তোমায় ঘিরে পর্ব-০১

0
3080

#তোমায়_ঘিরে🥀
#সূচনা_পর্ব
#Labiba_Islam_Roja

তোকে আমি খুন করে ফেলবো তবুও অন্য কারো বউ হতে দেব না।জানিস তোর লাশও আমার সহ্য হবে কিন্তু তুই অন্য কারোর বউ এটা আমি সহ্য করতে পারবো না।বিয়ে করার খুব শখ তোর তাই না।আজ তোর বিয়ের শখ মিটাচ্ছি আমি। আমার থেকে বড়লোক ছেলে পেয়ে দেই দেই করে নাচতে নাচতে বিয়ের পিড়িতে বসে পড়লি হুহ।অন্ধকারে নিমজ্জিত ঘরের এক কোণে মেহরীমার গলায় ছুরি তাক করে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ।চোখ দুটো বড় বড় রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে তার।ওকে দেখলে এখন যে কেউ পাগলের তকমা অনায়াসেই লেপ্টে দেবে ওর গায়ে।কিন্তু ওর কি যায় আসে তাতে।
.
কিসব যা তা বলছেন…?(চিৎকার করে)ছাড়ুন আমাকে।কে আপনি….?আর আমাকে এখানে এভাবে তুলে নিয়ে এসেছেন কেন….?
.
ওহহ!!ডার্লিং আর কত নাটক করবে তুমি।এখন আমাকে তুমি চিনতেই পারছো না।আমি আরাভ!!তোমার ভালোবাসা!!শয়তানি হাসি দিয়ে আমি তোমার জান আবির আরাভ!!
.
ফালতু না বকে আমাকে ছেড়ে দিন।আমি কোনো আরাভ টারাভকে চিনিনা।আর ভালোবাসা সে তো অনেক দূর।দেখে তো পাগল ছাড়া কিচ্ছু মনেও হচ্ছে না।পাগলামি করতে হলে রাস্তায় গিয়ে করুন।এখানে না কারণ এটা পাগলামি করার জায়গা নয়।আমাকে যেতে দিন।বাসায় সবাই আমার জন্য ওয়েট করছে।
.
এই চপপপ!!একটাও কথা বলবি না।আর কোন কথা বললে এক্ষুনি গলা কেটে রেখে দেব।আর নিঃশ্বাস ও নিতে পারবি না।আমার কাছে বেইমানীর একমাএ শাস্তি হলো “মৃত্যু”।কিন্তু আফসোস তোর মতো বেইমানকে মৃত্যু উপহার দিতে পারছিনা কারণ…..
.
বেইমানী!!মানে আমি কখন আপনার সাথে বেইমানী করলাম।আরে বাবা আমি বলছি তো আমি আপনাকে চিনিনা।আজকের আগে কখনো আমি আপনাকে দেখিওনি তাহলে বেইমানী কথাটা আসলো কোথা থেকে।দেখুন হাত জোর করে বলছি(চোখের পানি ফেলে) আমাকে যেতে দিন।আজকে আমার বিয়ে দেখুন(নিজেকে দেখিয়ে) কত সুন্দর করে সেজেছি আমি।আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।এখন যদি আমি বাসায় না পৌঁছাই তাহলে সবাই ভাববে আমি পালিয়ে গেছি।আর সেজন্য আমার বাবা মাকে ছোট বড় অনেক কথা শুনতে হবে।আমার বাবার উঁচু মাথা নিচু হয়ে যাবে।আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি তাহলে কেন এমন করছেন।কাঁদতে কাঁদতে হাত জোর করে প্লিজ যেতে দিন আমায়।
.
আমার কোনো ক্ষতি করো নি….সিরিয়াসলি!!এই মেয়ে শোন তুমি আমার যতটা ক্ষতি করছো ততটা ক্ষতি এই দুনিয়ার কেউ কোনোদিন করেনি আর করার সাহসও দেখায়নি।চুপচাপ বসে থাকো (ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে)একটু পর তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে।সেই প্রস্তুতি নাও।আর হ্যাঁ আমি কোনো ভিখারি নই তোমাকে খাওয়ানোর মতো সামর্থ্য আমার আছে।আর যাকে বিয়ে করতে বসেছিলে তার থেকে ভালো আর্থিক অবস্থানেও আছি।খাওয়া পড়ার কোনো অভাব হবে না। সো নো টেনশন ওকে বেবি।(চোখ টিপে)
.
আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।আমার বাবার ঠিক করা ছেলে রাফির সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।বিয়ে করলে ওকেই করবে নইলে কাউকে নয়।আর ধনদৌলত দিয়ে আমি কাউকে জাজ করিনা।হতে পারে রাফি আপনার থেকে গরীব কিন্তু মানুষ হিসেবে খাঁটি হীরে।
.
কি বললি আবার বল…!কাকে বিয়ে করবি….?(চোখ গরম করে)
.
ররাফ…..হুসসস!!একদম চুপ আর কোনোদিন এই নাম মুখেও আনবি না।শোন আজ থেকে আমি হলাম তোর জীবনের সব থেকে বড় সত্যি।হীরে আর কাঁচ খুব সহজে কেউ চিনতে পারে না।যেমন তুমিও পারো না।কোনটা কাঁচ আর কোনটা হীরে সেটা বুঝার মতো বোধ-বুদ্ধি এখনও হয়নি তোমার।যাগগে ১০ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসো কারণ একটু পরে আমাদের বিয়ে হবে।(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)
.
আমার কথা কি আপনার কানে যাচ্ছে না।আমি আপনাকে বিয়ে করবো নাআআআআ!!কেন আপনাকে বিয়ে করবো আমি।চিনিনা জানিনা কোনোদিন দেখিনি।আমাকে তুলে আনলেন আর আমি আপনাকে বিয়ে করে নিলাম এটা কি হয় নাকি…?আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।আমি এখান থেকে পালাবো হুম এক্ষুণি পালাবো।
.
অহহ রিয়েলি!!ওকে তাহলে পালাও।আমিও দেখি আরাভের কাছ থেকে পালিয়ে তুমি কোথায় আর কতদূর যেতে পারো।
.
চ্যালেঞ্জ করছেন আমাকে…?
.
তোমার যা ইচ্ছে তাই ভাবো…!!তোমার সাথে বকবক করে মাথা ধরে গেলো এখন বিয়েটা মিটলেই ঘুমিয়ে পড়বো।আজ অনেক দখল গেছে আমার উপর দিয়ে।তুমি ফ্রেশ হও আমি আসছি আর হুম পারলে পালিয়ে দেখিও ওকে বাই।সী ইউ এগেইন নিউ বউ।আরে বাহ!!কি সুন্দর নাম দিলাম তোমায় “নিউ বউ”/আই মিন “নতুন বউ”🤣
.
রুম লক করে বাইরে বেড়িয়ে গেলো লোকটা।এই সুযোগ পালানোর।এদিক ওদিক পালানোর রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত আমি।কিন্তু কিছুতেই কোনো রাস্তা পাচ্ছি না।রুমের মধ্যে একটাই জানালা তাও ভাঙ্গা যাবে না।তাহলে পালাবো কি করে….?আচ্ছা লোকটা কে..? কেন আমার সাথে এমন করছে…?কি করেছি আমি…?যাগগে এখন এত ভেবে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।আগে পালাই তারপর ভাববো…!!ওহহ আপনাদের বলাই হয়নি আমি মেহরীমা নূর।আমার বাবার দুই নয়নের মণি।আমার বড় একটা ভাইয়া আছে।যে ২৪ ঘন্টাই আমার পেছনে লাগে আর ঝগড়া করে বেড়ায়।পারিবারিকভাবেই আজ রাফির সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।আমিও মনের আনন্দে সেজেগুজে নিজ রুমে বসে ছিলাম তখনই এই আরাভ না টারাভ গিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে এখানে নিয়ে আসে।তারপরের ঘটনা তো আপনাদের জানাই আছে।
.
.
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই দরজার এক কোণে লুকিয়ে পড়লাম আমি।লোকটা দুজন লোককে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দৌড়ে রুম থেকে বের হতে যাবো তখনই খপ করে আমার হাত ধরে নিলো বজ্জাত টা।
.
উফফ ডার্লিং!!এত ছটফট করো কেন তুমি।এত ছটফট করো না।তোমার লেগে যাবে তো।
.
লাগলে লাগুক তাতে আপনার কি…?প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।কেন আমার এমন সর্বনাশ করছেন…?কি করেছি আমি…?
.
সর্বনাশ ধুর বোকা মেয়ে!!আমি তো তোমায় সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচাচ্ছি।কোথায় আমায় ধন্যবাদ দেবে তা না উল্টে আমায় দোষারোপ করছো।আচ্ছা বাদ দাও কাজী এসে গেছে চলো আমরা বিয়ে করবো।
.
নাআআআ!!আমি বিয়ে করবো না।
.
এই চুপ!!একদম চিৎকার করবি না।বিয়ে তো তোকে করতেই হবে।এই দেখ বলে ফোনে একটা ভিডিও প্লে করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন উনি।ভিডিও টা দেখে আতকে উঠলাম আমি।বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো বলে উঠলাম….না এ হতে পারে না।আমার বাবার এই অবস্থা কেন…?
.
তোমার বাবাকে আমার লোকেরা আটকে রেখেছে।যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি আমায় বিয়ে করছো ততক্ষণ তোমার বাবা ওখানে হাত পা বাধা অজ্ঞান অবস্থায় এভাবেই আটকে থাকবে আর যদি বিয়ে কমপ্লিট হয়ে যায় তাহলে ছাড়া পাবে আর যদি না হয় তাহলে হুশশশ করে উপরে চলে যাবে।
.
না না না এটা হতে পারে না।আপনি আমার বাবাকে ছেড়ে দিন।কিচ্ছু করবেন না উনার।
.
তার মানে তুমি রাজি…?
.
না আমি বিয়ে করবো না।
.
তাহলে ওখানে তোমার বাবার লাশ পড়বে।
.
না আপনি কিচ্ছু করবেন না।আমার বাবার কিচ্ছু হবে না।
.
তুমি বিয়েও করবে না।তোমার বাবাও মরবে না তা কি হয় খুকি।যে-কোনো একটা বেচে নাও।হয় সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার লাশ নয় লাল বেনারসি।এবার বল কোনটা মানবে তুমি…!!
.
কিছুক্ষণ ভেবে কোনো উপায় নেই আমার কাছে।চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরছে আমার।আমার যাইহোক না কেন বাবাকে বাঁচাতে হবে আমায়। বাবার জন্য না হয় আজ নিজের জীবনকে বিসর্জন দিলাম আমি।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দু-চোখ মুছে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠলাম…. আমি রাজি…!!
.
এই তো গুড গার্ল…!!কাজী সাহেব বিয়ে শুরু করেন।রামীম এদিকে আয় তো।সাথে শ্যামলা একটা ইয়াং ছেলে রুমে প্রবেশ করলো।তুই আমাদের বিয়ের সাক্ষী।
.
কিছুক্ষণেই সস্পন্ন হয়ে গেলো আমার বিয়ে।হ্যাঁ বিয়ে….যে বিয়ে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি।কিন্তু তার কিছুই পূরণ হলো না আজ।যাকে বিয়ে করেছি তাকেই চিনিনা আমি।কি আজব না আমার পরিণতি।
.
অন্ধকার রুম থেকে আমাকে নিয়ে বের হলেন উনি।বাড়িটা বেশ বড়।আশেপাশে নানা ধরণের ইয়া বড় বড় ওয়াল মেট ঝুলছে দেয়ালে দেয়ালে।সাদা আর লাল কম্বিনেশনে রং বেশ লাগছে।আমি যেখানে ছিলাম তার পাশেই ড্রয়িংরুম।আমাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দাঁড়ালেন উনি।বাড়িতে আর কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না আমার।হঠাৎ কিছু একটার শব্দে চমকে উঠলাম…..পেছনে তাকিয়েই অবাকের সপ্তম আকাশে পৌছালাম আমি…..!!
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে