#তোমার স্মৃতি
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
নিবিড় চলে যেতেই সানজিদার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো।
নিবিড় বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছেনা। হঠাৎ রুমের লাইট জ্বলে উঠায় নিবিড় তাকিয়ে দেখলো রেহেলা বেগম এসেছে। রেহেলা বেগম মুচকি হাসি দিয়ে নিবিড় কাছে এসে বলল
“তুই শুয়ে পর আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি
নিবিড় ফট করে ওর মায়ের কোলে শুয়ে পরলো। রেহেলা বেগমও পরম স্নেহে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। নিবিড় চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে উঠলো
“আম্মু কালকে আমি সানজিদাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবো কক্সবাজার। আসতে তিনদিন সময় লাগবে তোমার কি কোনো সমস্যা হবে!”
রেহেলা বেগম বললেন “ধুর আমার সমস্যা হবে কেন আর শশী তো বাসায় থাকবেই। আবার সব সার্ভেন্ট ও আছে। তুই নিশ্চিন্তে যাহ।”
মায়ের কথায় একচিলতে হাসি ফুটে উঠলো নিবিড়ের ঠোঁটে। সে গুটিসুটি হয়ে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পরলো। রেহেলা বেগম ছেলেকে আলতো করে বালিশে শুয়ে দিয়ে কাথা টেনে দিলো। একপলক ছেলের মুখপানে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। স্বামী মারা যাওয়ার পর এই ছেলেটাই তার সব। ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করেছে এটা ভেবেই সস্থির নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। ছেলেটা যে সানজিদাকে প্রচণ্ড পরিমাণে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা আর বুঝতে বাকি নেই তার। সে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলো যেন মেয়েটা সুস্থ হয়ে যায়।
ঘড়িতে বাজে সকাল নয়টা নিবিড় কালো শার্ট কালো জিন্স পরে গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর একটু পরপর সানজিদার রুমের বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে। আচ্ছা ও কি আসবে নাকি আসবে না। বুঝতে পারছে না ও।
সানজিদাকে নিবিড়ের দিকে আসতে দেখে নিবিড় পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটি একটি সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে। চুলগুলো উঁচু করে বেধে নিয়েছে। সামনের ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে। মুখে সাজগোজের কোনো চিহ্নটুকুও নেই। তবুও নিবিড়ের কাছে সানজিদাকে অপূর্ব লাগছে। সানজিদা নিবিড়ের সামনে এসে তুরি বাজালো। নিবিড়ের যেন থতমত খেয়ে গেল। নিবিড় মাথার পিছনে হাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে গাড়িতে গিয়ে বসলো। সানজিদাও চুপচাপ বসে পরলো গাড়িতে। সানজিদা গাড়িতে বসতেই নিবিড় গাড়ি চালাতে শুরু করলো। নিরবতা চলছে চারপাশে। সানজিদা চুপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিবিড় আড়চোখে সানজিদাকে দেখছে। সানজিদা বাহিরের দিকে তাকিয়েই শান্ত সুরে বলল
“রাস্তা দেখে গাড়ি চালান। এক্সিডেন্ট হইলে কি করবেন।”
নিবিড় একটু থতমত হয়ে গেল। নিবিড় আর তাকালোনা সানজিদার দিকে। সানজিদাও আর কিছু বলেনি।
সানজিদা ঘুমিয়ে গিয়েছে। নিবিড় গাড়িটা ব্রেক করলো। সানজিদার মাথা নিজের কাধে রাখে। সানজিদাও ঘুমের ভিতর নিবিড়ের বুকের কাছকার শার্ট আকরে ধরলো। নিবিড় মুচকি হাসলো। সানজিদাকে একহাত দিয়ে আগলে রেখে অন্যহাত দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।
সারা রাস্তা ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছে সানজিদা। নিবিড় রির্সোটের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে চুপ করে বসে আছে। কেন যেন ঘুম থেকে জাগাতে মন চাচ্ছে সানজিদাকে। কবিরা তাদের কবিতা গল্পে সবসময় বলেছেন ঘুমালে নাকি মানুষের সৌন্দর্য অধিকতর হয়ে উঠে। আজ তার প্রমাণও পেয়ে গেল নিবিড়। সানজিদার কপালের চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছে গুজে দিলো নিবিড়। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে দেখে নিবিড় আস্তে আস্তে সানজিদাকে ডাকতে লাগলো।
সানজিদা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে নিবিড়ের বুকে আবিষ্কার করে ছিটকে সরে গেল। নিবিড় কিছু বলল না। নিবিড় গাড়ি থেকে নেমে সানজিদার পাশের দরজা খুলে বের হতে বলল ইশারায়। সানজিদাও চুপচাপ নেমে পরলো গাড়ি থেকে।
নিবিড়ের পাশাপাশি হাটছে সানজিদা। নিবিড় এবার সানজিদার দিকে তাকিয়ে বলল
“আচ্ছা আপনার কি কোনো কৌতূহল কাজ করছে যে আমি আপনাকে কোথায় এনেছি। কেন এনেছি!”
সানজিদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “কেন যেন সব কৌতূহল গুলো মরে গেছে। এখন আর ভালো লাগে না এসব।”
নিবিড় বলল “আপনি এমন কেন বলুন তো”
সানজিদা বলল “কেমন আমি?”
নিবিড় চুপ হয়ে গেল। তার যেন কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না। নিবিড় আর সানজিদার রুমটা পাশাপাশি। নিবিড় সানজিদাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। দুইজন ফ্রেশ হয়ে নেয়। কিছু খাবার খেয়ে নেয় ওরা। অনেকটা জার্নি করে দুইজনই ক্লান্ত। তাই দুইজন ঘুমিয়ে পরে।
সকালবেলায় দরজায় কারো টোকা পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় সানজিদার। সানজিদা ঢুলুঢুলু পায়ে দরজা খুলে দেখলো নিবিড় দাড়িয়ে আছে। নিবিড় সকালে উঠে ফ্রেশ হয়েই সানজিদাকে ডাকতে আসে। সে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে যাবে সানজিদাকে নিয়ে কিন্তু সে সানজিদাকে দেখে ওখানেই একপলকে দাড়িয়ে রইলো।
ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে মেয়েটি। তৈলাক্ত মুখে অপূর্ব লাগছে সানজিদাকে নিবিড়ের কাছে।
সানজিদা কপাল কুচকে বলল “কি হয়েছে আপনার। সকাল সকাল কি ভুত ধরেছে আপনাকে। যে এমন পাথর হয়ে গিয়েছেন।”
সানজিদার কথায় হুশ ফিরলো নিবিড়ের। আমতা আমতা করে বলল “ফ্রেস হয়ে নিন একটু বাহিরে যাবো।”
সানজিদা কিছু বলল না। রুমে চলে গেল। নিবিড় ভাবতে লাগলো মেয়েটা এতটা চুপচাপ কেন! পেটে বম মারলেও দু একটা কথার বেশি বের হয়। কিন্তু সে যে অনেক অনেক কথা বলতে চায় সানজিদার সঙ্গে। সে তো চায় যেন সানজিদা তার সব দুঃখ কষ্ট শেয়ার করে তার কাছে। কিন্তু সানজিদা কি বুঝতে পারছেনা। নাকি বুঝতে চাইছে না। বুঝতে পারছেনা নিবিড়।
নিবিড়ের ভাবনার মাঝেই সানজিদা ফ্রেস হয়ে পরনের জমা পাল্টে নিয়েছে। সানজিদা এসে নিবিড়কে ডাকতেই নিবিড় মুচকি হেসে রওনা দেয়। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে অল্প কিছু নাস্তা করে নেয় সানজিদা আর নিবিড়। তারপর ওরা ঘুরতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। সানজিদা চুপচাপ নিবিড়ের পিছুপিছু যেতে থাকলো। রেস্টুরেন্টের বাহিরে আসতেই নিবিড় দাড়িয়ে পরলো। নিবিড়কে দাড়াতে দেখে সানজিদা চোখ ছোট ছোট করে নিবিড়ের দিকে তাকালো। নিবিড় ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো আর মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলল
“আচ্ছা আমাকে কি একটা বার বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিবেন। আমরা কি একে অপরকে তুমি তুমি করে বলতে পারিনা। প্লীজ না করবেন না। আপনার কাছে আর কিছু চাই না। প্লীজ প্লীজ ”
সানজিদা একবার তাকালো নিবিড়ের দিকে। নিবিড়ের মুখটা শুকিয়ে আছে। চিন্তিত সে। সানজিদা নিবিড়ের পাশ থেকে ওর সামনে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলল “ফ্রেন্ড”
নিবিড় অবাক হয়ে সানজিদার দিকে তাকায়। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিবিড়ের ঠোঁটে যেন বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠে। সানজিদা মুচকি হেসে বলল “চলো”
নিবিড় খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছে। ও আবার এগিয়ে যেতে থাকে। সানজিদা আর নিবিড় পাশাপাশি হাঁটছে। সানজিদা এতোক্ষণ মাথা নিচু করে হাঁটছিলো। হঠাৎ মনে হলো সমুদ্রের পাশের হাওয়া যেন তার শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। পানির ঢেউয়ের আওয়াজ ও হচ্ছে। সানজিদা এবার সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। অবাক হয়ে তাকায় নিবিড়ের দিকে। নিবিড় হাতদুটো পেন্টের পকেটে রেখে জুতা দিয়ে বালি উড়াতে উড়াতেই বলল
“শশী বলেছিলো তোমার নাকি সমুদ্র খুব পছন্দ। কিন্তু সমুদ্রে যাওয়ার মতো সুযোগ হয়ে উঠেনি। জানো তো আমারও সমুদ্র খুব পছন্দ।”
সানজিদা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। খুশির ঠেলায় চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো। সানজিদা দৌড়ে গিয়ে দুহাত মিলে জোরে জোর নিশ্বাস নিতে লাগলো। খুশিতে তার মুখটা চিকচিক করছে।
চলবে….