তোমার স্মৃতি পর্ব-১১

0
1972

#তোমার স্মৃতি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

হঠাৎ হ‍্যাপি বার্থডে বলে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। সানজিদা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। নিবিড় শশী রেহেলা বেগম জান্নাতি বেগম ওনার হাসবেন্ড তার ছোট মেয়ে এসেছে। সবার মুখে হাসি। সানজিদা ভুলেই গিয়েছে যে আজ তার জন্মদিন। রোহান যতদিন তার জন্মদিন পালন করেছে তার পর সে আর পালন করেনি। মনেই রাখেনি সে। সবার চিল্লাচিল্লিতে হুশ ফিরলো সানজিদার। নিবিড় হাসিমুখে সানজিদার হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে আসে। নিবিড় আজ নেভি ব্লু রঙের শার্ট আর জিন্স পরেছে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি। সবাই আনন্দ করে সময়টা কাটালো। রাত বারোটা বাজে ছাদে নিবিড় আর সানজিদা দাড়িয়ে আছে। বাকি সবাই নিচে চলে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। দুইজনই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চারপাশে একটা নিরবতা গ্রাস করছে। সেই নিরবতা ভেঙে নিবিড় বলতে লাগলো

“চেয়েছিলাম তোকে হৃদয়ের মাঝে রাখিব যতনে। দিবি কি সেই সুযোগ। দিবি কি তোর বসন্তের সময় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে থাকার সঙ্গী। হবি কি আমার শীতের সকালে কুয়াশা মাখা রাস্তায় হাটার সুযোগ। আমি যে তোকে হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে রাখতে চাই সারাজীবনের জন‍্য। হবি কি আমার চলার সঙ্গী। হবি কি আমার হালাল ভালোবাসার মানুষ!” নিবিড় মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলো।

সানজিদা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিবিড়ের কাধে হাত রাখলো। আর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

“আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুই আমার মায়ায় পরেছিস। কিন্তু আমার মতো অনিশ্চিত মানুষের সঙ্গে না না। নিজেকে সামলে নে। দেখবি আমার চেয়েও অনেক ভালো মেয়ে পাবি।”

সানজিদার হাত আকরে ধরলো নিবিড়। তার চোখ ছলছল করছে। সে গম্ভীর কন্ঠে বলল

“আমার যে তোকেই চাই। আমি চাই না ভালো কাউকে আমি শুধু তোকে চাই। বিয়ে করবি আমাকে।”

সানজিদা নিবিড়ের থেকে হাত ছাড়িয়ে ছুটে চলে গেল ছাদ থেকে। সানজিদা যেতেই নিবিড় হাটু গেড়ে বসে পরলো। বুকে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার ভালোবাসা কি পূর্ণতা পাবেনা। সে কি সানজিদাকে পাবে না। হাউমাউ করে কান্না করছে নিবিড়। ছেলেরা নাকি সহজে কান্না করে না। অতিরিক্ত কষ্ট পেলেই তারা কান্না করে। নিবিড়ের যেন সবকিছু থমকে গেছে। আচ্ছা এখন কি সানজিদা ফ্রেন্ডশিপ টাও ভেঙে দিবে। ভাবতেই আতকে উঠলো নিবিড়। সে চোখ মুখ মুছে দৌড়ে নিচে চলে এলো। দেখলো সানজিদার রুমে দরজা অফ করা। দেখেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো নিবিড়ের। নিবিড় দরজায় নক করতে লাগল। নিবিড় যেন পাগল হয়ে গিয়েছে। সে পাগলের মতো সানজিদাকে ডাকতে লাগল। কিছুক্ষণ পরেই রুমের দরজা খুলে গেল। দরজা খোলা পেয়েই নিবিড় হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে পরলো। সে সানজিদাকে দেখে অবাক হলো। কারণ ওকে দেখে অনেক স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে। সে কেবল শাওয়ার নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। নিবিড়ের অবাক দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে সানজিদা শান্ত কন্ঠে বলল “কি হয়েছে তুই কি মনে করেছিলি। আমি এইনিয়ে অনেক কিছু সহ‍্য করেছি। আর একটা কালো অতীত আছে বুঝলি। যার জন‍্য এই ঘটনাটা খুব স্বাভাবিক।” সোফাই পা ঝুলাতে ঝুলাতে কথাটা বলল।

নিবিড় ধীরপায়ে সানজিদার কাছে এগিয়ে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরে সানজিদার সামনে। নিবিড় বলল “আমি জানি সব। কিন্তু তারপরও আমি তোকে ভালোবাসি। আচ্ছা তুই বল ভালোবাসা কি এসব ভাবনা চিন্তা করে হয়।”

সানজিদা বলল “দেখ তুই অবুঝ না। তুই বোঝার চেষ্টা কর আমাকে তুই কখনো পাবিনা। তুই কেন ভালোবাসতে গেলি আমায় বল তো। আমাকে ভালোবেসে শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার মানে হয় না। আমি আর এই দুনিয়ায় থাকবো কতদিন।”

নিবিড় হুট করে সানজিদাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। সানজিদা কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। সে করবে বুঝতে পারছেনা। কি করা উচিৎ তার।

কেটে গেছে তিনদিন। নিবিড় আর ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসেনি সানজিদার কাছে। নিবিড় আগের থেকে অনেক চুপচাপ ও গম্ভীর হয়ে গিয়েছে। সবাই খেয়াল করেছে ব‍‍্যাপারটা। সানজিদার অনেক খারাপ লাগছে ব‍্যাপারটা। এতো হাসিখুশি ছেলেটা এমন হয়ে যাওয়ায় সানজিদা নিজেকে দোষারোপ করছে। তার জন‍্যই তো আজ ওর এই অবস্থা। এই দুইদিন তেমন একটা কথা হয়নি নিবিড়ের সঙ্গে। নিবিড় অনেক সকালে বের হয়ে যায় আর আসে অনেক রাতে। সকাল হতেই সানজিদা এগিয়ে যায় নিবিড়ের রুমের দিকে। সানজিদা নক করতেই নিবিড় ভিতর থেকে বলে উঠলো আমার রুমে আসতে তোর পারমিশন লাগবেনা। সানজিদা রুমে ঢুকে দেখলো নিবিড় বেডের সঙ্গে হেলান দিয়ে একহাতে ফাইল আর একহাতে কফির মগ নিয়ে আছে।

সানজিদা ধীর কন্ঠে বলে উঠলো “কেমন আছিস তুই?”

নিবিড় ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সানজিদার দিকে তাকায় আর বলে “হঠাৎ এই কথা বললি যে!”

সানজিদা এগিয়ে গিয়ে বেডে বসে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল “সরি রেএ আমার জন‍্যই তোর এই অবস্থা। খুব ভালো হতো যদি আমাদের দেখাই না হতো। আমি আসলেই খারাপ। আমি সবার অমঙ্গল ডেকে নিয়ে আসি। আমায় মাফ করে দিস। আর একটাই অনুরোধ প্লীজ তুই আবার আগের মতো হয়ে যাহ।” বলেই জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো সানজিদা।

সানজিদার হঠাৎ এমন অবস্থা দেখে নিবিড় ফাইল রেখে সানজিদা কাছে এসে অস্থির হয়ে জিঙ্গাসা করতে লাগলো “কি হয়েছে!” সানজিদা মাথা চেপে ধরে পানি ভরা ছলছল চোখে খুব কষ্টে বলে উঠলো “ভালো থাকিস আমার সময় আর নেই হয় তো। একটা লালটুকটুকে মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিস।” হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল সানজিদা। নিবিড় “সানজিদা” বলে একটা চিৎকার দেয়। নিবিড়ের চিৎকার শুনে শশী আর রেহেলা বেগম দৌড়ে আসে নিবিড়ের রুমে। সানজিদাকে এমন অবস্থায় দেখে ওরাও আতকে উঠে। নিবিড় অস্থির হয়ে সানজিদা কোলে তুলে রওনা দেয় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। চোখে তার প্রিয় মানুষ হারানোর ভয়। সে যদি হারিয়ে ফেলে সানজিদাকে তখন কি হবে। বাঁচবে কি করে ও সানজিদাকে ছাড়া। এই মায়াবী চেহারা দেখা ছাড়া যে থাকতেই পারবেনা।

সানজিদাকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলো। আজিজ সাহেব নিবিড়কে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে দিলো না। নিবিড় অপারেশন থিয়েটারের সামনে পাইচারি করছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে। চারপাশে অসহ‍্য লাইজল ডেটল ঔষধের গন্ধ। এগুলোতে সহ‍্য করা স্বাভাবিক ব‍্যাপার নিবিড়ের কাছে। কিন্তু এখন কেন যেন অসহ‍্য লাগছে এসব। বিরক্ত লাগছে এগুলোর গন্ধ। পাগল হয়ে যাচ্ছে যেন নিবিড়। হঠাৎ শশী দৌড়ে নিবিড়ের কাছে এসে বলল

“নিবিড় ভাই সানজিদার নামে একটা পারসেল এসেছে।”

নিবিড় বলল “এগুলো পরে দেখো। এখন শুধু প্রার্থনা করো আমার সানজিদার যেন কিছু না হয়। আমি যে ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার জন‍্যই এমন হলো। আমি কেন ওমন করতে গেলাম।”

শশী অস্থির কন্ঠে বলল “ভাইয়া পারসেলটা রোহান দিয়েছে।”

নিবিড় অবাক হয়ে বলল “এতোদিন পর হঠাৎ যাইহোক বাদ দেও এসব সানজিদার কথা ভাবো। ভালো লাগছে না আর এসব।”

শশী আর কিছু বলার মুখ পেল না যেন। রেহেলা বেগম নিবিড়কে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। অনেকক্ষণ পর আজিজ সাহেব অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে এলো।

নিবিড় দৌড়ে আজিজ সাহেবের কাছে এগিয়ে গেল। অস্থির কন্ঠে বলল “কি অবস্থা আমার সানজিদা। বলুন স‍্যার ও ঠিক আছে তো। ওর কিছু হয়নি তো!”

আজিজ সাহেবের

চলবে..,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে