তোমায় পাবো বলে পর্ব-১৮

0
1357

#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_১৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

“হুম ঘৃনা করি। প্রচনননন্ড ঘৃনা করি। আপনার মুখটা ও দেখতে চাই না আমি!”

চোখের কোটর জুড়ে বোধ হয় আজ সুনামি নেমেছে। শতদল অশ্রুকণারা হুমড়ি খেয়ে সরল রেখায় গড়িয়ে পড়ছে আঁখিপল্লব থেকে থুতনী অবধি৷ বুকটায় এক অদ্ভুত চাপ অনুভব করছি। কষ্ট জমেছে নাকি পাহাড় চেঁপেছে আদৌ আন্দাজ করতে পারছি না আমি। সিঁড়ি টপকে অগ্রে কদম বাড়ানোর শক্তিটা ও বোধ হয় খুঁইয়ে বসেছি। পারিপার্শ্বিক অবস্থান বড্ড ঘোলাটে ঠেঁকছে। ব্যাথার রং মশাল জ্বলছে বুকে। মুখ থুবড়ে পড়ে যে বড় কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবো না তার ও কোনো নিশ্চয়তা নেই! লোকটা আমার জীবনে অভিশাপ হয়ে এসেছে! লোকটার জন্যই আজ আমার এই চরম দুর্গতি। কেনো বেসেছিলাম লোকটাকে এতো ভালো? ভালোবেসেছি বলেই কি তার মায়ের এতো নোংরা উপস্থাপন গুলো মুখ বুজে শ্রবণ করতে হলো? চরিএে অযাচিতভাবে আঙ্গুল উঠানো হলো? একটা মেয়ের চরিএই তো হলো তার সব’চে বড় অলঙ্কার। সে চরিএেই আমার দাগ লেগে গেলো? কোথায় রাখব আমি এই যন্ত্রনা? একা কতক্ষণ ই বা এই যন্ত্রনা ভোগ করব আমি? আমার ও তো ধৈর্য্যের বাঁধ আছে৷ সেই বাঁধে যে ভাঙ্গন ধরবে না তার ও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই! আচ্ছা না হয় লোকটাকে পাওয়ার জন্য দু, একটা কটুক্তি হজম করলাম আমি। কেঁদে কেটে নিজের কোনো ভয়ঙ্কর ক্ষতি সাধন করলামই আমি। তবে এতো কিছুর বিনিময়ে ও যদি আন্টি সত্যি সত্যিই মিলি আপুর সাথে লোকটার বিয়ের পাকা কথা ঠিক করে নেন? তখন কি হবে? শেষ পর্যন্ত হার টা তো আমারই হবে তাই না? কষ্ট তো আমিই পাবো তাই না? উভয় সংকটে তো আমি ফেঁসে যাবো। আচ্ছা? লোকটা কি তখন সত্যিই তার মায়ের কথা মেনে নিবেন? আমাকে সত্যিই পর করে দিবেন? অবাঞ্ছিত বলে দূরে ঠেলে দিবেন? আমার ভালোবাসার বিন্দু পরিমান মূল্যায়ন ও কি লোকটার কাছে ম্যাটার করবে না?

কম্পায়মান শরীর নিয়ে আমি কোনো মতে হাঁতড়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করলাম। দরজার খিল আটকে বিরামহীন ভাবে রুদ্ধশ্বাস নির্গত করতে আমি তৎপর প্রায়। শরীর জুড়ে উদয়স্ত ঘাম পরিলক্ষিত হতেই আমি উড়নার আঁচল দিয়ে ঘর্মাক্ত শরীরটা মুছে এক পা, দু পা করে বিছানার দিকে অগ্রসর হলাম। মুখে আঁচল চেঁপে ঢুকড়ে কেঁদে আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর প্রয়াসে লিপ্ত প্রায়। দীর্ঘ এক ক্লান্তিহীন ঘুমের পর বোধ হয়ে ভেতরের নিদারুন কষ্টটা আমার হ্রাসের দিকে যাবে। মনোস্থির করতে ও তখন সুবিধে হবে। তবে ঘুম এখন আসবে তো আমার চক্ষুজোড়ায়? যন্ত্রনার পাহাড় নিয়ে ঘুমুতে পারব তো আমি? যদি ও সম্পূর্ণ বিষয়টা আমার অজানা৷ তবে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি! সারাদিনের ধকল এবং কান্নার ফলে চোখের অত্যধিক জ্বালা পোড়া নিয়ে জোরপূর্বক আঁখি যুগল বুজতেই মিনিট কয়েকের মধ্যে আমার লোচন যুগলে তন্দ্রাপরীরা ধরা দিলো!

,
,

মুখমন্ডলে অতি হালকা কোনো কাপড় বা উড়না জাতীয় কিছুর আলতো ছোঁয়া পেতেই আমার চেতনা শক্তিতে বড্ড আঘাত প্রাপ্ত হলো। ভয়াবহতা নিয়ে আমি তাৎক্ষণিক ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসলাম। অর্ধখোলা আখিঁ পল্লবে পাশ ফিরে তাকাতেই জানালার বাহারী পর্দার কাপড় গুলো এলোমেলো ভাবে পুনরায় আমার মুখমন্ডলে এসে হানা দিলো। জানালার থাইগ্লাস খোলা ছিলো বলেই বোধ হয় সকালের মৃদ্যুমন্দ বাতাসে পর্দার কাপড় গুলো বিক্ষিপ্তভাবে উড়ে এসে আমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গাতে সমর্থ্য হলো। দৃষ্টি ঘুড়িয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম সকাল সাতটা বাজছে ঘড়িতে। বাড়ির বাগান থেকে বিয়ে বাড়ির আমেজ, শোরগোল, অত্যধিক কলরব ভেসে আসছে আমার কর্নকুহরে। বাড়ির অভ্যন্তরে অতিথিদের রঙ্গশালা বেশ জমে উঠেছে। হৈ, হট্টগোল, আনন্দ, আমেজ মাএাতিরিক্ত ভাবে বিরাজমান বাড়ির প্রতিটা আনাচে-কানাচে। রুমের মধ্যে থেকেই বিষয় গুলো আঁচ করা অবশ্য অসম্ভব কিছু না। কেনো জানি না মস্তিষ্ক এতো হাঁকডাক নিতে পারছিলো না। মাথায় তীক্ষ্ণ যন্ত্রনা অনুভব করতেই আমি কপালটা আলতো হাতে ঘঁষতে আরম্ভ করলাম। তিক্ততায় আঁখি যুগল বুজতেই ফট করে মাঝরাতের কথা স্মরনে এলো আমার। পরশের সাথে করা বিরূপ আচরন সুস্পষ্টভাবে আমার মস্তিষ্কে ঠাঁই পেতেই আমি হম্বিতম্বি হয়ে শোয়া থেকে উঠে বদ্ধ উন্মাদের মতো রুম থেকে প্রস্থান নিলাম।

পরশের রুম বরাবর আমার গতিপথ সমাপ্ত হতেই আমি বদ্ধ দরজায় অনবরত টোকা মারতে আরম্ভ করলাম। অস্থির দৃষ্টিতে আমি আশপাশটা সূক্ষ্মভাবে পরিদর্শন করছি কোথাও কোনো বাড়ির লোক বা বিশেষ করে আন্টি আছেন কিনা! সন্দেহজনক কাউকে দৃষ্টিতে না পড়তেই আমি স্বস্তির শ্বাস নির্গত করে আরো কয়েক দফা দরজায় করাঘাত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ইতোমধ্যেই ভেতর থেকে হঠাৎ দরজাটা খুলে দেওয়া হলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমাকে দেখা মাএই পরশ রক্তচক্ষু ধারন করে দাঁতে দাঁত চেঁপে ঠাস করে দরজাটা আমার মুখের বন্ধ করে দেওয়ার পূর্বেই আমি চোখের জল ছেড়ে লাজ লজ্জা বিসর্জন দিয়ে পরশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলাম। পরশ চোয়াল শক্ত করে রাগী গলায় আমায় শুধিয়ে বললেন,,

“কি হচ্ছে কি এসব? ছাড়ো বলছি আমায়। বাইরে লোকজন দেখছে!”

“তাহলে দরজাটা লক করে দিন। লোকজন আর দেখবে না।”

“আমি তোমাকে রুম থেকে বের হতে বলছি। তোমাকে বের করেই তবে আমি রুমের দরজাটা লক করব!”

“না পরশ প্লিজ। এভাবে আমাকে রিফিউজ করবেন না। রাতের ঘটনাটার জন্য আমি সত্যিই খুব অনুতপ্ত। বিশ্বাস করুন আমি মন থেকে কিছু করি নি।”

“লিসেন টয়া? আমি তোমার কাছ থেকে কোনো বিশ্লেষন শুনতে চাইছি না। তুমি প্লিজ এক্ষনি, এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বের হও।”

“না। বের হব না। আপনি হাজার চেষ্টা করে ও আমাকে দূরে সরাতে পারবেন না।”

“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট টয়া। আমি কিন্তু ধাক্কা মেরে তোমাকে রুম থেকে বের করতে বাধ্য হব। আমার রাগ সম্পর্কে আই থিংক তোমার ধারনা আছে!”

“আই নো, আপনার যতই রাগ থাকুক। আপনি কখনো আমাকে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বের করতে পারবেন না পরশ। আমাদের মধ্যে এতোটা ও তিক্ততার সম্পর্ক তৈরী হয় নি।”

“তৈরী হয়েছে। সেই সম্পর্কটা তুমিই তৈরী করেছ! যে আমাকে ঘৃণা করে আমি ও তাকে তার’চে দ্বিগুন ঘৃনা ফেরত দিবো! আজ, এক্ষনি, এই মুহূর্তে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি৷ আর কখন ও আমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ, কথোপকথন বা দেখা/সাক্ষাৎ হবে না। এখানেই সব শেষ! সম্পর্কের ইতি আমি এখানেই টেনে দিলাম!”

রাগে অতি ক্ষুব্ধ হয়ে পরশ আমায় ধাক্কা মেরে রুম থেকে বের করে দিতেই আমি হেচকি তুলে কেঁদে পরশকে পুনরায় ঝাপটে ধরে শরীরের সমস্ত জোর কাজে লাগিয়ে দরজা থেকে সরে এসে সোজা রুমের মধ্যখানটায় চলে এলাম। কোথা থেকে এতো শক্তি আমার উদয় হলো আদৌতে বুঝতে পারছি না আমি। শুধু এতোটুকুই বুঝতে পারছি যেনো তেনো প্রকারেই হোক লোকটাকে আমার আটকাতে হবে। একবার ফাঁকফোকড় বেয়ে বেরিয়ে গেলেই তাকে পাওয়া আমার দুষ্কর হয়ে উঠবে। তার আশা আমায় সারা জীবনের জন্য ছেড়ে দিতে হবে! আমার শরীরে এতোটাই বল ধরা দিলো যে পরশকে আমি একাই সামলে নিতে পারছি। পরশ ব্যস্ত প্রায় আমার থেকে নিজেকে ছাড়াতে। নির্বোধ লোক, বুঝতেই চাইছে না, আমার থেকে তার এতো জলদি ছাড়া নেই। আমার ভালোবাসায় জোর আছে বলেই আমি রীতিমতো তার শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারছি। পরিশেষে লোকটা বিরক্ত হয়ে রাগে গজগজ করে আমায় শুধিয়ে বললেন,,

“কি হচ্ছে কি এসব টয়া? ড্রামা করছ আমার সাথে?”

“কোনো ড্রামা করছি না আমি। আমার কথাটা তো শুনুন!”

“তোমার কোনো কথা আমি শুনতে চাইছি না। এক্ষনি আমায় বের হতে হবে। ১০ টার পূর্বেই অফিসে আমার এটেন্ড থাকতে হবে। সো প্লিজ লিভ মি এলোন!

ঢুকড়ে কেঁদে আমি বিরামহীন গলায় বললাম,,

“আন্টি মিলি আপুর সাথে আপনার বিয়ে ঠিক করছেন পরশ। আন্টি চাইছেন না আমি আপনার সাথে কোনো রকম মেলামেশা করি৷ আমার চরিএ সম্পর্কে ও অনেক কথা তুলেছেন আন্টি৷ যার ফলস্বরূপ আমি রাগে বাধ্য হয়েছিলাম আপনার গাঁয়ে হাত তুলতে। আপনাকে হেইট ইউ বলতে!”

পরশ কিঞ্চিৎ মুহূর্ত থমকালেন৷ ধস্তাধস্তি বন্ধ করে অতি শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললেন,,

“হোয়াট? কি বলছ এসব?”

“হ্যাঁ পরশ। আমি যা বলছি সত্যি বলছি। আন্টি বলেছেন আপনার থেকে আমাকে যথেষ্ট দূরত্বে থাকতে। এ ও বলেছেন, আন্টি যা বলবেন আপনি ঠিক তাই শুনবেন। আন্টির কথা মতো আপনি মিলি আপুকেই বিয়ে করবেন। আমাকে ছাড়তে ও নাকি আপনি দ্বিধা বোধ করবেন না। কিন্তু আমি যে আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না পরশ। মরে যাবো আমি সত্যি বলছি। প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। দ্বিতীয় বার আমার মনটা এভাবে নিগূঢ়ভাবে ভেঙ্গে দিবেন না। আমি আপনাকেই আমার স্বামী হিসেবে চাই পরশ! প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।”

হেচকি তুলে কাঁদছিলাম আমি। নোনাজলে ভেসে যাচ্ছে পরশের এ্যাশ কালার শার্ট। আমার করুন আকুতি ভরা কান্নার বেগ বোধ হয় পরশের আকাশসম রাগকে দমিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিলো৷ মুহূর্তের মধ্যেই পরশ আমাকে শক্ত বাঁধনে ঝাপটে ধরে আমার ঘাঁড়ে অনবরত ঠোঁট ছুঁইয়ে বললেন,,

“ডোন্ট ক্রাইং। ইউ প্লিজ ডোন্ট ক্রাইং। তোমায় ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না আমি।”

নাক টেনে অশ্রুবিসর্জন করে আমি লোকটাকে শুধিয়ে বললাম,,

“তাহলে আন্টি যে বললেন, মিলি আপুর সাথে আপনার বিয়ের পাকা কথা বলবেন। মিলি আপুর বিয়েটা নাকি আপনার সাথেই হবে। এবার কি হবে পরশ? আপনি কি তবে সত্যিই আন্টির কথা মেনে নিয়ে মিলি আপুকেই বিয়ে করবেন? আমায় সত্যি সত্যিই এবার জানে মেরে দিবেন?”

আমার ঘাড় থেকে মুখ তুলে আচমকা পরশ গাঢ় রক্তিম আঁখি জোড়ায় অশ্রু সমেত নির্দ্বিধায় আমার ভেজাক্ত ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলেন। ঠোঁটে আলতো আদর ছুঁইয়ে লোকটা অস্পষ্ট গলায় বললেন,,

“আম্মুর সাথে আমি এই বিষয়ে কথা বলব। অযথা অবিসম্ভাবনীয় বিষয় গুলো নিয়ে ভাবছ কেনো তুমি? আমি টয়াকে ভালোবাসি, মিলিকে নয়। আম্মুর বুঝতে হবে বিষয়টা! আর মনের বিষয়টা খুব সেন্সেটিভ হয়। জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া যায় না।”

আশ্বাস পেয়ে আমি অশ্রুসজল আঁখিতে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পাওয়ার খুশিতে প্রায় উন্মাদের মতো হেসে উঠলাম। তাৎক্ষণিক পরশের শার্টের কলার চেঁপে ধরে আমি পরশের ঠোঁটে ও সমভাবে আদর ছোঁয়াতে উদগ্রীব হয়ে উঠলাম। লোকটাকে আপন করে নিতে বিন্দু পরিমান কুন্ঠা কাজ করছে না আমার। পরশ আমার সায় পেয়ে ক্রুর হেসে আমার কোমড়ে উষ্ণ হাত ছুঁইয়ে উনার বুকের পাজরের সাথে পুরোপুরি আমায় মিশিয়ে নিলেন। অতি উত্তেজিত মুহূর্তে হুট করেই মনে হলো তৃতীয় কোনো ব্যক্তি রুমের ভেজানো দরজাটা খুলে হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করলেন। ফট করে ভয়ার্ত চোখে আমি বদ্ধ আঁখি যুগল খুলে পরশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিতেই কেউ একজন পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরলেন। অস্থির দৃষ্টিতে পেছন ফিরে তাকাতেই আব্বুর রক্তিম চক্ষু জোড়ায় আমি আগুনের ফুলকি আবিষ্কার করলাম। চোখের পলকেই আব্বু ঠাস করে আমার গালে সজোরে এক চড় বসিয়ে ঝাঁঝালো গলায় আমায় বললেন,,

“বেয়াদবের বাচ্চা! এই রুমে কি করছিস তুই?”

মাথা নুঁইয়ে লজ্জায় আমি ঢুকড়ে কেঁদে উঠতেই পরশ পেরেশান গ্রস্থ গলায় আব্বুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,

“আঙ্কেল আমার কথাটা শুনুন। আসলে আমি টয়াকে….

সম্পূর্ণ কথা শেষ না হতেই আব্বু ক্ষুব্ধ হয়ে পরশের কলার চেঁপে ধরে ক্ষিপ্র গলায় শুধিয়ে বললেন,,

“অতিথি হয়ে এসে তুই আমার মেয়ের সর্বনাশ করছিস? বদনাম করছিস আমার মেয়ের? এক্ষনি, এই মুহূর্তে তুই আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। ইউ ব্লাডি!”

পরশ শুকনো গলায় অঢেল ধৈর্য্য সমেত বললেন,,

“আই নো আঙ্কেল। এই মুহূর্তে আমরা যা করছিলাম ভুল করছিলাম৷ আপনি চাইলে আমি এক্ষনি, এই মুহূর্তে টয়াকে বিয়ে করতে রাজি। আমি আমার ভুল শুধরে নিতে রাজি।”

“মিলির সাথে তোর বিয়ের কথা চলছিলো। তুই আমার দুই মেয়েকেই একসাথে চাইছিস? এতোটাই নির্লজ্জ, বেহায়া, চরিএহীন তুই?”

নিশ্চুপ থাকতে পারছিলাম না আমি। হেচকি তুলে কেঁদে আমি পাশ থেকে আব্বুকে মানাতে বললাম,,

“আব্বু প্লিজ। পরশকে অযথা ভুল বুঝো না তুমি। পরশ আমাকে ভালোবাসেন। আমি ও পরশকে ভালোবাসি। মাঝখানে আন্টির সাথে আমার কিছু ভুল বুঝাবুঝি হওয়ার কারনে আন্টি হঠাৎ মিলি আপুর সাথে পরশের বিয়ে ঠিক করছেন। আমাদের দুজনের মাঝখানে অযথা মিলি আপু এসে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। প্লিজ আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো আব্বু।”

“এই ছেলেটা যদি সত্যিই তোকে ভালোবাসত। এইভাবে ফাঁকা রুমে তোকে একা পেয়ে তোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তোর সাথে নোংরামো করতে পারত না টয়া। এই বিষয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইছি না টয়া। এই ছেলেটা এক্ষনি, এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হবে!”

পরশ হঠাৎ অতি ক্ষুব্ধ হয়ে আব্বুর হাত থেকে এক ঝটকায় শার্টের কলারটা ছাড়িয়ে আমার ডান হাতটা আঁকড়ে ধরে নির্দ্বিধায় আব্বুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,

“বের হতে হলে আপনার মেয়েকে নিয়েই আমি এই বাড়ি থেকে বের হবো আঙ্কেল। আর কোনটা আপনার চোখে নোংরামি মনে হচ্ছে? ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরা বা তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া নোংরামী? তাহলে শুনুন আঙ্কেল? আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করব বলেই তার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম। আমার মাথায় এর বাইরে খারাপ কোনো ইন্টেনশান ছিলো না।”

সঙ্গে সঙ্গেই আব্বু চোয়াল শক্ত করে পরশের গালে সজোরে এক চড় বসিয়ে বললেন,,

“বিয়ের পূর্বে কোনো মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া পাপ তুই জানিস না? বাবা হয়ে স্বচক্ষে দেখতে হয়েছে একটা বাইরের ছেলে আমার মেয়ের সাথে পাপ কাজ করছে। মেয়ের বাবা হলে হয়তো বুঝতে পারতি, কতোটা জঘন্য এই পরিস্থিতিটা মেনে নেওয়া। কান খুলে শুনে রাখ তুই৷ আমার মেয়েকে আমি পিয়াসের সাথে বিয়ে দিবো৷ তোর মতো চূড়ান্ত একটা লম্পট ছেলের সাথে নয়!”

চড় খেয়ে ও পরশ বেহায়ার মতো প্রত্যত্তুরে সুদৃঢ় গলায় আব্বুকে বললেন,,

“আপনি আমার লাশ ফেলে দিলে ও আপনার মেয়েকে আমি অন্য কারো হতে দিবো না। আপনার মেয়ে একান্তই আমার! দুনিয়া লন্ডভন্ড করে হয়ে গেলে ও এই চূড়ান্ত লম্পট ছেলেটাই আপনার মেয়েকেই হাসিল করবে। এবার যা করার আপনি করুন।”

ইতোমধ্যেই আন্টি হাঁফাতে হাঁফাতে রুমে প্রবেশ করলেন। আন্টির পাশে মিলি আপু হতে আরম্ভ করে বাড়ির প্রতিটা সদস্য এসে হাজির হলেন। সবার উজবুক দৃষ্টি আমাদের কেন্দ্র করে। আন্টি হঠাৎ উদগ্রীব গলায় আব্বুকে শুধিয়ে বললেন,,

“কি হয়েছে ভাই? আমার ছেলের সাথে আপনি উচ্চ আওয়াজে কথা বলছেন কেনো? কি করেছে কি আমার ছেলে?”

#চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে