#তোমার স্মৃতি
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
নিবিড় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানজিদার দিকে। সানজিদা পানি নিয়ে খেলছে আর খিলখিল করে হাসছে। নিবিড় ভাবতে লাগলো এই মেয়েটার মধ্যে এই বাচ্চামো ভাবও আছে। নিবিড়ের ভাবনার মাঝেই সানজিদা ছুটে এসে নিবিড়কে টানতে টানতে পানির কাছে নিয়ে গেল। নিবিড় শুধু অবাক নয়নে সানজিদার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছে মেয়েটার। মেয়েটার হঠাৎ এমন আচরণে নিবিড়ে থতমত খেয়ে গিয়েছে একদম।
সানজিদা নিবিড়ের মুখে পানির ছিটা দিতেই হুশ ফিরলো নিবিড়ের। নিবিড় হাসিমুখে পানি নিয়ে খেলতে লাগলো সানজিদার সঙ্গে।
অনেকক্ষণ ওরা ঘুরাঘুরি করে পেটে ক্ষুধার অনুভব হতেই নিবিড় আর সানজিদা রির্সোটে ফিরে যায়। ওখান থেকে ফ্রেস হয়ে ওরা রওনা হয় রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে।
রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে আবার ঘুরাঘুরি করতে বের হয় ওরা। এখন অনেকটাই ফ্রি হয়ে গিয়েছে ওরা। সানজিদা রাস্তা দিয়ে তিড়িং বিড়িং করে চলছে। নিবিড় ধাক্কার উপর ধাক্কা খাচ্ছে সানজিদার মতিগতি দেখে। সানজিদা এবার লাফিয়ে উঠে হাতের আঙুল তাক করে নিবিড়কে বলল
“ওই দেখো ফুলের দোকান। একটু কাঠগোলাপের মালা কিনে দিবে। আমি না হয় পরে সব টাকা দিয়ে দিবো।”
নিবিড় হকচকিয়ে গেল। তারপর মুচকি হেসে ফুলের দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। একটা বেলি ফুলের মালা আর একটা কাঠগোলাপের মালা কিনলো নিবিড়। সানজিদা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি নিবিড়ের উপর নিক্ষেপ করে বলল
“বেলি ফুলের মালা দিয়ে কি করবেন। এটা কার জন্য নিচ্ছো।”
নিবিড় মুচকি হেসে সানজিদার দিকে তাকিয়ে সানজিদার পিছনে গিয়ে ওর চুলে বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দেয়। আর কাঠগোলাপের মালা ওর হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল “বেলি ফুল আমার অনেক পছন্দ। খুব ইচ্ছা ছিলো তোমাকে বেলিফুলের মালা দেওয়ার।”
সানজিদা মুচকি হাসলো। দুইজন মিলে ঘুরাঘুরি করে রির্সোটে ফিরে আসলো। সানজিদা রুমে যাওয়ার আগে নিবিড়কে বলল
“ধন্যবাদ তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য।”
নিবিড়ের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। সানজিদা চলে গেল ওর রুমে। নিবিড় ওর রুমে গিয়ে ধপ করে বেডে বসে পরলো। পেন্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সানজিদার অজান্তে তোলা পিকগুলো দেখতে লাগলো। হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠতেই নিবিড়ের হুশ ফিরলো। সে দেখলো শশী কল করেছে। সে কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো। শশী অস্থির হয়ে বলল
“ভাইয়া সানজু কেমন আছে। ওর কি এখনো মাথা ব্যথা করছে। ও এখন কি করছে?”
নিবিড় বলল “আরে আরে শান্ত হও। ও তো ভালোই আছে কিন্তু কি হয়েছে এমন করছো কেন!”
শশী বলল “ও একটু আগে ফোন দিয়ে কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলছে।”
নিবিড় অবাক হয়ে বলল “কি বলছে ও”
শশী বলল “মানে আসলে কিভাবে যে বলি”
নিবিড় বলল “ধুরু এমন না করে কি হয়েছে ক্লিয়ার করে বলো তো।”
শশী বলল ও আমাকে কল দিয়ে বলছে “যে আমাকে নাকি জরিয়ে ধরে কিস করতে মন চাচ্ছে। আরো পাগলের মতো কিছু বলছে।”
নিবিড় হো হো করে হেসে উঠলো শশীর কথা শুনে। পেটে হাত দিয়ে হাসছে সে।
শশী কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল “কি হয়েছে এমন পাগলের মতো হাসছেন কেন!”
নিবিড় অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলল ওর তেমন কিছুই হয়নি। ও আমার সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ করছে। আজকে সারাদিন ঘুরাঘুরি করেছে। অনেক খুশি হয়েছে সে ঘুরাঘুরি করে।
শশী ভেবলার মতো হেসে দিলো। আর বকার মতো সানজিদার কথাগুলো নিবিড়কে বলে সে লজ্জা পরে গেল। খট করে কল কেটে দিলো সে।
নিবিড় একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আর হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সে সানজিদার রুমে চলে যায়। রুমে নক করতেই সানজিদা দরজা খুলে দেয়। নিবিড় মুচকি হেসে রুমে প্রবেশ করলো। দুইজন মিলে রাতে মুভি দেখার প্লান করেছে। নিবিড় একটা ফানি মুভি দিয়েছে। সামনে চিপস চকলেট পপকর্ণ আর কোকাকোলা নিয়ে রেখেছে। ওরা খাচ্ছে আর দেখছে। দুইজন দেখছে আর হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সানজিদা হাসতে হাসতে লাল হয়ে গিয়েছে। নিবিড় এবার মুভি দেখা বাদ দিয়ে সানজিদার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা হাসলে এতো সুন্দর লাগে। ভাবতেই গালে হাত রেখে নিবিড় সানজিদার দিকে তাকালো। সানজিদা নিবিড়কে ওর দিকে এমন করে তাকাতেই সে ইশারায় জিঙ্গাসা করলো কি হয়েছে।
নিবিড় মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলল না।
কেটে গেছে একমাস। এখন নিবিড় সানজিদার বেস্টফ্রেন্ডের কাতারে পরে গিয়েছে। এই একমাসে নিবিড় তাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রদান করেছে। সময় মতো ঔষধের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে। ট্রিটমেন্ট পুরো দমে শুরু করেছে। সানজিদার অপারেশনের আর বিশ দিন বাকি। নিবিড়ের এখন প্রচন্ড ভয় কাজ করে। সে সানজিদাকে হারিয়ে ফেলবে না তো।
আজ সানজিদার জন্মদিন। নিবিড় আজকেই তার মনের কথা বলবে সানজিদাকে। সানজিদার থেকে আর লুকাতে পারছে না তার মনের অনুভূতিগুলো। সে ছাদে সানজিদাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছে। সে নিজে পছন্দ করে নীল রঙের একটি শাড়ি। একগুচ্ছে নীল কাঁচের চুড়ি আর বেলি ফুলের মালা এনেছে।
নিবিড় হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বিকেল চারটা বাজে। সন্ধ্যায় সে ওই সারপ্রাইজ দিবে। তাই সে চুপিচুপি সানজিদার রুমে উঁকি দিলো। কিন্তু রুমে সানজিদাকে দেখতে পেল না। সে রুমে প্রবেশ করে বুঝতে পারলো সানজিদা ওয়াশরুমে গিয়েছে। নিবিড় মুচকি হেসে শাড়ির পেকেটটি রেখে একটি চিঠি পাশে রাখলো।
সানজিদা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে বেডের উপর চোখ পরতেই তার চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো। সে এগিয়ে এসে শাড়ির পেকেটটি হাতে নিলো। শাড়ি চুড়ি দেখে অবাক হলো। তারপর পাশে থাকা চিঠিটি তুলে নিলো। চিঠির ভাজ খুলে পড়তে লাগলো। চিঠিতে লেখা আছে
“প্লীজ এইগুলো পড়ে ছাদে এসো আমি অপেক্ষায় আছি।”
সানজিদা চিঠি হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো নিবিড় এতো সেজেগুজে ছাদে যেতে কেন বলল। তখনই তার ফোনের মেসেজ টুংটা বেজে উঠলো। সানজিদা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নিবিড় মেসেজ করেছে। এতো ভেবে লাভ নেই ওগুলো পড়ে চলে এসো।
সানজিদা ভাবুক ভাব নিয়েই রেডি হতে লাগলো। শাড়ি চুড়ি পরে নিয়েছে সে। কিন্তু চুলে হাত দিতেই চুলগুলো খসে খসে আসতে লাগল। সানজিদা মুখটা ফেকাসে হয়ে গেল। তার শখের চুলগুলোও বেইমানি করেছে তার সঙ্গে। মলিন মুখে দাড়িয়ে রইলো সে। তখনই আবার মেসেজ টুং আবার বেজে উঠলো। সানজিদা দেখলো নিবিড় আবার মেসেজ দিয়েছে। ”ধুর পাগলি এটা কি মুখ মলিন করার কি আছে। দেখবে তুমি আবার ঠিক হয়ে যাবে। এখন যে ভাবে আছো সে ভাবেই আসো তো।”
সানজিদা আর মাথায় হিজাব বেধে নিলো আর বেলি ফুলের মালাটা নিজের হাতে পেঁচিয়ে নিলো। চোখের নিচু কালো দাগ মেকআপ করে ঢেকে নিলো। মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে। তবুও সানজিদা নিজেকে নিজে বুঝিয়ে মুচকি হেসে গাড় করে কাজল দিলো চোখে। তারপর আবার নিজেকে আয়নায় দেখে সে রওনা হলো ছাদের দিকে। ছাদে যেতেই দেখলো ছাদটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। সানজিদার কপাল কুচকে এলো। সে নিবিড় নিবিড় বলে ডাকতে লাগলো।
চলবে…..