তোমার স্মৃতি পর্ব-১৩

0
2512

#তোমার স্মৃতি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

“কেমন আছেন ডাক্তার নিবিড়। এতো ভালোবাসা কেন বলুন তো। দোয়া করি পূর্ণতা পাক আপনাদের ভালোবাসা ”

নিবিড় কিছু বলতে নিবে তার আগেই কলটা কেটে গেল। সে বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে এসব। কে ছিলো ফোনের অপরপাশে। চিন্তায় পড়ে গেল সে। ভালো লাগছে না তার। কে ছিল লোকটা। কে! ভাবতেই নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো সে। কিছুক্ষণ ওমন করে থেকে উঠে পড়ল সে। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ মুখে পানি দিলো সে। মাথাটা ধরেছে তার। একমগ কফি খেলে হয় তো ভালো লাগবে তার। তাই ভেবেই সে একমগ কফি নিয়ে এলো। কফির মগ নিয়ে দাড়ালো কেবিনের ছোট জানালার কাছে। আকাশে চাঁদ না থাকায় অন্ধকার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কৃত্তিম আলো তে মানুষ আলোকিত করে রেখেছে। রাস্তা দিয়ে এখনো গাড়ির চলাচল রয়েছে। নিবিড় আকাশের দিকে দৃষ্টি রাখলো। কফিটা খেয়ে একটু ভালো লাগছে তার। সে ঝেড়ে ফেলল সবকিছু। কাল রাতে তাদের ফ্লাইট। কি হবে সব আল্লাহ জানে। সানজিদাকে চাই তার। যে করেই হোক না কেন! নিবিড় আরেক পলক সানজিদার দিকে তাকিয়ে আবার বাহিরে চোখ রাখলো। আচ্ছা মেয়েটা কি সুখের সন্ধান পাবেনা। অন্ধকারে কি পাবেনা একটু আলোর সন্ধান। রোহান কেন হঠাৎ পাল্টে গেল। কেমন যেন লাগছে ব‍্যপারটা নিবিড়ের কাছে। কি হয়েছিল তার।

নিবিড়ের ভাবনার মাঝেই ফজরের আজানের শব্দ ভেসে এলো তার কানে। নিবিড় ফ্রেস হয়ে হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত মসজিদে নামাজ পরতে গেল। সে সাধারণত নামাজ পরেনা। সময় সময় পরে। নিবিড় নামাজ শেষে মোনাজাত ধরলো। মোনাজাতে সে কেঁদে দিলো। তার এমন কান্না করা দেখে আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু সেটাতে তার কোনো হেলদোল নেই। সে যে ব‍্যস্ত তার সৃষ্টিকর্তার কাছে তার প্রিয় মানুষটাকে নেওয়ার আকুতি। দীর্ঘক্ষণ মোনাজাত শেষে নিবিড় আবার সানজিদার কাছে চলে গেল। কেবিনে শশীকে দেখে সে বলল

“একি শশী তুমি এতো সকালে কি করছো?”

শশী তার লাল চোখ নিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো। গম্ভীর কন্ঠে সে বলে উঠলো “সানজিদাকে না দেখে আমি থাকতে পারছিলাম না।” শশী নিবিড়ের কাছে এগিয়ে মাথাটা নিচু করে বলল “ভাইয়া আমার একটা কথা রাখবেন।”

নিবিড় কিছুটা অবাক হলো শশীর এমন কথায়। সে অবাক কন্ঠে বলল “এমন করে বলছ কেন শশী। কি হয়েছে কোনো সমস্যা।”

শশী ফুপিয়ে উঠল। ফোপাতে ফোপাতেই বলল “ভাইয়া প্লীজ সানজিদাকে আবার আগের মতো করে দিন। আমার মা বাবার পরে ওই আমার আপনজন। ওকে প্লীজ সুস্থ করে দিন।”

নিবিড় কি বলবে বুঝতে পারলো না। কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারলো না সে। সানজিদার ঘুম ভেঙে গেল। ও পিটপিট করে তাকালো। শশী এগিয়ে গেল সানজিদার কাছে। সানজিদা উঠে বসার চেষ্টা করলো। শশীর সাহায্যে উঠে বসলো। ইশারায় নিবিড়কে কাছে ডাকলো। নিবিড়ও বাধ‍্য ছেলের মতো সানজিদার কাছে এসে পরল। নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো সানজিদা। সানজিদা নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বলল “তুই প্লীজ আমার বেস্টিকে দেখে রাখিস। ওর আপনজন বলে কেউ নেই। প্লীজ দেখে রেখ ওকে। প্রমিজ কর আমাকে দেখে রাখবে ওকে।”

নিবিড় সানজিদার হাতে হাত রেখে বলল “তুমি চিন্তা কর না আমি আছি তো। কিছু হবে না। এখন বাদ দেও এসব। এখন বল কেমন লাগাছে তোমার!”

সানজিদা মলিন হেসে বলল “ভালো এই দেখ তোরা একদম কান্নাকাটি করবি না। আমার ভালো লাগেনা এসব। একেকজন চোখমুখের কি অবস্থা করেছিস দেখ তো। এখন হাস তো দুইজন। তাছাড়া আমি কিন্তু আর কথা বলবো না তোদের সঙ্গে।”

দুইজনেই অনেক কষ্টে হাসলো। সানজিদা কাঁপাকাঁপা হাতে দুইজনের হাত ধরলো। তারপর মুচকি একটা হাসি দিলো।

নিবিড় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানজিদার দিকে। খুব ইচ্ছে করছে তার মেয়েটাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে থাকতে। কিন্তু কোথায় যেন এক বাধা কাজ করছে।

সানজিদা নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বলল “আন্টি কোথায় রেএ তাকে তো দেখতে পারছিনা।”

নিবিড় কিছু বলতে নিবে তার আগেই রেহেলা বেগম কেবিনে এসে বলল “আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে তোর নিবিড়। আমি কতো করে বলছিলাম তোর কাছে থাকবো থাকতেই দিল না। বলে আমি নাকি অসুস্থ হয়ে যাবো। এটা কোনো কথা বল তো।”

সানজিদা মুচকি হেসে বলল “আচ্ছা বাবা হয়েছে এখন আসো তো আমার কাছে। আর নিবিড় শশী তোরা একটু বাহিরে যাহ তো। আমি আন্টির সঙ্গে একটু কথা বলবো।”

নিবিড় বলল “কেন আমাদের সামনেই বল কি হবে তাতে।”

রেহেলা বেগম চোখের ইশারায় ওদের যেতে বললে ওরাও কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সানজিদা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। তারপর রেহেলা বেগমের দিকে চোখ রাখলো। রেহেলা বেগম প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানজিদার দিকে।

সানজিদা মলিন হেসে রেহেলা বেগমের হাত ধরে বলল “আন্টি আমার একটা কথা রাখবে। প্লীজ না করবেনা বলো।”

রেহেলা বেগম কিছু বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ সানজিদা এমন কথা বলছে কেন মাথায় ঢুকছে না তার। তিনি বললেন “এমন করে বলছিস কেন মা। তুই কিছু বলবি আর আমি রাখবো না এমনটা কি হয় বল তো।”

সানজিদা বলল “এবার আমি যা চাইবো তাই দিবে প্রমিজ করো।”

রেহেলা বেগম আর কিছু না ভেবে বললেন “আচ্ছা ঠিক আছে রাখবো বল এখন কি কথা।”

সানজিদার কথা শুনে তব্দা মেরে বসে রইলো রেহেলা বেগম। কি বলবে বুঝতে পারছেনা সে। চোখ ছলছল করছে তার। সে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলো সানজিদাকে। সানজিদাও ফুপিয়ে উঠলো।

——————

আর কিছুক্ষণ পর ফ্লাইট। ওরা সবাই এয়ারপোর্ট এ বসে আছে। রেহেলা বেগমের থম মেরে বসে আছে। শশী কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। আর নিবিড় সে তো না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ‍্য করতে। চোখ মুখে তার এক অন‍্যরকম গম্ভীরতা। সানজিদার চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে। সে কি আর পারবে এই দেশের মাটিতে পা রাখতে। সে কি ফিরতে পারবে তার চেনা লোকজনের কাছে। চোখ বন্ধ করে ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তার শেষ ইচ্ছাটা তো সেই দিনই পূরণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একটা কথা অজানাই রয়ে গেল তার। রোহান কেন তাকে ছেড়ে দিলো। হঠাৎ তার পরিবর্তনের কারণ কি ছিলো। সে কি জানতে পারবেনা কখনো।

————–

অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে দাড়িয়ে আরো একবার আল্লাহর নাম নিয়ে নিলো নিবিড়। আজ অপারেশন থিয়েটারেরই থাকবে সে। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে তার। কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে সে পাশে তাকাতেই দেখলো আজিজ সাহেব। আজিজ সাহেব নিবিড়কে ইশারায় থিয়েটারের ভিতরে যেতে বলল। নিবিড় সবকিছু ঝেড়ে ফেলে থিয়েটারের ভিতরে প্রবেশ করলো। কেমন জানি অস্থিরতা কাজ করছে নিবিড়ের মাঝে। তার কি সুযোগ হবে একমগ কফির সঙ্গী হিসেবে সানজিদাকে পাশে পাওয়ার। সুযোগ হবে কি সানজিদার সঙ্গে শীতের সকালে শিশির বিন্দুর উপর হাঁটার। সুযোগ হবে কি জোছনা বিলাস করার সুযোগ। সুযোগ হবে কি মায়াবতীর মুচকি হাসি পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকার। সুযোগ হবে কি ঘুমন্ত পরীটার মুখপানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার। সুযোগ হবে কি ভালোবাসার পূর্ণতা দেওয়ার। আর ভাবতে পারছেনা নিবিড়।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে