত গলায় পরশকে ঝাপটে ধরে বললাম,,
“নিশ্চয়ই রাস্তায় কোনো বিপদ-আপদ ঘটেছিল! তাই তো বাবার গলাটা কেমন যেন শুকনো এবং অধীর লাগছিল।”
বলিষ্ঠ বুকের পাজরে পরশ আমাকে পরম আবেশে ঝাপটে ধরে ধীর গলায় বললেন,,
“এত উৎকন্ঠিত হওয়ার কিছু নেই বউ। সবাই এখন নিরাপদে আছে, সুস্থ আছে এই ভেবেই সন্তুষ্ট থাকো!”
বোবা কান্নায় লিপ্ত আমি। শঙ্কা যেন কিছুতেই কাটছে না। বেগতিক দুর্বল চিন্তা ভাবনা খারাপ দিকেই স্থির হচ্ছে। মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে পরশ নমনীয় গলায় বললেন,,
“কিছুক্ষন রেস্ট নাও তুমি। সারাদিনের ধকলে খুব ক্লান্ত হয়ে আছো। আমার বাচ্চার ও তো বিশ্রামের প্রয়োজন নাকি? তাছাড়া কিছুক্ষন পর তোমার বাপের বাড়ির লোকজন এলে তো তোমায় আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না৷ তখন আর ও ব্যস্ত হয়ে উঠবে তাদের নিয়ে। তাই এখন যতটাই পারো বিশ্রাম নিয়ে নাও।’
“কিভাবে বিশ্রাম হবে? বাড়িতে তো অনেক কাজ পড়ে আছে!”
“চিন্তার কিছু নেই। মা সামলে নিবেন!”
পরশের জোরাজুরিতে এক প্রকার আমার বাধ্য হয়ে বিশ্রাম নিতেই হলো। যাওয়ার সময় পরশ রুমের দরজাটা হালকা ভেজিয়ে দিয়ে গেলেন। আমি ও বেশ আরাম পেয়ে কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই আঁখি যুগল বুজে নিলাম৷ সঙ্গে সঙ্গেই আমার ক্লান্ত দু আঁখিপল্লবে অবাধ্য ঘুমেরা হানা দিলো!
__________________________________________
ঘড়িতে রাত ৯ টা ছুঁইছুঁই৷ সমুদয় বাড়ির পাশাপাশি আমার শোবার ঘর ও এখন হাসাহাসি এবং অঢেল আনন্দ ফুর্তিতে ভরপুর। সব কাজিনদের মিলন মেলা বসেছে আমার শোবার ঘরে! রুম্পা আপু থেকে শুরু করে মিলি আপু, ফারিহা আপু, নীলা, স্নিগ্ধা, পায়েল এবং পিয়ালী আপুতে এসে থেমেছে এই লিস্ট! তাদের সবাইকে একসাথে পেয়ে যেন আমার সমস্ত ক্লান্তি, ক্লেশ, মনোক্ষুণ্ণতা সব এক নিমিষেই দূর হয়ে গেল। শরীরটা ও এখন খুব প্রফুল্ল এবং ফুঁড়ফুঁড়া লাগছে। দুর্বলতা এবং বিষাদের রেশ ও ক্ষনিকের মধ্যেই কেটে গেছে। জিহাদ ভাই, পিয়াস ভাই এবং রুম্পা আপুর হাজবেন্ড সবাই পরশের সাথে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে গেছে। এই দিকে আমার এখন ও সাজগোজ করা হয় নি। বাড়ির সবাইকে পেয়ে আমি শুধু সাজ নয়, বোধ হয় নিজেকেই ভুলতে বসেছি! খুশি যেন আমার আর ধরছে না। আমার সাথে কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর মা-বাবা, চাচা এবং চাচীমনিরা মিলে এবার আমার শ্বশুড় এবং শ্বাশুড়ীর সাথে বসার ঘরে আড্ডায় মশগুল হয়ে উঠলেন। বাড়ির কাজের জন্য পরশ আলাদা করে তিনজন কাজের মহিলা রেখেছেন। তারাই বাড়ির সমস্ত অভ্যন্তরীন কাজ সামলে নিচ্ছেন। তাই আমাদের উপর কাজের ধকল খুব কম যাচ্ছে!
হলুদের সাজে পিয়ালী আপু এবং পায়েলকে আলাদা করাটা বড্ড মুশকিল হয়ে পড়ছে! মনে হচ্ছে যেন দুজনই জমজ বোন! একই শাড়ি, একই অরনামেন্টস, একই সাজ, একই গাঁয়ের রং! তাদের দুজনকে কেন্দ্র করেই আমরা সব কাজিনরা গোল হয়ে বসে আছি। সবার আলোচনার বিষয় হলো পায়েল এবং পিয়ালী আপুর সাজ নিয়ে! তাদের দুজনের মধ্যে লক্ষিত প্রকারভেদ নিয়ে। এর মধ্যেই আমি হঠাৎ প্রসঙ্গ পাল্টে উদ্বিগ্ন গলায় ফারিহা আপুকে শুধিয়ে বললাম,,
“আচ্ছা আপু? তোমাদের আসতে এত দেরি হয়েছিল কেন? রাস্তায় কিছু হয়েছিল?”
ফারিহা আপু ভগ্ন গলায় ঘোর আতঙ্ক সমেত বললেন,,
“আর বলিস না! আমাদের ড্রাইভারের একটু ভুলের জন্য মহা ফ্যাসাদে ফেসে গিয়েছিলাম আমরা! ড্রাইভারের সামান্য অসতর্কতার জন্য সামনের গাড়িটায় হালকা ধাক্কা লেগে যায়! ব্যাস হয়ে গেল! ঐ গাড়ির মালিক এসে রাস্তায় হাঙ্গামা বাঁধিয়ে বসলেন। লোকটিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এই মহা ফ্যাসাদ থেকে বেরুতে অনেকটা সময় পাড় হয়ে গেল৷ যার কারনে আমাদের আসতে ও অনেকটা দেরি হয়ে যায়!”
উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে আমি বেগহীন গলায় বললাম,,
“তোমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় নি তো আপু?”
“আরে না! আমরা সবাই ঠিক আছি। অতো চিন্তা করার কিছু নেই। এখন তুই রেডি হ যাহ্। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হতে চলল বলে!”
হুট করেই আমার দৃষ্টি পড়ল মিলি আপুর দিকে! আপু কেমন যেন উদাসীন এবং মনমরা চিত্তে বসে আছেন! ক্ষীণ গলায় আমি আপুকে শুধিয়ে বললাম,,
“এই আপু? কি হয়েছে তোমার? আপসেট কেন?”
চাঁপা দীর্ঘশ্বাস নির্গত করে আপু দুঃখ ভারাক্রান্ত গলায় বললেন,,
“সংসার জীবনে এসে আমি পুরোপুরি ফেঁসে গেছি রে বোন! শ্বাশুড়ী পড়েছেন একদম জাদরেল স্বভাবের! সারাদিন নানান কাজে আমাকে খাটিয়ে মারেন। কাজে একটু ভুল ভ্রান্তি হলেই হাজারটা কথা শুনিয়ে দেন। পিয়াস ও মায়ের মুখের উপর কিছু বলতে পারে না। প্রতিনিয়ত আমাদের মাঝে টক ঝক লেগেই থাকে! জাস্ট হাঁফিয়ে উঠেছি আমি। বিলিভ মি? আমি এসব অশান্তি আর নিতে পারছি না!’
“আরেহ্ আপু৷ চিন্তা করো না। এইটা কোনো ব্যাপার ই না! আমার ও প্রথম প্রথম এমন হতো। মায়ের সাথে কথা কাটি, ভুল বুঝাবুঝি, কাজে ভুলত্রুটি, ঘুম, খাওয়া, নাওয়া, হাঁটা-চলা এমন হাজারটা অভিযোগ হতো। এসব নিয়ে কত কেঁদেছি, পরশের সাথে মাঝে মধ্যে অশান্তি ও করেছি। কিন্তু এখন দেখো? কত মানিয়ে নিয়েছি আমি৷ সব কিছুর জন্যই একটা নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন আপু। হোক সেটা মানিয়ে নেওয়া বা মেনে নেওয়া। তুমি আস্তে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নাও। দেখবে খালামনি ও তোমাকে মেনে নিবেন। তাছাড়া সংসার জীবনে প্রথম অবস্থায় এসেই যে কেউ কাজে খুব বেশি পটু বা পারদর্শী হয়ে উঠে এমনটা কিন্তু না। কয়েকটা মাস সময় দেওয়ার পর, কাজে মনঃসংযোগ দেওয়ার পরই সে আস্তে ধীরে সাংসারিক কাজে পটু হয়ে উঠে এবং সমান ভাবে পারদর্শী হয়ে উঠে। এর প্রমান কিন্তু আমি নিজেই!”
মিলি আপু মলিন হাসলেন। আমার মাথায় গাড্ডা মেরে বললেন,,
“বাহ্ আমার বোন তো দেখছি আমার চেয়ে খুব ভালো বুঝে! কি সুন্দর কম শব্দে বুঝিয়ে দিলো আমায়! জানিস? আমি ভেবে নিয়েছি। এবার থেকে সাংসারিক যেকোনো প্রতিকূলতায় আমি তোর থেকে সমাধান নিব। দিবি তো সঠিক সমাধান?”
আমি এক চোখ টিপে ক্রুর হেসে বললাম,
“কেন নয়?”
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো রাত প্রায় ১০ টায়! বিনা সাজেই আমি পিয়ালী আপু এবং পায়েলকে হলুদ, মেহেন্দি পড়িয়ে দিলাম। আসলে আড্ডা চারীতায় মশগুল থাকার কারনে সাজগোজ করাটা ঠিক হয়ে উঠে নি আমার! আর এই কারনেই পরশ ভীষন রেগে আছেন আমার সাথে! মুখ খুলে কথাটি বলছেন না পর্যন্ত! লোকটির এক ছটা দৃষ্টি ও পড়ছে না আমার দিকে। এই রাগ নিয়েই তিনি হলুদের রাত কাটিয়ে দিলেন! রাতে আমার সাথে ঘুমুতে এলেন না পর্যন্ত। ব্যগ্র গলায় বলে দিলেন কাজিনদের সাথে ঘুমিয়ে পড়তে! আমি ও কম যাই না। মুখের উপর আমি ও বলে দিয়েছি, হ্যাঁ আমি কাজিনদের সাথেই ঘুমুব। আপনার সাথে ঘুমুতে বয়ে গেছে আমার। প্রত্যত্তুরে লোকটি কিছু বলবেন না। শুধু ফোঁস করে তেজী শ্বাস নির্গত করলেন! তখন মুখ চেঁপে হাসি নিবারন করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না আমার। প্রকাশ্যে হেসে উঠলেই পড়ত আমার পিঠে দু’ঘা!
,
,
পরের দিন সুষ্ঠু সম্মত ভাবেই পিয়ালী আপু এবং পায়েলের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো! তিন কবুল এবং রেজিস্ট্রির মাধ্যমে দু জোড়া বিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সম্পাদন হলো! বাড়ি ভর্তি এলাহি কান্ড, হাসি, খুশি, আমোদ, প্রমোদের রেশ যেন দুজনের বিদায়ের লগ্নে এসে থমকে গেল! আমাদের সমগ্র বাড়িটিকে নির্জীব, প্রাণহীন এবং থমথমে করে দিয়ে পিয়ালী আপু এবং পায়েল বিদায় নিলেন দু রাস্তা ধরে! এই আনন্দ মিশ্রিত শোকের ভয়বহতায় মা, বাবা এবং পরশ ভেতর থেকে দারুনভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। একই দিনে দুই মেয়ের বিদেয় হলো! এই বিষন্ন বেদনায় হৃদয় কলুষিত হওয়ার ই তো কথা! এই দুর্বিষহ বেদনায় তাদের যেন কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না। পরশ নিজে ও যখন রায়হান ভাই এবং হিমেশ ভাইয়ার হাতে পিয়ালী আপু এবং পায়েলকে তুলে দিচ্ছিলেন তখন উনার রাঙ্গা দু’আঁখিতে আমি বিষন্ন কান্নার ছাপ দেখেছিলাম। লোকটির এই কাতর ভাব দেখে আমি ও কাঁদতে বাধ্য হয়েছিলাম। এই ভেবেই বেশি কষ্ট হচ্ছে যে, আজ থেকে পুরো বাড়িতে আমি এবং মা খুব একা হয়ে গেলাম।
পরের দিন পিয়ালী আপুর বৌভাতের অনুষ্ঠান থেকেই আমার মা-বাবা এবং আমার পুরো পরিবার কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলেন। অনেক কেঁদে কেটে ও তাদের আটকাতে পারি নি। দু রাত মেয়ের শ্বশুড় বাড়িতে কাটিয়েছেন এই নাকি অনেক। এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়া দৃষ্টিকটু! পরের দিন যথারীতি পায়েলের বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিল। বৌভাতের অনুষ্ঠান কাটিয়ে পিয়ালী আপু এবং পায়েল তাদের হাজবেন্ড সহ তিন দিনের জন্য আমাদের বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
আগামী সপ্তাহটি যেন অতি দ্রুতই ঘনিয়ে এলো! চোখের পলকেই দরজায় কড়া নাড়ল রুটিন মাফিক আমার চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রথম দিন! পরীক্ষা শুরু দুপুর একটা নাগাদ। খুব ঢিলেঢালা প্রিপারেশন আমার! তা ও পরশের চাপে জ্ঞানহীন এবং অলস মস্তিষ্ক নিয়ে অল্প স্বল্প পড়তে বসা। একই সাথে দু দুটো বিয়ের ধকল সামলে পড়তে বসাটা আমার জন্য নিঃসন্দেহে অতি কষ্টদায়ক এবং বিরক্তিকর ঠেঁকছিল। তবু ও জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন মন মানসিকতা নিয়েই পাশ করার মতো প্রিপারেশন নেওয়া হয়েছে আমার! সকাল ৯ টা বাজতেই মা-বাবার থেকে দো’আ এবং বিদায় নিয়ে আমি পরশের সঙ্গ ধরে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পরীক্ষার চলাকালীন আগামী এক মাস আমি বাবার বাড়িতেই থাকব। ওখান থেকেই পরীক্ষা শেষ হলে তবে ঢাকা ফিরব। দুদিন পর পর জার্নি করা এই অবস্থায় আমার পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। পরশ রীতিমতো এই বিষয়টাতে খুব যত্নশীল ছিলেন। আমার সুবিধের জন্য লোকটি আমায় ছেড়ে দীর্ঘ এক মাস থাকার সিদ্ধান্ত অতি অনায়াসেই গ্রহন করে নিয়েছিলেন।
_________________________________________
পরীক্ষার বাহানায় দীর্ঘ এক মাস পরশকে ছাড়া থাকতে হয়েছে আমার। এই একটা মাস অতি যন্ত্রণাময় এবং খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে পাড় করেছিলাম আমরা দুজনই। আবার ও সমস্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে আমি এবং পরশ এক হতে সমর্থ হয়েছি! আজই পরশের সাথে আমার ঢাকা ফেরা হলো!
#চলবে…?