তোমার স্মৃতি পর্ব-০৮

0
2016

#তোমার স্মৃতি
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

বিকেলে চায়ের টেবিলে আড্ডা জমিয়েছে রেহেলা বেগম সানজিদা আর শশী। বাগানের মাঝে খোলা আকাশের নিচে ভালোই লাগছে সানজিদার। অনেকদিন পর যেন মন ভরে শ্বাস নিচ্ছে ও। হঠাৎ ডাক্তার নিবিড়কে দেখে ওর চোখ গোল গোল হয়ে গেল। সাদা শার্ট কালো পেন্ট । চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পরে আছে। ঠোঁট একচিলতে মুচকি হাসি। নিবিড়কে দেখে রেহেলা বেগম মুচকি হাসি দিয়ে ওকে বসতে বলল।

নিবিড়ও মায়ের কাছ ঘেসে বসে পরলো। রেহেলা বেগম মুচকি হেসে শশী আর সানজিদার সঙ্গে নিবিড়ের পরিচয় করিয়ে দিতেই। সানজিদা বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পরলো আর অবাক কন্ঠে বলল

“আন্টি এটাই আপনার ছেলে। কিন্তু কেমনে কি!”

সানজিদার কথায় রেহেলা ভরকে গেল। সানজিদা এবার নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে দাঁত কিটমিট করে বলল “হায় আন্টির ছেলে কেমন আছেন আপনি।”

নিবিড় থতমত খেয়ে বলল “হুম আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আপনি!”

সানজিদা আবার কিটমিট করে বলল “হুম ভালো। তাহলে আমি এখন উঠি আমার ভালো লাগছে না। রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নিতে হবে।” বলেই কারো উত্তরের অপেক্ষা না করেই হনহন করে বাসার ভিতরে চলে গেল।

সানজিদা চলে যেতেই রেহেলা বেগম আর শশী হো হো করে হেসে উঠলো। নিবিড় চোখ ছোট ছোট করে ওদের দিকে তাকাতেই রেহেলা বেগম ছেলের এলোমেলো চুল ঠিক করতে করতে বললেন

“বাবু সানজু তো তোকে সহ‍্যই করতে পারছেনা দেখছি। কিন্তু আর যাই বলিস মেয়েটা কিন্তু অনেক মিষ্টি। কি সুন্দর মিশে গেছে আমার সঙ্গে। কি সুন্দর করে কথা বলছে।”

নিবিড় মুচকি হেসে ওর মায়ের গাল টেনে বলল “আমার কিউটি আম্মুর তাহলে সানজিদাকে মনে ধরছে এতেই হবে। সে যাইহোক আমি না হয় ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি থাকো।”

নিবিড় চলে যেতেই শশী ইতস্তত হয়ে রেহেলা বেগমকে বললেন “আন্টি আপনি কি আপনার ছেলের কথা মেনে নিয়েছেন। মানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি আপনার ছেলে যে পাগলামী করছে আপনি কি তা মেনে নিয়েছেন।”

রেহেলা বেগম শান্ত কন্ঠে বলল “আমার ছেলে এই পযর্ন্ত যা করতে চেয়েছি আমি কখনোই না করিনি। কারণ সে ভেবেই সিদ্ধান্ত নেয়।”

শশী বলল “আপনি কি জানেন সানজিদা একটা ডিভোর্সী মেয়ে।”

রেহেলা বেগম মুচকি হেসে বলল “আমি সবকিছুই জানি। আর আমি এইটুকুও বুঝে গিয়েছি যে আমার ছেলেটা সানজিদার মায়ায় পরে গিয়েছে। আমি আমার ছেলের বেস্টফ্রেন্ড। ও সবকিছু আমাকে বলে। তাই আমি সানজিদার সবকিছুই জানি। এখন আমি শুধু দোয়া করছি যেন সানজিদা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাক। তারপর ওদের বিয়ে দিয়ে দিবো।”

শশী অবাক হয়ে বলল “আপনি সব কথা জানার পরেও…

রেহেলা বেগম বসা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে বলল “এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর মনে রাখবে আল্লাহ যা করে ভালোর জন‍্যই করে।”

শশী আর কিছু বলল না সন্ধ‍্যা হয়ে গিয়েছে। পাখিদের ঝাঁক ছুটে যাচ্ছে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য। আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে তারা। আকাশ রক্তিম আভায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। শশী একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।

নিবিড় ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে ওর আম্মুর কাছে। ওর রুমটা দোতালায়। নিবিড় ওর আম্মুকে কফি বানাতে বলল। রেহেলা বেগম কফি বানাচ্ছে আর নিবিড়ের সঙ্গে কথা বলছে। নিবিড়ের আম্মু নিবিড়ের হাতে দুই মগ কফি দিয়ে বলল “যাহ ওর সঙ্গে গিয়ে একটু ভাব জমিয়ে আয়”

নিবিড় আলতো হাসলো।

নিবিড় সানজিদার রুমের দরজায় টোকা দিতেই ভিতর থেকে হ‍্যাঁবোধক অনুমতি এলো। নিবিড় রুমে এসে দেখলো সানজিদা একটা উপন‍্যাসের বই হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।

নিবিড় হাতে থাকা কফির মগ দুটি টি টেবিলে রাখলো। সে গিয়ে সানজিদার পাশে সোফায় বসলো। সানজিদা গম্ভীর সুরে বলল “শশী একটু পানি এনে দে তো। মাথাটা আবার ধরেছে।”

নিবিড় অস্থির হয়ে বলল “কি বলছেন ঔষধ খেয়েছেন খুব কি ব‍্যথা করছে!”

সানজিদা ফট করে চোখ খুলে বলল “আপনি”

নিবিড় বলল “কি অসুবিধা হচ্ছে বলো আমায়।”

সানজিদা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “শান্ত হন তেমন কিছু হয়নি আমার। প্রতিদিনকার মতোই একটু খারাপ লাগছিলো আর কি। যাইহোক আপনি কি কিছু বলবেন আমায়!”

নিবিড় সোফার টেবিলে থাকা কফির মগের দিকে তাকিয়ে বলল “না মানে একটু গল্প করতে আসছিলাম আপনার সঙ্গে। আপনার যদি সমস্যা হয় তাহলে না হয় চলে যাবো।”

সানজিদা শান্ত দৃষ্টি নিবিড়ের দিকে রেখে বলল “না আমার কোনো সমস্যা নেই। জাস্ট মাথাটা ধরেছে ঠিক যাবে। সমস্যা নেই।”

নিবিড় কফির মগটা সানজিদার হাতে দিয়ে খেতে ইশারা করলো। তারপর উঠে গেল। সানজিদা চোখ ছোট ছোট তাকিয়ে রইলো নিবিড়ের দিকে। নিবিড় কি করছে বুঝতে পারছে না সে। পরক্ষণেই নিবিড় সানজিদার সামনে এসে দাড়ালো। সানজিদা নিবিড়ের দিকে তাকাতেই নিবিড় মুচকি হেসে ঔষধ এগিয়ে দিলো। সানজিদাও কিছু না বলে ঔষধ খেয়ে নিলো।

নিবিড় বলল “বারান্দায় যাবেন”

সানজিদা মাথা নাড়ালো। দুইজন মিলে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আকাশে আজ চাঁদের দেখা নেই। হালকা বাতাস বইছে চারদিকে। পিটপিট করে তারা জ্বলছে। সানজিদা আর নিবিড় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চারপাশে নিরবতা ছেয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে নিবিড় বলে উঠলো

“জানেন আমি ছোট থেকে অনেক চুপচাপ ছিলাম। বেশিরভাগ সময় পড়াশোনা নিয়েই থাকতাম। অন্যদিকে নজর দেওয়ার সময় আমার হয়নি। লাইফে প্রতিষ্ঠিত হতে হতে কোনো মেয়েকে পছন্দ করা বা প্রেম করা হয়ে উঠেনি। এই নিয়ে আম্মু অনেকবার বিয়ের কথা বলেছে আমাকে। কিন্তু আমার বিয়ে করার কোন মত ছিলো না।”

সানজিদা নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল “তা এগুলো আমাকে বলছেন কেন?”

নিবিড় একটা রহস‍্যময় মুচকি হাসি দিলো। আর বলল “এমনি বলতে মন চাইলো তাই বললাম আর কি। যাইহোক ঘুরতে যাবেন আমার সঙ্গে।”

সানজিদা বলল “কোথায় যাবেন ঘুরতে!”

নিবিড় বলল “গেলেই দেখতে পারবেন এখন বলেন যাবেন কিনা।”

সানজিদা কিছু বলল না চুপ করে রইলো। নিবিড় নিরবতা সম্মতি লক্ষণ ভেবে মুচকি হেসে বলল “আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি!”

সানজিদা ফট করে আকাশের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো। নিবিড় জিঙ্গাসা দৃষ্টিতে সানজিদার দিকে তাকিয়ে আছে।

সানজিদা বলল “হঠাৎ আমার মতো মেয়েকে ফ্রেন্ড করতে চাচ্ছেন কেন। উদ্দেশ্যে কি!..”

নিবিড় বলল “উদ্দেশ্য মানে ফ্রেন্ড হতে আবার উদ্দেশ্য লাগে নাকি?”

সানজিদা বলল “না মানে এই স্বার্থপর দুনিয়ায় কেউ উদ্দেশ্য ছাড়া কাজ করেনা।”

নিবিড় ফুস করে নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর বলল “সবাই এক না। সবাই স্বার্থপর হয় না। আর যাইহোক রেডি থাকবেন কাল সকালে না হয় ঘুরতে যাবো। অপেক্ষায় থাকাবো কিন্তু আমি আপনার জন‍্য।” বলেই নিবিড় চলে গেল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে