তোমায় ঘিরে পর্ব-০২

0
1918

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_2
.
.
🥀
আরে আপনারা…?কি সৌভাগ্য আমার পেছনের লোকেদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন উনি….!!উনার চোখ অনুসরণ করে পেছনে তাকিয়ে অবাকের সপ্তম আকাশে পৌছালাম আমি!
.
ভাইয়া,আম্মু,রাফি,আঙ্কেল তোমরা এখানে বলে দৌড়ে আম্মুকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।আম্মু কোনো কথা না বলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।পাশ থেকে ভাইয়া বলে উঠলেন…..ছিঃ মিহু ছিঃ!তুই এভাবে আমাদের মান সম্মান ডোবাতে পারলি…?একটাবার ভাবলি না আমাদের কি হবে…?বাবার মাথা কতটা নিচু হয়ে যাবে।তুই জানিস তুই পালিয়ে আসার পর থেকে বাবাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বুঝতে পারছিস কতটা অপমানের ভয়ে বাবা মুখ লুকিয়ে আছে।এই মিহু তোর বিয়েতে মত নেই সেটা আর কাউকে না বলিস আমাকে তো বলতে পারতিস…?কি রে পারতিস না!বল না মিহু কেন এমনটা করলি…?
.
আম্মুকে ছেড়ে আ’এম সরি ভাইয়া!আমি বুঝতে পারিনি।
.
এখন তো বুঝতে পারছিস…?তাহলে চল আমাদের সাথে এক্ষুণি রাফির সাথে তোর বিয়ে দেবো আমি।এখনও তোকে বিয়ে করতে ওর কোনো আপওি নেই।রাফি এখনও তোকে বিয়ে করতে রাজি।
.
না ভাইয়া এটা হয় না!
.
কেন হয় না মিহু…?
.
কারণ একটা মেয়ের এক রাতে কয়টা ছেলের সাথে বিয়ে হবে ভাইয়া…?
.
কয়টা ছেলের সাথে মানে…?আর তুমি কে…?তার মানে তুমিই ওকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছো…?তোমাকে তো আমি ছাড়বো না বলেই আরাভের কলার চেপে ধরলো ভাইয়া।
.
আম্মু রাফি ও আঙ্কেলের সহায়তায় উনাকে ছাড়লেন ভাইয়া।নিজের কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন উনি….আরে ভাইয়া আপনার মাথা বড্ড গরম…এরকম কেউ করে!আগে আমার কথাটা শুনুন তারপর রিয়াক্ট করবেন ওকে।
.
এই কি বলবে তুমি…?থার্ড ক্লাস ছেলে একটা…!!রাগে ফুসতে ফুসতে তোমাকে তো আমি….
.
আরে ভাইয়া থার্ড ক্লাস কে সেটা পরে বুঝবেন আগে ঘটনাটা শুনুন।একরাতে একটা মেয়ের কটা বিয়ে হয়…?কি সবার আনসার কি “একটাই” তো!তো সেই একটা বিয়ে আপনারা আসার একটু আগেই মেহরীমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
.
কিহ!মিহু তুই এই ছেলেটাকে বিয়ে করেছিস…?তাও আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে।
.
নীরব শ্রোতার মতো কথাগুলি শুনছি আমি!এখন শোনা আর দেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই আমার কাছে।
.
আমাকে ঝাকিয়ে আবারও বলে উঠলেন ভাইয়া মিহু আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে…?
.
হ্যাঁ ভাইয়া আমি উনাকে বিয়ে করেছি।আর আজ থেকে উনি আমার স্বামী কথাটা তোমাদের কাছে অপ্রিয় হলেও এটাই ধ্রুব সত্যি!
.
ঠাসস!!তোর এতটা অধপতন হয়েছে।আমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আমাদের সবাইকে না জানিয়ে ওকে বিয়ে করেছিস।এই কথাটা তোর বাবা জানার পর কি অবস্থা হবে উনার ভাবতে পারছিস তুই।
.
আম্মু আমার কথাটা তো শুনো প্লিজ!
.
তোর কথা শুনবো আর কি শোনানোর বাকি আছে মিহু।আদৌও কি কিছু বলার আছে তোর।
.
হ্যাঁ ভাইয়া তুমি আমাকে….কথাটা বলেই আরাভ নামের দানবের দিকে তাকালাম আমি।স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ভয়ংকর কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছেন উনি।তাই ওখানেই থেমে গেলাম আমি।কারণ আবার আব্বু এখনও উনার হাতে বন্দী।তাই চাইলেও কাউকে সত্যি টা বলতে পারলাম না আমি।
.
কিরে কিছু তো বল…!
.
ভাইয়া তোমরা এখানে পৌছালে কি করে…?আমি যে এখানে তোমাদের কে বললো…?
.
জানিনা! হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে আমাকে টেক্সট করে এই ঠিকানাটা পাঠালো সাথে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ।মেহরীমা এই ঠিকানায় আছে।তাই আমরা ছোটে এখানে চলে আসি!আর এখানে এসে যা দেখলাম তা তো….!!
.
আরে ভাইয়া আপনারা ওকে ভুল বুঝবেন না।ও আমাকে ভালোবাসে সেটা আপনারা বুঝেন নি।তাই আজকে এভাবে ওকে আমার কাছে পালিয়ে আসতে হয়েছে।আর একবার যখন আমার জন্য ঘর ছেড়েই দিয়েছে তখন ওকে বিয়ে করা ছাড়া আমার হাতে কোনো ওয়ে ছিলো না।আর ওই ম্যাসেজটা আমিই দিয়েছিলাম কারণ আপনাদের মেয়ে কোথায় আছে সেটা জানা আপনাদের জরুরি বলে মনে হয়েছিলো আমার।যাইহোক আমি তো মিহুর স্বামী আর আপনাদের জামাই।সেটা আপনারা মানুন আর নাই বা মানুন।আমি শুধু জামাই হিসেবে নিজের দায়িত্ব টা পালন করেছি ব্যস!আপনাদের না জানিয়ে বিয়ে করে আমি ভুল করেছি এবার আপনারা আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো মা।
.
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।ছিঃলোকটা কি জঘন্য!এতক্ষণ যতটা ঘৃণা হচ্ছিলো এখন তার থেকে সওর গুণ বেশি ঘৃণা হচ্ছে আমার।কিভাবে আমার ফ্যামিলির কাছে আমাকে মিথ্যুক প্রমাণ করে দিলো ছিহ!
.
রাফিঃছিঃ মিহু তোমাকে এতবার জিজ্ঞেস করেছি তাও তুমি বলেছো কাউকে লাভ করো না তুমি আর আজ কিনা।তোমার কখনও ভালো হবে না মিহু।আমার সাথে প্রতারণার ফল ভালো হবে না।
.
আঙ্কেল রাফি ভাইয়া একে একে সবাই আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।সবার কথা যেমনই হোক শেষে মায়ের বলা কথাটা কলিজায় বিধলো আমার।”মিহু তোকে অনেক যত্ন আর ভালোবাসায় বড় করেছিলাম আর আজ সেই তুই আমাদের মুখে চুনকালি দিলি”।আজ থেকে জানলাম “আমার কোনো মেয়ে নেই”। একটাই ছেলের মা আমি!আর কোনোদিন আমাদের বাসা আর আমার সামনে আসবি না তুই বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলো সবাই।লোকে মা বাবার কি অবস্থা করবে বুঝে গেছি আমি।কিন্তু মা তোমরাবকি জানো নিরুপায় আমি।সবাই যাওয়ার পর স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে কাঁদছি আমি আর আমাকে আড়চোখে দেখছেন উনি।কিছুক্ষণ পর চোখের পানি মুছে নিজেকে শান্ত করে উনার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে মারলাম আমি….!!
.
আপনি এটা কেন করলেন…?কেন সবাইকে বুঝতে বাধ্য করলেন আমি আপনাকে ভালোবাসি আর তাই আপনাকে বিয়ে করেছি।কেন কেন কেন…?
.
সেটার উপযুক্ত কারণ ছিলো তাই।যদি কারণ না থাকতো আমি এসব করতাম না।সো ভাবো এটারও কারণ আছে।
.
আমার বাবা কোথায়…?উনাকে ছাড়ছেন না কেন…?
.
এত টেনশন করো কেন তুমি…!!তোমার বাবাকে অলরেডি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আর এতক্ষণে বাসায়ও পৌঁছে গেছেন উনি।এবার চলো ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়বে চলো।
.
কোথাও শুবো না আমি।আমি বাসায় যাবো।এখানে থাকবো না আমি।
.
বাসা!হা হা বলে অট্রহাসিতে ফেটে পড়লেন উনি।
.
আরে হাসছেন কেন আপনি…?আমি হাসার মতো কিছু কি বলেছি…?
.
অভিয়াসলি!যারা এখন তোমাকে ফেলে চলে গেলো এরাই আবার তোমাকে বাসায় জায়গা দেবে মনে হয় তোমার…?
.
উনার কথায় চুপ হয়ে গেলাম আমি।সত্যিই তো কেউ আমার মুখ ও দেখতে চায় না।তাহলে আমাকে থাকতে দেবে কেন..?কোথায় যাবো আমি…?কে বিশ্বাস জরবে আমায়…?
.
কি চুপ হয়ে গেলে যে…!
.
আপনি আমার সাথে কেন এটা করলেন..?আপনিও খুব ভালো করে জানেন ভালোবাসা তো দূর আমি আপনাকে চিনিই না।তাহলে সবাইকে এটা কেন বিশ্বাস করালেন আমি আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি…?
.
সব কথার উওর হয় না!সব কথার উওর দেওয়ার সঠিক সময়ও এখন নয়।সঠিক সময়ে সঠিক উওর পেয়ে যাবে।সময় হলে আমাকে প্রশ্ন না করেও উওর ঠিক পেয়ে যাবে তুমি।আর আমাকে ভালোবাসো না ঠিকই কোথাও না কোথাও মনের গহীনে কাউকে না কাউকে তো ঠিকই ভালোবাসো…!!
.
কি বললেন….!!
.
না তেমন কিছু না!যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
.
আমি যাবো না।আমি বাসায় যাবো!!
.
এই স্টপ!!ভালোভাবে বললে শুনতে পাও না।তুমি কোথাও যাচ্ছ না।আজ থেকে এটাই তোমার বাসা তুমি এখানেই থাকবে।চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।আর যদি খেতে ইচ্ছে না করে তাহলেও ঘুমিয়ে পড়ো।
.
আমার উপর জোর…..
.
হুশশ!!নো কথা বার্তা ওকে।যা বলছি তা চুপচাপ করো।আমাকে হিংস্র হতে বাধ্য করো না।তাহলে কেঁদেও কুল-কিনারা পাবে না।
.
চিৎকার করে বলে উঠলাম আমি… আর কতটা হিংস্র হবেন আপনি…?আপনার মনে হয় আপনি হিংস্র নন।কি ভাবছেন আপনি আমার বাবাকে আটকে আমাকে বিয়ে করলেই স্বামীর অধিকার সম্মান পেয়ে যাবেন।কিছুতেই পাবেন না।
.
তোমার মতো মেয়ের কাছ থেকে আমি না তো স্বামীর অধিকার চাই আর না তো ভালোবাসা।কিচ্ছু চাই না আমার।কারণ আমাকে দেওয়ার কোনো এভিলিটিই তোমার নেই।তোমার মতো মেয়ের কাছ থেকে কোনো এক্সপেকটেশনও নেই আমার।সো এসব স্বামী অধিকার তুমি আমায় কি দেবে আমিই তোমাকে স্ত্রী হিসাবে মানিনা।
.
কিহ! তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেন..?কেন আমার জীবনটাকে নষ্ট করেছেন…?যাকে স্ত্রী হিসাবে মানতে পারবেন না তাকে বিয়ে করলেন কেন…? তাও বিপরীত দিকের মানুষটার অমতে।
.
এতসব তোমার মোটা মাথায় ডুকবে না।তাই তোমার মোটা মাথায় এত প্রেশার না দিয়ে চুপ করো।বকবক করে আমার মাথা খেও না।সময় হলে সবই জানতে পারবে।আর শোন এখান থেকে পালানোর বৃথা চেষ্টা করো না।কারণ পালাতে পারবে না উল্টে আমাকে চটাবে।আর আমাকে চটালে তোমার ফ্যামিলির যে কারো লাইফ রিস্কে থাকবে।হতে পারে সে তোমার বাবা-মা কিংবা ভাই।
.
আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো বলেই উনার গলা চেপে ধরলাম আমি।আর সহ্য হচ্ছে না আমার।আমার লাইফ নষ্ট করেও সাধ মিটেনি এখন আমার ফ্যামিলির পেছনে পড়েছেন লজ্জা করে না আপনার।
.
এক ঝটকায় হাত সরিয়ে আমাকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নিলেন উনি।কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন….এই মেয়ে খুব চটাং চটাং কথা বলতে জানো।”লজ্জা” এটা আমার কেন করবে তোমার লজ্জা করে না।আগে নিজেকে দেখ তারপর আমাকে বলো।এই তুমি আর তোমার বাবা যা করেছো তার তুলনায় কিছুই করিনি আমি।এখন তোমাকে সম্মান দিচ্ছি পাঁচ জনে পাঁচটা কথা বলার আগে নিজের ওয়াইফের মর্যাদা দিয়েছি যেখানে তোমার মতো মেয়ে কোনোভাবে যোগ্যই নয় আমার আর আমার বাড়ির।তবুও মেনে নিয়েছি আরে অকৃতজ্ঞ আমার কাছে এরজন্য তোমার কৃতজ্ঞ থাকার কথা আর তুমি কিনা উল্টো সুরে গান ধরেছো…?হায়রে মানবজাতি!
.
যোগ্য নয় তো অযোগ্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছেন কেন…?আমাকে বিয়ে করার জন্য কে আপনাকে মাথার দিব্যি দিয়েছে..?আর কি বললেন….বাবা কি করেছে আর আমি কি করেছি…?
.
এই কথাগুলো শুনেও না শোনার ভান করে “শুরু হইছে পাগলের প্রলাপ” বলে শিষ দিতে দিতে উপরে চলে গেলেন উনি।ড্রয়িংরুমের মেঝেতে বসে কেঁদে চলেছি আমি।আজ না নিজের আম্মু আমাকে বিশ্বাস করছেন আর না করবেন আব্বু।এই একটা লোক আমার পুরো জীবনটা তছনছ করে দিলো।একে একে আমার থেকে কেড়ে নিলো সব আপনজনদের আমার।উনাকে কিছুতেই ছাড়বো না আমি।পালাতে না পারি জ্বালাতে তো ঠিকই পারি।
.
.
#চলবে…..🥀

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে