#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_২২
#নিশাত_জাহান_নিশি
কিচ্ছু হবে না। এখন আমরা বিবাহিত। দুই পরিবারের লোকজন হাজার চেষ্টা করে ও আমাদের আলাদা করতে পারবেন না। যদি আলাদা করতেই হয় তবে আমাদের লাশ দুটোকে আলাদা করতে হবে!”
কিঞ্চিৎ মুহূর্ত মৌন থেকে আমি অভিমানী স্বরে লোকটাকে শুধিয়ে বললাম,,
“ভালোবাসায় কি এমন পাপ আছে? যে পাপের ফল স্বরূপ দুটো প্রেমপিপাসু পূর্নাঙ্গ মানুষকে আত্নহননের পথ বেছে নিতে হবে? সবার উর্ধ্বে তো প্রেম সত্য। তবে সেই মহৎ প্রেমকে কেনো মৃত্যুর মাধ্যমেই প্রকাশ করতে হবে?”
“আসলে আমরা প্রেমে ভুল করে বসেছি! আর সেই ভুলটাকেই সমাজ, পরিবার, আত্নীয়-স্বজন খুব ধৃষ্টতার সহিত দেখছেন। তারা মানতে রাজি নন, প্রেমে একটু আধটু ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রেমিকাকে দৃষ্টির সীমানায় দেখা মাএই প্রেমিক কতটা উতলা, উদগ্রীব হয়ে উঠে, তাকে ছোঁয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টায় অটল থাকে, প্রেম পূর্ণ কয়েক গুচ্ছ অতি রঞ্জিত মুহূর্তের দোটানায় ভুগে। আসলে প্রেমের এই গাঢ় অনুভূতি গুলো তারা বুঝতে নারাজ। তারা ভাবে প্রেমে “ছোঁয়া বারন।” বিয়ের পর প্রেম হলে সেই ছোঁয়ায় ভালোবাসা থাকে, পবিএতা থাকে। অন্তত আমি মনে করি, তোমার প্রতি যদি আমার প্রেম না আসে, আমার শরীর আকৃষ্ট না হয়, যদি তোমাকে জীবনে রেখে প্রেমিক হওয়ার অনুভূতি অনুভব ই না করি। তাহলে আমি তোমাকে ঠকাতে পারব না, শুধুমাএ একটা সিকিয়োর্ড লাইফ স্টাইলের জন্য, সামাজিক কিছু এক রোঁখা নিয়মের জন্য। ভালোবাসা তো ভেতর থেকে আসে। ভালোবাসা মনের সেই গভীর থেকে উৎপন্ন হয় যেখানে কোনো ঘুষ বা ম্যানিপুলেশন চলে না। সমাজ সেই প্রেমকে গর্হিত রূপে ও দেখে না। প্রেমিকের ছোঁয়ায় তারা বিন্দু পরিমান ভুল ও খুঁজতে যায় না!”
“আমার কি মনে হয় জানেন? প্রেম হলো এক আদিম অসুখ। যে অসুখের কোনো ঔষধই এখন ও তৈরী হয় নি!”
দম নির্গত করার সময়টা ও পেলাম না পর্যন্ত। পরশ হঠাৎ আমায় হেচকা টানে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার শরীরের উপর বিশাল শরীরটা নিয়ে শায়িত হয়ে পড়লেন। ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে আমি লোকটার আঁখি জোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই লোকটা বাঁকা হেসে মুখমন্ডলে দুষ্টু ভাব ফুটিয়ে বললেন,,
“ব্যাস! অনেক তো হলো প্রেম নিয়ে চর্চা। এবার একটু আদর, ভালোবাসা নিয়ে চর্চা হোক?”
হিমেল হাওয়ার তান্ডবে বিছানার পাশ ঘেঁষে অবস্থান করা জানালার লালচে, নীলচে পর্দা জোড়া টাল মাটাল ভাবে উড়ছে। বাতাসের সান্নিধ্যে এসে ক্যান্ডেলের আলোক রশ্মি এই পর্যায়ে এসে নিভতে শুরু করেছে। তারা ও বুঝি আজ অপয়া বাতাসের কাছে হার মেনে যাবে। গোলাপের ঘ্রান মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছড়িয়ে পড়ছে রুমের প্রতিটা আনাচে-কানাচে। বাষ্পায়িত সেই মিষ্টি ঘ্রান আমার নাকে ভেসে আসছে অতি গাঢ় ভাবে। প্রতিটা ঘন ঘন শ্বাসে-নিশ্বাসে ফুলেল সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে অকাতরে। আমার উপর শায়িত লোকটাকে ও আজ ফুলের মতো অত্যধিক মিষ্টি মনে হচ্ছে। সেই ফুলের মিষ্টি ঘ্রানে আমি হারিয়ে যাচ্ছি কোনো অজানা শহরে। দু চোখের মনিতে আমার “পরশ” নামক লোকটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। লাল পাঞ্জাবিতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে লোকটাকে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ভাজে বুঝি লুকিয়ে আছে শত সহস্র ভালোবাসার মৃদ্যু উষ্ণতা! আজ বোধ হয় এই লোকটার নিষ্ঠুর ভালোবাসা থেকে নিজেকে খুব বেশি একটা আটকে রাখতে পারব না আমি। চিরতরে বুঝি লোকটা আমায় মেরেই দিবে! লোকটার সম্মোহনী আঁখিদ্বয় এবং নিশ্বাসের উত্তেজনায় আমি আমার মরণ দেখতে পারছি!
অতি লজ্জায় দেহের লোমকূপে সংঘর্ষ শুরু হতেই আমি মুখমন্ডলে হাত দুখানা চেঁপে ধরলাম। নিশ্বাস বেগতিক ভারী হয়ে আসছে আমার। মাতাল করা এক অনুভূতি চেঁপে বসেছে শরীরের সর্বাঙ্গে। সঙ্গে সঙ্গেই পরশ এলোপাথারী আমার হাতের উল্টো পিঠে অজস্র চুমো খেয়ে মন্থর গলায় বললেন,,
“নো! আজ কোনো লজ্জা বোধকেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অতি শীঘ্রই আমি বাচ্চার বাবা হতে চাই। যেনো দু পরিবারই খুব সহজে আমাদের মেনে নেন।”
ফটাফট মুখমন্ডল থেকে হাত জোড়া সরিয়ে আমি নির্লজ্জ, বেহায়া লোকটাকে শুধিয়ে বললাম,,
“মানে কি? প্রথম রাতেই আপনি বাচ্চার বাবা হওয়ার বাসনা রাখেন?”
তৎক্ষনাৎ পরশ আমার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘোর লাগা স্বরে বললেন,,
“অবশ্যই রাখি। যেনো তেনো প্রকারেই হোক প্রথম রাতেই আমি বাবা হতে চাই! তবেই যদি দু পরিবারের রাগ, অভিমান একটু হলে ও কমে!”
লোকটার ভালোবাসার অতি উষ্ণ ছোঁয়ায় মুখে খুলে রা কাটার জোঁ ও পাচ্ছি না। পরম আবেশে চোখ জোড়া বুঝতে আমি বাধ্য হচ্ছি। ঘাঁড় থেকে মুখ উঠিয়ে লোকটা চোখ বদ্ধ অবস্থাতেই আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলালেন। দু মিনিটের ব্যবধানে লোকটা আচমকাই আমার গাঁয়ের উপর থেকে উঠে ফটাফট পাঞ্জাবিটা খুলে ক্ষনিকের মধ্যে আমার শাড়ির আঁচলটা গাঁ থেকে সরিয়ে উন্মাদের মতো পুনরায় আমার শরীরে শায়িত হলেন। লোকটা বোধ হয় আজ পাগল হয়ে গেছে। মানে আজ রাতে যেনো তেনো প্রকারেই হোক লোকটার বাবা হতে হবেই। পৃথিবীর কোনো শক্তিই যেনো লোকটাকে আজ আটকে রাখতে পারবে না। বাচ্চার মায়ের বারণ ও লোকটা আজ শুনবেন না। লোকটার পাগলী পূর্ণ ভালোবাসায় যে আমার জান বেরিয়ে আসছে সেদিকে লোকটার বিন্দুমাএ খেয়াল নেই! চূড়ান্ত বর্বর প্রকৃতির এই লোক!
,
,
কানের লতিতে হঠাৎ কারো উষ্ণ আঁচ পেতেই আমার আঁখিদ্বয় থেকে হুড়মুড়িয়ে ঘুম প্রস্থান নিলো। কি আশ্চর্য! কে আমার কানের লতিতে এসে তপ্ত শ্বাস নির্গত করছে? এইতো কিছুক্ষন পূর্বে মাএ চোখ জোড়া লাগিয়েছিলাম। এক্ষনি আবার ঘুম ভেঙ্গে উঠতে হলো আমার? ধ্যাত ভাল্লাগে না! কে বলেছিলো আমায় বিয়ে করতে? রাতের ঘুম জলাঞ্জলি দিয়ে কে বলেছিলো আমায় বিয়ে করতে? পুরুষ মানুষ এতো নির্মম এবং বর্বর প্রকৃতির হয় তা গত রাতেই টের পেয়েছিলাম। স্বামী নয় যেনো স্কুল, কলেজের হেডমাস্টার। যা আদেশ করবে ঠিক তাই করতে হবে। নতুবা ঝাঁড় খেয়ে জোরপূর্বক সেই কাজ করতে হবেই হবে। ক্লান্ত আঁখি যুগল অস্ফুটভাবে খুলে আমি কপাল কুঁচকে নিতেই প্রভাতের সোনালী রোদ সমস্ত মুখে কিরণ ছড়ালো। খুব মিষ্টি লাগছে রোদটা। বিরক্তির কারন হয়ে উঠছে না মোটে ও। তাই আমি অনতিবিলম্বেই কুঁচকে রাখা কপালটা সমান্তরাল করে নিলাম। এক চোখে পাশ ফিরে তাকাতেই দৃষ্টিতে পড়ল আমার বর্বর হাজবেন্ডের স্নিগ্ধতায় ঘেরা উজ্জ্বল মুখমন্ডল। দেখো দেখো, কিভাবে গ্লো করছে লোকটা! সারা রাত আমায় জ্বালিয়ে মেরে আনন্দের রেশ একদম মুখে ঝুলিয়ে রেখেছে৷ লোকটার ঠোঁটের অবস্থান ঠিক আমার কানের লতিতে। বাঁকা হয়ে শুয়ে আছে লোকটা। পুরো দমে আমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। মুখমন্ডলে অদ্ভুত বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে আমি লোকটাকে ডান পাশে ঠেলে দিতেই শরীর জুড়ে তীব্র ব্যাথার অনুভূতি পেলাম। এক রাতেই অসভ্য লোকটা আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। শরীরের সমস্ত শক্তি বোধ হয় আমি খুঁইয়ে বসেছি। ইতোমধ্যেই শরীরে খানিক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে লোকটা ঘুম জড়ানো গলায় আমায় শুধিয়ে বললেন,
“ওহো! এতো নড়াচড়া করছ কেনো?”
অবিশ্বাস্য গলায় আমি বললাম,,
“এমা! আপনি সজাগ?”
“তোমার জন্যই তো ঘুমুতে পারছিলাম না!”
“এক্সকিউজ মি! কি বললেন আপনি? আমার জন্য আপনি ঘুমুতে পারছিলেন না?”
“হুম। অবশ্যই তাই। তুমিই তো সারাটা রাত জুড়ে আমার অনুভূতিকে ডিস্টার্ব করেছিলে। নেশার মতো টানছিলে আমায়। নিজের পুরুষত্ব মনোভাবটা তাই বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারি নি। সো এক্ষেএে সম্পূর্ণ দোষটা তোমারই!”
“কোথায় আমি আপনাকে আকর্ষিত করছিলাম? আপনিই তো যা তা করছিলেন আমার সাথে! বাবা হতে চাই, বাবা হতে চাই বলে মাথা খেয়ে নিচ্ছিলেন। অসভ্য লোক একটা।”
“ক্ষ্যাপি ও না আমায়! রাতের মতো আবার ও অসভ্য হতে বাধ্য হব!”
চুপসে গেলাম আমি। তবে চোখের মাএাতিরিক্ত রাগী ভাব যেনো কিছুতেই আয়ত্তে আনতে পারছিলাম না! পরশ এখন ও একই ভাবে আঁখি যুগল বুজে মিটিমিটি হাসতে ব্যস্ত৷ আমার মৌনতা আঁচ পাওয়া মাএই লোকটা আমায় খুব শক্ত হাতে ঝাপটে ধরে বললেন,,
“শাওয়ার সেরে মামানীর কাছে যাও। তাদের সাথে একটু ভাব জমানোর চেষ্টা করো। মামুর পরিবার খুব মিশুক টাইপের জানো তো? তুমি একটু খানি মিশলেই তারা তোমাকে এর’চে বেশি আপন করে নিবেন!”
“এখনি শাওয়ার নিতে হবে? আর একটু ঘুমুলে চলবে না? বিলিভ মি। আমি চোখ টেনে মেলতে পারছি না।”
আচম্বিতে পরশ আমার গাঁ থেকে কাঁথাটা টেনে নিয়ে আমার বস্ত্রহীন গাঁয়ে শায়িত হয়ে ঘুম জড়ানো দৃষ্টিতে মন্থর গলায় বললেন,,
“উঁহু! ঘুমুনোর চেয়ে ভালো, আমার লাভ টর্চার সহ্য করা!”
লোকটা শুনলেন না আমার বারণ। গত রাতের মতো পিশাচ রূপ ধারন করলেন মুহূর্তেই। পুনরায় আমায় নিজের করে নিতে তৎপর হয়ে উঠলেন। ঘন্টা খানিক পর বিরক্ত হয়ে আমি লোকটাকে গাঁ থেকে সরিয়ে কাঁথা টেনে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। লোকটা বেকুব ভঙ্গিতে আমার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই আমি রাগী দৃষ্টিতে লোকটাকে শাসিয়ে বললাম,,
“মানুষ হবেন না আপনি? বরাবরই বর্বর, পিশাচ, অসভ্য রয়ে যাবেন?”
বেকুব ভাব ভঙ্গি পাল্টে পরশ ভেজাক্ত ওষ্ঠদ্বয় মুছে অট্ট হেসে বললেন,,
“এটুকুতেই এতো অভিযোগ? আর ওদিকে যে নিয়ম করে রোজ আমার ভালোবাসা বাড়বে তখন কি করবে শুনি?”
“তখন আপনাকে রেখে বাপের বাড়ি চলে যাব!”
কথাটা বলেই আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আদৌ কি আমার এখন বাপের বাড়ি আছে? বাপের বাড়ির পার্ট তো চুকিয়ে এসেছি সেই দুদিন পূর্বেই! তারা তো আর কখন ও আমায় ঠাঁয় দিবেন না! না কখন ও আমায় মেনে নিবেন। আঁখি জোড়ায় এক আকাশ শ্রাবণ সমেত আমি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই পরশ দৌঁড়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পেছন থেকে আমায় ঝাপটে ধরে শান্ত গলায় বললেন,,
“কি হলো? মনে মেঘ জমল কেনো?”
অশ্রুসিক্ত গলায় আমি বললাম,
“কেনো? আপনি জানেন না?”
“সব ঠিক হয়ে যাবে বউ। আমি সব ঠিক করে দিব। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। এতো জলদি ভেঙ্গে পড়লে চলবে বলো? তোমার হাজবেন্ডের প্রতি আস্থা নেই তোমার?”
ঢুকড়ে কেঁদে আমি অস্পষ্ট গলায় বললাম,,
“কখন ও ভাবি নি পরশ। এভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে আমায় বিয়ে করতে হবে। পরিবারকে ছাড়া, পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে, পরিবারকে কষ্ট দিয়ে!”
“উপর ওয়ালা আমাদের মিলনটা হয়তো এভাবেই রেখেছিলেন টয়া। তাই এভাবেই অপ্রত্যাশিত ভাবে এবং অপরিকল্পিত ভাবেই আমাদের বিয়েটা করতে হলো। প্লিজ ডোন্ট বি স্যাড টয়া। সব ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস রাখো এবং ধৈর্য্য ধরো।”
“ঠিক আছে ছাড়ুন। শাওয়ার নিব।”
সঙ্গে সঙ্গেই পরশ হাতের বাঁধনটা ঢিলে করে দিলেন। চোখের জলরাশি অতি যত্নের সাথে মুছে দিয়ে পরশ কাবার্ডে রেখে যাওয়া মামানীর মেরুন রঙ্গের শাড়িটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন,,
“তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে এসো। তোমার পর আমি!”
শাড়িটা হাতে নিয়ে আমি ওয়াশরুমে প্রবেশ করলাম। আমার শাওয়ার শেষে পরশ ও শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলেন। টাওয়ালটা মাথায় পেঁচিয়ে আমি বিছানাটা গুছাতেই নিচ থেকে শোর গোলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হচ্ছে যেনো বাড়ির লোকরা এক জোট কারো সাথে খুব দ্বন্ধে লিপ্ত আছেন। কথা কাটাকাটি হচ্ছে তুমুলে। কলিজাটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে মোচড় দিয়ে উঠতেই আমি শুকনো ঢোক গিলে দৌঁড়ে দরজার খিলটা খুলে ড্রইং রুমের দিকে উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ে আঁতকে উঠে আমি মুখটা চেঁপে ধরতেই আব্বুর রাগী দৃষ্টি আমার রুমের দরজার দিকে পড়ল। ক্ষিপ্র গলায় আব্বু আমায় উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বললেন,,
“সংসার করা হচ্ছে এই বাড়িতে না? আমাদের মান-সম্মান নিলামে তুলে এই বাড়িতে তোর সংসার করা হচ্ছে?”
আব্বু এবং আমার চাচারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার রুমের দিকে অগ্রসর হতেই আমি ঠাস করে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দৌঁড়ে ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কিয়ে চিৎকার করে কেঁদে পরশকে ডেকে বললাম,,
“পরশ প্লিজ তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসুন। আব্বু আমাদের সন্ধানে চলে এসেছেন!”
#চলবে…?
#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_২৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
“পরশ প্লিজ তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসুন। আব্বু আমাদের সন্ধানে চলে এসেছেন!”
মুখমন্ডলে ঘোর আতঙ্কের পাশাপাশি আমার নেত্রযুগল হতে শ্রাবণের বারিধারা বইছে। কলিজাটা কেঁপে ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসছে। স্থির ভঙ্গিতে দাঁড়াতে পারছি না এক জায়গায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো পুরো শরীর অবশ এবং ঝিমঝিম করছে। বাক শক্তি বেগতিক রুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গলা থেকে কোনো সাউন্ড ই বের হচ্ছে না। এমতাবস্থায় চেতনা শক্তি আমার লোপের দিকে অগ্রসর হতেই দরজায় বিকট শব্দে কড়া নেড়ে উঠল আমার আব্বু এবং চাচারা। তেজীয়ান গলায় আব্বু উচ্চ আওয়াজে চিৎকার করে বলছেন,,
“টয়া দরজাটা খোল বলছি। তাড়াতাড়ি দরজাটা খোল।”
অত্যধিক ভয়ে ভেতর থেকে গোঙ্গানি নিঃসৃত হতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে পরশ ভেজাক্ত শরীরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলেন। পড়নে শুধু কালো প্যান্ট উনার। শরীরের উপরের অংশ উন্মুক্ত। চুল থেকে টপটপ শব্দে পানি নিঃসরন হচ্ছে। সাদাটে মুখশ্রী তে ভয়, কৌতুহল, উদগ্রীবতা যেনো গাঢ় ভাবে ফুটে উঠেছে। আঁখি দ্বয়ে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে পরশ আমার সম্মুখীন হতেই আমি ঢুলুঢুলু শরীরে কম্পিত গলায় বললাম,,
“আআআব্বু এসেছে!”
মুহূর্তের মধ্যেই পরশের ভয়াটে মুখশ্রী তে তুখার জেদ ফুটে উঠেছে পরিপূর্ণ ভাবে। ঘাড়ের রগ গুলো টান টান হয়ে উঠতেই পরশ আমায় উপেক্ষা করে কাবার্ডের উপর থেকে টি-শার্ট টা গাঁয়ে জড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দরজার দিকে অগ্রসর হতেই পেছন থেকে আমি পরশের ডান হাতটা চেঁপে ধরে মিনতি ভরা স্বরে বললাম,,
“যাবেন না পরশ প্লিজ। এরা আমাদের আলাদা করে দিবেন। প্লিজ আপনি যাবেন না!”
পরশ ঘাড় বাঁকিয়ে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“তোমার বাপের, বাপের ও সাহস নেই আমার থেকে তোমাকে আলাদা করার। অনেক হয়েছে এসব লুকোচুরি, অহেতুক পালিয়ে বেড়ানো, অন্যের আশ্রয়ে গাঁ ঢাকা দেওয়া। এবার যা হবে সামনে থেকে হবে, একদম সরাসরি হবে।”
এক ঝটকায় পরশ আমার হাতটা সরিয়ে মুখমন্ডলে প্রখর রাগী ভাব সমেত রুমের দরজার দিকে অগ্রসর হতেই অপ্রত্যাশিত ভাবে আন্টির গলার স্বর আমাদের কর্নকুহরে ভেসে এলো। আন্টি যেনো লৌহ কন্ঠে পরশকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,,
“পরশ দরজাটা খোল বলছি। চূড়ান্ত বদ মেয়েটার সাথে তোর সংসার করা চলবে না!”
এর মধ্যেই আব্বু আন্টির মুখের কথা টেনে নিয়ে ঝাঁঝালো গলায় পাল্টা জবাবে আন্টিকে বললেন,,
“চূড়ান্ত বদ আপনার ছেলে। আমার মেয়ে নয়। আপনার ছেলের প্ররোচনাতে পড়েই আমার মেয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো। টানা ১৫ দিন আটকে রেখেছিলাম তো আমরা আমাদের মেয়েকে। আপনারা কেনো পারলেন না? আপনাদের ছেলেকে আটকে রাখতে?”
“আমরা ও আমাদের ছেলেকে আটকে রেখেছিলাম বুঝেছেন? কিন্তু আটকে রেখে কি লাভ হবে? আপনার মেয়ে তো ফুস মন্তর জানে! ঠিক আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে এনেছে। এমন নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে মানুষ আমি আমার বাপের জন্মে দেখি নি!”
পরশ এবার রাগে গজগজ করে দরজার খিলটা খুলতে বাধ্য হলেন। আমি ও দৌঁড়ে এসে পরশের পাশাপাশি দাঁড়ালাম। আমাদের দুজনকে দেখা মাএই দুই পরিবারের সদস্যরা হিংস্র দৃষ্টিতে আমাদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। হিমেশ ভাই নির্বোধ ভঙ্গিতে আন্টি, আঙ্কেলের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। উনি হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না কি থেকে কি হয়ে গেল! পিয়াস ভাই আব্বুর পাশে দাঁড়িয়ে নিরুপায় ভঙ্গিতে মাথা চুলকিয়ে বুঝাচ্ছেন, তাদের আটকে রাখতে পারি নি আমি। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গ দিতেই হল। ইতোমধ্যেই আব্বু ক্ষীপ্ত হয়ে ঝড়ের বেগে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে বললেন,,
“বাড়ি চল তুই। এরপর তোকে আমি বুঝাচ্ছি পরিবারের মুখে চুল কালি দেওয়ার পরিনাম ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হয়।”
সঙ্গে সঙ্গেই পরশ আব্বুর হাত চেঁপে ধরে রাগ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এনে সাবলীল গলায় বললেন,,
“আপনার মেয়ে এখন আমার ওয়াইফ। নিশ্চয়ই জানেন আপনি? হাজবেন্ডের পারমিশান ছাড়া আপনার মেয়ে আপনার সাথে আপনার বাড়ি অথবা অন্য কোথাও যেতে পারবে না?”
“এই হ্যালো? তুই এখন শিখাবি? আমার মেয়ে আমার সাথে কোথায় যেতে পারবে বা পারবে না?”
“হ্যাঁ শিখাব। কারণ, আপনার মেয়ের প্রতি এখন আমার অধিকার আপনার চেয়ে ও দ্বিগুন বেশি। আমি যা বলব, আপনার মেয়ে ঠিক তাই শুনতে বাধ্য!”
ঠাস করে পরশের ডান গালে এক চড় পড়ল! আন্টি রাগান্বিত হয়ে পরশের গালে কঠিন এক চড় বসিয়ে বললেন,,
“বউয়ের প্রতি খুব অধিকার খাটানো শিখে গেছিস না? দু দিনের সংসারেই এত টান? বড়দের মুখের উপর তর্ক করতে ও এখন মুখে আটকাচ্ছে না তোর? ভাই তো ঠিকই বলেছেন! যে মেয়ে বংশের মুখে চুনকালি মেখে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে পালিয়ে আসে তাকে বাড়ি নিয়ে শিক্ষা দিবেন না তো কি করবেন? থালা সাজিয়ে পূজো করবেন?”
পরশ নাক টেনে মুহূর্তের মধ্যে আন্টির হাত দু খানা চেঁপে ধরে মাথা নুঁইয়ে কান্না জড়িত গলায় বললেন,,
“সংসারটা দুদিনের হলে ও টান অনেক গুলো বছরের মা। তোমার বউমা কে ছাড়া তোমার ছেলে বাঁচবে না মা। মরে যাবে তোমার এই এক মাত্র ছেলে! হয়তো সুসাইড করবে নয়তো রোড সাইডে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে পড়ে থাকবে! জানি না, তখন তুমি এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কতটা অনুতপ্ত হবে! আদৌ তোমার ছেলের অকাল মৃত্যুতে আফসোস করবে কিনা! আমি অনেক শুনেছি জানো? ছেলে-মেয়ের সুখের জন্য নাকি মা-বাবারা অনেক দিক সেক্রিফাইজ করেন। আমার বেলায় কেন এত কৃপনতা করছ মা? কেনো নিজেদের রাগ-ক্ষোভ ভুলে টয়া এবং আমাকে মেনে নিচ্ছ না? আমি একটা সহজ, সরল, সুন্দর, গুছানো, হাসি খুশি এবং ভালোবাসায় মোড়ানো পূর্ণ সংসার চাই মা। এত রাগ-ক্ষোভ, বিবেধ, হিংসা এবং কুটিলতায় ভরা কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হতে চাই না।”
পাশ থেকে আমি ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলাম। কান্নায় কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে এলে ও আমি কম্পিত গলায় আব্বুকে বললাম,,
“আমি ও পরশকে ছাড়া বাঁচব না আব্বু। গতবার তো ১৫ দিন রুম বন্ধী থাকা অবস্থাতে ও নিজের কোনো ক্ষতি করতে পারি নি আমি। গুরুত্বের সাথে ভেবে ও দেখি নি বিষয়টা। তবে এইবার আমি পিছিয়ে যাব না আব্বু! স্বেচ্ছায় আত্নহননের পথ বেছে নিব! তখন কিন্তু তোমার মেয়েকে তুমি চির জীবনের জন্য হারিয়ে বসবে বাবা। পারবে তো মেয়ে হারানোর শোক সামলে নিতে?”
কলিজা ছেদ হয়ে যাওয়া আমার নির্মম আকুতিতে ও আব্বুর মন বিন্দু পরিমান গলল না। মুখমন্ডলে তেজর্শি ভাব ফুটিয়ে আব্বু ক্ষনিকের মধ্যে ঝট করে আমরা হাতটা আঁকড়ে ধরে আমায় নিয়ে প্রস্থান নিতেই আন্টি পেছন থেকে আমার হাতটা টেনে ধরে নিম্ন গলায় আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“আমার বউমা আপনার সাথে কোথাও যাবে না বেয়াই! যেতে হলে আমার বউমা কে রেখে আপনার যেতে হবে!”
হতবিহ্বল দৃষ্টিতে আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে আন্টির দিকে তাকালাম। আন্টি দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে আব্বুকে বেগড়া দিয়ে বললেন,,
“আমার বউমা কে রেখে যান। আমার ছেলের জীবনের চেয়ে আমার রাগ-অভিমান বেশি প্রিয় হতে পারে না।”
রাগান্বিত গলায় আব্বু প্রত্যত্তুরে বললেন,,
“কিন্তু আমার মান-সম্মান আমার কাছে অধিক প্রিয়!”
“বিয়েটা এখন হয়ে গেছে বেয়াই। মান-সম্মান দিয়ে আর কি হবে? যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। কেনো আপনি এখন ও অহেতুক মান-সম্মান নিয়ে পড়ে আছেন?”
“শুনুন? আমি আপনার এত উপদেশ মূলক কথা শুনতে চাইছি না। সামনে থেকে সরুন। আমার মেয়েকে সাথে নিয়েই তবে আমি বাড়ি ফিরব।”
ইতোমধ্যেই পরশ পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে হেচকা টানে আমাকে উনার বাহুডোরে মিশিয়ে আব্বুকে উদ্দেশ্য করে তটস্থ কন্ঠে বললেন,,
“আজ থেকে ভুলে যান আপনার দ্বিতীয় কোনো মেয়ে ছিলো বা আছে! আপনার মতো নির্মম, নিষ্ঠুর, পাষন্ড বাবা অন্তত আমার ওয়াইফের কোনো প্রয়োজন নেই।”
আব্বু দাঁতে দাঁত চেঁপে আমার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,
“তুই ও কি তাই চাস? চলে যাব আমি? বাবা হিসেবে আমি নির্মম, নিষ্ঠুর, পাষন্ড?”
মাথা নুঁইয়ে আমি হেচকি তুলে কেঁদে উঠতেই আব্বু উচ্চ আওয়াজে চাচাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“এই চলে আয় তোরা। আজ থেকে এই মেয়ে আমার কাছে মরে গেছে!”
কান্না থামিয়ে আমি অগ্রে আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখলাম আব্বু এবং চাচারা পিছু ফিরে প্রস্থান নিচ্ছেন। পিয়াস ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়ে ব্যতিব্যস্ত গলায় বললেন,,
“চিন্তা করিস না তুই। আঙ্কেল তোকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। এই প্রথমবার আমি দেখেছিলাম আঙ্কেলের চোখে তোর জন্য জল! তোকে খুঁজে না পেয়ে আঙ্কেল কতটা উতলা হয়ে উঠেছিলেন। তুই তো জানিস ই আঙ্কেল উপর থেকে কতটা রাগী আর ভেতর থেকে কতটা নরম। খুব জলদি আঙ্কেলের রাগ পড়ে যাবে। আর ঠিক তখনই সব পূর্বের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর একটা কথা – ” মিলির সাথেই আমার বিয়েটা হচ্ছে! মাস খানিক বাদে। এখন আসছি। আই হোপ সো, পরশ তোকে খুব সুখে রাখবে!”
মৃদ্যু হেসে পিয়াস ভাই প্রস্থান নিলেন। আমি মুখ চেঁপে কাঁদতে কাঁদতে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়তেই পরশ পেরেশান হয়ে আমার পাশে বসে বাহুডোরে আমায় আবদ্ধ করে শান্ত গলায় বললেন,,
“শান্ত হও প্লিজ। আর কান্না থামাও। তোমার তো খুব খুশি হওয়ার কথা তাই না? আম্মু আমাদের মেনে নিয়েছেন!”
খুশিতে আত্নহারা হয়ে পরশ আমাকে ছেড়ে বসা থেকে উঠে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
“থ্যাংকস মা। ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস। সঠিক সময়ে তুমি যে আমায় ঠিক কতটা স্বস্তি দিয়েছ সিরিয়াসলি তোমাকে বলে কয়ে বুঝাতে পারব না আমি। এই অনুভূতিটাই যেনো অন্য রকম। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা ঠিক কতটা গভীর তুমি আবার ও প্রমাণ করে দিয়েছ!”
আন্টি ম্লান হেসে বললেন,,
“হয়েছে হয়েছে। এবার বাড়ি চল। অনেক দৌঁড় করিয়েছিস আমাদের। এবার একটু বিশ্রাম চাই!”
ইতোমধ্যেই আঙ্কেল অর্থাৎ আমার শ্বশুড় মশাই আমাকে বসা থেকে উঠিয়ে অতি যত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
“আর কেঁদো না মা। বাড়ি চল। তোমার বাবা ও আস্তে ধীরে তোমাদের মেনে নিবেন। অপেক্ষা শুধু সঠিক সময়ের। পরিবারের মান-সম্মান বলে প্রশ্ন তো? তাই তোমার বাবা এতটা ক্ষীপ্ত হয়ে আছেন!”
,
,
রাত প্রায় এখন ১০ টার কাছাকাছি। বিকেলের হতেই আমরা ঢাকায় ফিরে এসেছি। আসার পর থেকেই পিয়ালী আপু এবং পায়েল আমার পিছু ছাড়ছেন না। এক মুহূর্তের জন্যে ও আমাকে একা থাকতে দিচ্ছেন না। সর্বক্ষন নানা ভাবে আমায় হাসানোর চেষ্টা করছেন। কাউকে বুঝাতে পারছি না, আমার ভেতরে ঠিক কতটা জ্বলন হচ্ছে৷ বাবার জন্য কতটা কষ্ট হচ্ছে৷ পরিবারের সবার জন্য ভেতরটা ঠিক কতটা পুড়ছে। আসার পর থেকে পরশ ও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমার সাথে সামান্য কথা বলার সময় টুকু ও বের করতে পারছেন না। সকল ব্যস্ততার পর এই তো একটু পূর্বে রাতের খাবার খেয়ে মাত্র রুমে প্রবেশ করছিলাম। এর মধ্যেই আমার দৃষ্টি পড়ল পিয়ালী আপুর রুমের দিকে৷ আমাদের বেড রুম থেকে পিয়ালী আপুর রুমটা স্পষ্ট দেখা যায়। সিঁড়ি কোঠার পাশের রুমটাই পিয়ালী আপুর। ফোন হাতে নিয়ে পিয়ালী আপু ছাদ থেকে নামছেন। তবে চোখের কোণে জল চিকিচিক করছে উনার। জল গুলো দু হাতে মুছে আপু রুমে প্রবেশ করে ঠাস করে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। বিষয়টা আমার সন্দেহের ঠেঁকতেই আমি কৌতুহল নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে আপুর রুমের দরজায় আঁড়ি পাতলাম। সঙ্গে সঙ্গেই শুনতে পেলাম আপু চিৎকার করে কেঁদে বলছেন,,
“আই হেইট ইউ সৌরভ। আই রিয়েলি হেইট ইউ। ভাবতে পারি নি, তুমি আমার পরিবারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে এভাবে ঠকাবে!”
ইতোমধ্যেই আমাদের বেড রুমের ভেতর থেকে পরশের ডাক এলো। পরশ উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে বলছেন,,
“এই টয়া? কোথায় তুমি?”
লোকটা ডাকার আর সময় পেল না? এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেই লোকটাকে ডাকতে হলো? ধ্যাত ভাল্লাগে না! শুনতেই পারব না আর পিয়ালী আপু কেনো কাঁদছেন? আর কাকেই বা হেইট ইউ বলছেন! বিরক্তি নিয়ে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে আমাদের বেড রুমে প্রবেশ করলাম। হাতে থাকা পানির গ্লাসটা ডেস্কের উপর রেখে পরশ মুখে পানি সমেত আমায় বললেন,,
“কোথায় ছিলে? কতক্ষন যাবত ওয়েট করছিলাম?”
ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে আমি লোকটার দিকে এগিয়ে এসে বললাম,,
“তো কতক্ষন ওয়েট করছিলেন? ১ ঘন্টা, ২ ঘন্টা, ৪ ঘন্টা?”
পরশ বেকুব দৃষ্টিতে ভ্রু যুগল উঁচিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললেন,,
“হলো টা কি? এত হাইপার কেনো?”
পরশের দিকে আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বললাম,,
“সৌরভ কে?”
পরশ আমার দিকে খানিক এগিয়ে এসে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললেন,,,
“পিয়ালীর উডবি!”
“আমার মনে হচ্ছে পিয়ালী আপু কিছু গোপন করছেন আমাদের! আমি নিজ কানে শুনেছি আপু বলছিলেন…
পরশ মাঝপথে আমায় থামিয়ে দিয়ে মোহসিক্ত দৃষ্টি নিয়ে আচমকা আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। হাজার ঠেলে ও আমি লোকটাকে বিন্দুমাত্র নড়াতে না পেরে কুটুস করে লোকটার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে বললাম,,
“ছাড়ুন বলছি। আমার কথাটা শুনুন?”
তীব্র কামড়ের আঘাতে ও লোকটার বোধ হয় কিছু এলো গেল না। চুমু খাওয়া অবস্থাতেই লোকটা দ্বিগুন উত্তেজিত হয়ে আমাকে পাজা কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। শার্টের বাটন গুলো এক এক করে খুলে লোকটা আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘোর লাগা স্বরে বললেন,,
“যা শুনার কাল সকালে শুনব। এখন প্লিজ আমায় বিরক্ত কর না।”
#চলবে…?