#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_14
.
.
🥀অনেক্ষণ বসে থাকার পর সেজে গুঁজে রিদিকে নিয়ে বের হলাম আমরা।রিদি টকটকে লাল বেনারসি পড়েছে।সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি।হাত ভর্তি চুড়ি,চোখে গাঢ় কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক।দারুন লাগছে মেয়েটাকে।নাদিরা আর আমি দুজনে পড়েছি সেইম কালারের শাড়ি।পার্লার থেকে বেড়িয়ে দেখলাম গাড়ীতে হেলান দিয়ে দারোয়ান দাঁড়িয়ে ফোন টিপছেন।ব্লু শার্ট,বুক পর্যন্ত বোতামগুলো খোলা,হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি,চুলগুলো স্পাইক করা লোকটা যেই গেট আপ নিক না কেন ভালো তাকে লাগবেই লাগবে।গাড়ীর কাছে যেতেই আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন উনি।
.
সামনে তাকিয়ে চোখ আটকে গেলো আমার। গোলাপী শাড়ি,সাথে হালকা জুয়েলারি,হাতে চুড়ি,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক।মায়াবতী লাগছে মেয়েটাকে।ওর দিক থেকে চোখই ফিরাতে পারছি না আমি।যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।সাজলে কাউকে এতটা সুন্দর দেখায় জানা ছিলো না আামর।অপলক দৃষ্টিতে দেখে চলেছি আমার মায়াবতী কে।দেখতে দেখতে কখন যে ওরা আমার সামনে চলে এসেছে টেরই পাইনি আমি।হঠাৎ নাদিরার তুড়ির আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।
.
নাদিরাঃকি ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেলে…?
.
রিদিঃভাইয়া একজনকে দেখলেই হবে।(গাল ফুলিয়ে)আমাদেরও একটু দেখ!কত সুন্দর করে সেজে এসেছি একটু প্রসংশাও করো।
.
নাদিরা আর রিতির কথা হুশ ফিরলো আমার।লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মেহরীমা।এখন আরো মায়াবী লাগছে ওকে।গাল দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে।ইচ্ছে করছে টুপ করে গিলে ফেলি।মাথা চুলকাতে চুলকাতে ক্যাবলাকান্ত হাসি দিয়ে…..
.
হুম তোদেরকেই দেখছিলাম।একেকটা কেমন ময়দা মেখে ভূত হয়ে বেড়িয়েছিস কাউকে চেনার জোঁ নেই।তাই চেনার চেষ্টা করছিলাম তোরা আমার বোনগুলো নাকি কোনো পেত্নী।
.
আচ্ছা আচ্ছা!!তাই বলো।আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো রিদি….ভাইয়া আমি সব জানি!নাদিরা বলেছে আমায় মিহুই তোমার সেই বউ।তাই আমার কাছ থেকে লুকিয়ে লাভ নাই।নিজের বউকে দেখছিলে এতে কোনো পাপ নেই।বরং খুব ভালো!তা এত হেজিটেট না করে ওকে মনের কথাটা বলেই দাও না।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
হুম এবার তাই করবো!!আচ্ছা চল বাসায় যাওয়া যাক।
.
হুম চলো!!
.
গাড়ীতে উঠতেই শুরু হয়ে গেছে নাদিরার প্যানপ্যানানি।মেয়েটা এত কথা বলে কিন্তু কখনো বিরক্ত হয় না এই আশ্চর্য এক ট্যালেন্ট নিয়ে জন্মেছে।আমার ভাবনার মাঝখানেই বলে উঠলো…..আচ্ছা ভাইয়া একটা প্রশ্ন করবো…?
.
আজাইরা প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নাই।সো চুপ করে বসে থাক।
.
আরে না!! খুব দরকারি।
.
ঠিক আছে বল!!
.
না মানে!ওই রীমা মেয়েটার সাথে কীভাবে দেখা হলো তোমার…?আর কতদিনের রিলেশন তোমাদের…?
.
নাদিরার প্রশ্নে খুব খুশী আমি!!এই প্রশ্নটা ঘোরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।মেয়েটা বকবক করে একটা ভালোই প্রশ্ন করেছে।উনার উওর শোনার জন্য কান খাঁড়া করে বসে আছি আমি।
.
এটা তোর খুব দরকারি কথা তাই না।ধমকের সুরে চুপ কর।
.
প্লিজ ভাইয়া বলো না।দুজনে নাছোড়বান্দা আমাকে দিয়ে কথা বলিয়েই ছাড়বে।
.
ওকে চুপপ বলছি!!মাস-ছয়েক আগে ওর সাথে এক্সিডেন্টলি দেখা আমার।তারপর আস্তে আস্তে ভালোলাগা এই ভালোলাগাটুকু কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হলো বুঝতেই পারিনি।
.
মেয়েটা জানে তুমি ওকে ভালোবাসো…?
.
নাহ্!!
.
আচ্ছা ও কি তোমায় ভালোবাসে…?
.
জানিনা!!আমার এই মন একবার বলে সে আমাকে ভালোবাসে,আমাকে চায় একবার বলে চায় না।ভালো না বাসলেও ওর মন ঠিক জয় করে নেব।যদিও আমার বিশ্বাস ও আমায় ভালোবাসে যদিও আমার ধারণা ও আমার উপর অভিমান করে আছে।
.
উনার কথাগুলো শোনে চোখ দুটো জলে ভরে গেছে আমার।নিজের বউ অভিমান করে বসে আছে সেই খবরটুকুও জানেন না আপনি।অথচ সেই আপনিই আরেকজনের অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যস্ত।বাহ্ কি দারুন অনুভূতি আপনার।
.
হুম এটা ঠিক বলেছো!!আচ্ছা তুমি ওকে সরাসরি বলে দাও তুমি ওকে ভালোবাসো।তাহলেই ল্যাটা চুকে যাবে।
.
হুম খুব তাড়াতাড়ি আমার মনের কথা বলবো তাকে।জানিনা পরে কি হবে।তবে আমি তার উপর জোর করবো না যদি নিজ ইচ্ছায় আমার কাছে আসে তাহলে ঠিক আছে আর যদি না আসে তাহলে তাকে তার মতো ছেড়ে দিবো।আর কোনোদিনও সামনে যাবো না।
.
ভাইয়া!!
.
হুম!!
.
কি দারুন সিদ্ধান্ত উনার!!আমার দিকে বার বার আড়চোখেে তাকাচ্ছেন উনি।চোখের জলগুলো বেড়িয়ে আসতে চাইছে।ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছি আমি।উপায় না পেয়ে জানালার দিকে মুখ করে বসে আছি আমি।একজনের জন্য কত সুন্দর অনুভূতি কাজ করে উনার আর আমার বেলায় শূন্য।এখানে এসে উনার ব্যবহারে মাঝেমধ্যেই মনে হতো খুব ভালোবাসেন আমায়।কিন্তু না সব মিথ্যে।বুঝতে ভুল করেছি আমি।
.
.
বরযাএী এসে পৌঁছেছে একটু আগেই।রিদি আর জিজুকে বসানো হয়েছে পাশাপাশি।জিজু রিদির পছন্দের শেরওয়ানি পড়েছেন।লাল শেরওয়ানি মাথায় লাল বড় টুপি।দুজনকে মানিয়েছে ভারী।জিজু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন রিদির দিকে।রিদি ব্যাপারটায় বেশ লজ্জা পাচ্ছে।আঁড়চোখে একবার বরকে দেখছে তো চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।বর বউ একে অপরকে মুগ্ধ অথচ আমার বরকে দেখতেই পাচ্ছি না আমি।অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে খুঁজে পেলাম না আমি।হয়তো রীমা কে নিয়ে ভাবতে বিজি।কথাটা মনে হতেই মুখ কালো হয়ে গেলো আমার।কিছুক্ষণেই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো রিদির।।এবার খাওয়ার পালা।আমাদের ছাড়া কিছুতেই খাবে না রিদি।রিতি আমি নাদিরা জিজু বসে আছি খাওয়ার টেবিলে।কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে আমার পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লেন উনি।উনাকে দেখে সকলে খানিকটা অবাক তবুও স্বাভাবিকভাবেই খেতে লাগলো সবাই।খাওয়া দাওয়া শেষে এবার বিদায়ের পালা।কেঁদে বুক ভাসিয়ে বিদায় নিয়েছে রিদি।ওকে জড়িয়ে নিজেকে আটকাতে পারিনি আমি।আন্টি অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছেন।উনাকে সামলে নিজের রুমের দিকে এগুচ্ছি আমি।তখনই হাতে হালকা টান অনুভব করলাম আমি।আচমকা এমন ঘটায় তাল সামলাতে না পারায় কারো বুকে আছড়ে পড়লাম আমি।চুলগুলো একদম মুখের উপরে পড়ছে আমার।সামনে কিছু দেখতে পাচ্ছি না।আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে কেউ।তার ভাব খানা এমন যেন চুলগুলো ব্যাথা পাবে তাই এত সাবধানতা।চোখ খুলে সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকালাম আমি।ওই কে রে আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছিস কেন….?সাথে সাথে আমার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরলো হুঁশশ!!কোনো কথা নয় বলে ঠোঁট ছেড়ে দিলেন আমার।
.
আপনি!!উনাকে দেখে দুপুরের কথাগুলো মনে হতেই মাথায় আগুন ধরে গেলো আমার।এটা কোন ধরনের অসভ্যতামো…?আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসার কি মানে!
.
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে এত হাইপার হইও না তো!!গালে চিমটি কেটে তুমি এমনিই কিউট তার উপর জানো রাগলে তোমায় কেমন দেখায় একদম স্ট্রবেরির মতো ইচ্ছে করে টুপ করে খেয়ে ফেলি।আচ্ছা তুমি কি চাও বলতো আমি পাগল হয়ে যাই…?
.
আশ্চর্য!!এসব কি বলছেন আপনি..?আপনি পাগল হতে যাবেন কেন…?আর আমিই বা চাইবো কেন…?
.
তুমি জানো তোমাকে শাড়ী পড়লে কতটা মায়াবী দেখায়।নরমালি তোমাকে আমি সবসময় ড্রেসেই দেখেছি একমাত্র বিয়ের দিন ছাড়া।ওইদিন ওতটা খেয়াল করিনি কিন্তু পরেরদিন দেখেছিলাম অনেকটা অগোছালো হলেও বেশ লাগছিলো।কাল থেকে তোমাকে দেখছি আর পাগল হচ্ছি।কাল কোনোমতে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম কিন্তু আজকে আর পারছিনা তাই এখানে নিয়ে আসতে বাধ্য হলাম।জানো তোমাকে এভাবে দেখলে পাগল হয়ে যাই আমি।একদম আমার বউয়ের মতো দেখায়।আর বউ কাছে না থাকলে(ঠোঁট উল্টে) দূরে গেলে কি ভালো লাগে কারোও হুম।
.
উনি কি বলছেন মাথায় ঢুকছে না আমার।পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি।দেখুন এসব আমাকে বলে লাভ নাই আমি আসছি।
.
হাত ধরে আমাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন উনি।এসব তোমাকে বলে লাভ নাই তাহলে কাকে বলবো।কানের কাছে ফিসফিস করে বউ কে বললে যদি এড়িয়ে যায় তাহলে আর কোথায় যাবো আমি হুমম!!
.
উনার প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে উঠছি আমি।কি করতে চাইছেন উনি!আমতা আমতা করে বলে উঠলাম….ককি করছেন ছাড়ুন আমাকে!
.
উহুম!ছাড়বো বলে তে ধরিনি।ছাড়বো না আমি!কিছুতেই ছাড়বো না বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন উনি…!!
.
নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমি কিন্তু রাক্ষুসের শক্তির সাথে কি আর মানুষ পারে!পারে না।তাই আমিও ব্যর্থ।আমার এই ব্যর্থতা দেখে হাসছেন উনি।সারাদিন রীমা নাম জপ করে এখন আমার সাথে আদিক্ষেতা দেখানো হচ্ছে।মূহুর্তেই রেগে গেলাম আমি…নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম উনাকে আমি।আচমকা এমন হওয়ায় কিছুটা দূরে ছিটকে গেলেন উনি।চিৎকার করে বলে উঠলাম….
.
ছিহ!আপনাকে অন্তত ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি সেই একই।আমাকে একা পেয়ে এখন ছিঃ।আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।আপনি এতটা নীচ জঘন্য একজন মানুষ।
.
মেহরীমা আমার কথাটা শোন প্লিজ!
.
কি শুনবো!!অতীতে মেহরীমা নামের একজনকে বিয়ে করেছেন।পরে ভুল বুঝতে পেরে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন এখন রীমা নামের মেয়ের সাথে প্রেম করছেন।আর সেই প্রাক্তন ওয়াইফের সাথে আজ রোমান্স করা ইচ্ছা জেগেছে এটাই বলবেন তো।
.
তুমি ভুল বুঝছো!!আরে বোকা তুমি যা বলছো সবই ঠিক।কিন্তু রীমা আর মেহরীমা সে কি আলাদা।আচ্ছা বোকা মেয়ে তুমি।।মেহরীমা একটু শর্ট করো…মেহরীমা থেকে মেহ বাদ দাও কি থাকলো রীমা।সেই রীমাই আমার বর্তমান ভালোবাসা আর ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।আমি তোমায় ভালোবাসি রীমা। তুমি আমার ভালোবাসা, তুমিই আমার স্ত্রী।আর এটাই ধ্রুব সত্যি….!!
.
.
#চলবে…..